ফরিদা ইয়াসমিন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ফরিদা ইয়াসমিন
জন্ম১৯৪০
মৃত্যু৮ আগস্ট ২০১৫
সমাধিমিরপুর ১১ কবরস্থান , ঢাকা, বাংলাদেশ
পেশাসঙ্গীতশিল্পী
কর্মজীবন১৯৫৮ -২০১৫
দাম্পত্য সঙ্গীকাজী আনোয়ার হোসেন (১৯৬২-২০১৫, মৃত্যু পর্যন্ত)
পিতা-মাতা
  • লুতফর রহমান (পিতা)
  • বেগম মৌলুদা খাতুন (মাতা)
আত্মীয়

ফরিদা ইয়াসমিন (জন্ম ১৯৪০ - ৮ আগস্ট ২০১৫) একজন বাংলাদেশী সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন। তিনি ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত এক দশক জুড়ে চলচ্চিত্র ও বেতারের একজন জনপ্রিয় নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। তিনি আধুনিক বাংলা, উর্দু গান ও গজলে পারদর্শী ছিলেন [১] তার বিখ্যাত গানগুলোর মধ্যে রয়েছে, 'তুমি জীবনে মরণে আমায় আপন করেছো', 'জানি না ফুরায় যদি এই মধুরাতি', 'তোমার পথে কুসুম ছড়াতে এসেছি', 'খুশির নেশায় আজকে বুঝি মাতাল হলাম'। তারা পাঁচ বোনের মধ্যে চার বোনই সঙ্গীত শিল্পী। [২] অন্যরা হলেন জনপ্রিয় খ্যাতনামা শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন, নীলুফার ইয়াসমিনফওজিয়া খান[১] ১৯৬২ সালে ফরিদা ইয়াসমিন অনুবাদক, প্রকাশক, এবং গোয়েন্দা কাহিনী লেখক কাজী আনোয়ার হোসেন এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। [৩] পরবর্তীতে সাংসারিক ও অন্যান্য কারণে সংগীত থেকে সরে আসেন। এরপর তিনি অনিয়মিত ভাবে গান করতেন ও নব্বইয়ের দশকের শেষে পুরোপুরি গান ছেড়ে দেন। ২০১৫ সালের ৮ আগস্ট তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

জীবন ও সংগীত চর্চা[সম্পাদনা]

ফরিদা ইয়াসমিন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মুর্শিদাবাদে নানার বাড়িতে [৩] মতান্তরে পৈতৃক নিবাস সাতক্ষীরাতে [৪] জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা লুতফর রহমান ও মা বেগম মৌলুদা খাতুন। পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। [৫] তারা পাঁচ বোনের মাঝে ফরিদা ইয়াসমিন, ফওজিয়া খান, নীলুফার ইয়াসমীন এবং সাবিনা ইয়াসমিন সঙ্গীতাঙ্গনে স্বনামখ্যাত। [৬]

চাকরি সূত্রে শৈশবে ফরিদা ইয়াসমিন বাবা-মায়ের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন। সেখানেই শিল্পী দুর্গাপ্রসাদ রায়ের কাছে গানের তালিম নেন। [৭] মায়ের কাছ থেকেও তিনি গান শিখেছিলেন। পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে ঢাকা ইডেন গার্লস কলেজে তিনি এক সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন ও সেখানে তার গানে মুগ্ধ হয়ে সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার আবদুল আহাদ বেতারে গান করার পরামর্শ দেন। ১৯৫৮ সাল থেকে তিনি নিয়মিত বেতারে গান করা শুরু করেন।অল্পদিনেই তিনি ব্যপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। সেসময়কার বেতার মাধ্যমের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী ফেরদৌসী বেগমআঞ্জুমান আরা বেগমের সাথে তার নামও যুক্ত হয়। [৩]

