জ্যোতিন্দ্রনাথ দীক্ষিত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জ্যোতিন্দ্রনাথ দীক্ষিত
ফুল হাতে
ভারতের দ্বিতীয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা
কাজের মেয়াদ
২৩ মে ২০০৪ – ৩ জানুয়ারি ২০০৫
প্রধানমন্ত্রীমনমোহন সিং
পূর্বসূরীব্রজেশ মিশ্র
উত্তরসূরীএম. কে. নারায়ণ
ভারতের অষ্টাদশ বিদেশ সচিব
কাজের মেয়াদ
১ ডিসেম্বর ১৯৯১ – ৩১ জানুয়ারি ১৯৯৪
প্রধানমন্ত্রীপি. ভি. নরসিংহ রাও
পূর্বসূরীমুচকুন্দ দুবে
উত্তরসূরীকৃষ্ণান শ্রীনিবাসন
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯৩৬-০১-০৮)৮ জানুয়ারি ১৯৩৬
মাদ্রাজ, মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু৩ জানুয়ারি ২০০৫(2005-01-03) (বয়স ৬৮)
নয়া দিল্লি ভারত
জাতীয়তাভারতীয়
দাম্পত্য সঙ্গীবিজয় লক্ষ্মী সুন্দরম
সন্তান
প্রাক্তন শিক্ষার্থীজাকির হোসেন দিল্লি কলেজ
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাকূটনীতিক
পুরস্কার পদ্মবিভূষণ (২০০৫)

জ্যোতিন্দ্রনাথ দীক্ষিত (৮ জানুয়ারি ১৯৩৬ - ৩ জানুয়ারি ২০০৫) (যিনি জেএন দীক্ষিত নামে বেশি পরিচিত) ছিলেন একজন প্রবীণ ভারতীয় কূটনীতিক, ১৯৯১-৯৪ খ্রিস্টাব্দ সময়ের ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হিসেবেও কাজ করেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ গঠনের পর তিনি সেখানে ভারতের প্রথম হাইকমিশনার ছিলেন। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় ভারতের হাইকমিশনারও ছিলেন তিনি। মৃত্যুর সময়, তিনি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং- এর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন। পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে বিরোধে তিনি আলোচক ভূমিকায় গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন। [১][২][৩][৪]

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

জ্যোতিন্দ্রনাথ দীক্ষিত ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের ৮ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির অধুনা চেন্নাই-এ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুন্সি পরমু পিল্লাই ছিলেন বিখ্যাত মালয়ালি লেখক এবং মাতা রেতনাময়ী দেবী। তার পদবী দীক্ষিত হয় তার সৎ পিতা সীতারাম দীক্ষিত এর কারণে। তিনি ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সাংবাদিক।.[৫]

তিনি মধ্য ভারত, রাজস্থান এবং দিল্লির বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ জাকির হোসেন কলেজ থেকে অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানসহ দর্শনে অনার্স নিয়ে বি.এ. পাশ করেন [৬] এরপর তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক আইন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রির জন্য জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডিয়ান স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে পড়াশোনা করেন। [৭]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে জেএন দীক্ষিত ভারতীয় পররাষ্ট্র পরিষেবায় যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন এবং অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় যান। কর্মজীবনে বিশ্বের অনেক দেশে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর তিনিই বাংলাদেশে প্রথম ডেপুটি হাইকমিশনার হন। (১৯৭১-৭৪) পরবর্তীকালে, তিনি টোকিও এবং ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসে ডেপুটি চিফ অফ মিশন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারপরে চিলি, মেক্সিকোতে রাষ্ট্রদূত (১৯৬০-১৯৬১ তৃতীয় সচিব), জাপান, অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান (১৯৮০-৮৫); হাই কমিশনার হন শ্রীলঙ্কায় এবং পাকিস্তানে যথাক্রমে (১৯৮৫-৮৯) এবং (১৯৮৯-৯১) খ্রিস্টাব্দ সময়ে। ভুটানে ভারতীয় বৈদেশিক সাহায্যের প্রধান প্রশাসক ছিলেন তিনি। [৮] শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে হাইকমিশনার থাকাকালীন সময়ে ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে জাতিগত সংকটের সময় তারই দৌত্যে ভারত শ্রীলঙ্কা সরকারের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং দ্বীপরাষ্ট্রের তামিল এলাকায় ভারতীয় শান্তি রক্ষা বাহিনী (আইপিকেএফ) মোতায়েন করে। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দ হতে তিনি ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের শেষে সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

জেএন দীক্ষিত বিভিন্ন সময়ে জাতিসংঘ, জাতিসংঘ শিল্প উন্নয়ন সংস্থা , ইউনেস্কো ,আইএলও এবং জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনে (ন্যাম) ভারতের প্রতিনিধি ছিলেন। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭ মে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হন এবং সফল হন। [৯]

