বিষয়বস্তুতে চলুন

পেশেন্স কুপার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পেশেন্স কুপার
১৯৩০ সালে একটি প্রচারণা প্রতিকৃতিতে কুপার
জন্ম৩০ মে, ১৯০৫
মৃত্যু৫ এপ্রিল ১৯৯৩(1993-04-05) (বয়স ৮৭)[]
করাচি, পাকিস্তান
পেশাঅভিনেত্রী
কর্মজীবন১৯২০-১৯৪৬
দাম্পত্য সঙ্গীমির্জা আহমেদ ইস্পাহানি (বি. ১৯২৬; বিবাহবিচ্ছেদ ১৯২৮)
গুল হামিদ খান (বি. ১৯৩০; মৃ. ১৯৩৬)

পেশেন্স কুপার (৩০ মে, ১৯০৫ – ৫ এপ্রিল, ১৯৯৩) ছিলেন একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী এবং বলিউডের প্রথম দিকের মহাতারকাদের মধ্যে অন্যতম। কলকাতার একটি ইঙ্গ-ভারতীয় পরিবারে জন্মগ্রহণকারী কুপার নির্বাক এবং সবাক চলচ্চিত্রে সাফল্যের সাথে কাজ করেছিলেন। তাকে ভারতীয় চলচ্চিত্রে সর্বপ্রথম দ্বৈত চরিত্রে অভিনয়ের কৃতিত্ব দেয়া হয়। তিনি পত্নী প্রতাপ চলচ্চিত্রে জমজ বোনের চরিত্রে এবং কাশ্মীরী সুন্দরী চলচ্চিত্রে মা-মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করে এই খেতাব অর্জন করেন।[] যদিও আনা সালুঙ্কে ইতিপূর্বে ১৯১৭ সালে লঙ্কা দহন চলচ্চিত্রে প্রধান পুরুষ চরিত্র রাম এবং প্রধান নারী চরিত্র সীতা উভয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।[]

মঞ্চনাটকে অভিনয়জীবন

[সম্পাদনা]

কুপার ব্যান্ডম্যান'স মিউজিক্যাল কমেডি নামের একটি ইউরেশিয়ান দলে একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন।[] পরে তিনি জামশেদজি ফ্রেমজি ম্যাডানের করিন্থিয়ান স্টেজ কোম্পানিতে অভিনেত্রী হিসেবে যোগ দেন।

তিনি বিভিন্ন দেশে মঞ্চ পরিবেশনা এবং সঙ্গীতধর্মী নাটকের জন্য ভ্রমণ করেছিলেন। কুপার জার্মানি, পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, জাপান, চীন, ইংল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে সফর করেন। তিনি ইংল্যান্ডে একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং সেই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন।

চলচ্চিত্র অভিনয়জীবন

[সম্পাদনা]
১৯২০-এর দশকে পেশেন্স কুপার।

কুপার নল দময়ন্তী (১৯২০) তে অভিনয় করে সর্বপ্রথম সাড়া ফেলেন। ছবিটিতে কেকি আদাজানিয়া নল চরিত্রে এবং কুপার দময়ন্তী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ছবিটি ম্যাডান থিয়েটারের একটি বড় বাজেটের প্রযোজনা ছিল এবং এটি পরিচালনা করেছিলেন ইউজেনিও দে লিগুরো, যিনি ইতালিতে ফ্যাসিনো দ'ওরো (১৯১৯) এর মতো প্রাচ্যবাদী আকর্ষণী প্রদর্শনীর জন্য পরিচিত ছিলেন। নল দময়ন্তী সেই সময়ে তার বিশেষ আবহের জন্য বিখ্যাত ছিল — নারদের মেরু পর্বত থেকে স্বর্গে আরোহণ, চার দেবতার নলের কলেবর পরিগ্রহ, কালীর সাপে রূপান্তর এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

কুপারের সবচেয়ে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের মধ্যে একটি ছিল পতি ভক্তি (১৯২২)। কুপার এই ছবিতে লীলাবতীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, যেটি জেজে ম্যাডান নিজে পরিচালনা করেছিলেন। ছবির বিষয়বস্তু ছিল নারীদের তাদের স্বামীর প্রতি অনুগত হওয়া উচিত। চলচ্চিত্রটি কুপারের সর্বশ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসাবে বিবেচিত হয়। এছাড়াও চলচ্চিত্রটি একটি ছোট বিতর্ক সৃষ্টি করে। মাদ্রাজ সেন্সর অশ্লীলতার ভিত্তিতে একটি নৃত্য দৃশ্য সরানোর আদেশ দেয়।

কুপার হিন্দি চলচ্চিত্রে প্রথম দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন — পত্নী প্রতাপ (১৯২৩) ছবিতে তিনি দুই বোনের চরিত্রে এবং কাশ্মীরী সুন্দরী (১৯২৪) ছবিতে তিনি মা ও মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।