১৯৫৯ সালে ওস্তাদ মতি মিয়ার কাছে গান শিখতেন ফরিদা ইয়াসমিন। সে বছর তার সহযোগিতায় এ দেশ তোমার আমার চলচ্চিত্রের একটি গানে কণ্ঠ দেয়ার মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে সংগীত শিল্পী হিসেবে অভিষেক ঘটে। এরপর এক দশক ধরে তিনি বেশ কিছু চলচ্চিত্রে কণ্ঠ দেন। ১৯৬৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রাজা এলো শহরে চলচ্চিত্রে 'জানি না ফুরায় যদি এই মধুরাতি' গানটি গেয়ে বিপুল জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি লাভ করেন। তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে, 'তুমি জীবনে মরণে আমায় আপন করেছো', 'তোমার পথে কুসুম ছড়াতে এসেছি', 'খুশির নেশায় আজকে বুঝি মাতাল হলাম' প্রভৃতি। [৮]

ফরিদা ইয়াসমিন ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত নিয়মিত ভাবে চলচ্চিত্র ও বেতারের সাথে যুক্ত ছিলেন। [৯] পরবর্তীতে সাংসারিক ও অন্যান্য কারণে সংগীত চর্চা থেকে সরে আসেন ও অনিয়মিতভাবে সংগীত পরিবেশন করেন। [১০]

জনপ্রিয় গানসমূহ[সম্পাদনা]

  • তুমি জীবনে মরণে আমায় আপন করেছো
  • তোমার পথে কুসুম ছড়াতে এসেছি
  • জানি না ফুরায় যদি এই মধুরাতি
  • খুশির নেশায় আজকে বুঝি মাতাল হলাম

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

১৯৬২ সালে ফরিদা ইয়াসমিন অনুবাদক, প্রকাশক, এবং জনপ্রিয় গোয়েন্দা কাহিনী লেখক কাজী আনোয়ার হোসেন এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের সংসারে দুই পুত্র ও এক কন্যা রয়েছে। প্রখ্যাত পরিসংখ্যানবিদ, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ কাজী মোতাহার হোসেন সম্পর্কে তার শ্বশুর ছিলেন এবং প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও অভিনেতা খান আতাউর রহমান তার ছোটবোন নীলুফার ইয়াসমিনকে বিবাহ করেন।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

ফরিদা ইয়াসমিন ২০১৫ সালের ৮ আগস্ট ঢাকায় বারডেম হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত কারণে ও বিভিন্ন জটিল শারীরিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। [৪][১১] ঢাকার মিরপুর ১১ কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। [২][৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "সংগীত শিল্পী ফরিদা ইয়াসমিন আর নেই" (৮ আগস্ট ২০১৫)। বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ১০ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৫ 
  2. "চলে গেলেন ফরিদা ইয়াসমিন"দৈনিক জনকন্ঠ। ৯ আগস্ট ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৫ 
  3. "ফরিদা ইয়াসমিন আর নেই"। দৈনিক সমকাল। ৮ আগস্ট ২০১৫। ১০ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৫ 
  4. "চলে গেলেন শিল্পী ফরিদা ইয়াসমিন"। এন টিভি। ৮ আগস্ট ২০১। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৫  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  5. "গায়িকা ফরিদা ইয়াসমিন আর নেই"। সময় টিভি। ৮ আগস্ট ২০১৫। ১০ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৫ 
  6. "ফরিদা ইয়াসমিন আর নেই"দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন। ৮ আগস্ট ২০১৫। ১৮ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৫ 
  7. "Singer Farida Yasmin passes away"। ডেইলি স্টার। ৮ আগস্ট ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৫ 
  8. "Popular singer of yesteryears Farida Yasmin dies of old age complications"। বিডিনিউজ। ৮ আগস্ট ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৫ 
  9. "সংগীত শিল্পী ফরিদা ইয়াসমিন আর নেই"। দ্য বেঙ্গলি টাইমস ডটকম। ৮ আগস্ট ২০১৫। ৯ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৫ 
  10. "Noted singer Farida Yasmin dies"। বিডিনিউজ। ৮ আগস্ট ২০১৫। ১০ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৫ 
  11. "চলে গেলেন সঙ্গীতশিল্পী ফরিদা ইয়াসমিন"দৈনিক যুগান্তর। ৮ আগস্ট ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৫ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]