নিদনপুর তাম্রলিপি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নিদনপুর তাম্রলিপি
ভাস্করবর্মণের নিদনপুর তাম্রশাসন
উপাদানতামা
লিখনসংস্কৃত
আবিষ্কৃত২৯ ডিসেম্বর ১৯১২
নিদনপুর
২৪°৪৮′১৪″ উত্তর ৯২°০৯′০৪″ পূর্ব / ২৪.৮০৪° উত্তর ৯২.১৫১° পূর্ব / 24.804; 92.151

নিদনপুর তাম্রলিপি বা নিদনপুর তাম্রশাসন (নিধানপুর তাম্রলিপি বা নিধানপুর তাম্রশাসন নামেও পরিচিত, কামরূপশাসনাবলীতে নিধনপুর লিপি বলে উল্লিখিত) ৭ম শতকে কামরূপরাজ ভাস্করবর্মন কর্তৃক তামার পাতে উৎকীর্ণ একটি তাম্রফলক বা তাম্রশাসন। নিদনপুর তাম্রলিপিতে রাজা ভাস্করবর্মন কর্তৃক ব্রাহ্মণদের নিষ্কর ভূমি প্রদানের বর্ণনা করে এই তাম্রশাসন জারি করেন।[১] তাম্রশাসনগুলো পঞ্চখন্ড পরগনায় পাওয়া যায়, যা বর্তমান সিলেটের বিয়ানীবাজারের নিকটে অবস্থিত। ঐতিহাসিকদের ধারণা ব্রাহ্মণদের প্রদত্ত নিষ্কর ভূমিও এই এলাকায় অবস্থিত।[২][৩] সংস্কৃত ভাষায় রচিত এই তাম্রশাসনে দুই শতাধিক ব্রাহ্মণের নাম পাওয়া যায়, যারা রাজা ভাস্করবর্মণের দানপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাপ্ত ভাস্করবর্মণের বিভিন্ন তামশাসন থেকে তাঁর রাজত্ব ও অন্যান্য সামসময়িক ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়। ব্রাহ্মণদের ভূ-সম্পত্তি দান বা যুদ্ধ জয় উপলক্ষে স্মারক খোদাই করানো কামরূপের রাজাদের প্রচলিত প্রথা ছিল।

আবিষ্কার[সম্পাদনা]

পঞ্চখণ্ড পরগণার নিকটে নিদনপুর গ্রামে (বর্তমান সিলেট জেলার বিয়ানীবাজারের নিকট) ১৯১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর (পৌষ ১৩১৯ বাংলা) স্থানীয় একটি মাটির স্তুপ খনন করে ছয় খণ্ডের গজ চিহ্নিত তাম্রলিপি এবং কামরূপ রাজাদের সাতটি লিপি পাওয়া যায়। মহিষ পালনের জন্য ঘর নির্মাণের সময় স্থানীয় লোকেরা তা আবিষ্কার করেন। গুপ্তধন মনে করে স্থানীয়রা পঞ্চখণ্ডের জমিদার পবিত্রনাথ দাসের কাছে নিয়ে যান। জমিদার পবিত্রনাথ লিপিগুলোর প্রকৃত অর্থ বুঝতে পেরে তা কিনে নেন এবং শিলচরে (বর্তমানে ভারতের আসামে) কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।[৪] জমিদার পবিত্রনাথ দাস লিপিগুলো কলকাতা জাদুঘর কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করেন।[১]

তাম্রলিপির অনুবাদ[সম্পাদনা]

পণ্ডিত পদ্মনাথ ভট্টাচার্য বিদ্যাবিনোদ নিদনপুর শিলালিপির অনবাদ করে কামরূপশাসনাবলী গ্রন্থে প্রকাশ করেন। গ্রন্থটি রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদ ১৯৩১ সালে প্রকাশ করে।[৪]

