দক্ষিণী মেঠো ধনেশ
দক্ষিণী মেঠো ধনেশ | |
---|---|
দক্ষিণী মেঠো ধনেশ লিঙ্কন পার্ক চিড়িয়াখানা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Coraciiformes |
পরিবার: | Bucerotidae |
উপপরিবার: | Bucorvinae |
গণ: | Bucorvus |
প্রজাতি: | B. leadbeateri |
দ্বিপদী নাম | |
Bucorvus leadbeateri (Vigors, 1825) | |
প্রতিশব্দ | |
Bucorvus cafer (Vigors, 1825) |
দক্ষিণী মেঠো ধনেশ (Bucorvus leadbeateri; প্রাক্তন নাম Bucorvus cafer), হল মেঠো ধনেশদের মধ্যে এক প্রজাতির ধনেশ এবং এরা ধনেশ প্রজাতির মধ্যে সবথেকে বড় আকারের প্রজাতি। বুকোরভাস প্রজাতির আরেকটি উপজাতি হল বায়াতকারী মেঠো ধনেশ (B. abyssinicus)।
বর্ণনা
[সম্পাদনা]এরা খুব বড় আকারের পাখি, ৯০ থেকে ১২৯ সেন্টিমিটার (৩৫.৪ থেকে ৫০.৮ ইঞ্চি) লম্বা। মহিলাদের ওজন ২.২ থেকে ৪.৬ কিলোগ্রাম (৪.৯ থেকে ১০.১ পা), আর বড় পুরুষদের ওজন ৩.৫ থেকে ৬.২ কিলোগ্রাম (৭.৭ থেকে ১৩.৭ পা)।[২] আনুমানিক মাপার মাধ্যমে জানা গেছে যে, এদের পাখনা মাপা হয়েছে ৪৯.৫ থেকে ৬১.৮ সেমি (১৯.৫ থেকে ২৪.৩ ইঞ্চি), লেজ মাপা হয়েছে ২৯ থেকে ৩৬ সেমি (১১ থেকে ১৪ ইঞ্চি), এদের গোড়ালি মাপা হয়েছে ১৩ থেকে ১৫.৫ সেমি (৫.১ থেকে ৬.১ ইঞ্চি) এবং কশেরুকার দৈর্ঘ্য হল ১৬.৮ থেকে ২২.১ সেমি (৬.৬ থেকে ৮.৭ ইঞ্চি)।[৩] দেখা গেছে যে এই প্রজাতিটি লম্বায় ১১০ সেমি (৪৩ ইঞ্চি), যেখানে দক্ষিণের প্রজাতিটি ১০২ সেমি (৪০ ইঞ্চি) হয়। কিন্তু আপেক্ষিক অনুমানের ভিত্তিতে দেখা যায় যে দক্ষিণের প্রজাতিটিই তুলনায় বড়ো হয়।[৪][৫][৬]
এদের গায়ের রঙ হয় কালো রঙের কিন্তু ওপরের অংশে এদের লাল রঙের চামড়া দেখতে পাওয়া যায়। প্রধানত মুখে এবং গলাতে এই লাল রঙের উন্মুক্ত চামড়া দেখা যায় যা তরুণদের ক্ষেত্রে হলুদ রঙের হয়ে থাকে। বলা হয়ে থাকে যে এই চামড়াগুলো তাদের চোখকে বাচায় ধুলোর হাত থেকে। এদের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যর মধ্যে পড়ে এদের ডানায় সাদা রঙের দাগ যা প্রধানত দেখতে পাওয়া যায় উড়বার সময়। এদের ঠোঁট হয় সম্পূর্ণ কালো রঙের এবং তা সোজা হয় এবং ঠোঁটের ওপরে একটা ছোটো শিরস্ত্রাণ থাকে। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই শিরস্ত্রাণ আরোও বড় হয় মহিলাদের তুলনায়। মহিলা দক্ষিণী মেঠো ধনেশরা আকারে আয়তনে তুলনায় ছোটো হয় এবং তাদের মুখ ও গলার চারপাশে লালচে বেগুনি রঙের চামড়া থাকে। তরুণরা সম্পূর্ণ লাল রঙের চামড়া পায় না ৬ বছর বয়স পর্যন্ত কিন্তু তাদের চোখ ও গলার চারপাশের চামড়া একটু ফ্যাকাশে হয় এবং হলুদ রঙের হয়।
বাসস্থান এবং খাদ্য
[সম্পাদনা]দক্ষিণী মেঠো ধনেশদের প্রধানত দেখতে পাওয়া যায় উত্তর নামিবিয়া এবং অ্যাঙ্গোলা থেকে উত্তর দক্ষিণ আফ্রিকা, বুরুন্ডি হয়ে কেনিয়া পর্যন্ত। এরা প্রধানত সাভানা বনভূমিতে থাকতে পছন্দ করে এবং বড়ো বড়ো গাছে বাসা বেঁধে থাকতে পছন্দ করে। এরা প্রধানত ঘন কিন্তু ছোটো ছোটো ঘাস দিয়ে বাসা বাধতে ভালোবাসে।[৭]
দক্ষিণী মেঠো ধনেশ হল অরক্ষিত প্রজাতি। এরা প্রধানত জাতীয় উদ্যান এবং জাতীয় সংরক্ষিত এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এরা প্রধানত ৫ থেকে ১০ জনের দলে থাকতে পছন্দ করে যে দলের মধ্যে তরূণ থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সবাই থাকে। তারা প্রধানত মাটিতে নেমে খাদ্য গ্রহণ করে। এদের খাদ্যের মধ্যে প্রধান হল সরীসৃপ, ব্যাঙ, শামুক, কীট এবং শশকের আকার অবধি সীমাবদ্ধ স্তন্যপায়ী।[৮] দক্ষিণী মেঠো ধনেশরা খুব কম জল পান করে।[৯] পশ্চিম দিকে এদের সংখ্যা খুব কম গাছ-গাছালির অভাবের জন্য।
