পরিযায়ী শ্রমিক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কোভিড-১৯ লকডাউনের সময় ভারতের রাজধানী দিল্লিতে পরিযায়ী শ্রমিক
ঘানাতে এক পরিযায়ী হকার বিক্রির জন্য তাঁর মাথায় রঙিন বস্ত্র নিয়ে যাচ্ছেন

পরিযায়ী শ্রমিক বলতে কাজের জন্য যারা নিজ দেশের মধ্যে বা বাইরে যান তাঁদের বোঝায়। পরিযায়ী শ্রমিকগণ সাধারণত যে দেশ বা অঞ্চলে কাজ করেন সেখানে স্থায়ীভাবে থাকতে চান না।

যেসব পরিযায়ী শ্রমিক নিজ দেশের বাইরে কাজ করেন তাঁদের বিদেশি শ্রমিক বলে। তাঁদেরকে এক্সপ্যাট্রিয়েট বা অতিথি শ্রমিকও বলা হয়, বিশেষ করে যাদেরকে নিজ দেশ ত্যাগের আগে কাজ করার জন্য আমন্ত্রিত করা হয়েছে।

২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা অনুমান করেছে যে বিশ্বজুড়ে ১৬.৯ কোটি আন্তর্জাতিক পরিযায়ী শ্রমিক বিদ্যমান।[১] কিছু দেশে লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক আছে। কিছু পরিযায়ী শ্রমিক অনিথিভুক্ত অভিবাসী বা দাস

বিশ্বব্যাপী[সম্পাদনা]

উত্তর আমেরিকা[সম্পাদনা]

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র[সম্পাদনা]

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় পরিযায়ী শ্রমিকগণ, ১৯৩৫

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১.৪ কোটি অস্থায়ী কর্মী বর্তমান। এক অনুমান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১.০৭ কোটি অনথিভুক্ত পরিযায়ী শ্রমিক বিদ্যমান, যার বেশিরভাগই মেক্সিকোসহ মধ্য আমেরিকার একাধিক দেশ থেকে আগত। এই কর্মীগণ প্রায়শয় জীবিকার খোঁজে ও তাঁদের পরিবারের আর্থিক স্থিতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করেন।[২] এই কর্মীগণ সীমান্ত পার করার মতো ঝুঁকি নেন, চরম তাপমাত্রা ও যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি খোঁজার জন্য সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের হাতে ধরা পরার বিপদের সম্মুখীন হন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে তাঁদের প্রায় ভাষা সমস্যা, কালচার শক ও বৈষম্য ভোগ করতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি কর্মীদের ৬৫% লাতিনো এবং এর অর্ধেক সংখ্যক অনথিভুক্ত।[৩]

এশিয়া[সম্পাদনা]

১৯৭৩ সালে পারস্য উপসাগর অঞ্চলে, যার মধ্যে উপসাগর সহযোগিতা পরিষদ অন্তর্গত, তেল উৎপাদনের হার বৃদ্ধির ফলে তেল, নির্মাণ ও শিল্প ক্ষেত্রে শ্রমের এক অভাবনীয় চাহিদার সৃষ্টি হয়েছিল।[৪] উন্নয়নের জন্য এক শ্রমশক্তির প্ররয়জন। বিদেশি শ্রমিকদের দ্বারা এই চাহিদা পূরণ করা হয়েছিল, বিশেষত আরব রাষ্ট্র থেকে, পরে এশীয় দেশ থেকে।[৫]

ভারত[সম্পাদনা]