ওঁ। (শ্লোক ১) ভস্মক(অস্পষ্ট অক্ষর)বিভূষিত ইষ্টদেব শশিশেখর পিনাকধারী মহাদেবকে প্রণাম করিয়া ঐশ্বর্য্যবান্ ব্রাহ্মণগণের সম্পত্তি নিমিত্তে (দগ্ধীভূত শাসনের) স্পষ্ট কথা পুনশ্চ (ইহাতে) উজ্জল করিতেছি।

(লাইন ২) স্বস্তি। বিশাল নৌকা হস্তী অশ্ব পদাতি সম্পত্তিবিশিষ্ট সার্থকজয়শব্দ সমন্বিত কর্ণসুবর্ণ সমাবাসিত স্কন্ধাবার হইতে (শাসন প্রদত্ত হইতেছে)।

(শ্লোক ২) সর্পরাজ কর্ত্তৃক বিহিতকটিবন্ধ দৃষ্টি (মাত্র) নিজ্জিতকামশরীর অবিমুক্ত মহেশ্বরের নিজৈশ্বর্য্য বিভূষিত মূর্ত্তি জয়যুক্ত হউক।

(শ্লোক ৩) জয়, জগতের একমাত্র বন্ধু (ইহপর) উভয় লোকেত সম্পদের হেতু পরোপকারস্বরূপ অদৃষ্ট (অথচ) ফল দ্বারা অনুমেয়াবস্থান ধর্ম্মের জয়।

(শ্লোক ৪) সমুদ্র হইতে পৃথিবীর উদ্ধরণেচ্ছু কপট বরাহরূপী চক্রপাণির নরক (নামক) রাজশে(অস্পষ্ট অক্ষর) পুত্র ছিলেন।

(শ্লোক ৫) সেই অদৃষ্টনরক নরক হইতে ইন্দ্রের সখা ভগদত্ত জাত হইয়াছিলেন। প্রসিদ্ধ দিগ্বিজয়ী অর্জ্জুনকেও তিনি যুদ্ধে (স্পর্দ্ধা সহকারে) আহ্বান করিয়াছিলেন।

(শ্লোক ৬) সেই শত্রুহন্তা রাজার বজ্রদত্ত নামা পুত্র ছিলেন; তাঁহার সৈন্যগতি অপ্রতিহত ছিল; তিনি সর্ব্বদা যুদ্ধে ইন্দ্রকেও সন্তুষ্ট করিয়াছিলেন।

(শ্লোক ৭) তাঁহার বংশীয় নৃপতিগণ তিন হাজার বৎসর রাজপদ অধিকার করিয়া দৈবসাযুজা লাভ করিলে পুষ্যবর্ম্মা ক্ষিতিপতি হইয়াছিলেন।

(শ্লোক ৮) মাৎসন্যায় বিরহিত উজ্জ্বলরত্নবিশিষ্ট দ্বন্দ্বযুদ্ধে ক্ষিপ্র পঞ্চম সমুদের ন্যায় সমুদ্রবর্ম্মা তাঁহার পুত্র ছিলেন।

(শ্লোক ৯) অপ্রতিহত সৈন্য (অথবা শক্তি) যাঁহার কবচের ন্যায় ছিল, ঈদৃশ বলবর্মা সেই (সমুদ্র বর্ম্মার) দত্তদেবীগর্ভজাত পুত্র ছিলেন; তাঁহার সৈন্যগণ অবি(অস্পষ্ট অক্ষর)ণের বিরুদ্ধে স্বচ্ছন্দে গমন করিত।

(শ্লোক ১০) রত্নবতীর গর্ভে তাঁহার (বলবর্ম্মার) কল্যাণবর্ম্মা নামে পুত্র জন্মিয়াছিল; ইনি স্বল্পতর দোষেরও আস্পদ ছিলেন না।

(শ্লোক ১১) তাঁহাহইতে (অর্থাৎ কল্যাণ বর্ম্মার ঔরসে) গন্ধর্ব্ববতী গণপতির ন্যায় অজস্র বর্ষণকারী অসংখ্যগুণফমসমূহমণ্ডিত গণপতি (নামে) পুত্র কলি বিঘাতনিমিত্তে প্রসব করিয়াছিলেন।

