গোলোকচন্দ্র গোস্বামী
গোলোকচন্দ্র গোস্বামী | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ২৪ জানুয়ারি ২০২০ গৌহাটি, আসাম, ভারত | (বয়স ৯৬)
গোলোকচন্দ্র গোস্বামী (১৫ নভেম্বর ১৯২৩ - ২৪ জানুয়ারি ২০২০) ছিলেন ভারতের আসামের একজন শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, ভাষাবিদ এবং সাহিত্যিক। অসমীয়া ভাষার রূপবিদ্যা ও ধ্বনিতত্ত্বে তাঁর অবদান অতুলনীয়। তিনি ১৯৫৪ সাল থেকে গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অসমীয়া ভাষা বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
[সম্পাদনা]গোলোকচন্দ্র ১৯২৩ সালের ১৫ নভেম্বর অবিভক্ত নগাঁও জেলার (বর্তমানে মরিগাঁও জেলা) মায়াং মৌজার দাইপাড়া সাতরায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল পরমানন্দ দেব গোস্বামী এবং মাতার নাম ছিল দময়ন্তী দেবী।[১] ১৯৪২ সালে জাগী হাই স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় গোলোকচন্দ্র পশ্চিম নগাঁও সার্কেলে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন। তাই এক শিক্ষাবর্ষের জন্য আনুষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হন।[১] ১৯৪৪ সালে তিনি রাহা হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় চারটি বিষয়ে স্টার নম্বর নিয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯৪৬ সালে কটন কলেজ থেকে বিজ্ঞানে প্রথম বিভাগে তার প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় শ্রেণী পাস করেন এবং একটি সরকারী বৃত্তি পান। ১৯৪৮ সালে কটন কলেজ থেকে বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর ১৯৫০ সালে তিনি দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।[১] এরপর তিনি গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অসমীয়া বিভাগে অধ্যয়ন করেন এবং ১৯৫৩ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ছিলেন প্রথম ছাত্র যিনি গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অসমীয়া ভাষায় প্রথম শ্রেণী পেয়েছিলেন।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]১৯৪৮-৪৯ সালে গোলোকচন্দ্র গুয়াহাটির কামরূপ একাডেমিতে প্রায় এক বছর শিক্ষকতা করেন। ১৯৫০ সালে তিনি দৈনিক কাকতখনত অসমিয়া পত্রিকার বরিষ্ঠ উপ-সম্পাদক হিসাবে কিছু সময়ের জন্য কাজ করেন। ১৯৫৪ সালের জুলাই মাসে তিনি গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অসমীয়া বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালের মে থেকে ১৯৫৬ সালের শেষের দিকে তিনি পুনের ডেকান কলেজে ভাষাবিজ্ঞানের একজন গবেষণা ছাত্র হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৫৬ সালের শেষের দিকে তিনি নিউইয়র্কের রকফেলার ফাউন্ডেশনের গবেষক হিসাবে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত তার বই, "অ্যান ইনট্রোডাক্সন টু আসামীজ্ ফোনলজি " অসমীয়া ভাষাতত্ত্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান হিসাবে বিবেচিত হয়।[২] তিনি ১৯৬৭ সালে গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অসমীয়া বিভাগের রিডার এবং ১৯৬৭ সালে অসমীয়া বিভাগের প্রধান নিযুক্ত হন। ১৯৮৫ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