অবসরের পর দেশে ও বিদেশের বহু প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার [১০]পাশাপাশি আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক বিষয়ে আউটলুক এবং ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সহ নানা পত্রপত্রিকায় তিনি তার লেখালেখি অব্যাহত রাখেন।[১১]

ব্যক্তিগত জীবন এবং মৃত্যু[সম্পাদনা]

জ্যোতিন্দ্রনাথ দীক্ষিত বিজয়া লক্ষ্মী সুন্দরমকে বিবাহ করেন। তাদের পাঁচ সন্তান - তিন পুত্রেরা অশোক, রাহুল ও ধ্রুব এবং দুই কন্যারা হলেন আভা ধবলে ও দীপা শাকধের। জেএন দীক্ষিত ২০০৫ খ্রিস্টাব্দের ৩ জানুয়ারি ৬৮ বৎসর বয়সে নতুন দিল্লিতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেন। [[১২][১৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

সিভিল সার্ভিসের পররাষ্ট্র, নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য ভারত সরকার তাকে ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মবিভূষণ মরণোত্তর প্রদান করে।[১৪]

রচনাসমূহ[সম্পাদনা]

  • সেল্ফ ইন অটাম,(১৯৮২) (কবিতা সংকলন)
  • অ্যানাটমি অফ এ ফ্লড ইনহেরিট্যান্স: এ সার্ভে অফ ইন্দো-পাক রিলেশনস ১৯৭০-৯৪, কোনার্ক পাবলিশার্স,(১৯৯৫)
  • মাই সাউথ ব্লক ইয়ার্স, ইউবিএস পাবলিকেশন;
  • অ্যাসাইনমেন্ট কলম্বো, কোনার্ক পাবলিশার্স,(১৯৯৭);
  • অ্যাক্রশ বর্ডার: ফিফটি ইয়ার্স অফ ইন্ডিয়া'জ ফরেন পলিসি, পিআইসিইউএস পাবলিশার্স (১৯৯৮);
  • লিবারেশন অ্যান্ড বিয়ন্ড: ইন্দো-বাংলাদেশ রিলেশনস,১৯৭১-৯৯, কোনার্ক পাবলিশার্স। (১৯৯৯);
  • অ্যান আফঘোম: ডায়েরি-জহির শাহ টু তালিবান, কোনার্ক পাবলিশার্স,(২০০০);
  • ইন্ডিয়ান ফরেন পলিসিস অ্যান্ড ইটস নেবারস, জ্ঞান বুকস, নিউ দিল্লি, (২০০১);আইএসবিএন ৮১-২১২-০৭২৬-৬
  • ইন্ডিয়া'জ ফরেন পলিসিস— চ্যালেঞ্জ অফ টেরোরিজম ফ্যাশনিং ইন্টারস্টেট ইক্যুয়েশন, জ্ঞান বুকস,(২০০৩);আইএসবিএন ৮১-২১২-০৭৮৫-১আইএসবিএন 81-212-0785-1
  • এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স রোলি বুকস, (২০০৩)।আইএসবিএন ৮১-৭৪৩৬-২৬৪-৯আইএসবিএন 81-7436-264-9
  • ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিস: হিস্ট্রি অ্যান্ড চ্যালেঞ্জ । কোনার্ক পাবলিশার্স, (২০০৫)।আইএসবিএন ৮১-২২০-০৬৯৪-৯আইএসবিএন 81-220-0694-9

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. J. N. Dixit: Hawkish diplomat and India's first full-time National Security Adviser[অকার্যকর সংযোগ] The Independent, 5 January 2005.
  2. J.N. Dixit – a tribute. By Gopal Gandhi, The Hindu, 5 January 2005.
  3. J. N. Dixit, 68, Dies; Served as India's Negotiator in Pakistan and China Disputes New York Times, 9 January 2005.
  4. J.N. Dixit, Indian Security Adviser, Dies[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] VOA News, By Anjana Pasricha. New Delhi, 3 January 2005.
  5. "Obituary"। ২৭ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০০৯ 
  6. 1952, A College Story ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ জুন ২০১৩ তারিখে Indian Express, 5 July 2003.
  7. "JN Dixit: A brilliant diplomat, strategist"Business Standard। ৪ জানুয়ারি ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০১২ 
  8. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; inde3 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  9. JN Dixit Is NSA Financial Express, 27 May 2004.
  10. JN Dixit no more Financial Express, 4 January 2005.
  11. Columnists
  12. National Security Advisor JN Dixit passes away The Times of India, 3 January 2005.
  13. EXCLUSIVE PMO: 'They Killed Him...':Close friends say an ugly tug-of-war within the PMO put a huge strain on the late J.N. Dixit that he couldn't withstand Outlook, 28 March 2005.
  14. "Padma Vibhushan for J.N. Dixit, R.K. Laxman"The Hindu। ২৬ জানুয়ারি ২০০৫। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১২