(শ্লোক ১২) যজ্ঞ কার্য্যে প্রযোজ্য অরণি (কাষ্ঠ) যেমন অগ্নি উৎপাদন করে, তেমনি তাঁহার (গণপতির) মহিষী যজ্ঞবতী যজ্ঞক্রিয়ার আস্পদ পুত্র মহেন্দ্র বর্ম্মাকে প্রসব করিয়াছিলেন।

(শ্লোক ১৩) সেই আত্মতত্ত্বজ্ঞ নৃপতি (মহেন্দ্র বর্ম্মা) হইতে রাজ্ঞী সুব্রতা জনকের ন্যায় সাংখ্যার্থাভিজ্ঞ নারায়ণ বর্ম্মাকে পৃথিবীর স্থিতি নিমিত্তে পুত্র জন্মাইয়াছিলেন।

(শ্লোক ১৪) তাঁহার গুণ সন্ততি স্থির রাখিবার নিমিত্তে প্রকৃতি পুরুষ হইতে ষষ্ঠ মহাভূতের ন্যায় (রাজ্ঞী) দেববতীও তাঁহা হইতে (অর্থাৎ নারায়ণ বর্মার ঔরসে) মহাভূত বর্ম্মামে (গর্ভে) ধারণ করিয়াছিলেন।

(শ্লোক ১৫) তাঁহার পুত্র চন্দ্রমুখ বর্ম্মা চন্দ্রের ন্যায় কলাসমূহ দ্বারা রমণীয় ছিলেন; আকাশ যেমন অন্ধকার বিনাশক চন্দ্রকে, বিজ্ঞানবতীও তেমনি (শোক) তমোপহ সেই পুত্রকে প্রসব করিয়াছিলেন।

(শ্লোক ১৬) তাঁহা হইতে ভোগসম্পন্ন। ভোগবতী, যেমন পৃথিবী ধারণকারী অনন্ত ফণযুক্ত নাগাধিপের পাতালস্থ নাগপুরী সুখৈশ্বর্য্যসমন্বিত ভূতির (অর্থাৎ সম্পদের) হেতু, তেমনই বিলাসিজনগণের অধিপতি অশেষ ভোগবিশিষ্ট ভূপতি স্থিতবর্ম্মারও ভূতির (অর্থাৎ উৎপত্তির) হেতু ছিলেন।

(শ্লোক ১৭) অতলস্পর্শ অসংখ্য রত্নের আকর লক্ষ্মীর আশ্রয়স্থল ক্ষীরোদ সমুদ্র হইতে যেমন (সকলঙ্ক) চন্দ্র উদ্ভূত হইয়াছে, তেমনি গম্ভীরমূর্ত্তি অগণিতধনরত্নাধিকারী রাজশ্রীসমাশ্রিত আএই নরপতি (স্থিতবর্ম্মা) হইতে অকলঙ্ক শ্রীমৃগাঙ্ক উৎপন্ন হইয়াছিলেন।

(শ্লোক ১৮) তাঁহার (স্থিত বর্ম্মার) ঐ পুত্র (প্রকৃত নাম) সুস্থিত বর্মা দেব নয়নদেবীর গর্ভে জন্মিয়াছিলেন; তিনি আপন হস্তে রাজ্যভার গ্রহণ করিবার পরে শ্রীমৃগাঙ্ক (এই উপনামে) খ্যাত হইয়াছিলেন।

(শ্লোক ১৯) (সেই মাত্র ধন মনে করিয়া) কৃপণের ন্যায় নারায়ণ সানন্দে আপন বক্ষঃস্থলে অশেষ শোভা-সম্পন্না যে লক্ষ্মীকে সর্ব্বদা বহন করিতেছেন, সেই লক্ষ্মী (অর্থাৎ ধনাদি সম্পত্তি মাটীর ন্যায় যাচক জনের মধ্যে তৎকর্ত্তৃক বিতরিত হইয়াছে।