সাহিত্যকর্ম
[সম্পাদনা]ভাষাবিজ্ঞানের বই
[সম্পাদনা]- ধ্বনিবিজ্ঞানৰ ভূমিকা (ধ্বনিবিজ্ঞানের ভূমিকা), ১৯৬৬[৩]
- অসমীয়া বর্ণপ্রকাশ, ১৯৬৯
- অসমীয়া আখৰ-জোটানি (অসমীয়া চরিত্র-জোটানি), ১৯৭২
- অসমীয়া ব্যাকৰণৰ মৌলিক বিচাৰ, (অসমীয়া ব্যাকরণের মৌলিক বিচার), ১৯৮৭[৪]
- অসমীয়া গোলোক ব্যাকৰণ, প্ৰবোধ ভাগ, ১৯৭২ এবং সুবোধ ভাগ, ১৯৭৪
- ভাষা-ভাষণিকা, ১৯৯২
- অসমীয়া ব্যাকৰণ প্ৰৱেশ, ২০০০
- অসমীয়া ভাষাৰ উচ্চাৰণ, ২০০১
সম্পাদনা
[সম্পাদনা]- সুধর্ম উপাখ্যান (পদ্মতী দেবী ফুকনি), ১৯৬৭
- ধৰ্মনাথ বৰঠাকুৰ : শতবর্ষণ স্মৃতি-অর্ঘ্য ১৯৮৭, ভাতঃ পাবাৰীত লগাড়ী বগৰ উল্লেখ ইতিবৃত্ত (মহদানন্দ দেব গোস্বামী), ১৯৯৫
- একটি অসমীয়া ব্যাকরণ, (Fr. O. Paviotti), ১৯৮৭
- ডঃ বাণীকান্ত কাকতি স্মরণ খণ্ড, ১৯৯৭
অভিধান
[সম্পাদনা]- হিন্দী-অসমীয়া-ইংৰাজী ত্ৰিভাষী অভিধান, (হিন্দি-অসমীয়া-ইংরেজি ত্রিভাষিক অভিধান), ১৯৮৫
- হিন্দী-অসমীয়া লঘুকোষ, ১৯৮৫
- ভাৰতীয় ভাষাকোষ (ভারতীয় ভাষাকোষ, ১৯৮৫
অনুবাদ
[সম্পাদনা]- ঈশ্বৰৰ বাণী (ঈশ্বরের বাণী), ১৯৯৩
- ব্যাকৰণ-মহাভাষ্য : পম্পশাহ্নিক (মহৰ্ষি পতঞ্জলি), ১৯৯৬
অন্যান্য বই
[সম্পাদনা]- মায়াং প্রসঙ্গ, ১৯৮৪
- ঠাকুৰব্ৰহ্ম হৰিদাস চৰিত (ঠাকুরব্রহ্ম হরিদাস চরিত), ১৯৮৭
- আনন্দ সাগৰ শ্ৰীকৃষ্ণ (আনন্দ সাগর কৃষ্ণ) ১৯৮৭
- পৰমাৰ্থকথা (পরমার্থকথা), ১৯৯৪
মৃত্যু
[সম্পাদনা]২৪ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে ৯৬ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়।[৫][৬]
পুরস্কার ও সম্মাননা
[সম্পাদনা]গোলোকচন্দ্র তার জীবদ্দশায় অনেক পুরস্কার ও উপাধি পেয়েছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে ২০০৫ সালে আনন্দ রাম বড়ুয়া পুরস্কার এবং ২০০২ সালে অসম সাহিত্য সভার 'সাহিত্যচার্য'। ২০০০ সালে তাকে 'ভাষাচার্য' উপাধি দেওয়া হয়।[৫]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ কথা বৰেণ্য, সম্পাদক-শোণিত বিজয় দাস আৰু মুনীন বায়ন, কথা প্ৰকাশন, প্ৰথম প্ৰকাশ, পৃষ্ঠা-৩১৩
- ↑ "অসমীয়া ভাষাৰ বিশিষ্ট পণ্ডিত, গৱেষক, সংস্কাৰক, সৰলীকৰণৰ প্ৰবক্তা ড০ গোলোকচন্দ্ৰ গোস্বামীৰ পৰলোক"। নর্থ-ইষ্ট নাও। ২৪ জানুয়ারী ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০২৪।
- ↑ Goswami, Golockchandra (১৯৬৬)। An Introduction to Assamese Phonology।
- ↑ খাউণ্ড, স্মৃতি ডেকা। "অসমীয়া ভাষাৰ ব্যাকৰণ চৰ্চাৰ ইতিহাস"। ২১ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০২০।
- ↑ ক খ "Renowned academician Dr. Golok Chandra Goswami passes away at 96 in Guwahati"। Sentinel Group, Guwahati। ২৫ জানুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০২০।
- ↑ "Renowned Linguist, Prof. Golok Chandra Goswami Passes Away"। ২৪ জানুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০২০।