দক্ষিণী মেঠো ধনেশরা খুব ডাকে এবং তারা দলবদ্ধ ভাবে ডাকাডাকি করে যা মোটামুটি ৩ কিলোমিটার (১.৮৬ মা) দূর থেকে শোনা যায়।[১০] এই ডাকের মাধ্যমে প্রত্যেক দল তাদের অঞ্চল বজায় রাখে, যেটা হয়তো ১০০ বর্গকিলোমিটার (৪০ মা২) মতোন জায়গা জুড়ে থাকতে পারে।[১০]
প্রজনন ও জীবনচক্র
[সম্পাদনা]দক্ষিণী মেঠো ধনেশরা হল সহযোগী প্রজননকারী। প্রত্যেক দুজন প্রজননকারী পাখি অন্যান্য দুজন পাখিদের দ্বারা সহযোগী হয়।[১১] এই সহায়হীন জোড়া একটি বাচ্চাদের হিসাবে দক্ষতা সাহায্য একটি পূর্ণবয়স্ক হিসাবে তরুণ প্রতিপালনের জন্য অপরিহার্য তরুণ পিছন এবং যে না পারে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এদের সর্বোচ্চ আয়ুকাল হল ৭০ বছর।[১২] কিছু কিছহু ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে তারা ৩০ বছর পর্যন্ত প্রজনন করে কাতাতে পারে।[১৩] এদেরকে দীর্ঘায়ু পরিব্রাজক আলবাট্রসদের সাথে তুলনা করা হয়।
দক্ষিণী মেঠো ধনেশরা ৬ থেকে ৭ বছর বয়সে পরিপক্বতাতে পৌঁছায় বলে মনে করা হয় কিন্তু খুব কম সংখ্যকই এই সময়ে প্রজনন করে।[১৩] এদের বাসা হয় খুব গভীর গর্ত সাধারণত বড়ো বৃদ্ধ গাছের গর্তে এরা বসবাস করতে পছন্দ করে। তবে কিছু কিছু রিপোর্টে বলা আছে যে এরা শিলার মুখেও বাসা বেঁধে থাকে।[৮] ১ থেকে ৩ টে ডিম পারে মহিলারা আর্দ্র আবহাওয়া শুরু হওয়ার সাথে সাথেই। এদের ডিমের পরিমাপ হয় ৭৩ মিলিমিটার (২.৮৭ ইঞ্চি) এবং ৫৬ মিলিমিটার (২.২০ ইঞ্চি) এবং এদের রঙ সম্পূর্ণ সাদা হয় কিন্তু এদের বাইরের খোলস খুব খসখসে হয়।[৮]
৪০ থেকে ৪৫ দিন ধরে এরা ডিমে তা দেয়। এবং ৮৫ দিনের পক্ষোদ্ভেদ কাল ১ থেকে ৩ বছরের মধ্যে পরে এবং তা নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপরে। যার পরেই তরুণরা বড় হয় এবং তারা স্বাধীন হয়। তখন তাদের বাবা-মা বা অন্যান্য সাহায্যকারীদের ওপরে নির্ভর করতে হয় না।[১৩] যা যেকোনো পাখিদের মধ্যে সবথেকে দীর্ঘতম হয়। এর আম্নে দাঁড়ায় যে এই প্রজাতিরা তিন বছরে একবারেই মাত্র প্রজনন করতে পারে। ত্রিবর্ষজীবী প্রজনন পাখিদের মধ্যে অত্যন্ত বিরল। হয়তো আরেক প্রজাতির পাখি যারা তিন বছরে একবার প্রজন করে হল সুসজ্জিত বাজপাখি-ঈগল যারা প্রধানত ঘনবর্ষণ বনাঞ্চলে বসবাস করে। [১৪]
সংরক্ষণ
[সম্পাদনা]এদের খুব ধীর গতির প্রজনন এবং বাসস্থান ক্ষতির জন্য তারা প্রধানত বিপন্ন প্রজাতি বলেই অনুমান করা হয়। তবে দক্ষিণ আফ্রিকাতে গবেষণার পরে দেখা গেছে যে এদেরকে গুরুতরভাবে বিপন্নদের দলে লেখা হয়েছে।
সংস্কৃতি
[সম্পাদনা]এই প্রজাতির ডাক এবং বড় আকার এদেরকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন সংস্কৃতির সাথে যুক্ত করেছে। এদেরকে হত্যার পিছনে নীতিগত বাধা ছিল। কিন্তু যা এখন আধুনিক আফ্রিকার উৎপত্তির সাথে হারিয়ে গেছে।[১৫] দক্ষিণ আফ্রিকানদের কাছে এই ধনেশ বর্ষাকাল নামার একটা সংকেত ছিল।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ BirdLife International (২০১২)। "Bucorvus leadbeateri"। বিপদগ্রস্ত প্রজাতির আইইউসিএন লাল তালিকা। সংস্করণ 2013.2। প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৩।
- ↑ Hornbills: Bucerotidae – Southern Ground Hornbill (bucorvus Leadbeateri): Species Accounts – Eat, Skin, Days, and Birds – JRank Articles. Animals.jrank.org. Retrieved on 2012-08-24.