(শ্লোক ২০) সত্যযুগোদ্ভবার (শ্যামার) ন্যায় শ্যামা দেবী তমোনিরসন নিমিত্তে তাঁহা হইতে (অর্থাৎ সুস্থিত বর্ম্মার ঔরসে) শশীর ন্যায় সুপ্রতিষ্ঠিত বর্ম্মা (নামে) পুত্র উৎপাদিত করিয়াছিলেন।

(শ্লোক ২১) বিদ্যাধরপ্রধান কর্ত্তৃক অধ্যুষিত হস্তিযূথসমন্বিত সুসংস্থিত্নিতম্ব কুলাচলের উচ্চতা যেমন পরহিতার্থ, সেইরূপ বিদ্বচ্চুড়ামণিগঅণ কর্তৃক পরিবৃত গজসৈন্যসমন্বিত সুপ্রতিষ্ঠিতসৈন্যমণ্ডল সম্পন্ন সেই রাজার অভ্যুদয় অন্যের হিতার্থে হইয়াছিল।

(শ্লোক ২২) তাঁহার অনুজ ভাস্করের ন্যায় অশেষাভ্যুদয় ও তেজঃসম্পন্ন শ্রীভাস্কর বর্ম্মাকে সেই (পূর্ব্বোক্ত) শ্যামা দেবীই প্রসব করিয়াছিলেন।

(শ্লোক ২৩) এক হইলেও তিনি, স্বভাবত নির্ম্মল সম্মুখস্থ দর্পন সমূহের ন্যায় তদভিমুখস্থ জনগণের চিত্তফলকে বহুভাসে সুষ্ঠু প্রতিবিম্বিত হইতেছেন।

(শ্লোক ২৪) ভাস্করের (দিবাকরের) ছবি যেমন যুগপৎ বহু জল পাত্রে লক্ষিত হয় তেমনি তাঁহারও ছবি প্রভূত তেজোহেতু অব্যাহত ভাবে নৃপতিগণের গৃহে গৃহে দৃষ্ট হইতেছে।

(শ্লোক ২৫) সর্পাদিরোহিত সুখারোহ কল্পদ্রুমের ন্যায় অক্রূর ও অধিগম্য তিনি সমৃদ্ধিরূপ বহুফল-বিশিষ্ট বটেন এবং (কল্পবৃক্ষের ন্যায়) তদীয় পাদমূল ছায়াশ্রিত জনসমূহ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকেন।

