নিষ্কামকর্ম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

নিষ্কামকর্ম (সংস্কৃত: निष्कामकर्म) হলো অহংমুক্ত বা আকাঙ্ক্ষাহীন কর্ম, কোনো ফলের প্রত্যাশা ছাড়াই সম্পাদিত কর্ম, এবং মুক্তির কর্মযোগ পথের কেন্দ্রীয় নীতি। ধারণাটির আধুনিক প্রবক্তারা যোগের নীতি অনুসরণ করে সাফল্য অর্জনের উপর চাপ দেয়,[১]  এবং ব্যক্তিগত লক্ষ্য ও কার্যাবলী অতিক্রম করার সময় অধিকতর ভালোর জন্য অনুসরণ করে।[২][৩][৪] এটি ভগবদ্গীতার কেন্দ্রীয় বার্তা হিসেবে সুপরিচিত হয়ে উঠেছে।[৫]

ভারতীয় দর্শনে, কর্ম তাদের সহজাত গুণ অনুসারে তিনভাগে বিভক্ত — নিষ্কামকর্ম প্রথম শ্রেণীর অন্তর্গত এবং সত্ত্ব গুণ বা কর্মের অন্তর্ভুক্ত যা প্রশান্তি যোগ করে; সকামকর্ম (অহং-যুক্ত কর্ম) দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তর্গত এবং রজঃ গুণ বা কর্মের অন্তর্ভুক্ত, এবং বিকর্ম (চরম মন্দ-কর্ম) তৃতীয় শ্রেণীর অন্তর্গত এবং তমঃ গুণ বা কর্মের অন্তর্ভুক্ত, এবং সকামকর্ম ও বিকর্ম অন্ধকার বা জড়তার সাথে সম্পর্কযুক্ত।[৬]

ভগবদ্গীতায় নিষ্কামকর্ম[সম্পাদনা]

মহাভারতের কেন্দ্রীয় পাঠ্য ভগবদ্গীতায় নিষ্কামকর্মের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে,[৭] যেখানে ভগবান কৃষ্ণ 'নিষ্কামকর্মযোগ' (নিঃস্বার্থ কর্মের যোগ) কে সত্য উপলব্ধি করার আদর্শ পথ হিসাবে সমর্থন করেন।[৮] উদ্দেশ্য বা ফলাফলের প্রত্যাশা ছাড়া কর্ম ব্যক্তির মনকে শুদ্ধকরে এবং ধীরে ধীরে ব্যক্তিকে কর্ম ত্যাগ করার সুবিধাগুলি উপলব্ধি করার জন্য উপযুক্ত করে তোলে। নিম্নলিখিত শ্লোকগুলোতে এই ধারণাগুলি স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে:

শুধুমাত্র কর্ম করার জন্য আপনার অধিকার আছে এবং এর ফলের জন্য কখনোই নয়; কর্মের ফল আপনার উদ্দেশ্য হতে দিন না; আপনার মধ্যে নিষ্ক্রিয়তার প্রতি কোন আসক্তি থাকবে না।
— শ্লোক ২. ৪৭
[৯][১০]

যোগে স্থির হয়ে, হে সম্পদের বিজয়ী (অর্জুন), তোমার কাজ কর, আসক্তি ত্যাগ করে, সাফল্য-ব্যর্থতায় সমান চিত্তে, কারণ মনের সমতাকে যোগ বলে।
— শ্লোক ২.৪৮
[১১]

শরীর দিয়ে, মন দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, এমনকী নিছক ইন্দ্রিয় দিয়ে, যোগীরা আসক্তি ত্যাগ করে আত্মশুদ্ধির জন্য কাজ করে। যিনি যোগে শৃঙ্খলাবদ্ধ, কর্মফল ত্যাগ করে, তিনি স্থির শান্তি লাভ করেন...।
— শ্লোক ৫.১১
[১২]

— ভগবদ্গীতা, দ্বিতীয় ও পঞ্চম অধ্যায়

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Kriyananda, Swami (৩ আগস্ট ২০০৫)। "Material Success Through Principles of Yoga"The Times of India। The Times Group। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
  2. Goyal, Malini (২০ আগস্ট ২০০৭)। "'Get over that mindset of networking with an agenda'"The Economic Times। IndiaTimes। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
  3. Das, Gurcharan (১২ ডিসেম্বর ২০০৪)। "A small matter of the ego"The Times of India। The Times Group। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
  4. Ambani, Anil (৪ ডিসেম্বর ২০০৪)। ""THE SPEAKING TREE: Father, Lead Me from Sakam to Nishkam""The Times of India। The Times Group। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
  5. Langar, R. K. (৬ জানুয়ারি ২০০৪)। "Gita's Emphasis on Good of the World"The Times of India। The Times Group। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
  6. Tripathi, G. S. (২৮ জুলাই ২০০৮)। "Relaxation, a must for better mind power"The Times of India। The Times Group। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
  7. Critical Perspectives on the Mahābhārata, By Arjunsinh K. Parmar. Published by Sarup & Sons, 2002. আইএসবিএন ৮১-৭৬২৫-২৭৩-৫. Page 111.
  8. Ritu, S. (১৯ জুলাই ২০১৬)। "Karma Sutra: Understanding the concept of 'nishkama karma'"The Indian Express। New Delhi: Express Publications। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০২১ 
  9. verse 47, Chapter 2-Samkhya theory and Yoga practise, The Bhagavadgita - Radhakrishnan
  10. Essence of Maharishi Patanjali's Ashtang Yoga, by J.M. Mehta, Published by Pustak Mahal, 2006. আইএসবিএন ৮১-২২৩-০৯২১-৬. Page 23.
  11. verse 48, Chapter 2-Samkhya theory and Yoga practise, The Bhagavadgita - Radhakrishnan
  12. A. C. Bhaktivedanta Swami Prabhupada"Bhaktivedanta VedaBase: Bhagavad-gita As It Is, Verse 5.11"। Bhaktivedanta VedaBase Network (ISKCON)। ২০০৭-১২-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-১৪ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]