কুপারের তারকা খ্যাতির একটি প্রধান দিক ছিল আলো এবং প্রযুক্তিগত ভিন্নতা সত্ত্বেও সফলভাবে 'হলিউড লুক' তৈরি। তার স্বতন্ত্র ইঙ্গ-ভারতীয় গড়ন, যেমন কালো চোখ, তীক্ষ্ণ বৈশিষ্ট্য, আবলুস চুল এবং হালকা রঙের ত্বক প্রযুক্তিবিদদের চোখের উচ্চতায় আলোর আমদানি করা কৌশল নিয়ে পরীক্ষা করার সুযোগ দিয়েছিল এবং নির্বাক যুগের হলিউড তারকাদের মতো একটি চেহারা অর্জন করতে সাহায্য করেছিল।

১৯২০-এর দশকে রক্ষণশীল মনোভাবের কারণে চলচ্চিত্র শিল্পে মহিলাদের, বিশেষ করে হিন্দুদের কম সংখ্যার কারণে কুপারের মতো ইঙ্গ-ভারতীয় অভিনেত্রীদের ব্যাপক চাহিদা ছিল। একটানা বেশকয়েকটি সফল চলচ্চিত্রে তার উপস্থিতির জন্য তাকে প্রথম ভারতীয় নারী চলচ্চিত্র তারকা বলা হয়।

পরবর্তী জীবন

[সম্পাদনা]

সাধারণত মনে করা হত কুপার সুপরিচিত ভারতীয় ব্যবসায়ী মির্জা আহমেদ ইস্পাহানিকে বিয়ে করেন এবং ১৯৪৭ সালে তারা পাকিস্তানে চলে যান।[] কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি ২১ বছর বয়সে মির্জা আহমেদ ইস্পাহানিকে বিয়ে করেছিলেন এবং কিছু সময় পরে ১৯২৮ সালে তাদের তালাক হয়ে যায়। তারপর তিনি নির্বাক চলচ্চিত্রের প্রথম দিকের অভিনেতা গুল হামিদ খানকে বিয়ে করেন। ছয় বছর পর তিনি হজকিনস ডিজিজে মারা যান।[] জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি ইস্পাহানির সাথে বন্ধুত্ব রেখেছিলেন। কুপার তার নাম পরিবর্তন করে সাবেরা বেগম রাখেন এবং তার শেষ দিনগুলো তার দুই দত্তক কন্যা জিনাত এবং হালিমার সাথে পাকিস্তানের করাচিতে কাটিয়েছিলেন। তার পালক কন্যা সৈয়দা নাফীস রিজভী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের হিউস্টনে থাকেন। তিনি তার জীবদ্দশায় ১৭ জন সন্তানকে লালন-পালন করেছিলেন এবং/অথবা দত্তক নিয়েছিলেন।[] কুপার ১৯৯৩ সালে মারা যান।[]

চলচ্চিত্র তালিকা

[সম্পাদনা]

নির্বাক চলচ্চিত্র

[সম্পাদনা]
বছর চলচ্চিত্র পরিচালক টীকা
১৯২০ নল দময়ন্তী ইউজেনিও দে লিগুয়ারো
১৯২১ বিশু অবতার জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়
মোহিনী
বিষ্ণু অবতার
মীরাবাই
ধ্রুব চরিত্র জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়
নল দময়ন্তী জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়
ধ্রুব চরিত্র ইউজেনিও দে লিগুয়ারো
বেহুলা সি. লেগ্র্যান্ড []
বিষ্ণু অবতার সি. লেগ্র্যান্ড
১৯২২ সতী
রত্নাবলী জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়
তারা দ্য ডান্সার
পতি ভক্তি জামশেদজি ফ্রেমজি ম্যাডান
কামলে কামিনী শিশিরকুমার ভাদুড়ী
রামায়ণ জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায় ধারাবাহিক
কামলে কামিনী
গঙ্গাবতরণ
রামায়ণ ইউজেনিও দে লিগুয়ারো ধারাবাহিক
নর্তকী তারা জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়
রত্নাবলী সি. লেগ্র্যান্ড
রাজা ভোজ
মাতৃ স্নেহ
মোহিনী শিশিরকুমার ভাদুড়ী
ভাগীরথী গঙ্গা
রাজকুমারী বুদুর জামশেদজি ফ্রেমজি ম্যাডান
লায়লা মজনু জামশেদজি ফ্রেমজি ম্যাডান
1923 মাতৃ স্নেহ জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়
কামলে কামিনী
নুরজাহান জামশেদজি ফ্রেমজি ম্যাডান
১৯২৪ পত্নী প্রতাপ জামশেদজি ফ্রেমজি ম্যাডান ধারাবাহিক
তুর্কি হুর জামশেদজি ফ্রেমজি ম্যাডান
ধ্রুব চরিত্র
১৯২৫ সতী লক্ষ্মী জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়
অদূর চেলি জামশেদজি ফ্রেমজি ম্যাডান
সংসার চক্র
কাশ্মীরি সুন্দরী
প্যাম্পারড ইয়ুথ
সতী লক্ষ্মী
তুর্কি হুর
১৯২৬ প্রফুল্ল জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়
জয়দেব জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়
ধর্মপত্নী জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়
জয়দেব
কৃষ্ণকান্তের উইল
দুর্গেশনন্দিনী
১৯২৭ জানা প্রিয়নাথ গাঙ্গুলি
কৃষ্ণকান্তের উইল প্রিয়নাথ গাঙ্গুলি
দুর্গেশনন্দিনী প্রিয়নাথ গাঙ্গুলি
চণ্ডীদাস জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়
১৯২৮ আঁখ কা নাশা
ভ্রান্তি
হুর-ই-আরব রতনশা সিনোরে
ভ্রান্তি জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়
১৯২৯ গিরিবালা মধু বসু
কপালকুণ্ডলা প্রিয়নাথ গাঙ্গুলি
১৯৩০ ভারত রমণী জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়
রাজসিংহ
ভারতী বালক
বামন অবতার
রাজসিংহ জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়
কাল পরিণয় প্রিয়নাথ গাঙ্গুলি
গণেশ জন্ম জাল আরিয়াহ

