বিষয়বস্তুতে চলুন

প্রসেনজিৎ চৌধুরী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
প্ৰসেনজিৎ চৌধুরী
জন্ম১৯ অক্টোবর, ১৯৪৬
ডিব্রুগড়, আসাম
পেশাশিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক
দাম্পত্যসঙ্গীসন্ধ্যা দেবী

প্ৰসেনজিৎ চৌধুরী (ইংরেজি: Prasenjit Chowdhury; জন্ম: ১৯ অক্টোবর, ১৯৮৬) একজন অসমীয়া যুক্তিবাদী লেখক, অধ্যাপক এবং ইতিহাসের বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষক।[১][২]ইতিহাস চৰ্চার ক্ষেত্রে তিনি অগ্ৰণী ভূমিকা রেখেছেন। চৌধুরী কৰ্মসূত্ৰে, ১৯৭১ সালে স্থাপিত, চাবুয়ার ডিডিআর কলেজের (দাখাদেবী রাসিয়াসিয়া মহাবিদ্যালয়) ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন, এরপর তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।চৌধুরী ১৯৮৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৭টি বই লিখেছেন এবং পাঁচটি বই সম্পাদনা করেছেন। তিনি ইন্দিবার দেউরির সাথে ১৯৯৬ সালে দ্য টার্বুলেন্ট নর্থ-ইস্ট লিখেছিলেন। অসমীয়া এবং ইংরেজী ভাষা ছাড়াও বাংলা ভাষায় সমান দখল রাখা চৌধুরীর বাস্তব না বিভ্ৰম: আসামে বাংলা ভাষা প্ৰবৰ্তনের ঐতিহাসিক উৎস সন্ধানে (২০১২), রাম কথা(২০১৪), মহারাষ্ট্ৰীয় নবজাগরণ: ব্ৰাহ্মণ্যবাদ-বিরোধী আন্দোলন ও নারী জাগরণের এক অধ্যায়(২০১৪) এবং উনিশ শতক: অসম ও বাংলা প্ৰসঙ্গ(২০১৬) ইত্যাদি বাংলা ভাষায় রচিত গ্ৰন্থ। বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী এবং কু-সংস্কার বিরোধী চিন্তা-চৰ্চার ক্ষেত্রে অগ্রদূত আসামের মুষ্টিমেয় লেখকগণের মধ্যে চৌধুরী অন্যতম। অন্ধবিশ্বাস এবং কু-সংস্কারের বিৰুদ্ধে তিনি বিভিন্ন তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বেশ কিছু যুক্তিবাদী প্রবন্ধ লিখেছেন।[১]আসামে যুক্তিবাদী আন্দোলনের প্ৰসারে এই লেখনিসমূহের বিশেষ অবদান রয়েছে। চৌধুরী ডিব্রুগড় জেলার স্থায়ী বাসিন্দা।

সংক্ষিপ্ত জীবনী[সম্পাদনা]

১৯৪৬ সালের ১৯ অক্টোবর তারিখে ডিব্রুগড়ে প্ৰসেনজিৎ চৌধুরীর জন্ম হয়।[১] পিতা ননী গোপাল চৌধুরী এবং মাতা নৰ্মদা চৌধুরী।তিনি ডিব্রুগড় সরকারি বালক বিদ্যালয় থেকে তার উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষা পাস করেন এবং ডিব্রুগড় জেলার ডিএইচএসকে কলেজ থেকে ইংরেজিতে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। চৌধুরী গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। চৌধুরী ছিলেন বইপ্রেমী। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি শেষ করে তিনি ডিব্রুগড়ে 'গ্রন্থালয়' নামে একটি বইয়ের দোকান শুরু করেন। তিনি ১৯৭৮ সালে ডিডিআর কলেজ, চাবুয়ায় প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন। বিশিষ্ট নারীবাদী লেখিকা এবং পণ্ডিত সন্ধ্যা দেবী চৌধুরী তার স্ত্রী।

দেবীর বই "নারী : বন্ধন ও মুক্তি" গ্রন্থটি আসাম প্রকাশনা পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে।[৩] সত্যজিৎ চৌধুরী চৌধুরী দম্পতির একমাত্ৰ পুত্ৰ সন্তান।

গ্ৰন্থরাজি[৪][সম্পাদনা]

  • সমাজ আর সংস্কৃতি (১৯৮৩)
  • ঊনবিংশ শতকের আসামের এক ঝলক (১৯৮৪, ২০১১)
  • ঈশ্বর ইংরেজ ইতিহাস (১৯৮৬)
  • বাস্তব না বিভ্ৰম; অসমে বাঙলংলা ভাষা প্ৰবৰ্তনের ঐতিহাসিক উৎস সন্ধান (১৯৮৬, ২০১১) (শিবনাথ বৰ্মনের সাথে যৌথভাবে)
  • আসামের চা শ্রমিক এবং উনিশ শতকের বুদ্ধিজীবী সমাজ (১৯৮৯)
  • নিষিদ্ধ প্ৰসঙ্গ (১৯৮৯, ২০১১)
  • অতীত অনুসন্ধান (১৯৯০)
  • বিজ্ঞান বনাম অন্ধবিশ্বাস (১৯৯৩, ২০১১)
  • অরুণোদয় (১৯৯৫)
  • ইতিহাস চৰ্চা (১৯৯৫)
  • যুক্তি অযুক্তি অপযুক্তি (১৯৯৫)
  • ব্যাধি ও বিশ্বাস (১৯৯৮)
  • ঊনবিংশ শতাব্দী: সমাজ ও সাহিত্য (২০০১)
  • কার্পেট থেকে ঘাস: জ্যোতি প্রসাদের সাংস্কৃতিক চিন্তাধারার অন্তর্দৃষ্টি (২০০৩)
  • মহারাষ্ট্ৰীয় নবজাগরণ (২০০৫)
  • অন্য এক রবীন্দ্ৰনাথ (২০০৬)
  • সমাজ সংস্কৃতি ইতিহাস (২০০৭)
  • বৃত্তের বাইরে (২০০৮)
  • মনন আর মনীষী (২০০৮)
  • বন্দে মাতরম্‌ (২০১০)
  • রাম-কথা (২০১২)
  • ধৰ্ম ও বিজ্ঞান (২০১৫)
  • উত্তরণ এবং উত্তরাধিকার (২০১৭)
  • প্ৰতিস্ৰোত (২০১৮)
  • জ্যোতিপ্ৰসাদ-বিষ্ণুপ্ৰসাদ (২০১৮) (ইন্দিবর দেউড়ীর সাথে যৌথভাবে)
  • বাল গঙ্গাধর তিলক (২০১৯)
  • গান্ধী ও সিনেমা (২০২২)
  • Socio-Cultural Aspects of Assam in the 19th Century (1994)

