পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়
অবস্থান
Map

তথ্য
ধরনসরকারি স্কুল
নীতিবাক্যজ্ঞানই শক্তি
প্রতিষ্ঠাকাল১৮৮৭; ১৩৬ বছর আগে (1887)
বিদ্যালয় বোর্ডমাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, বরিশাল
সেশনজানুয়ারি–ডিসেম্বর
ইআইআইএন১০২৪৭৭ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রধান শিক্ষকমোঃ রুহুল আমিন
শ্রেণী৩য়–১০ম
লিঙ্গছেলে
বয়স০৭ ১৪ পর্যন্ত
ভাষাবাংলা
শিক্ষায়তন৭.০০৬ একর
ক্রীড়াফুটবল, ক্রিকেট
EIIN১০২৪৭৭
ওয়েবসাইটpgjhs.edu.bd

পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলার একটি স্বনামধন্য ও ঐতিহাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে ভালো পড়াশুনা করানো হয়।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

সময়ের গতিময়তা পটুয়াখালী শহরের ক্ষুদ্র পরিসরকে পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মাধ্যমে নতুন রূপদান করেছে। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ এর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এর গৌরবান্বিত পটুয়াখালী জেলার বক্ষস্থলে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহ্য মণ্ডিত সুবৃহৎ পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়টি।

এই বিদ্যালয়টি পটুয়াখালী শহরের প্রথম হাই স্কুল এবং দালান। ১৮৭১ সালে পটুয়াখালী মহাকুমার কাজ শুরু হয়। পটুয়াখালী প্রথম ম্যজিস্ট্রিসি ক্ষমতা সম্পন্ন মূন্সেফ ছিলেন স্বর্গীয় ব্রজমোহন দত্ত তখন শুরু হল নবজাগরণ। এ জাগরণের জোয়ারে জল সিঞ্চন করেছিলেন অশ্বিনীকুমার দত্ত, কংগ্রেস নেতা সতীন সেনের পিতা নবীন চন্দ্র সেন, নেতা হরিলাল দাস গুপ্তের পিতা উমেশচন্দ্র দাস গুপ্ত, ঢাকা ও বরিশাল থেকে আগত এবং স্থানীয় উকিল বৃন্দ ও সুধি বৃন্দ।বর্তমান পুরান বাজার সোনালী ব্যাংক বিল্ডিং এর তৎকালীন মালিক অক্ষয়কুমার দে এর নিজস্ব জায়গায় (বর্তমান জেলা ডাকঘরের কাছে) গোলপাতা নির্মিত ঘর স্থাপনের মাধ্যমে এ বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে শ্রদ্ধেয় রস রঞ্জন পাল নামের অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট এর প্রধান শিক্ষকতায় "পটুয়াখালী এন্ট্রাস স্কুল" নামে বিদ্যালয়টির পথ চলা শুরু হয়।[১]

বিদ্যালয়টির বর্তমান ছাত্রাবাস ও পূর্ব খেলার মাঠটি ছিল চাষাবাদের জমি। ১৮৮৪ সালে তদানীন্তন এস.ডি ও ফয়েজ উদ্দিন হোসেন জায়গাটি মালিকের কাছ থেকে পত্তনি নেন এবং সরকারি অনুদান ও স্থানীয়ভাবে আদায়কৃত চাঁদার সাহায্যে আট কক্ষ বিশিষ্ট একটি একতলা দালান নির্মাণ করেন।

১৮৮৭ সালে মহারানী ভিক্টোরিয়ার রাজত্বকালের ৫০ বছর পূর্তিতে "গোল্ডেন জুবিলী" (সুবন্ত জয়ন্তী) উৎসব উপলক্ষে বিদ্যালয়টি সাবেক গোলপাতার ঘর থেকে উক্ত নব নির্মিত দালানে স্থানান্তরিত করা হয় এবং জুবিলী উৎসবের স্মারক হিসেবে বিদ্যালায়টির নামকরণ করা হয় "পটুয়াখালী জুবিলী হাই ইংলিশ স্কুল"

