পাট জিনোম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

পাটের জিনোম হল পাটের জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের নীলনকশা। জিনোমকে সহজ ভাষায় বলা হয় জীবনের নীলনকশা। বাংলা বর্ণমালায় যেমন আছে পঞ্চাশটি বর্ণ তেমনি জিনোমের আছে চারটি মাত্র বর্ণ।এদের বিভিন্ন বিন্যাস নির্ধারণ করে জীবের ভিন্নতা। তাই সহজ ভাষায় জিনোম সিকোয়েন্সিংকে বলা যায় এই বিন্যাসের পাঠোদ্ধার করা। পাটের জিনোমে কী কী ধরনের জিন আছে তা জানা থাকলে এই জিনগুলোকে শনাক্ত করে সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমেই উন্নত জাতের পাট উদ্ভাবন করা সম্ভব। ১৬ জুন ২০১০ একদল বাংলাদেশী বিজ্ঞানী পাটের ড্রাফট জিনোম উন্মোচন করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।[১]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

২০০৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে পেঁপের জিনোম সিকোয়েন্স সম্পন্ন হওয়ার পরপরই বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম একদল দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী, তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং কয়েকজন দেশপ্রেমিক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বাংলাদেশের জন্যও একই রকম একটি সাফল্য নিয়ে আসা যায় কি না_এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। আর এভাবেই তৈরি হয় 'স্বপ্নযাত্রা'র প্রাথমিক দলটি। এরপর প্রায় দুই বছর ধরে চলতে থাকে আর্থিক অনুদান জোগাড় করার তোড়জোড়, গবেষণা সম্পর্কিত দিকনির্দেশনা এবং তথ্য পর্যালোচনা। অবশেষে ২০০৯ সালের ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা দেয়, বাংলাদেশেই করা হবে পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং এবং সরকার এ ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা দেবে। তিনটি ভিন্ন ধারার প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে, অর্থাৎ গবেষণার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে ডাটাসফট ও গবেষণালব্ধ জ্ঞানের সুফলকে মাঠপর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার সহায়ক হিসেবে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটকে নিয়ে গঠিত দলটি তাদের কার্যক্রম শুরু করে।

গবেষণায় যারা যুক্ত[সম্পাদনা]

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) ও বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সংস্থা ডাটা সফট যৌথভাবে গবেষণার কাজটি করেছে।

গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ ও কারিগরি সহায়তা পাওয়া গেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াইইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স মালয়েশিয়ার কাছ থেকে। গবেষণার বিভিন্ন স্তরে প্রায় দুই কোটি তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এই তথ্য ব্যাখ্যা করতে প্রয়োজন পড়েছে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন একটি মিনি সুপার কম্পিউটারের। ৪২টি কম্পিউটার একসঙ্গে যুক্ত করে মিনি সুপার কম্পিউটার তৈরি করা হয়।

২০০৮ সালে দেশের ৪২ জন বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদকে নিয়ে তৈরি ‘স্বপ্নযাত্রা’ নামক একটি উদ্যোগের মাধ্যমে এই গবেষণার সূত্রপাত। পরে ২০১০ সালে নতুন উদ্যোমে আবারও গবেষণাটি শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুজীব বিভাগের ১১ জন গবেষক ও ডাটা সফটের ২০ জন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তথ্য বিশ্লেষণের কাজগুলো করেছেন[২]

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহম্মদজাফর ইকবাল ও ডাটা সফটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব জামান তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক কাজগুলো তত্ত্বাবধান করেন।

স্বপ্নযাত্রা যেভাবে সম্পন্ন হয়েছে[সম্পাদনা]

জিনোম সিকোয়েন্সিং-এর প্রথম পদক্ষেপটি ছিল পাট থেকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে জিনোমিক ডিএনএ আলাদা করা। এক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে তোষা পাট। এরপর এই ডিএনএর সিকোয়েন্স নির্ণয় করা হয়েছে কিছু অত্যন্ত আধুনিক সিকোয়েন্সার ব্যবহার করে। এগুলো অত্যন্ত কম সময়ে একবারেই অনেক সিকোয়েন্স নির্ণয় করতে পারে যা পরবর্তী জেনারেশন সিকোয়েন্সিং নামে পরিচিত। পাটের জিনোমের আকারের প্রায় ৫০ গুণ সমতুল্য ডিএনএ সিকোয়েন্স করা হয়েছে যার ফলে প্রায় ১০০ বিলিয়নের মতো অ ঈ এ ঞ এর সঠিক ক্রম নির্ণয় করা গেছে। এই ক্রমের সঠিক সমন্বয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে বিভিন্ন উন্মুক্ত এবং বাণিজ্যিক সফটওয়ার। এছাড়া জিনোম সিকোয়েন্স থেকে প্রাপ্ত তথ্যের যথার্থতা যাচাই করতে নির্ণয় করা হয়েছে ট্রান্সক্রিপ্টোম এর সিকোয়েন্স। কম্পিউটেশনে ব্যবহৃত হয়েছে উচ্চকার্যক্ষমতা সম্পন্ন বিভিন্ন সুপার কম্পিউটার।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "দৈনিক প্রথম-আলোর পাট জিনোম উন্মোচন সংক্রান্ত রিপোর্ট"। ২০১৩-০৮-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-১২ 
  2. ""পাটের জীবনরহস্য""। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৬-১৭ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]