ভারতের কাছে অত্যন্ত বেশিসংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক বিদ্যমান এবং এর এক-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা পরিযায়ী। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, পরিযায়ীদের জনসংখ্যা প্রায় ৪৫.৫৮ কোটি, যা মোট জনসংখ্যার (প্রায় ১২১ কোটি) ৩৭.৬৮%। এর মধ্যে আন্তঃরাজ্য ও অন্তঃরাজ্য পরিযায়ী অন্তর্গত। ৪৫.৫৮ পরিযায়ী দের মধ্যে ৬৭.৯৩% মহিলা ও ৩২.০৭% পুরুষ। মহিলাদের পরিভ্রমণের প্রধান কারণ বিবাহ[৬][৭] এবং মোট ৬.৫৪ কোটি মহিলা পরিযায়ীদের মধ্যে ৪.২৪ কোটি পরিযায়ীদের কাছে এটি পরিভ্রমণের কারণ। পুরুষদের পরিভ্রমণের প্রধান কারণ কাজ বা চাকরি এবং মোট ৩.২৮ কোটি পুরুষ পরিযায়ীদের মধ্যে ১.২৩ কোটি পরিযায়ীদের কাছে এটি পরিভ্রমণের কারণ।[৬] ভালো কাজের জন্য বিগত দশকে বাংলাদেশনেপাল থেকে ভারতে বহুসংখ্যক ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটেছে। ওভারসিজ ডেভলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের গবেষকগণ পর্যবেক্ষণ করলেন যে গন্তব্যে যাওয়া ও বাড়ি ফেরার সময় এই পরিযায়ী শ্রমিকদের হয়রানি, হিংসাবৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে।[৮]

কোভিড-১৯ মহামারীর সময় ভারতের পরিযায়ী শ্রমিকদের একাধিক কষ্টে ভুগতে হয়েছে। লকডাউনের জন্য একাধিক কারখানা ও কর্মস্থল বন্ধ হওয়ার ফলে লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকদের আয়ের ঘাটতি, খাদ্য সঙ্কট ও তাঁদের ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার সঙ্গে জীবন কাটাতে হয়েছিল।[৯][১০] এরপর পরিযায়ীদের বেশিরভাগ ও তাঁদের পরিবার ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েছিল।[১১] লকডাউনের জন্য কোনো পরিবহন মাধ্যম না থাকার জন্য হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিকদের হেঁটে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল।[১২] লকডাউনের জন্য ৫ মে পর্যন্ত ক্ষুধা, আত্মহত্যা, রাস্তা ও রেল দুর্ঘটনা,[১৩] পুলিশদের লাঠিচার্জ[১৪] ইত্যাদি কারণে ৩০০ জনের বেশি মৃত্যুর কথা প্রতিবেদিত হয়েছিল।[১৫][১৬] মৃতদের বেশিরভাগ প্রান্তিক পরিযায়ী শ্রমিক।[১৭][১৮] চালু হওয়ার এক মাসের মধ্যে বাড়ি ফেরার পথে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের মধ্যে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।[১৯][২০]

লাতিন আমেরিকা[সম্পাদনা]

