চক্রপাণি দত্ত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

চক্রপাণি দত্ত[১] (আনুমানিক ১১তম শতাব্দী) একজন বাঙালি পন্ডিত ও আয়ুর্বেদ চিকিৎসার অনুশীলনকারী এবং গবেষক ছিলেন।[২] তিনি প্রাচীণ বাংলার পুরোধা বাঙালি মনিষীদের অন্যতম।

তাঁর জীবদ্দশায়, আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পদ্ধতিতে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি প্রাথমিকভাবে আয়ুর্বেদ চিকিৎসার প্রাথমিক বা মূল গ্রন্থগুলির বিষয়ে তাঁর শিক্ষা-সংক্রান্ত ভাষ্যগুলির মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করে ছিলেন। তিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে ভারতীয় চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিলেন।

জীবনী[সম্পাদনা]

চক্রপাণি দত্ত ১১তম শতাব্দীর পাল আমলে শেষার্ধে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের ময়ূরেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়।[৩] তিনি একজন ব্রাহ্মণ ছিলেন এবং একটি সম্ভ্রান্ত বৈদ্য পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন,[৪][৫] তাঁর পিতা পাল সম্রাট নয়াপালের রন্ধনশালার অধ্যক্ষ বা প্রধান হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।[৬] তার বড় ভাই ভানুকে একজন অন্তরঙ্গ (শিক্ষিত চিকিৎসক) হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।[৭] একজন পাল দরবারী, নারদত্ত, চক্রপাণি দত্তের আধ্যাত্মিক গুরু হিসাবে কাজ করেছিলেন।[৮]

প্রাথমিক আয়ুর্বেদ গ্রন্থগুলির - চরক সংহিতা এবং সুশ্রুত সংহিতা- উপর তাঁর ভাষ্যগুলির মাধ্যমে চক্রপাণি দত্ত অল্প বয়সেই বিশিষ্টতা অর্জন করতে শুরু করেছিলেন।[৬] তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত রচনাগুলির মধ্যে রয়েছে চিকিৎসাসমগ্রহ /চিকিৎসা সংগ্রহ (চিকিৎসা অনুশীলন এবং পদ্ধতির সংগ্রহ), দ্রব্যগুণ (উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য), এবং সর্বসারসংগ্রহ (জিনিসের সারাংশের সংগ্রহ)।[৮] গ্রন্থগুলিতে রোগের থেরাপিউটিক, সার্জিক্যাল ও শারীরবৃত্তীয় চিকিত্সা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, এবং তাঁকে আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় একজন কর্তাব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।[৯]

আনুমানিক একাদশ শতকে তিনি বাংলাদেশের শ্রীহট্ট ভ্রমণ করেন এবং তৎকালীন নৃপতির চিকিৎসা করে তাকে মৃত্যুশয্যা থেকে উদ্ধার করেন। নৃপতি গৌরগোবিন্দ কৃতজ্ঞতা স্বরুপ ও চক্রপাণি দত্তের প্রতি নির্ভরশীলতার জায়গা থেকে তাকে অনুরোধ করেন শ্রীহট্টে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যে। কিন্তু চক্রপাণি দত্ত গঙ্গা তীর ব্যতীত অন্য কোথাও থাকতে সম্মত ছিলেন না। তাই তিনি নিজভূমে ফিরে যেতে উদ্যত হলে নৃপতির অনুরোধে নিজ পূত্র মহীপতি দত্তকে শ্রীহট্টের সপ্তগ্রাম বা বর্তমান সাতগাঁওতে গৃহস্থ করে যান। সাতগাঁও বর্তমানে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলাইয় অবস্থিত। এই মহীপতি দত্তের মাধ্যমেই চক্রপাণি দত্তের বংশধারা বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়। যাদের মাঝে অনেকেই পরবর্তী বাংলায় নিজ প্রতিভায় জ্যোতি ছড়িয়েছেন৷ উল্লেখ্য গীতিকবি রাধারমণ দত্তও চক্রপাণি দত্তেরই বংশধর।

বর্তমানে বাংলাদেশের সিলেট বিভাগ সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে চক্রপাণি  দত্তের বংশধরেরা বসবাস করছেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. জীবনীকোষ-ভারতীয় ঐতিহাসিক-তৃতীয় খণ্ড.pdf (পিডিএফ)। কলকাতা। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০২৩ 
  2. আমনদীপ শুক্লা (৩০ জুলাই ২০২০)। "Takshashila, Nalanda: New Education Policy seeks to draw from ancient Indian knowledge"www.hindustantimes.com (ইংরেজি ভাষায়)। নতুন দিল্লি: হিন্দুস্তান টাইমস। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০২৩ 
  3. সেনগুপ্ত, যতীন্দ্রচন্দ্র (১৯৭৫)। West Bengal District Gazetteers: Birbhum। State editor, West Bengal District Gazetteers। পৃষ্ঠা ৪৮৪। 
  4. শ্রীবাস্তব, জি.পি. (১৯৫৪)। History of Indian pharmacy। পিন্ডারস লিমিটেড। পৃষ্ঠা ১০১। 
  5. শুভকথা, পি. কে. জে.পি. (১৯৯২)। Cakrapénidatta। বুলেটিন অব ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব হিস্ট্রি অব মেডিসিন। ২২-২৩। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব হিস্ট্রি অব মেডিসিন। পৃষ্ঠা ৫৩। 
  6. শ্রীকান্তমূর্তি, কে.আর. (১৯৬৮)। Luminaries of Indian medicine: from the earliest times to the present day। পৃষ্ঠা 62। 
  7. মজুমদার, রমেশচন্দ্র (১৯৪৩)। The History of Bengal। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ৩১৬। 
  8. মনোরঞ্জন ঘোষ (২০১২)। "চক্রপাণি দত্ত"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  9. Srikantamurthy (1968, p. ৬৩)