নগদ প্রবাহ বিবরণী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

নগদপ্রবাহ বিবরণী এক প্রকার হিসাব প্রতিবেদন যাতে কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে নগদ অর্থের অন্তর- ও বহির-প্রবাহ প্রদর্শন করা হয়ে থাকে। [১]

এটি আয় বিবরণী এবং উদ্বৃত্তপত্রের হিসাবে অর্থের আগমন ও বহির্গমন ও কীভাবে হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে তারল্যের অবস্থা প্রকাশ করে। একটি প্রতিষ্ঠান লাভজনক হলেও নগদ অর্থের অভাবে এর চলতি দেনা, আয়কর ও লভ্যাংশ প্রদান করতে সমর্থ নাও থাকতে পারে কিংবা লোকসানে পরিচালিত হওয়া সত্বেও তারল্যের প্রাচুর্য থাকতে পারে। অর্থের আগমন, বহির্গমন কিংবা চলতি দেনা নগদে পরিশোধ করার ক্ষমতা নির্ধারনের একমাত্র পদ্ধতি হল নগদ প্রবাহ বিবরণী। যৌথ মূলধনি ব্যবসা বা পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে সাধারণত আন্তর্জাতিক হিসাবমান ৭ অনুযায়ী নগদ প্রবাহ বিবরণী প্রস্তুত করা হয়।

নগদ প্রবাহ বিবরণীর ব্যবহারকারীরা আরও বেশ কয়েকটি কারণে একে গুরুত্ব প্রদান করে থাকেন।[২] যেমন:

  • হিসাব ও ব্যবস্থাপনা শাখার অধিকারিকদের মজুরি ও চলতি দেনা পরিশোধের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে হয়। এসকল দেনা প্রতিষ্ঠান নিকট ভবিষ্যতে পূরণ করতে পারবে কি না তা নগদ প্রবাহ বিবরণী থেকে জানা যায়।
  • সম্ভাব্য ঋণ প্রদানকারী ও বকেয়া প্রদানকারীরা এই বিবরণী থেকে জানতে চেষ্টা করেন যে প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত তরল অর্থ মজুদ আছে কি না।
  • সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীরাও তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত কি না তা জানতে নগদ প্রবাহ বিবরণীর আশ্রয় নিতে পারে।
  • কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের বেতন প্রতিষ্ঠান সঠিক সময়ে পরিশোধ করতে পারবে কি না , এই বিবরণী থেকে তা স্পষ্ট বোঝা যায়।

উদ্দেশ্য[সম্পাদনা]

উদ্বৃত্তপত্র একটি প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ও দেনার একটি সমন্বিত চিত্র তুলে ধরে, অপরদিকে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে প্রতিষ্ঠান দৈনন্দিন লেনদেনে লাভজনক অবস্থানে রয়েছে কি না তার পরিচায়ক। উক্ত দুটি আর্থিক প্রতিবেদন বকেয়া ভিত্তিক হিসাববিজ্ঞানের একটি অংশ যার থেকে প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতীক কর্মকান্ডের অতীত ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছুটা আঁচ করা গেলেও বর্তমান সক্ষতা খুব অল্পই ধারণা পাওয়া যায়। নগদ প্রবাহ বিবরণীতে শুধুমাত্র নগদ ও নগদ সমতুল্য সম্পদের আগমন ও বহির্গমন নির্দেশিত থাকে এবং নগদ লেনদেন হয়নি এমন লেনদেনসমূহ হিসাবের বাইরে থাকে। এতে প্রতিষ্ঠানের তারল্য ও চলতি সম্পদ ও চলতি দেনা প্রবাহের ধারণা পেতে সুবিধা হয়।

নগদ প্রবাহ বিবরণীর একটি উদাহরণ
১ জুন ২০০৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০০৬
পরিচালন কার্যাবলি থেকে নগদ প্রবাহ ৳৪,০০০
বিনিয়োগ কার্যাবলি থেকে নগদ প্রবাহ (৳১,০০০)
অর্থায়ন কার্যাবলি থেকে নগদ প্রবাহ (৳২,০০০)
মোট নগদ প্রবাহ '৳১,০০০
বন্ধনী ঋনাত্বক মান নির্দেশ করে

নগদ প্রবাহ বিবরণীর আরও কিছু উদ্দেশ্য হল:

  • প্রতিষ্ঠানের তারল্য, স্বচ্ছলতা ও ভবিষ্যৎ তরল প্রবাহ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া।
  • ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানের সম্পদে কিরূপ পরিবর্তন আসতে পারে তার ধারণা দেওয়া।
  • বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তারল্য পরিস্থিতি তুলনা করে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্ষমতা ও সক্ষমতা নির্নয় করা।
  • ভবিষ্যৎ নগদ বহির্গমনের সময় সম্পর্কে পূর্বানুমান করা।

প্রস্তুতি পদ্ধতি[সম্পাদনা]

নগদ প্রবাহ বিবরনী প্রণয়নের জন্য ২টি পদ্ধতি বিদ্যমান। তা হলঃ

  1. প্রত্যক্ষ এবং
  2. পরোক্ষ পদ্ধতি

উপযোগিতা[সম্পাদনা]

নগদ প্রবাহ বিবরণী একটি উপযোগী আর্থিক বিশ্লেষণ। নগদ প্রবাহ বিবরণী থেকে আগের বছরের তুলনায় বর্তমান বছরে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বাস্থ্য অনুধাবন করা যায়। কাগজে-কলমে বিক্রয় ও মুনাফা বৃদ্ধি পেলেও যদি প্রতিষ্ঠানের নগদ প্রবাহ হ্রাস পায় তবে পরিচালনার অর্থ যোগান দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। কাঁচামাল ক্রয় ও শ্রমিকদের বেতন দেয়ার জন্য নগদ অর্থের ঘাটতি হলে উৎপাদন ও সরবরাহ বিঘ্নিত হয়ে পড়ে। তাই বিক্রয় এবং মুনাফা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নগদ প্রবাহ বৃদিধর ওপরও নজর রাখা উচিৎ।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Helfert, Erich A. (২০০১)। "The Nature of Financial Statements: The Cash Flow Statement"। Financial Analysis - Tools and Techniques - A Guide for Managers (ইংরেজি ভাষায়)। McGraw-Hill। পৃষ্ঠা ৪২ডিওআই:10.1036/0071395415 
  2. Bodie, Zane (২০০৪)। Essentials of Investments, 5th ed। McGraw-Hill Irwin। পৃষ্ঠা 455। আইএসবিএন 0-07-251077-3