নাগেশ্বরী দয়াময়ী পাইলট একাডেমী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নাগেশ্বরী দয়াময়ী পাইলট একাডেমী
অবস্থান

তথ্য
প্রধান শিক্ষককে,এম আনিসুর রহমান (এম.এ.বি.এড)
ওয়েবসাইটwww.dmacademy.edu.bd

নাগেশ্বরী দয়াময়ী পাইলট একাডেমী বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলায় অবস্থিত একটি উচ্চ বিদ্যালয়। এটি কুড়িগ্রাম জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

ইতিহাস ও নামকরণ[সম্পাদনা]

নাগেশ্বরী দয়াময়ী পাইলট একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালে। তখন এই বিদ্যালয়ের নাম ছিল নাগেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়। এবং শিক্ষা কার্যক্রম শুধুমাত্র ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত চালু ছিল। অর্থাৎ এটি ছিল একটি জুনিয়র হাই স্কুল। ধারণা করা হয়, স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষকের নাম ছিল নগেন্দ্রনাথ সাহা। দেশ ভাগের পরে নগেন্দ্রনাথ সাহাসহ বেশ কিছু হিন্দু শিক্ষক এবং ছাত্র ভারতে চলে গেলে স্কুলে এক প্রকার শূন্যতা সৃষ্টি হয়। তবে নগেন্দ্রনাথ সাহার শিক্ষকতার ব্যাপারে বিদ্যালয়ে কোনপ্রকার দালিলিক প্রমাণপত্র পাওয়া যায় নি।

১৯৪৮ সালে এক বছরের জন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন মোঃ হবিবর রহমান। এদিকে তৎকালীন সময়ের সুবিধাবঞ্চিত এই অঞ্চলে হাতে গোনা কয়েকজন গ্র্যাজুয়েট ব্যক্তিত্বের মধ্যে আলহাজ্ব সাইফুর রহমান ছিলেন অন্যতম। আলহাজ্ব সাইফুর রহমান তখন চাকুরি করতেন পাকিস্থান রেলওেয়েতে। এবং তাঁর কর্মস্থল ছিল লালমনিরহাটে। এমতাবস্থায় এই এলাকার বেশ কিছু সচেতন মানুষ তাঁকে আহ্বান করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিতে। আলহাজ্ব সাইফুর রহমান পাকিস্থান রেলওয়ের চাকুরির ইস্তফা দিয়ে নাগেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের পঙ্গু অর্থনৈতিক অবস্থা দেখে তিনি হতবাক বনে যান। স্কুল শিক্ষকদের কাছে সেই সময় ছাত্র সংগ্রহ করা এবং অর্থ সংগ্রহ করাও ছিল ভীষণ কঠিনতম কাজের একটি। তবে আলহাজ্ব সাইফুর রহমান বিদ্যালয়ের ব্যাপারে ছিলেন অত্যন্ত উদ্যমী। পঞ্চাশের দশকে তিনি আর্থিকভাবে স্থানীয় অবস্থাশালী ব্যক্তিত্ব বৈকুণ্ঠ সাহার কাছে গেলেন সহযোগিতা নেয়ার জন্য। বৈকুণ্ঠ সাহা বিদ্যালয় উন্নয়নের জন্য প্রায় দশ হাজার টাকা দিলেন। এবং পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় বৈকুণ্ঠ সাহার মায়ের নামে। অর্থাৎ দয়াময়ী সাহার নামে। তখন থেকেই নাগেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয় হয়ে যায় নাগেশ্বরী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়। এবং সময়ের পরিপেক্ষিতে আজ এই বিদ্যালয়ের নাম নাগেশ্বরী দয়াময়ী পাইলট একাডেমী।

গঠন[সম্পাদনা]

  • শ্রেণী- বিদ্যালয়টি বর্তমানে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে
  • শিফট- ডে শিফট
  • ভাষা- বাংলা
  • মোট শিক্ষার্থী- প্রায় ১৫০০ জন।

ভর্তি কার্যক্রম[সম্পাদনা]

বিদ্যালয়টি বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষানীতি অনুসারে অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

ড্রেস কোড[সম্পাদনা]

  • ছেলেদের - সাদা সার্ট, কালো প্যান্ট
  • মেয়েদের - পেষ্ট কালার কামিজ, সাদা পায়জামা, সাদা ওড়না
  • উভয়ের জন্য সাদা জুতা ও বিদ্যালয় কর্তৃক নির্ধারিত ব্যাজ।

প্রধান শিক্ষকদের তালিকা[সম্পাদনা]

১. জনাব নগেন্দ্রনাথ সাহা ০১-০২-১৯৪৬ থেকে ৩১-১২-১৯৪৭ (আনুমানিক)

