বিষয়বস্তুতে চলুন

গুলশাহ হাতুন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গুলশাহ হাতুন
বুরসা অবস্থিত মুরাদিয়ে কমপ্লেক্স-এ গুলশাহ হাতুনের সমাধি
মৃত্যুআনু. ১৪৮৭
বুরসা, উসমানীয় সাম্রাজ্য
সমাধি
স্বামীমুহাম্মাদ ফাতিহ
বংশধরশাহজাদা মুস্তাফা

গুলশাহ খাতুন (উসমানীয় তুর্কি: کل شاہ خاتون, মৃত্যুকাল আনু. ১৪৮৭) ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহ এর স্ত্রী।[]

প্রারম্ভিক জীবন

[সম্পাদনা]

১৪৪৯ সালে মেহমেদ মানিসার শাহজাদা ও গভর্নর থাকা অবস্থায় তিনি হেরেমে প্রবেশ করেন। ১৪৫০ সালে সুলতান দ্বিতীয় মুরাদ এর মৃত্যু ও মেহমেদের সিংহাসনে আরোহণের ঠিক আগে[][] শাহজাদা মুস্তাফা-র জন্ম হয়। তিনি পরবর্তীতে তাঁর বাবার প্রিয় পুত্র হয়ে উঠেন।[][] ওসমানীয় প্রথা অনুযায়ী, সকল শাহজাদাকে তাঁদের প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে প্রাদেশিক গভর্নর হিসেবে কাজ করতে হত। মুস্তাফাকে কোনিয়া এবং পরবর্তীতে কায়সেরির গভর্নর হিসেবে পাঠানো হয় এবং গুলশাহও তাঁর সঙ্গে ছিলেন।[][]

মুস্তাফার মৃত্যু

[সম্পাদনা]

মুস্তাফা ১৪৭৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।[] একটি গুজব ছিল যে, মুস্তাফা উজিরে আজম মাহমুদ পাশা'র স্ত্রী সেলচুক হাতুনকে তাঁর প্রেমিকা বানিয়েছিলেন এবং প্রতিশোধ হিসেবে মাহমুদ তাঁকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করেন।[][] কিছু অনুমান রয়েছে যে, গুলশাহ হাতুনও এই অবৈধ সম্পর্কের সাথে জড়িত ছিলেন। এই সম্পর্ক ছিল শাহজাদা ও মাহমুদ পাশার স্ত্রী সেলচুক হাতুনের মধ্যে। সেলচুক হাতুন ছিলেন হাতিজে খাতুন এর বোন, যিনি ছিলেন দ্বিতীয় মেহমেদের একজন স্ত্রী।[] জিওভান্নি মারিয়া আঞ্জিয়েলো ছিলেন একজন ভেনিসীয় পর্যটক এবং আক কোয়ুনলু এবং প্রাথমিক সাফাভি পারস্য সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক প্রতিবেদনের লেখক। যিনি মুস্তাফার সেবায় নিয়োজিত ছিলেন এবং মুস্তাফার পরিবারবর্গের সাথে তাঁর জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। তাঁরা সবাই মিলে কায়সেরি থেকে বুরসায় যান, যেখানে মুস্তাফাকে দাফন করা হয়। তিনি মুস্তাফার মৃত্যুর সাথে মাহমুদ পাশার কোনো সম্পর্ক থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন;[][১০][] তবুও, দ্বিতীয় মেহমেদ কিছুদিন পরেই মাহমুদ পাশাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।[১১]