১৯১২ সালে তদানীন্তন সরকার সরকারিকরণের উদ্দেশ্যে বিদ্যালয় সংলগ্ন ১৫ বিঘা জমি হুকুমদখল করে শিক্ষা বিভাগের হাতে দেয়। ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কায় কার্যনির্বাহী কমিটি বিদ্যালয়টি সরকারি পরিচালনায় দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পক্ষান্তরে বার্ষিক এক টাকা খাজনায় ওই জমি বিদ্যালয়ের নামে স্থায়ী লিজ নিয়ে ভবন সম্প্রসারণ করা হয়। অল্পদিনে বিদ্যালয়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে এবং ১৯১৭ সালে বিদ্যালয়টি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী অনুমোদন পায়। ওই সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন বরদাকান্ত সেন। ১৯৬১ সালে বিজ্ঞান বিভাগ চালুর জন্য স্কুলটি ঢাকা বোর্ডের অনুমোদন পায়। ১৯৬২-৬৩ শিক্ষাবর্ষে স্কুলটিকে ‘মালটি ল্যাটার‍্যাল স্কীম’ এর অধীনে নিয়ে বহুমুখী উন্নতি করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১৫ নভেম্বর জাতীয়করণ করা হয়। নামকরণ করা হয় ‘পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়’।

২০১২ সালের বিদ্যালয়টির অগণিত বর্তমান ও সাবেক ছাত্র শিক্ষকের উপস্থিতিতে জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে ইহার প্রতিষ্ঠার ১২৫ বছর পূর্তি উৎসব উদযাপিত হয়।[২]

প্রাতিষ্ঠানিক রূপরেখা[সম্পাদনা]

প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা[সম্পাদনা]

স্কুলে দুটি অধিবেশনে (শিফ্‌ট) শিক্ষাদান করা হচ্ছে যথা: প্রভাতী অধিবেশন(মর্নিং শিফট) এবং দিবাকালীন অধিবেশন(ডে শিফট)। সকাল ৭.৩০ থেকে প্রভাতী অধিবেশন এবং দুপুর ১২.২০ থেকে দিবা অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু হয়। । আবার প্রতিটি শিফটের প্রতি শ্রেণীর ছাত্র এর পরিমান অনুযায়ী শাখায় ভাগ করা হয়েছে। মূলত শাখা যষ্ঠ শ্রেণী থেকে শুরু। অভিজ্ঞ এবং দক্ষ শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে স্কুলটিতে উচ্চমানের শিক্ষা প্রদান করা হয়। এটি বালক বিদ্যালয় হলেও এখানে পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও শিক্ষকতা করেন।

অবকাঠামো[সম্পাদনা]

১৩১ বছরের প্রাচীন বিদ্যালয়টি। বর্তমানে বিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবন সহ (প্রধান ভবন) একাডেমিক ভবনের সংখ্যা ৫টি। স্কুলে ১টি মিলনায়তন, ১টি মসজিদ, ১টি হোস্টেল, ১টি গ্যারেজ, ১টি শিক্ষক হোস্টেল, ১টি অভিভাবক শেড, প্রধান শিক্ষকের বাসভবন, সম্মুখে সমাবেশ(এসেম্বলির) এর জন্য ১টি মাঠ, পাশে একটি বড় খেলার মাঠ, ১টি ভলিবল কোর্ট, ব্যাডমিন্টন কোর্ট, পশ্চাৎ পার্শ্বে ১টি পুকুর, গাছে ঘেরা প্রাঙ্গণ রয়েছে।

শিক্ষা সুবিধাসমূহ[সম্পাদনা]

এই বিদ্যালয়ে, ১ টি গ্রন্থাগার, ১টি কম্পিউটার ল্যাবরেটরি, ১টি মিলনায়তন রয়েছে। বিদ্যালয়ে প্রতিবছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন এবং শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসফরের ব্যবস্থা করা হয়।

সহশিক্ষা কার্যক্রম[সম্পাদনা]

শিক্ষার্থীদের জন্য চালু আছে বিভিন্ন ক্লাব

  • [বাংলাদেশ স্কাউটস]
  • বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট
  • বিতর্ক ক্লাব (ডিবেটিং ক্লাব)
  • ক্রিকেট দল
  • ফুটবল দল

আবাসন ব্যবস্থা[সম্পাদনা]