সম্পাদিত গ্ৰন্থ
সহ-সম্পাদক যৌথভাবে

ইন্দিবর দেউড়ীর সঙ্গে যৌথভাবে

  • The Turbulent North-East (1996), (Co-editor:M. Ahmed)
বাংলা গ্ৰন্থ
  • বাস্তব না বিভ্ৰম: অসমে বাংলা ভাষা প্ৰবৰ্তনের ঐতিহাসিক উৎস সন্ধানে (২০১২ বাংলা সংস্করণের সম্পাদনা:উদয়ন বিশ্বাস) (সহ-লেখক:শিবনাথ বৰ্মন)
  • রাম কথা (২০১৪)
  • মহারাষ্ট্ৰীয় নবজাগরণ: ব্ৰাহ্মণ্যবাদ-বিরোধী আন্দোলন ও নারী জাগরণের এক অধ্যায়, (২০১৪) (অনুবাদক:বাসুদেব দাস)
  • উনিশ শতক: অসম ও বাংলা প্ৰসঙ্গ (২০১৬)

সাহিত্য সমালোচনা[সম্পাদনা]

আসামের পাঠকদের কাছে যুক্তিবাদী লেখক প্রসেনজিৎ চৌধুরী অন্যতম আকর্ষণীয় নাম। চৌধুরীর লেখার বৈশিষ্ট্য দৃঢ় বস্তুনিষ্ঠতা, গভীর বিশ্লেষণ এবং বিজ্ঞানমনস্কতা। তার সাম্প্রতিক বইগুলির মধ্যে রয়েছে উত্তরণ এবং উত্তরাধিকার, যুক্তিবাদ, ধর্ম ও অযৌক্তিকতা, ধ্রুপদী ঐতিহ্য, অনুসন্ধান এবং ঈশ্বর, অসমীয়া কুসংস্কার, ইতিহাস এবং সাম্প্রদায়িকতা, ধর্ম/কুসংস্কার বনাম ইতিহাস-চর্চা, মন্দির-প্রসঙ্গ, বিজ্ঞানমনস্কতা, প্রার্থনা, শিক্ষক এবং শিষ্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত , আত্মা, মৃত্যু, ধর্ম ও হেমচন্দ্র বড়ুয়া, ধর্ম, ঐতিহ্য, যুক্তিবাদ ও রবীন্দ্রনাথ, দুর্গাপূজা, পৌত্তলিকতা ও পশুবলি, পেরিয়ার নারী চিন্তাধারা, চার্লস ব্র্যাডলো ইত্যাদি।

বিজ্ঞানমনস্কতার বিষয়ে লেখক লিখেছেন,[৫]

যারা যুক্তির উপর ভিত্তি করে চিন্তা করেন, অন্ধভাবে বা নির্বিচারে কোন আচরণ বা বিশ্বাসকে সমর্থন করেন না, তারা কার্যকারণ সম্পর্কের উপর সবচেয়ে বেশি জোর দেন, তারা প্রশ্ন করেন, তারা প্রমাণ খোঁজেন, এইগুলি বিজ্ঞানমনষ্কতার প্রধান বৈশিষ্ট্য

তথ্যসূত্ৰ[সম্পাদনা]

  1. শান্তনু কৌশিক বড়ুয়া (ডিসেম্বর, ২০২০)। অসম ইয়ার বুক, ২০২১গুয়াহাটী: জ্যোতি প্ৰকাশন। পৃষ্ঠা ৮৯৪। আইএসবিএন 978-93-81485-82-8  অজানা প্যারামিটার |Author's article name= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  2. সংকলক এবং সম্পাদক: নিতুল চাংমাই (নভেম্বর, ২০২১)। ঈশ্বর (বিশ্বাস, যুক্তি এবং বিজ্ঞান)। বান্ধব।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  3. সন্ধ্যা দেবী (২০০৭)। "নারী : বন্ধন এবং মুক্তি"গুয়াহাটীhttps://www.scientiabooks.in/। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুলাই, ২০২২  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  4. প্ৰসেনজিৎ চৌধুরী (জানুয়ারী, ২০২২)। গান্ধী ও সিনেমা। বান্ধব।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  5. রাসিদা রহমান (২৪ মাৰ্চ, ২০১৭)। "প্ৰসেনজিৎ চৌধুরীর উত্তরণ এবং উত্তরাধিকার : মনের বন্ধ দোয়ার খোলার এক যাদুকাঠী"https://muktosinta.org/। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুলাই, ২০২২  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য); |publisher= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)