নিরঞ্জন প্রধান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নিরঞ্জন প্রধান
২০১৪ খ্রিস্টাব্দে নিরঞ্জন প্রধান
জন্ম১৯৪০
মাতৃশিক্ষায়তনগভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফট, কলকাতা
পেশাভাস্কর ও চিত্রশিল্পী
দাম্পত্য সঙ্গীসুক্তিশুভ্রা প্রধান (স্ত্রী)
সন্তানঅনিন্দ্য প্রধান (পুত্র)

নিরঞ্জন প্রধান হলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর। বর্তমানকালে বাস্তব সচেতন শিল্পী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।[১] তিনি পাঁচ দশক ধরে শিল্পকলা ও ভাস্কর্যের অনন্য কীর্তি স্থাপন করে চলেছেন। তার সৃষ্টি বাংলা তথা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে সুদূর বিলেতের বিস্ট্রলে শোভা পাচ্ছে।[২] বিশ শতকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ও বাংলার পঞ্চাশের মন্বন্তরে দুর্দশাগ্রস্ত শিল্পজগতে রামকিঙ্কর বেইজের পর দ্বিতীয় প্রজন্মের অন্যতম ভাস্কর হিসাবে সুনাম অর্জন করেছেন তিনি।

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

নিরঞ্জন প্রধানের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য বেষ্টিত দুর্গা গোবিন্দপুর গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে। বাল্যকালে পিতামহীই তার লালন পালন করেন। সেখানে পড়াশোনার কোন সুবিধা না থাকার কারণে আট বৎসর বয়সে ঠাকুরমার সঙ্গে চলে আসেন অধুনা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রামনগর ২ নং সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের কালিন্দী গ্রামে তার জ্যেঠা মশায়ের বাড়িতে। তার বিদ্যালয়ের পাঠ কালিন্দী ইউনিয়ন হাই স্কুলে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জ্ঞানদাকান্ত মিশ্রের প্রিয় ছাত্র ছিলেন তিনি। ছবি আঁকায় নিরঞ্জনের নৈপুণ্য আর আগ্রহ লক্ষ্য করে তিনি বিদ্যালয়ের দেওয়াল পত্রিকার অলঙ্করণসহ ছবি আঁকার কাজ দিতেন নিরঞ্জনকে। বিদ্যালয়ের পাঠ শেষে আঠারো বৎসর বয়সে প্রায় নিঃসম্বল অবস্থায় কলকাতায় আসেন এক দূর-সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়ি শিল্পকলা নিয়ে পড়াশোনা করতে। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ভর্তিও হন কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফট কলেজে। দুবেলার খাওয়ার পেতেন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘে[৩] ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে চিত্রকলা এবং ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে ভাস্কর্যে ডিপ্লোমা লাভ করেন।[১] সেসময়ে সরকারি আর্ট কলেজে তার শিক্ষকেরা ছিলেন চিন্তামণি কর, ধীরেন্দ্রনাথ ব্রহ্ম, কিশোরী রায়, গোপাল ঘোষ প্রমুখ চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের দিকপাল ব্যক্তিত্বেরা।[৩] ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ট অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্সও সমাপ্ত করেন। [১] আর্ট কলেজে সাত বৎসরের শিক্ষালাভের পর তিনি নিজের কলেজেই শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হন।

শিল্পকলা ও ভাস্কর্যের বিশেষত্ব[সম্পাদনা]

নিরঞ্জন প্রধান একজন বাস্তব সচেতন শিল্পী। বিশ শতকের ষাটের দশকে শিল্পকলা জগতে আবির্ভূত হয়ে, মোটামুটি আটের দশক হতে মূলতঃ ভাস্কর্যের উপরের অনন্য কীর্তির স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। তার সৃষ্টি চারপাশের পরিবেশ হতে উদ্ভূত, শিল্পীর অনুভূতি মিশ্রিত জীবনের অন্তর্নিহিত ভাবনা অবয়বে উদ্ভাসিত। তার ত্রিমাত্রিক শিল্পের মূল বৈশিষ্ট্য হল সুতীক্ষ্ণ জ্যামিতিক গঠনে স্বজ্ঞাত সৌন্দর্যে আর বিনয়ী কাব্যিক সংবেদনশীলতায় পরিপূর্ণ। [১]

প্রদর্শনী ও শিল্পকর্ম[সম্পাদনা]

নিরঞ্জন প্রধানের শিল্পকর্ম দেশে-বিদেশের নানা স্থানে একক ও যৌথভাবে প্রদর্শিত হয়েছে।

একক প্রদর্শনী-
  • ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে - কলকাতার ইন্দো-আমেরিকান সোসাইটিতে;
  • ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে - কলকাতার শ্রী অরবিন্দ ইন্সটিটিউট অফ কালচারে;
  • ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে - মুম্বাইয়ের জাহাঙ্গীর আর্ট গ্যালারিতে;
  • ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে - মুম্বাইয়ের জাহাঙ্গীর আর্ট গ্যালারিতে ;
যৌথ প্রয়াসের কীর্তি সমূহ-

সম্মাননা ও পুরস্কার[সম্পাদনা]

  • ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে - নতুন দিল্লির অল ইন্ডিয়া ফাইন আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফট এর রৌপ্য পদক;
  • ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে - বিড়লা একাডেমি পুরস্কার;
  • ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে - বিড়লা একাডেমি পুরস্কার;
  • ২০২১ খ্রিস্টাব্দে ২৬ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অঞ্জন বসু নির্মিত ৩৩ মিনিটের এক তথ্যচিত্র নিরঞ্জন প্রধান- জার্নি অফ এ স্কাল্পচার প্রদর্শিত হয়। [৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Niranjan Pradhan"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২৫ 
  2. "মানুষ হিসেবে রাষ্ট্রপতি কত বড় মাপের, সেটা তাঁর সঙ্গে দেখা করে বুঝলাম: নিরঞ্জন প্রধান"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২৫ 
  3. "Niranjan Pradhan - Journey of a Sculptor ( a documentary)"।  অজানা প্যারামিটার |পরিচালক= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য);
  4. "রাজা রামমোহন রায়ের মরণোত্তর মুখাবয়ব"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২৬ 
  5. "KIFF docu narrates how Niranjan Pradhan sculpted Ray and Uttam Kumar's statues"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২৫