লাতিন আমেরিকায় অভিবাসীরা প্রায় যেকোনো কাজে অংশগ্রহণ করে, সাধারণত জমিতে। কাজের মধ্যে কঠোর কায়িক পরিশ্রম, অনেকক্ষেত্রে অযথা মূল্যের বিনিময়ে। উইলিয়াম ট্রিপলেটের মাইগ্র্যান্ট ফার্মওয়ার্কার্স নিবন্ধ অনুযায়ী, গড় বার্ষিক আয় $৭,৫০০ এবং ৬১% পরিযায়ীদের আয় দারিদ্র্যসীমার নিচে। নিজস্ব সাংস্কৃতিক সত্ত্বা হারানোর পর অভিবাসীগণ তাঁদের পরিবারদের খাওয়ানোর পথ খোঁজেন এবং তাঁরা শোষণের কবলে পরে যান। ট্রিপলেট আরও পর্যবেক্ষণ করলেন যে ১৯৮৯ থেকে প্রতি ঘণ্টায় তাঁদের গড় প্রকৃত বেতন (১৯৯৮ মার্কিন ডলারে) $৬.৮৯ থেকে $৬.১৮-এ নেমে এসেছিল এবং অভিবাসীরা কর্মসংস্থানে কায়িক ও আর্থিক শোষণে ভোগেন।[২১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Labour migration" 
  2. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; :3 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  3. "Biden and businesses agree on one thing: U.S. Needs immigrant workers"Politico 
  4. Abella, Manolo (১৯৯৫)। Asian migrant and contract workers in the Middle East। পৃষ্ঠা 418–423। 
  5. Kapiszewski, Andrzej (২০০৬)। "Arab versus Asian migrant workers in the GCC countries"। Ited Nations Expert Group Meeting on International Migration and Development in the Arab Region 
  6. Kumar, Shailendra; Choudhury, Sanghamitra (২০২১-০১-০১)। "Migrant workers and human rights: A critical study on India's COVID-19 lockdown policy"। Social Sciences & Humanities Open (ইংরেজি ভাষায়)। 3 (1): 100130। আইএসএসএন 2590-2911এসটুসিআইডি 234161193 Check |s2cid= value (সাহায্য)ডিওআই:10.1016/j.ssaho.2021.100130অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  7. Choudhury, Sanghamitra; Kumar, Shailendra (নভেম্বর ২০২২)। "Gender Discrimination and Marginalization of Women in North‐East India"Journal of Public Affairs (ইংরেজি ভাষায়)। 22 (4)। আইএসএসএন 1472-3891এসটুসিআইডি 234012283 Check |s2cid= value (সাহায্য)ডিওআই:10.1002/pa.2625 
  8. Samuels, F. et al. (2012) Stories of harassment, violence and discrimination: migrant experiences between India, Nepal and Bangladesh. Overseas Development Institute Briefing Paper ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে
  9. Slater, Joanna; Masih, Niha (২৮ মার্চ ২০২০)। "In India, the world's biggest lockdown has forced migrants to walk hundreds of miles home"The Washington Post। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০২০ 
  10. Singh, Kanika (৬ এপ্রিল ২০২০)। "Coronavirus outbreak: Ensuring water, hygiene facilities for migrant labourers can safeguard millions stranded during shutdown"Firstpost। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০২০ 
  11. Abi-Habib, Maria; Yasir, Sameer (২৯ মার্চ ২০২০)। "India's Coronavirus Lockdown Leaves Vast Numbers Stranded and Hungry"The New York Timesআইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০২০ 
  12. Rashid, Omar; Anand, Jatin; Mahale, Ajeet (৪ এপ্রিল ২০২০)। "India coronavirus lockdown | Migrant workers and their long march to uncertainty"The Hinduআইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০২০ 
  13. Gettleman, Jeffrey; Raj, Suhasini; Kumar, Hari (৮ মে ২০২০)। "As India Reopens, Deadly Accidents Break Out"The New York Timesআইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০২০ 
  14. Mohanty, Debabrata (১৫ মে ২০২০)। "56-year-old migrant dies on road to home, another dies after police lathi charge"Hindustan Times 
  15. Elsa, Evangeline (১৫ এপ্রিল ২০২০)। "The human cost of India's coronavirus lockdown: Deaths by hunger, starvation, suicide and more"Gulf News। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০২০ 
  16. "Suicide leading cause for over 300 lockdown deaths in India, says study"The Economic Times। ৫ মে ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০২০ 
  17. Vij, Shivam (১৩ এপ্রিল ২০২০)। "More than 300 Indians have died of the coronavirus, and nearly 200 of the lockdown"ThePrint। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০২০ 
  18. Agarwal, Kabir (১০ মে ২০২০)। "Not Just the Aurangabad Accident, 383 People Have Died Due to the Punitive Lockdown"The Wire। সংগ্রহের তারিখ ১০ মে ২০২০ 
  19. Elsa, Evangeline (৩১ মে ২০২০)। "Coronavirus in India: 80 migrant workers have died on Shramik Special trains, Indian tweeps furious"Gulf News। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-৩১ 
  20. "Indian Authorities Probe Deaths of Migrant Workers on Trains"The New York Times। Associated Press। ২৯ মে ২০২০। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০২০ 
  21. Triplett, William. "Migrant Farmworkers." CQ Researcher 8 October 2004: 829–52. Web. 6 November 2013.

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]