(লাইন ৩৪-৪৪) ইহাও বটে যে জগতের উৎপত্তি কল্পনা ও বিনাশ কার্য্যের হেতুভূত ভগবান্ পদ্মযোনি কর্ত্তৃক তিনি (রাজা) বিশৃঙখল বর্ণাশ্রম ধর্ম্মের সম্যক্ ব্যবস্থাপনার্থ সৃষ্ট হইয়াছেন। জগৎপতি (সূর্য্য) যেমন উদয়কালে স্বীয় মণ্ডল রক্তবর্ণ করেন, পৃথিবীর অধীশ্বর তিনিও অভ্যুদয় দ্বারা (অরিমিত্রাদি) মণ্ডল অনুরুক্ত করিয়াছেন; (এবং) সূর্য্যের ন্যায় যথোচিত কর-সমূহের যথাযথ প্রয়োগ দ্বারা কলি (রূপ) তিমিররাশি আকুলিত করিয়া আর্য্যধর্ম্মালোক প্রকাশিত করিয়াছেন। স্বীয় বাহুবল দ্বারা সমস্ত সামন্ত চক্রের বিক্রম তিনি তুলিত (লঘু) করিয়াছেন। মর্য্যাদা বিনয় আলাপ-পরিচয় দ্বারা কুল-পরম্পরাগত প্রজাপুঞ্জের রাজভক্তি উপচিত হওয়াতে তিনি তাহাদের নানাবিধ সুখভোগের পথ উপকল্পিত করিয়াছেন। তিনি সমরবিজিত শত শত নৃপতি কৃত বিবিধ স্তুতিবাক্যরূপ পুষ্পদ্বারা বিরচিত মনোহর কীর্ত্তিরূপ বিচিত্র কিরীটে চিহ্নিয় হইয়াছেন। শিবির ন্যায় পরের হিতার্থে দানকার্য্যে তিনি স্বীয় সত্ত্ববৃত্তি নিয়োজিত করেন। যথাকালে সমুদিত (ষট্) গুণ প্রয়োগবিভাগ বিষয়ে পটুতা নিবন্ধন দ্বিতীয় বৃহস্পতির ন্যায় তাঁহারও প্রভাব অপরের সুবিদিত। শাস্ত্রজ্ঞান শৌর্য্য ধৈর্য্য পরাক্রম সচ্চরিত্র ইত্যাদি দ্বারা তদীয় চিত্তবৃত্তি অলঙ্কৃত; (তাই) প্রতিপক্ষের আশ্রয় হেতু প্রত্যাখ্যাত হইয়াই যেন দোষগুলি তাঁহাকে পরিহার করিয়াছে। অবিচলিত সন্তত প্রণয় রসব্বরে আকৃষ্ট কামরূপ রাজলক্ষ্মী কর্ত্তৃক দৃঢ়ালিঙ্গম দ্বারা তাঁহার অভিগামিক গুণাবলীর প্রতি স্বতঃই অনুরাগের ভাব প্রকাশিত হইয়াছে। কলিযুগের পরাক্রম বিজড়িত দেহ ভগবান্ ধর্ম্মের তিনি সমুচ্ছ্বাস (অর্থাৎ জীবন); তিনি নীতির অধিষ্ঠান, গুণাবলীর আলয়, প্রণয়িজনের অক্ষয় সম্পত্তি, সন্ত্রন্তগণের আশ্রয় স্থল এবং শ্রী-সম্পদের নিকেতন। পৃথিবীপুত্র (নরক) হইতে ক্রমলব্ধ পদসমুৎকর্ষ হেতু তাঁহার প্রভাবশক্তি প্রদর্শিত হইয়াছে। (ঈদৃশ) মহারাজাধিরাজ কুশলী শ্রীভাস্করবর্ম্মদেব চন্দ্রপুরি বিষয়ে (স্থিত) বর্ত্তমান ও ভবিষ্যৎ বিষয়পতিগণ ও বিচারালয় সমূহ প্রতি আদেশ করিতেছেন; আপনারা বিদিত হউন, এই বিষয়ান্তঃপতি ময়ূরশাল্মলাগ্রহার ক্ষেত্রে যাহা নরপতি ভূতিবর্ম্মা কর্তৃক তাম্রপট্ট দ্বারা প্রাপ্ত হইয়াছিল, তাহা সেই তাম্রপট্টের প্রভাব বশতঃ করদ হইয়া পড়ায়, মহারাজ জ্যেষ্ঠ ভদ্রদিগকে জ্ঞাওঅঅন করিয়া পুনষচ অভিনব পট্ট করণার্থে আজ্ঞাদান পূর্ব্বক চন্দ্র সূর্য্য পৃথিবী সমকাল কোনও কিছু (কর) গ্রহণ যাহাততে না হয় সেই নিমিত্ত ভূমিচ্ছিদ্রন্যায়ানুসারে পূর্ব্বে ভোগকারী ব্রাহ্মণদিগকে (পূর্ব্বোক্ত অগ্রহার ক্ষেত্রে) প্রদান করিলেন। ব্রাহ্মণগণের নাম, যথা– [ইহার পর দান গ্রহীতা ব্রাহ্মণগণের নাম বেদ গোত্র ও অংশপরিমাণ সহ উল্লেখিত হইয়াছে, তাহা নিয়ে (ক্রমিক সংখ্যা সহকারে) প্রদত্ত হইল। মূলে অর্থাৎ শাসনলিপিতে যে নামের পূর্ব্বে বেদ বা গোত্রের উল্লেখ নাই, সেই স্থলে অব্যবহিত পূর্ব্ববর্ত্তী বেদ বা গোত্র উহ্য মনে করা হইয়াছে।]