গুলশাহ হাতুনকে তাঁর পুত্রের মৃত্যুর বিষয়ে অবহিত করা হয়নি। যখন তাঁর মৃতদেহ বহনকারী গাড়ি প্রাসাদের বাইরে থামে, তখন গুলশাহ খাতুন এবং তাঁর সাথীরা শোক প্রকাশ করে বিলাপ করতে থাকেন। বাবিঙ্গার উল্লেখ করেছেন যে, মুস্তাফার কন্যা, নেরগিজজাদে ফেরাহশাদ হাতুন, তার দাদীসহ সকলে তার মৃত্যুর কারণে শোক প্রকাশ করেন।[] মেহমেদ নির্দেশ দেন যে, গুলশাহ বুরসায় তাঁর প্রয়োজনীয় সহচরীসহ থেকে যাবেন। তিনি গুলশাহের জন্য ভালো ব্যবস্থা করেন। যাতে তিনি সেখানে সম্মানের সাথে বসবাস করতে পারেন। তিনি আদেশ দেন যে, মুস্তাফার কন্যা, তাঁর মা এবং তাঁর মৃত পুত্রের সাথে সম্পর্কিত সকল নারীদের ইস্তানবুলে নিয়ে আসা হবে। অতঃপর সমস্ত নারীকে প্রাসাদে রাখা হয়, যেখানে মেহমেদের হেরেমের নারীরা অবস্থান করতেন। কয়েকদিন পরে এই সহচরীদের আদালতের কর্মচারীদের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়।[১০] ১৪৮০ সালে নেরগিজজাদে ফেরাহশাদ তাঁর চাচাতো ভাই শাহজাদা আব্দুল্লাহকে বিয়ে করেন, যিনি শাহজাদা বায়েজিদ (ভবিষ্যৎ বায়েজিদ দ্বিতীয়) এর বড় ছেলে ছিলেন।[১২]

শেষ বছর এবং মৃত্যু

[সম্পাদনা]

১৪৭৯ সালে গুলশাহ হাতুনকে ডিমেটোকার সিগিরকালু গ্রামের মালিকানা প্রদান করা হয়।[১৩] এই গ্রামের আয়কে সম্পত্তিতে রূপান্তরিত করা হয়েছিল যাতে গুলশাহ এটি একটি ওয়াকফ (দান) হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন, যা পরবর্তীতে বুরসায় তাঁর সমাধির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হবে।[১৪] গুলশাহ হাতুন ১৪৮৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন এবং বুরসায় তাঁর নির্মিত কবরে দাফন করা হয়। তার কবরস্থান তার পুত্র মুস্তাফার কবরস্থানের কাছেই ছিল।[১০][][] গুলশাহ হাতুনের কবরের একটি প্রবেশদ্বার রয়েছে যা চমৎকারভাবে খোদাই করা এবং সজ্জিত। ভেতরে মার্বেল পাথরের কবর রয়েছে, যা পুরনো অংশগুলি ব্যবহার করে নতুনভাবে তৈরি করা হয়েছে।[১৫]

বংশধর

[সম্পাদনা]

গুলশাহ হাতুনের একজন পুত্র ছিল:

  • শেহজাদে মুস্তাফা (১৪৫০ - ২৫ ডিসেম্বর ১৪৭৪, এক যৌন কেলেঙ্কারির পর বিতর্কিত পরিস্থিতিতে মৃত্যুবরণ করেন)। কোনিয়ার সাঞ্জাকবে ছিলেন এবং তাঁর একজন পুত্র এবং দুইজন কন্যা ছিল:
    • শেহজাদে হালি;
    • হানি হাতুন;
    • নেরগিজজাদে ফেরাহশাদ হাতুন, যিনি নেরগিশাহ নামেও পরিচিত। ১৪৮০ সালে তিনি তাঁর চাচাতো ভাই শেহজাদে আবদুল্লাহ (দ্বিতীয় বায়েজিদের পুত্র) কে বিয়ে করেন এবং তাঁদের একটি পুত্র ও দুটি কন্যা ছিল:
      • শেহজাদে ফুলান (১৪৮১-১৪৮৯)।
      • আইনিশাহ সুলতান (১৪৮২ - ১৫৪০), তিনি আহমেদ পাশাকে বিয়ে করেন।
      • শাহনিসা সুলতান (১৪৮৪ - ১৫৪০), তিনি প্রথমে তাঁর চাচাতো ভাই শাহজাদা মেহমেদ শাহ (মৃত্যু ১৫১২, শাহজাদা শেহিনশাহ, দ্বিতীয় বায়েজিদের পুত্র) কে বিয়ে করেন; এরপর মির্জা মেহমেদ পাশাকে (মৃত্যু ১৫১৭) বিয়ে করেন এবং তাঁদের একজন পুত্র, সুলতানজাদে শেমসি আহমেদ পаша ছিল; পরবর্তীতে তিনি নুরি বেয়কে বিয়ে করেন।

