বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা
প্রতিষ্ঠাতাকালীনাথ রায়চৌধুরী , প্রসন্নকুমার ঠাকুর ,হরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
বিলুপ্ত১৮৩৬
অবস্থান
যে অঞ্চলে
বঙ্গ
পরিষেবাপ্রথমদিকে বাংলা ভাষা সাহিত্যের উৎকর্ষতা বিধান এবং পরবর্তীতে দেশবাসীর স্বার্থবিরোধী সরকারী সিদ্ধান্তের বিরোধিতা
দাপ্তরিক ভাষা
বাংলা
সভাপতি
গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য
সম্পাদক
দুর্গাপ্রসাদ তর্কপঞ্চানন
মূল ব্যক্তিত্ব
প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর
প্রসন্নকুমার ঠাকুর

বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা ছিল ব্রিটিশ ভারতের প্রথম জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক সংগঠন। [১] আধুনিক ভারতের জনক তথা ভারতে নবযুগের প্রবর্তক রাজা রামমোহন রায়ের সহযোগী বাংলার কয়েকজন সম্ভ্রান্ত জমিদার রামমোহন রায়ের মৃত্যুর পর ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলা ভাষা সাহিত্যের উৎকর্ষ বৃদ্ধির সভা হিসাবে স্থাপিত হলেও, পরবর্তীতে দেশবাসীর স্বার্থবিরোধী সরকারী সিদ্ধান্তের বিরোধিতা সংগঠনের অন্যতম নীতি হিসাবে গৃহীত হয়।

প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

পরাধীন ভারতবর্ষে ঊনিশ শতকে নানা দার্শনিক চিন্তাধারায়, সামাজিক অনাচার রোধে, স্বদেশ স্বজাতির আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য একাধিক সভা ও সমিতি গড়ে উঠেছিল। সেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল -

অন্যদিকে, অবিভক্ত বাংলায় বাংলা ভাষার চর্চা ও বাংলা ভাষায় দেশ-বিদেশের গ্রন্থ অনুবাদের সঙ্ঘবদ্ধ প্রচেষ্টায় ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ক্যালকাটা স্কুল-বুক সোসাইটি। ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দ রামমোহন রায় ‘সর্বতত্ত্বদীপিকা সভা' প্রতিষ্ঠিত করেন।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ভারতে ইংরেজদের প্রণীত সর্বপ্রথম শিক্ষানীতি দীর্ঘ পাশ্চাত্য বিতর্কের পর ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি টমাস বাবিংটন মেকলে ইংরাজী ভাষা ও পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রস্তাব (যা মেকলে মিনিটস্ বা মেকলে প্রস্তাব নামে পরিচিত) লর্ড বেন্টিংক-এর কাছে পেশ করেন। লর্ড বেন্টিংক মেকলের সুপারিশ মেনে ইংরাজী শিক্ষার প্রসারকে সরকারি নীতি ঘোষণা করে পাশ্চাত্য শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। [২] ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাভাষাভাষীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েন। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতের নবজাগরণের অগ্রদূত রাজা রামমোহন রায়ের মৃত্যুর পর ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের টাকির জমিদার কালীনাথ রায়চৌধুরী[৩], প্রসন্নকুমার ঠাকুর, 'সংবাদ পূর্ণচন্দ্রোদয়' পত্রিকার সম্পাদক হরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ অনুগামীরা ইংরাজী ভাষার প্রাবল্যে যাতে বাংলা ভাষা চর্চা ও তার স্বার্থ রক্ষা হয়, সেজন্য প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা। ওই বছরের ৮ ডিসেম্বর বিশিষ্ট লেখক, সংস্কারক ও 'সম্বাদ ভাস্কর' এবং 'সম্বাদ রসরাজ' পত্রিকার সম্পাদক গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য ,তর্কবাগীশ -এর সভাপতিত্বে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। তিনিও ছিলেন এই সভার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। [৪] সম্পাদক হন পণ্ডিত দুর্গাপ্রসাদ তর্কপঞ্চানন। [৫]

উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্য-

সংগঠন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল-

  • বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা অব্যাহত রাখা;
  • দেশের মঙ্গলার্থে তর্কবিতর্কের মধ্যে আলাপ-আলোচনা ও বিচার- বিশ্লেষণ করা;
  • সরকারি নীতি ও কাজকর্মের সমালোচনা করা;
  • সভার অধিবেশন বসত প্রতি বৃহস্পতিবার। পরে অবশ্য পরিবর্তিত হয়েছিল;
  • ধর্ম সম্বন্ধীয় আলোচনা সভায় নিষিদ্ধ ছিল।
ক্রিয়াকলাপ-
  • ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে রেগুলেশন অ্যাক্ট প্রবর্তন করে ব্রিটিশ শাসক নিষ্কর ভূমির উপর কর আদায় শুরু করলে সভা তীব্র প্রতিবাদ করে।
  • ইংরাজী ভাষা ও পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে বাংলা ভাষা শিক্ষা যাতে উপেক্ষিত না হয় সভা রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধিতে সচেষ্ট হয়।

তবে সরকারি নীতি ও সিদ্ধান্তের বিরোধিতার প্রশ্নে সভার সদস্যদের মধ্যে দলাদলি ও মতভেদ চূড়ান্ত রূপ ধারণ করায় বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার আয়ুষ্কাল ছিল স্বল্প সময়ের। বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা বেশিদিন স্থায়ী না হলেও ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে দ্বারকানাথ ঠাকুরের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক সংগঠন 'জমিদার সভা' বা 'ল্যান্ড হোল্ডার সোসাইটি'-র অগ্রদূত ছিল ।

মন্তব্য[সম্পাদনা]

সংবাদ প্রভাকরের সম্পাদক ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত তার পত্রিকায় লেখেন - “রাজকীয় বিষয় বিবেচনার জন্য অপর যে সভা হইয়াছিল তন্মধ্যে বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভাকে প্রথম বলিতে হইবেক”।

প্রখ্যাত সাংবাদিক, গবেষক ও ইতিহাসবিদ যোগেশচন্দ্র বাগল বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা'কে ভারতের প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন’' হিসাবে উল্লেখ করেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৫-১৪ 
  2. "বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৫-১৩ 
  3. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ১২৯, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  4. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ৪৪, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  5. "Bangabhasha Prakasika Sabha (1836) - Modern India History Notes"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৫-১৩