বাংলাদেশের প্রশ্ন ফাঁস কলঙ্ক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সরকারী হিসাব মতে,বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি পরীক্ষায় সর্বপ্রথম ১৯৭৯ সালে মাধ্যমিক বা এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটে।[১] কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা তীব্রতা লাভ করে আরো পরে। ২০১৪ সাল থেকে পিএসসি, জেএসসি, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মতো বাংলাদেশের অন্যান্য সরকারি পরীক্ষারও প্রশ্ন ফাঁস শুরু হয়।[১][২] এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ একাধিকবার এসেছে।[৩][৪]

বিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস[সম্পাদনা]

২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত সব কয়টি সরকারি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে একাধিক রিপোর্ট পাওয়া গেলেও সরকার কর্তৃক বরাবরই এই দাবি নাকচ করে দেয়া হয়েছে।[৫] এর কিছুদিন পর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রশ্ন ফাঁসে দোষীদের পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িতদের শিগগিরই চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে মন্তব্য করেন।[৬] ২০১৪ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালে ঢাকা বোর্ডের ইংরেজি প্রশ্ন ফাঁস হলে পরীক্ষাটির তারিখ পরিবর্তন করা হলেও, অন্যান্য পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের পরেও এ ধরনের কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।[৭]

এরপর থেকে অনুষ্ঠিত সব কয়টি পাবলিক পরীক্ষারই প্রশ্ন কম বেশি ফাঁস হতে থাকে। এ ব্যাপারে সরকার থেকেও একেক সময় একে ধরনের মন্তব্য পাওয়া যায়। কখনো এই দাবি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করা হয়[৮] আবার কখনো আগের চেয়ে কম হারে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে বলে মন্তব্য করা হয়।[৯] এছাড়াও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষকদেরকেও প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত বলে মন্তব্য করেন।[৯]

বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস[সম্পাদনা]

২০১৫ সালের মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের গুরুতর অভিযোগ উঠে। এ ব্যাপারে তীব্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে একটি গণতদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে এই কমিটি ২০১৫-১৬ সেশনে মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ সত্য বলে রিপোর্ট করে এবং নতুন করে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সুপারিশ করে।[৪][১০] প্রশ্নফাঁসের বিপক্ষে পুনরায় পরীক্ষার জন্য একদল শিক্ষার্থী আন্দোলন করলেও সেই আন্দোলন সফল হয়নি। তদন্ত কমিটির সুপারিশ মতে নতুন করে কোন পরীক্ষা নেয়া হয়নি বরং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সরকারের পক্ষ থেকে অযৌক্তিক বলা হয়ে এসেছে।[১১] ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ আনা হয়।[৩] পরীক্ষার আগের রাতে ফাঁস হওয়া এই প্রশ্নেই স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ হলে সমালোচনা তীব্রতা লাভ করে।[১২] অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ঘটনা অস্বীকার করে এসেছে।[১২]

সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া[সম্পাদনা]

প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে শুরু থেকে দেশের শিক্ষাবিদরা সরব অবস্থান গ্রহণ করেছেন। ২০১৪ সালের প্রশ্ন ফাঁসের প্রতিবাদে শিক্ষাবিদ, অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।[১৩] ২০১৫ সালের মেডিকেল ও ডেন্টাল পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন সৈয়দ আবুল মকসুদসহ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি।[১১] প্রশ্ন ফাঁস রুধতে সরকারের সাথে বিভিন্ন শিক্ষাবিদের একাধিকবার বৈঠক হয়েছে।[৯][১১]

ইন্টারনেটে প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করতে সরকার কর্তৃক একাধিকবার ইন্টারনেট বন্ধ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধের ঘটনাও ঘটেছে।[১৪] কিন্তু এরপরেও প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো যায়নি।[১৫]

আইন ও শাস্তি[সম্পাদনা]

প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণের সঙ্গে জড়িত থাকার শাস্তি ন্যূনতম ৩ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন, ১৯৮০ এবং সংশোধনী ১৯৯২-এর চার নম্বর ধারায় এই শাস্তির বিধান রয়েছে।[৭] প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তিকে গ্রেফতারের নজির রয়েছে।[১৬] ২০১৭ সালের মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের চেষ্টাকালে এক কর কর্মকর্তাকে র‌্যাব আটক করে।[১৭] তবে এখন পর্যন্ত কোন গ্রেফতারকৃত অপরাধীর শাস্তির রায় পাওয়া যায়নি।[৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "যত প্রশ্ন তত ফাঁস"দৈনিক জনকণ্ঠ। ২৪ নভেম্বর,২০১৭। ১১ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ই মার্চ, ২০১৮  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  2. "সব পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস"দৈনিক মানবজমিন। ১১ এপ্রিল ২০১৪। ১১ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৮ 
  3. "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে 'ঘ' ইউনিটের প্রশ্ন ফাঁস"দৈনিক প্রথম আলো। ২০ অক্টোবর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৮ 
  4. "মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল, নতুন পরীক্ষার সুপারিশ"দৈনিক প্রথম আলো। ১৭ নভেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৮ 
  5. "Education system riddled with flaws"The Daily Star। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০১৪ 
  6. "প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কঠোর শাস্তির পরামর্শ শিক্ষাবিদদের"BBC Bangla। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০১৪ 
  7. "সব পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস"দৈনিক প্রথম আলো। ১০ এপ্রিল ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৮ 
  8. "ঢাকা বোর্ডে এসএসসি'র প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে কি হয়নি?"BBC Bangla। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  9. "প্রশ্ন ফাঁস: শিক্ষামন্ত্রী দুষলেন শিক্ষকদের"বিডিনিউজ২৪.কম। ১৬ নভেম্বর ২০১৭। ১১ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৮ 
  10. "মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল, নতুন পরীক্ষার সুপারিশ"বিডিনিউজ২৪.কম। ১৮ নভেম্বর ২০১৫। ১১ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৮ 
  11. "মেডিকেলে ভর্তি-ইচ্ছুকদের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বৈঠক"দৈনিক প্রথম আলো। ১৯ অক্টোবর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৮ 
  12. "মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁসের নেতৃত্বে কর কর্মকর্তা"দৈনিক জনকণ্ঠ। ২০ অক্টোবর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৮ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  13. "প্রশ্ন 'ফাঁসের' প্রতিবাদে জাফর ইকবালের অবস্থান"বিডিনিউজ২৪.কম। ৩০ মে ২০১৪। ১ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৮ 
  14. "প্রশ্ন ফাঁস রোধে পরীক্ষার দিন ১৫০ মিনিট ইন্টারনেট বন্ধ"দৈনিক প্রথম আলো। ১২ ফেব্রুয়ারি,২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৮  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  15. "ইন্টারনেট বন্ধের আগেই আইসিটি প্রশ্ন ফাঁস"বিডিনিউজ২৪.কম। ১১ ফেব্রুয়ারি,২০১৮। ১১ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৮  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  16. "প্রশ্ন ফাঁসের বাজার"দৈনিক প্রথম আলো। ২৩ নভেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৮ 
  17. "মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁসের নেতৃত্বে কর কর্মকর্তা"দৈনিক প্রথম আলো। ২০ ডিসেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৮