গ্রন্থপঞ্জি

[সম্পাদনা]
  • Archivum Ottomanicum, Volume 8। Mouton। ১৯৮৩। 
  • Babinger, Franz (১৯৯২)। Mehmed the Conqueror and His Time। Princeton University Press। আইএসবিএন 978-0-691-01078-6 
  • Bey, Mehmet Süreyya (১৯৬৯)। Osmanlı devletinde kim kimdi, Volume 1। Küğ Yayını। আইএসবিএন 978-9-004-12106-5 
  • Greenhalgh, Michael (২০০৯)। Marble Past, Monumental Present: মধ্যযুগীয় ভূমধ্যসাগরে প্রাচীন স্থাপত্যের ব্যবহার। BRILL। আইএসবিএন 978-9-004-17083-4 
  • Peirce, Leslie P. (১৯৯৩)। দ্য ইম্পেরিয়াল হারেম: অটোমান সাম্রাজ্যে নারী ও সার্বভৌমত্ববিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-195-08677-5 
  • Sakaoğlu, Necdet (২০০৮)। এই দেশের নারী সুলতানরা: ভ্যালিদে সুলতান, হাতুন, হাসেকি, কাদিনেফেন্দি, সুলতানেফেন্দি। Oğlak Yayıncılık। আইএসবিএন 978-9-753-29623-6 
  • Stavrides, Théoharis (২০০১)। ভেজিরদের সুলতান: অটোমান গ্র্যান্ড ভেজির মাহমুদ পাশা এঞ্জেলোভিচের জীবন (১৪৫৩-১৪৭৪)। BRILL। আইএসবিএন 978-9-004-12106-5 
  • Uluçay, M. Çağatay (২০১১)। পাদিশাহদের নারী ও কন্যারা। Türk Tarih Kurumu। 
  • Zachariadou, Elisavet A. (১৯৯৬)। অটোমান শাসনে ভিয়া এগ্নাতিয়া (১৩৮০-১৬৯৯): হ্যালসিয়ন ডেজ ইন ক্রিট II: ৯-১১ জানুয়ারি ১৯৯৪ তারিখে রেথিমননে অনুষ্ঠিত একটি সিম্পোজিয়ামCrete University Press 

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Sakaoğlu 2008, p.173
  2. Babinger 1992, পৃ. 61।
  3. Stavrides 2001, পৃ. 351।
  4. Uluçay 2011, পৃ. 39।
  5. Peirce 1993, পৃ. 47।
  6. Sakaoğlu 2008, পৃ. 129।
  7. Babinger 1992, পৃ. 330।
  8. Babinger 1992, পৃ. 331।
  9. Peirce 1993, পৃ. 299।
  10. Peirce 1993, পৃ. 50।
  11. Stavrides 2001, পৃ. 181।
  12. Al-Tikriti, Nabil Sirri (২০০৪)। Şehzade Korkud (ca. 1468-1513) and the Articulation of Early 16th Century Ottoman Religious Identity – Volume 1 and 2। পৃষ্ঠা 95, 312 n. 76। 
  13. Archivum 1983, পৃ. 191।
  14. Zachariadou 1996, পৃ. 33।
  15. Greenhalgh 2009, পৃ. 475।