২. জনাব মোঃ হবিবর রহমান (বি.এ.) ০১-০১-১৯৪৮ থেকে ৩১-১২-১৯৪৮

৩. জনাব আলহাজ্ব সাইফুর রহমান (বি.এ.) ০১-০১-১৯৪৯ থেকে ০২-০৪-১৯৬৫

৪. জনাব মোঃ হবিবর রহমান (বি.এ.) ০৩-০৪-১৯৬৫ থেকে ১৩-০৯-১৯৭০

৫. জনাব মোঃ আব্দুল হাকিম (বি.এ.বি.এড) ১৫-০৯-১৯৭০ থেকে ০৬-০৭-১৯৭৯

৬. জনাব মোঃ আবু সাঈদ (বি.এ.বি.এড) [ভারপ্রাপ্ত] ১১-০৭-১৯৭৯ থেকে ১৫-০৪-১৯৮০

৭. জনাব তছলিম উদ্দিন আহমেদ (বি.এ.বি.এড) ১৬-০৪-১৯৮০ থেকে ১১-০৭-১৯৮৬

৮. জনাব মোঃ আবু সাঈদ (বি.এ.বি.এড) ১৯-০৭-১৯৮৬ থেকে ২৯-০১-১৯৯৫

৯. জনাব মোঃ আজাদ আলী (বি.এ.বি.এড) ৩০-০১-১৯৯৫ থেকে ১৯-১০-২০০৭

১০. জনাব শশী মোহন বর্মণ (বি.এ.বি.এড) [ভারপ্রাপ্ত] ২০-১০-২০০৭ থেকে ২৫-০১-২০০৮

১১. জনাব কামাখ্যা চরণ সরকার (বি.এ.বি.এড) [ভারপ্রাপ্ত] ২৬-০১-২০০৮ থেকে ১৬-০১-২০০৯

১২. জনাব কে,এম আনিসুর রহমান (এম.এ.বি.এড) [ভারপ্রাপ্ত] ১৭-০১-২০০৯ থেকে ০৭-০২-২০১১

১৩. জনাব মোঃ আজিজুল হক সরকার [ভারপ্রাপ্ত] ০৮-০২-২০১১ থেকে ২৮-০২-২০১১

১৮. জনাব কে,এম আনিসুর রহমান (এম.এ.বি.এড) ০১-০৩-২০১১ থেকে বর্তমান।

উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন শিক্ষার্থীবৃন্দ[সম্পাদনা]

বিগত কয়েক বছরের ফলাফল[সম্পাদনা]

২০১৫ সালে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে মেধা বৃত্তি তালিকায় সেরা হয়েছে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী দয়াময়ী পাইলট একাডেমী[১]। ২০১৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে বিজ্ঞান বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, পঞ্চমসহ এ বিদ্যালয়ে ১৯ শিক্ষার্থী মেধা বৃত্তি পাওয়ায় বোর্ড সেরা হয়েছে। ২০১৬ সালে জেএসসি পরীক্ষায় ফলাফলে বিদ্যালয়টির ২২৬ জন শিক্ষার্থী শতভাগ পাশসহ ১০০ শিক্ষার্থী জিপিএ পাঁচ পেয়েছে। ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বিদ্যালয়টির পাশের হার ছিল ৯৫%[২]

২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বিদ্যালয়টির পাশের হার ছিল ৯৮.১০% এবং ২১১ জন পরীক্ষার্থীর ৬৪ জন শিক্ষার্থী এপ্লাস পেয়েছে। নাগেশ্বরী দয়াময়ী পাইলট একাডেমীর এই ফলাফল ছিল উপজেলায় প্রথম এবং কুড়িগ্রাম জেলায় তৃতীয়।

মুক্তিযুদ্ধের সাথে বিদ্যালয়ের যোগসূত্র[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এই বিদ্যালয়ে পাকিস্তানি বাহিনীরা অস্থায়ী আঞ্চলিক ক্যাম্প নির্মাণ করে।

সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম[সম্পাদনা]

খেলাধুলা, বিনোদন, ট্যুর ইত্যাদি।

সংগঠন[সম্পাদনা]

নাগেশ্বরী দয়াময়ী পাইলট একাডেমী স্কাউট দল।[৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "সেরা কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী দয়াময়ী পাইলট একাডেমি"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২০ 
  2. "কুড়িগ্রামের আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নাগেশ্বরী দয়াময়ী পাইলট একাডেমী"কপোতক্ষ নিউজ। ২০২১-০৫-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২০ 
  3. "বাংলাদেশ স্কাউটস | বাংলাদেশ স্কাউটস অনলাইন ডিজিটাল রেকর্ড এবং স্কাউট সার্ভিস সিস্টেম"service.scouts.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২০