(লাইন ১২৬-১৩৬) কৌশিকা নদী (চরের ভরাট দ্বারা) যে ভূমির বৃদ্ধি ঘটিয়াছে তাহার উপস্বত্ব (অংশের অনুপাত অনুসারে) প্রতিগ্রাহক ব্রাহ্মণেরই প্রাপ্য; পরস্তু যাহা গঙ্গিণিকা দ্বারা বর্দ্ধিত হইয়াছে তাহা যথালিপিত ব্রাহ্মণগণ কর্ত্তৃক সমানাংশে বিভক্ত হইবে ইতি। সীমা পূর্ব্বে শুষ্ককৌশিকা। পূর্ব্বদক্ষিণে সেই শুষ্ককৌশিকা ডুম্বরীচ্ছেফ দ্বারা বেদিতব্য। দক্ষিণেও ডুম্বরীচ্ছেদ। দক্ষিণপশ্চিমে গঙ্গিণিকা ডুম্বরীচ্ছেদ দ্বারা বেদিতব্য। পশ্চিমে অধুনা সীমা গঙ্গিণিকা। পশ্চিমোত্তরে কুম্ভকারগর্ত্ত এবং পূর্ব্বদিকে বক্রীভূত সেই গঙ্গিণিকা। উত্তরে জাটলী (জারল) গাছ। উত্তরপূর্ব্বে ব্যবহারী পুষ্করণী এবং সেই শুষ্ককৌশিকা। শত আজ্ঞাপ্রাপণকারী পঞ্চমহাশব্দপ্রাপ্ত শ্রীগোপাল। সীমা প্রদানকারী চন্দ্রপুরি ভম্যধিকারী শ্রীক্ষিকুণ্ড। ন্যায়করণিক জনার্দ্দন স্বামী ব্যবহারী হরদত্ত কায়স্থ দুন্ধুনাথ প্রভৃতি। শাসনপ্রস্তুতকারী এবং লেলহক বসুবর্ণ। ভাণ্ডারগৃহের অধিকারী মহাসামন্ত দিবাকরপ্রভ। উৎখেটয়িতা দত্তকার পূর্ণ। সেক্যকার কালিয়া।

(শ্লোক ২৬) ভূমিপ্রদাতা ষাট হাজার বৎসর স্বর্গে সুখভোগ করিয়া থাকেন; যে ব্যক্তি (প্রদত্ত ভূমি) কাড়িয়া নেয় অথবা (শাসনের) অবমাননা করে, সে ঐ পরিমিত কাল নরকে বাস করিয়া থাকে।

(শ্লোক ২৭) নিজদত্ত অথবা পরদত্ত ভূমি যে ব্যক্তি হরণ করে, সে বিষ্ঠার কৃমি হইয়া পিতৃগণ সহ নরকে পচিয়া থাকে।

(শ্লোক ২৮) শাসনখানি পুড়িয়া যাওয়ার পর (ইহা) নূতন করিয়া লিখিত হওয়াতে যেহেতু অক্ষরগুলি (পূর্ব্ব লিখিত শাসনের অক্ষর হইতে) ভিন্নরূপ হইয়াছে, অতএব এই সমস্ত কূট অর্থাৎ জাল নহে।[৫]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "বিয়ানীবাজার উপজেলার পটভূমি"জাতীয় তথ্য বাতায়ন। বাংলাদেশ সরকার। ১৫ আগস্ট ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০২০ 
  2. Sircar, Dineshchandra (১৯৭১)। Studies in the geography of ancient and medieval India। Motilal Banarsidass। পৃষ্ঠা 161 
  3. Chatterjee, Suhas (১৯৯৮)। Indian Civilization and Culture। M.D. Publications Pvt. Ltd.। পৃষ্ঠা 432। 
  4. Vidyavinoda, Padmanatha Bhattacharya। Hultzsch, E., সম্পাদক। Epigraphia Indica Vol. - XII (1913 - 1914)। পৃষ্ঠা 65–79। 
  5. Epigraphia Indica Vol XII and XIX

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]