জেল হত্যা দিবস
জেলখানায় জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড | |
---|---|
স্থান | ঢাকার পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার, ঢাকা, বাংলাদেশ |
তারিখ | ৩রা নভেম্বর ১৯৭৫; (ভোর ৪:০০ থেকে ৪:৩৫) |
হামলার ধরন | হত্যাকাণ্ড |
ব্যবহৃত অস্ত্র | লাইট মেশিনগান ও বেয়োনেট |
নিহত | ৪ |
হামলাকারী দল | সামরিক বাহিনীর সদস্যরা |
জেল হত্যা দিবস আওয়ামী লীগসহ বাংলাদেশের বেশ কিছু রাজনৈতিক দল কর্তৃক প্রতি বছর ৩রা নভেম্বর পালিত হয়। ১৯৭৫ সালের এই দিনে আওয়ামী লীগের চারজন জাতীয় নেতাঃ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মুহাম্মদ মনসুর আলী এবং আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি স্মরণার্থে এ দিবস পালন করা হয়।[১][২]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সেনাবাহিনীর দ্বারা ধানমন্ডির তার নিজস্ব বাসভবনে সপরিবারে হত্যার পর তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী খন্দকার মোস্তাক আহমেদ নিজেকে রাষ্টপতির পদে আসীন করে সামরিক শাসন জারি করেন। ২২শে আগস্ট মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতাকে গ্রেফতার করে পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। ২ মাস ১৯ দিন পর একই বছরের ৩ নভেম্বর গভীর রাতে সেনাসদস্যরা দেশত্যাগ করার পূর্বে খন্দকার মোস্তাক আহমেদ এর অনুমতি নিয়ে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং সেখানে বন্দি অবস্থায় থাকা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী তৎকালীন জাতীয় চার নেতা - সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।[৩]
শিকার
[সম্পাদনা]- সৈয়দ নজরুল ইসলাম- বাংলাদেশের প্রথম সরকার, মুজিবনগর সরকারের উপ-রাষ্ট্রপতি এবং ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি বাকশালের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।[৪]
- তাজউদ্দীন আহমদ- একজন আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যও ছিলেন।[৫]
- আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান- একজন সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন গঠিত অস্থায়ী সরকারের স্বরাষ্ট্র,কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন।[৬]
- মুহাম্মদ মনসুর আলী- মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।[৭]
পরিণতি
[সম্পাদনা]এই হত্যাকাণ্ড ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আরেকটি কলঙ্কময় অধ্যায়। এই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সদস্য ও সমস্ত জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এই ঘটনা খন্দকার মোশতাক আহমেদ এর পতন ত্বরান্বিত করে। খুনিরা দেশত্যাগে বাধ্য হয়। এই হত্যাকান্ড ছিল ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত স্বাধীনতাবিরোধী দেশী ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সম্মিলিত যড়যন্ত্র ও নীল নকশার বাস্তবায়ন। ১৫ই আগস্ট ও ৩রা নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড একই গোষ্ঠী সংঘটিত করে। উভয় হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য ছিল সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের অর্জনসমূহ ধ্বংস ও দেশকে নেতৃত্ব শূন্য করে পাকিস্তানি ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠা করা।
বিচারকার্য
[সম্পাদনা]জেলখানায় ঐ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরের দিন ৪ঠা নভেম্বর তৎকালীন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উপমহাপরিদর্শক কাজী আব্দুল আউয়াল লালবাগ থানায় বাদী হয়ে চার নেতার হত্যাকাণ্ডের মামলা করেন । মামলার এজাহারে বলা হয় যে, রিসালদার মোসলেম উদ্দিন এর নেতৃত্বে চার পাঁচ জন সেনাসদস্য কারাগারে ঢুকে চার নেতাকে হত্যা করেন। হত্যার পর বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। ঘটনার পরদিন মামলা করা হলেও এই মামলার তদন্ত থেমেছিল ২১ বছর। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও জেলহত্যা মামলার বিচার কাজ শুরু করা হয়। টানা আট বছর বিচার চলার পর ২০০৪ সালের ৩ জানুয়ারি এর বিচার কাজ শেষ হয়। ৯ মাস পর ২০০৪ সালের ২০শে অক্টোবর রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে আদালত তিনজন পলাতক সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড, ১২ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও পাঁচজনকে খালাস প্রদান করে।[৮]
২০০৮ সালের ২৮শে আগস্ট বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ জেলহত্যা মামলায় অভিযুক্ত ছয়জন সামরিক কর্মকর্তাকে খালাস দেয়। খালাসীদের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, বজলুল হুদা এবং এ কে এম মহিউদ্দীন আহমেদকে ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষ খালাসীদের সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে।[৮]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "আজ জেলহত্যা দিবস"। বাংলা ট্রিবিউন। ২০১৬-১১-০৩। ২০১৬-১২-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১২-১৮। অজানা প্যারামিটার
|ইউআরএল-বস্থা=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ "শোকাবহ জেল হত্যা দিবস সোমবার"। দৈনিক যুগান্তর। ২০১৪-১১-০২।
- ↑ "জেল হত্যা: 'প্রেসিডেন্ট বলেন, আর্মি অফিসাররা যা চায় সেটা কর'"। বিবিসি বাংলা। ২০১৭-১১-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-২৮।
- ↑ "ইসলাম, সৈয়দ_নজরুল"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১০-১০।
- ↑ "আহমদ, তাজউদ্দিন"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১০-১০।
- ↑ "কামারুজ্জামান, আবুল হাসনাত মোহাম্মদ"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১০-১০।
- ↑ "আলী, ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মনসুর"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১০-১০।
- ↑ ক খ "জেল হত্যা মামলার রায় ৩০শে এপ্রিল"। বিবিসি বাংলা। ঢাকা। ২০১৩-০৪-১৭।