চোলনাইক্কান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
চোলনাইক্কান
নীলাম্বুরের একজন চোলনাইক্কান।
মোট জনসংখ্যা
১৯১
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল
 ভারত
ভাষা
চোলনাইক্কান

চোলনাইক্কান হল ভারতের একটি জাতিগোষ্ঠী। তারা প্রাথমিকভাবে দক্ষিণ কেরল রাজ্যে, বিশেষ করে সাইলেন্ট ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে বাস করে। তারা এই অঞ্চলের শেষ অবশিষ্ট শিকারী-সংগ্রাহক উপজাতিদের মধ্যে একটি। চোলনাইক্কানরা কথা বলে চোলনাইক্কান ভাষায়, এই ভাষাটি দ্রাবিড় ভাষা পরিবারের অন্তর্গত।

পটভূমি[সম্পাদনা]

চোলানাইক্কান পরম্পরাগতভাবে নীলাম্বুরের কাছে কারুলাই এবং চুঙ্গাথারা বনাঞ্চলের পরিসীমায় বসবাস করে। এই এলাকাটি মালাপ্পুরম জেলার নীলাম্বুর তালুকে অবস্থিত। ১৯৬০ এর দশক পর্যন্ত, তারা মূলধারার শহুরে সমাজের থেকে দূরে, খুব সীমিত যোগাযোগ রেখে নির্জন জীবনযাপন করত। যখন তাদের সাথে প্রথম যোগাযোগ করা যায়, তখন তাদের কাছে কোনো পোশাকও ছিল না এবং তারা 'পূর্বপুরুষের আত্মা'র উপাসনা করত। গাছই ছিল তাদের ভক্তির একমাত্র প্রতীক। তারপর থেকে চোলনাইক্কানদের ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা পরিবর্তিত হয়েছে। মূলধারার জীবনযাত্রা আধুনিক সংস্কৃতি নিয়ে এসেছে, এবং সেই সঙ্গে নতুন অসুখও এনেছে যা উপজাতীয় সংস্কৃতি এবং উপজাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।[১] ভারত সরকার তাদের বিশেষভাবে দুর্বল উপজাতীয় গোষ্ঠী হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে।[২] বর্তমানে তাদের সাক্ষরতার হার ১৬%।

১৯৯১ সালের জনগণনায় চোলনাইক্কানের সংখ্যা ছিল ৩৬০ জন। তাদের জনসংখ্যা বর্তমানে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, এখন তাদের সংখ্যা ২০০ জনেরও কম।[৩] চোলানাইক্কানরা নিজেদেরকে ‘মালানাইকান’ বা ‘শোলানাইকান’ বলে ডাকে। বনের গভীরে বসবাস করে বলে এদের চোলনাইক্কান বলা হয়। ‘চোলা’ বা ‘শোল’ এর অর্থ গভীর চির সবুজ বন, এবং 'নাইকান' মানে রাজা। তারা মহীশূর জঙ্গল থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে বলে জানা গেছে।

সি. বিনোদ এই জাতিগোষ্ঠী থেকে স্নাতক প্রথম ব্যক্তি। তিনি তাঁর স্নাতকোত্তর এবং এম.ফিল সম্পন্ন করেছেন এবং বর্তমানে গবেষণা করছেন।[৪]

নৃবিজ্ঞান এবং সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

তারা সাধারণত সুগঠিত বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী এবং ছোট আকারের হয়। তাদের দেহবর্ণ গাঢ় থেকে হালকা বাদামী পর্যন্ত হয়। মুখ গোলাকার বা ডিম্বাকৃতির হয়। তাদের ঠোঁট মাঝারি থেকে পাতলার মধ্যে হয়, চুলের ধরন কোঁকড়ানো। তারা 'কাল্লুলাই' নামক পাথুরে আশ্রয়ে (পাহাড়ের গুহা) বা পাতার তৈরি খোলা ঘরে বাস করে। তাদের ২ থেকে ৭ জনের প্রাথমিক পরিবার নিয়ে গঠিত দলে দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিটি দলকে ‘চেম্মাম’ বলা হয়। চোলনাইক্কানরা চেম্মামের অধীনে থাকা অঞ্চলগুলি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে তাদের পূর্বপুরুষদের দ্বারা প্রণীত নিয়মগুলি পালনে খুব বিশেষভাবে নজর রাখে।

অর্থনীতি[সম্পাদনা]

চেম্মামদের বনের পরিসীমায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেখতে পাওয়া যায়। তারা খাদ্য সংগ্রহ, শিকার এবং সামান্য বনজ পণ্য সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের ভাষা কন্নড়, তামিল এবং মালায়লাম ভাষার মিশ্রণ। তারা বর্তমানে তাদের দৈনন্দিন জীবনে পোশাক এবং অলঙ্কার, গৃহস্থালীর জিনিসপত্র, সরঞ্জাম এবং অস্ত্র ব্যবহার করে। তারা তাদের প্রধান খাদ্য হিসেবে ভাত খায়। তাদের খাদ্য তালিকায় বন্য শিকড়, কন্দ, বীজ, ফল এবং মাংস থাকে। তাদের জীবিকা সম্পূর্ণরূপে বনের উপর নির্ভরশীল। সামান্য বনজ দ্রব্য সংগ্রহ ও বিক্রিই তাদের আয়ের প্রধান উৎস। তাদের মধ্যে এখনও অনেক প্রথা, অভ্যাস এবং নিষেধাজ্ঞা প্রচলিত রয়েছে।

ভাষা[সম্পাদনা]

চোলনাইক্কানরা মাতৃভাষা হিসেবে চোলনাইক্কান ভাষায় কথা বলে। এটি দ্রাবিড় ভাষা পরিবারের অন্তর্গত। এদের অনেকেরই মালয়ালমের প্রাথমিক জ্ঞান রয়েছে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

ফিলিপোস ভাইদ্যার লেখা কেরালার প্রধান উপজাতি http://focusonpeople.org/major_tribals_in_kerala.htm ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Diverse Tribes in India: The Cholanaikkan Tribe of Kerala."। ২০২২-০৩-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০২২ 
  2. "PVTG – Particularly Vulnerable Tribal Groups listed by the Government of India (interactive map)"Tribal Cultural Heritage in India Foundation (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৪-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২৬ 
  3. "Astronomy of Cholanaikkan tribe of Kerala" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০২২ 
  4. "Meet Vinod, the first research scholar from Kerala's Cholanaikkan tribal community"। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০২২