ফ্রিডরিখ মিশার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ইয়োহানেস ফ্রিডরিখ মিশার
ফ্রিডরিখ মিশার
জন্ম(১৮৪৪-০৮-১৩)১৩ আগস্ট ১৮৪৪
মৃত্যু২৬ আগস্ট ১৮৯৫ (৫১ বছর বয়স)
জাতীয়তাসুইস
পরিচিতির কারণনিউক্লিক এসিডের আবিষ্কারক
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রজীববিজ্ঞানী

ইয়োহানেস ফ্রিডরিখ মিশার (১৩ আগস্ট ১৮৪৪ - ২৬ আগস্ট ১৮৯৫) একজন সুইস চিকিৎসক এবং জীববিজ্ঞানী ছিলেন। তিনিই প্রথম গবেষক; যিনি নিউক্লিক অ্যাসিডকে সফলভাবে পৃথকীকরণ করেন।

জীবনী[সম্পাদনা]

মিশার অসংখ্য ফসফেট-সমৃদ্ধ রাসায়নিক উপাদানকে পৃথক করেন। তিনি এর নাম দেন নিউক্লিন (বর্তমানে নিউক্লিক এসিড নামে পরিচিত)। তিনি ১৮৬৯ সালে জার্মানীর টুবিনগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলিক্স হোপ-সেইলারের পরীক্ষাগারে শ্বেত রক্ত কণিকা থেকে নিউক্লিক এসিড পৃথক করেন।[১] যার ফলে বংশগতির বাহক ডিএনএ শনাক্তকরণে নতুন পথের সূচনা হয়। আলব্রেখট কসেলও পরবর্তীতে নিউক্লিক এসিডকে পৃথক করতে সমর্থ হন।[২] পরবর্তীতে ফ্রেডরিখ মিশার নিউক্লিক এসিড বংশগতির সাথে যুক্ত বলে ধারণা দেন।[৩]

মিশারের জন্ম হয় বিজ্ঞানী পরিবারেই। তার পিতা জোহান এফ. মিশার ছিলেন একজন গবেষক এবং তার চাচা ভিলহেল্ম হেজ ছিলেন বেসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি ও ফিজিওলজির অধ্যাপক। উলহেম হেজ সর্বপ্রথম ডেনড্রাইটের আবিষ্কার করেনউদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগে অবৈধ প্যারামিটার

মিশার বাল্যকাল থেকেই বিজ্ঞানের আবহে বড় হয়ে উঠেন। ছোটবেলায় তিনি বুদ্ধিমান এবং কিছুটা লাজুক ছিলেন। তার সংগীতের প্রতি অনুরাগ ছিল। তিনি বেসেলে চিকিৎসাবিজ্ঞানের উপর পড়াশোনা করেছেন। ১৮৬৫ সালের গ্রীষ্মে তিনি গটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নবিদ এডল্ফ স্টেকারের সাথে জৈব রসায়নের উপর কাজ করেছেন। কিন্তু সেই বছরই তার টাইফয়েড জ্বর হয় এবং জ্বরের কারণে তার পড়াশুনায় বিঘ্ন ঘটে ও শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস পায়। তথাপি তিনি ১৮৬৮ সালে চিকিৎসাবিদ্যার উপর স্নাতকোত্তর (MD) সম্পন্ন করেন।[১]

মিশারের মনে হয়েছিল দুর্বল শ্রবণ ক্ষমতা তার চিকিৎসা পেশার অগ্রগতিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করতে পারে। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন শারীরবৃত্তীয় রসায়ন নিয়েই পড়াশোনা করবেন। পরিবারের সম্মতি নিয়েই জার্মানীতে তখনকার বিখ্যাত বিজ্ঞানী ফেলিক্স হোপ-সেইলারের অধীনে বিজ্ঞান সাধনা করার জন্য চলে আসেন। মিশার কোষের রাসায়নিক গঠন জানার জন্য উৎসুক হয়ে উঠেন। মিশার লসিকাকোষের উপর গবেষণা করার নিমিত্তে লসিকা গ্রন্থি থেকে কোষ আলাদা করে তার উপর প্রাথমিকভাবে গবেষণা শুরু করেন। কিন্তু লসিকা গ্রন্থি থেকে লসিকা কোষ আলাদা করা এবং তার থেকে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ লসিকা কোষ পাওয়া একইসাথে কষ্টসাধ্য এবং প্রায় অসম্ভবপর ছিল। হোপ-সেইলার মিশারকে নিউট্রোফিল নিয়ে পড়াশুনায় উৎসাহিত করেন। কারণ নিউট্রোফিল হচ্ছে পুঁজের প্রথম ও প্রধান উপাদান; যা সহজে নিকটস্থ হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত সার্জিক্যাল ব্যাণ্ডেজের পুঁজ থেকে পাওয়া সম্ভব। যাইহোক, ব্যাণ্ডেজের কোষের কোনোরুপ ক্ষতিসাধন না করে ধৌত করতে কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হয়।[১]উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগে অবৈধ প্যারামিটার