সবাক চলচ্চিত্র

[সম্পাদনা]
বছর চলচ্চিত্র পরিচালক টীকা
১৯৩১ বিবাহ বিভ্রাট জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়
আলাদিন অ্যান্ড দ্য ওয়ান্ডারফুল ল্যাম্প জাল আরিয়াহ
সামাজ কা শিকার
সত্যবাদী রাজা হরিশচন্দ্র জামশেদজি ফ্রেমজি ম্যাডান
ভারতী বালক আগা হাশর কাশ্মীরি
১৯৩২ পতি ভক্তি
ছত্র বকাবলী জামশেদজি ফ্রেমজি ম্যাডান ফ্যান্টাসি
বিল্বমঙ্গল ফ্রেম ম্যাডান
আলি বাবা অ্যান্ড দ্য ফর্টি থিভস জামশেদজি ফ্রেমজি ম্যাডান
এডুকেটেড ওয়াইফ
আলিবাবা ও চল্লিশ চোর
হঠিলি দুলহন জামশেদজি ফ্রেমজি ম্যাডান
১৯৩৩ মধুর মুরলি
নাকলি ডাক্তার জামশেদজি ফ্রেমজি ম্যাডান
ধ্রুব জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়
জেহেরি সাপ জামশেদজি ফ্রেমজি ম্যাডান
১৯৩৪ কিসমত কা শিকার
ভক্ত কে ভগবান ভি. এম. গুঞ্জাল
গরিব কি দুনিয়া সোরাবজি কেরাওয়ালা
আনোখা প্রেম এফ. আর. ইরানি
কন্যা বিক্রয় মোহাম্মদ হোসেন
সখি লুটেরা সোরাবজি কেরাওয়ালা
১৯৩৫ দিল কি পিয়াস জামশেদজি ফ্রেমজি ম্যাডান
আসমত কা মোতি ফ্রেম সেঠনা
খুদাদাদ
জআওয়ানি কা নাশা এফ. আর. ইরানি
প্রেম কি রাগিনী
সুলগতো সংসার জি. আর. সেঠি
মার্ডারার
মেরা পেয়ারা এজরা মির
১৯৩৬ নুর-ই-ওয়াহদাত জি. আর. সেঠি
সীতা হরণ
মোহাব্বত কা তুফান ফ্রেম সেঠনা
বাগী সিপাহী এ. আর. কারদার
খাইবার পাস গুল হামিদ
১৯৩৭ ফখর-ই-ইসলাম নানুভাই ভাকিল
১৯৪৩ রানি প্রমথেশ চন্দ্র বরুয়া
১৯৪৪ চাঁদের কলঙ্ক প্রমথেশ চন্দ্র বরুয়া
ইরাদা এস. শামসুদ্দিন
১৯৪৬ খান সাহেব ফ্রেম সেঠনা

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Patience Cooper"Cinemaazi। মে ৪, ২০২৪। এপ্রিল ২৭, ২০২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৪, ২০২৫ 
  2. "Personalities of Indian Cinema - Silent screen stars."। www.indiaheritage.org। ১৯ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-১৬ 
  3. "Dadasaheb Phalke - Father of Indian Cinema"। Dadasaheb Phalke Academy। ১৮ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১২ 
  4. "Restored in Paris, Patience Cooper's 1921 film to be screened in Kolkata"Times of India। মার্চ ৫, ২০২৪। 
  5. Article from Economic & Political Weekly[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. "Gul Hamid: The silent star who was heard"The Express Tribune। মে ১৭, ২০১৪। 
  7. "Bollywood Divas"Hindustan Times। ৯ মে ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ 
  8. "1921 film starring Patience Cooper, India's 1st Anglo-Indian actress, restored in Paris lab"Times of India। নভেম্বর ৩০, ২০২২। 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]