দূরের শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয়ের নিজস্ব আবাসন ব্যবস্থা আছে। এটি স্কুল প্রাঙ্গণের ভেতরেই অবস্থিত। এতে আসন পেতে শ্রেণি-শিক্ষকের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক বরাবর আবেদন করতে হয়।

ফলাফল[সম্পাদনা]

পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় যেহেতু পটুয়াখালী এর আশেপাশের এলাকার প্রথম দিকের বিদ্যালয়, তাই স্বাভাবিকভাবেই শুরু থেকেই পড়াশোনার ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করছে, যা আজও অব্যাহত আছে। বিদ্যালয়টি শুরু থেকে সুনাম অর্জন করে আসছে। ১৯৩১ সালে বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা ছিল ২৩৩ জন। ১৯৩২ ও ১৯৩৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এ স্কুল থেকে শতকরা ৭১ দশমিক ৪ ও ৬৬ দশমিক ছয়জন ছাত্র উত্তীর্ণ হন। ১৯৩৪ সালে শতকরা ৮৮ দশমিক দুইজন ছাত্র উত্তীর্ণ হন। ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার শতকরা ৯৯ ভাগ।

ভর্তি প্রক্রিয়া[সম্পাদনা]

স্কুলটিতে ৩য় থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা প্রদান করা হয়। সাধারণত ৩য়, ৬ষ্ঠ ও ৯ম শ্রেণিতে (৬ষ্ঠ ও ৯ম শ্রেণিতে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে) ছাত্র ভর্তি করা হয়। ভর্তিচ্ছুরা নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করে। তারপর তাদের ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়। যেসব ছাত্র ভর্তি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করে তারাই ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়।

বেতন[সম্পাদনা]

সরকারি স্কুল হওয়ায় এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনার খরচ অনেক কম। প্রতি মাসে বেতনের সাথে টিফিন ফি নেয়া হয়। হোস্টেলের ছাত্রদের আলাদা ফি দিতে হয়।

শিক্ষার্থীদের পোশাক[সম্পাদনা]

স্কুলের নির্দিষ্ট পোশাক হল সাদা শার্ট (ফুলহাতা বা হাফহাতা দুটোই গ্রহণযোগ্য)। প্রভাতী অধিবেশন এর জন্য নেভি ব্লু ফুল প্যান্ট এবং দিবাকালীন অধিবেশনের জন্য সাদা ফুল প্যান্ট। উভয় অধিবেশনের জন্য সাদা কেড্‌স ও মোজা। এছাড়া শীতকালে নীল রঙের সোয়েটারও পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। শার্টের বাম পকেটে স্কুলের মনোগ্রামযুক্ত ব্যাজ। ২০০৯ সাল হতে ছাত্রদের পরিচয়পত্র প্রদান করা হচ্ছে। শার্ট ইন করে পরতে হয় এবং কালো বেল্ট পরা আবশ্যক।

খেলাধুলা[সম্পাদনা]

খেলাধুলার ক্ষেত্রে অত্র স্কুলের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ আছে।

উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন ছাত্র[সম্পাদনা]

বিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষার্থীরা দেশ এবং দেশের বাইরে নানান গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছেন এবং ছিলেন। এর মধ্যে রয়েছেন,

  • ড. দেবী প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী।
  • আরএন সেনগুপ্ত (আই.এ.এস), পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্য সচিব।
  • অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান মিয়া, বাংলাদেশের সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী।
  • ড. মশিউর রহমান, সাবেক সচিব ও সরকারের অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা।
  • মজিবর রহমান তালুকদার, সাবেক এমপি।
  • মো. হাবিবুর রহমান মিয়া, সাবেক এমপি।
  • বিচারপতি এ কে বদরুল হক।
  • বিচারপতি মো. নিজামুল হক (নাসিম)।
  • আনোয়ারুল করিম চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি।
  • অ্যাডভোকেট মোঃ আফজাল হোসেন,গবেষণা সম্পাদক,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
  • ডা.মোহাম্মদ আব্দুল বারী

প্রমুখ।

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "PATUAKHALI GOVT. JUBILEE HIGH SCHOOL"www.barisalboard.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-২০ 
  2. "125th founding day of a Patuakhali school"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-২০