দারুল উলুম দেওবন্দের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী ফতোয়া, ২০০৮
দারুল উলুম দেওবন্দ ভারতের উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর জেলায় অবস্থিত একটি মাদ্রাসা। ধারণা করা হয়, এটিই পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মাদ্রাসা।[১] গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ এই মাদ্রাসাটিকে দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসবাদের উৎসস্থল হিসেবে চিহ্নিত করে আসছিল।[১] ফলশ্রুতিতে মাদ্রাসাটির তৎকালীন মুহতামিম মারগুবুর রহমান বিজনুরি ২০০৮ সালের ৩১ মে একটি সর্বভারতীয় সন্ত্রাসবাদ বিরোধী সম্মেলনের আয়োজন করে, যেটি গণমাধ্যমগুলির ব্যাপক সাড়া পেয়েছিল।[১] এই সম্মেলন থেকে দারুল উলুম দেওবন্দের ব্যানারে ১ লক্ষাধিক আলেমের উপস্থিতিতে সন্ত্রাসবাদের উপর ফতোয়া জারি করা এবং সহিংসতাকে অনৈসলামিক ঘোষণা করা হয়।[২][৩] ফতোয়াটি মুসলমানদের প্রতি ভারত সরকার এবং পুলিশি আচরণেরও অত্যন্ত সমালোচনামূলক ছিল। ঐতিহ্যবাহী ইসলামি প্রতিষ্ঠান থেকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দেওয়া ফতোয়ার মধ্যে এটিই প্রথম[৪] এবং ফতোয়াটি ছিল প্রথম নাটকীয় লক্ষণ যে ভারতীয় মুসলমানরা সন্ত্রাসের প্রতি সহানুভূতিশীল সম্প্রদায় হিসাবে চিহ্নিত হতে চায় না। এই জাতীয় ফতোয়া সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের নিকট ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে।[২] পরবর্তীতে দেওবন্দের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিশ্বের নানা সংগঠন ও ইসলামি পণ্ডিত প্রকাশ্যে সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করেছে।[৫]
ফতোয়া
[সম্পাদনা]"সন্ত্রাসবাদ বিরোধী ও বিশ্ব শান্তি সম্মেলন" নামে দিল্লির রামলীলা ময়দানে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশে পঠিত ফতোয়ায় স্বাক্ষর করেন দারুল উলুম দেওবন্দের প্রধান মুফতি হাবিবুর রহমান খায়রাবাদী।[৪] ফতোয়ায় বলা হয়,
“ | ইসলাম সকল প্রকারের অন্যায্য সহিংসতা, শান্তির লঙ্ঘন, রক্তপাত, হত্যা ও লুণ্ঠনকে প্রত্যাখ্যান করে এবং এর কোনরূপ অনুমতি প্রদান করে না। এটিই ইসলামের মূলনীতি যে, আপনি সৎকর্মে পরস্পরকে সহায়তা করেন এবং পাপ বা নিপীড়নের জন্য কাউকে সহযোগিতা করবেন না। পবিত্র কুরআনে প্রদত্ত সুস্পষ্ট নির্দেশিকাতে এটা স্পষ্ট যে, বিশ্ব শান্তির নির্দেশ দেওয়া ইসলামের মতো ধর্মের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রকৃতপক্ষে সকল প্রকার সন্ত্রাসবাদ মুছে ফেলার জন্য এবং বিশ্ব শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে ইসলামের আবির্ভাব হয়েছিল। | ” |
— [৬] |
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
[সম্পাদনা]দেওবন্দের এই ফতোয়াকে শাসক দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি সহ ভারতের সমস্ত প্রধান রাজনৈতিক দল স্বাগত জানিয়েছে। বিজেপি এটিকে একটি "ঐতিহাসিক প্রচেষ্টা" বলে উল্লেখ করেছে।[২] বিজেপির মুখপাত্র রবি শংকর প্রসাদ এই ফতোয়া ইসলামি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতা করবে বলে উল্লেখ করেন। বিজেপির সভাপতি রাজনাথ সিং ফতোয়াটিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, দেওবন্দ মুসলমানদের সন্ত্রাসবাদ থেকে পৃথক করতে চাইছে।[৩] রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রাণ চোপড়া রয়টার্সকে বলেন,
“ | এটা তাদের (মুসলিম গোষ্ঠী) মধ্যে সন্ত্রাসবাদের ফলস্বরূপ এবং মুসলমানদের সাথে সন্ত্রাসবাদের সন্দেহজনক সম্পর্ক হিসেবে তাদের মুখোমুখি হওয়া বিপদের প্রতি জাগরণ। মুসলিম জনগণের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করার মতো এবং ফতোয়াটি খুব স্বাগত উন্নয়ন। | ” |
— [৩] |
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ সিকান্দ, যোগিন্দার (২০০৮)। "Reflections on Deoband's Anti-Terrorism Convention" [দেওবন্দের সন্ত্রাসবিরোধী সম্মেলনের প্রতিফলন]। ইকোনমিক এন্ড পলিটিক্যাল উইকলি। ৪৩ (১২/১৩): ১৩। আইএসএসএন 0012-9976।
- ↑ ক খ গ দাশ, কমলা কান্ত (নভেম্বর ২০০৮)। "The Fatwa against Terrorism: Indian Deobandis Renounce Violence but Policing Remains Unchanged" [সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া: ভারতীয় দেওবন্দিরা সহিংসতা ত্যাগ করেছে কিন্তু পুলিশিং অপরিবর্তিত রয়েছে] (পিডিএফ)। মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়।
- ↑ ক খ গ মজুমদার, বাপ্পা (১ জুন ২০০৮)। "Darool-Uloom Deoband issues fatwa against terror" [দারুল উলুম দেওবন্দ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছে]। রয়টার্স।
- ↑ ক খ "Deoband first: A fatwa against terror" [দেওবন্দ প্রথম: সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ফতোয়া]। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া। ১ জুন ২০০৮।
- ↑ নিয়াজী, তাবরিজ আহমেদ (১৩ ডিসেম্বর ২০১০)। "Darul Uloom Deoband: Stemming the Tide of Radical Islam in India" (পিডিএফ)। রাজরত্নম স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ, সিঙ্গাপুর: ১৮।
- ↑ শিশির গুপ্ত (২০১২)। ইন্ডিয়ান মুজাহিদীন। হ্যাচেট ইউকে। আইএসবিএন 9789350093757।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- যাইনুল আবিদীন, মুহাম্মদ (২০১৬)। মাদরাসা সভ্য পৃথিবীর অহঙ্কার। বাংলাদেশ: মাকতাবাতুল ইসলাম। পৃষ্ঠা ৫১। আইএসবিএন 9789849104940।