- ↑ Biodiversity Monitoring Systems. (PDF) . Retrieved on 2012-08-24.
- ↑ Field Guide to the Birds of East Africa: Kenya, Tanzania, Uganda, Rwanda, Burundi by Stevenson & Fanshawe. Elsevier Science (2001), আইএসবিএন ৯৭৮-০৮৫৬৬১০৭৯০
- ↑ Abyssinian Ground Hornbill | Twycross Zoo | World Primate Centre ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ আগস্ট ২০১২ তারিখে. Twycross Zoo. Retrieved on 2012-08-24.
- ↑ San Diego Zoo's Animal Bytes: Hornbill. Sandiegozoo.org. Retrieved on 2012-08-24.
- ↑ Krook, K., Bond, W.J., and Hockey, P.A.R.; “The effect of grassland shifts on the avifauna of a South African savanna”; Ostrich: Journal of African Ornithology 2007, 78 (2) : 271–279
- ↑ ক খ গ Maclean, Gordon Lindsay. Roberts' Birds of South Africa, 6th Edition; pp. 399–400. আইএসবিএন ৯৭৮০৬২০১৭৫৮৩৮
- ↑ ''“Bucorvus leadbeateri”'' ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৭ আগস্ট ২০১২ তারিখে. Ewt.org.za. Retrieved on 2012-08-24.
- ↑ ক খ “Ground Hornbill (Bromvoël)”. (PDF) . Retrieved on 2012-08-24.
- ↑ Sweeney, Roger; “Captive Management of Ground Hornbills for a Sustainable Population” by Capstone Project Report
- ↑ "AnAge entry for Bucorvus leadbeateri"। The Animal Ageing And Longevity Database। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মে ২০১২।
- ↑ ক খ গ Skutch; Alexander Frank (author) and Gardner, Dana (illustrator) Helpers at birds' nests : a worldwide survey of cooperative breeding and related behavior pp. 69–71. Published 1987 by University of Iowa Press. আইএসবিএন ০৮৭৭৪৫১৫০৮
- ↑ Madrid M, J. A., H. D. Madrid M., S. H. Funes, J. López, R. Botzoc G., and A. Ramos (1991). [Reproductive biology and behavior of the Ornate Hawk-Eagle in Tikal National Park (Spizaetus ornatus)]. pp. 93–113 in D. F. Whitacre, W. A. Burnham, and J. P. Jenny (eds.) , Maya Project: use of birds of prey and other fauna as environmental indicators for design, management, and monitoring of protected areas and for building local capacity for conservation in Latin America, Progress Report IV. The Peregrine Fund, Inc., Boise, ID.
- ↑ Trail, Pepper W.; “African hornbills: keystone species threatened by habitat loss, hunting and international trade”
- Kemp, Alan (২০০৩)। "Hornbills"। Christopher Perrins (Ed.)। Firefly Encyclopedia of Birds। Firefly Books। পৃষ্ঠা 384–389। আইএসবিএন 1-55297-777-3।
- Zimmerman, Dale A., Donald A. Turner, and David J. Pearson (১৯৯৯)। Birds of Kenya and Northern Tanzania। Princeton University Press। পৃষ্ঠা 78–79, 397। আইএসবিএন 0-691-01022-6।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- (Southern) Ground Hornbill – Species text in The Atlas of Southern African Birds.
- Southern Ground Hornbill videos, photos & sounds on the Internet Bird Collection
- Southern Ground Hornbill Bucorvus cafer ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে on BirdLife.org