গবেষণার শুরুতে মিশার কোষের বিভিন্ন প্রোটিনের উপর আলোকপাত করেন এবং প্রোটিনের শ্রেণিবিভাগ করার চেষ্টা করেন। প্রোটিন নিয়ে গবেষণাকালীন সময়ে লক্ষ্য করেন, যখন দ্রবণে এসিড যুক্ত করা হয় তখন কিছু বস্তু অধঃক্ষিপ্ত হয়। যখন ক্ষার যোগ করা হয় তখন পুনরায় দ্রবীভূত হয়। মিশারের এই লক্ষণীয় বস্তুতিই হলো ডিএনএ। যার নামকরণ সেসময়ে নিউক্লিন করা হয়েছে।[৪] তিনি ১৮৬১ সালে তার এই রোমাঞ্চকর আবিষ্কারের কথা চাচা ভিলহেল্ম হেজকে চিঠির মাধ্যমে জানান,

লঘু এলকাইল দ্রবণ দ্বারা করা আমার পরীক্ষণে যে নতুন দ্রব পাওয়া গিয়েছে, তা পানিতে দ্রবীভূত হয় না, এসিটিক এসিডে দ্রবীভূত হয় না, উচ্চমাত্রার হাইড্রো ক্লোরিক এসিডের মিশ্রণে দ্রবীভূত হয় না, দ্রবীভূত হয় না লবণ এর দ্রবণে। এবং এটি পরিচিত প্রোটিনের সাথেও মিলে না।[৫]

নিউক্লিনের উপর বিস্তর গবেষণার পর তিনি নির্ণয় করেন, নিউক্লিনে প্রোটিনের ন্যায় সালফার নেই কিন্তু ফসফরাস রয়েছে। হপার সেইলারও উল্লেখ করেন তখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত কোনো বস্তুর সাথে মিশারের আবিষ্কার মিল নেই।[১]

মিশার নিউক্লিনের উৎস হিসেবে স্যামন মাছের শুক্রাণুকে নিয়ে পরীক্ষা চালান। তিনি স্যামন মাছের শুক্রাণু থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিউক্লিন পৃথক করতে সমর্থন হন এবং গবেষণার জন্য আরো জটিল প্রটোকল তৈরী করেন। তিনি পূর্বোক্ত গবেষণা পুনরায় করেন এবং নিশ্চিত হন যে, নিউক্লিন শুধুমাত্র কার্বন, নাইট্রোজেন এবং হাইড্রোজেন দ্বারা গঠিত। এতে সালফারের কোনো উপস্থিতি নেই বরং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ফসফরাস আছে। তিনি স্যামন মাছের শুক্রানুর নিউক্লিনে ফসফরাস অক্সাইডের ভর নির্ধারণ করেন ২২.৫ শতাংশ, যা বর্তমানে নির্ণীত পরিমাণ ২২.৯% এর খুব কাছাকাছি। তিনি এও উল্লেখ করেন ফসফরাস নিউক্লিনের ভিতর নিউক্লিক এসিড হিসেবে থাকে। আরো বলেন নিউক্লিন বহু ক্ষারবিশিষ্ট এক প্রকার জৈব যোগ যাতে কমপক্ষে এমনকি চারটি ক্ষারও থাকে। যা আজকের যুগে প্রমাণিত। তিনি তার ছাত্ররা নিউক্লিক এসিডের রসায়নের উপর বিস্তর গবেষণা করেন, কিন্তু এর কার্যক্রম তারা উৎঘাটন করতে পারেন নি। যাইহোক, তার আবিষ্কারের হাত ধরেই বংশগতির বাহক নিউক্লিক এসিডকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগে অবৈধ প্যারামিটার

শ্বাস প্রশ্বাসের সময় রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনমাত্রা বর্ণনা করার জন্যও মিশার পরিচিত[১]

৫১ বছর বয়সে ১৮৯৫ সালে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। টুবিংগেনে অবস্থিত ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক সোসাইটির একটি পরীক্ষাগার ও বাসেলে অবস্থিত গবেষণাগারের নাম; তার নামে নামকরণ করা হয়।[১]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Dahm, R (জানু ২০০৮)। "Discovering DNA: Friedrich Miescher and the early years of nucleic acid research"। Human Genetics122 (6): 565–81। আইএসএসএন 0340-6717ডিওআই:10.1007/s00439-007-0433-0পিএমআইডি 17901982 
  2. Jones, Mary Ellen (সেপ্টেম্বর ১৯৫৩)। "Albrecht Kossel, A Biographical Sketch"Yale Journal of Biology and MedicineNational Center for Biotechnology Information26 (1): 80–97। পিএমআইডি 13103145পিএমসি 2599350অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  3. Bill Bryson, A Short History of Nearly Everything, Broadway Books, 2005, p. 500.
  4. Miescher, Friedrich (1871) "Ueber die chemische Zusammensetzung der Eiterzellen" (On the chemical composition of pus cells), Medicinisch-chemische Untersuchungen, 4 : 441–460. From p. 456: "Ich habe mich daher später mit meinen Versuchen an die ganzen Kerne gehalten, die Trennung der Körper, die ich einstweilen ohne weiteres Präjudiz als lösliches und unlösliches Nuclein bezeichnen will, einem günstigeren Material überlassend." ("Therefore, in my experiments I subsequently limited myself to the whole nucleus, leaving to a more favorable material the separation of the substances, that for the present, without further prejudice, I will designate as soluble and insoluble nuclear material ('Nuclein').")
  5. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; ডিএনএ 1= নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]