গুণময় মান্না

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গুণময় মান্না
জন্ম(১৯২৫-০৩-২৫)২৫ মার্চ ১৯২৫
আড়গোড়া , ঘাটাল পূর্ব মেদিনীপুর পশ্চিমবঙ্গ
মৃত্যু২৮ এপ্রিল ২০১০(2010-04-28) (বয়স ৮৫)
বহরমপুর মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ
পেশাঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্বভারতীয়
ধরনউপন্যাস
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিশালবনি, মুটে, জুনাপুর স্টীল
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারবঙ্কিম পুরস্কার (১৯৯৭)

গুণময় মান্না (ইংরেজি: Gunomoy Manna) (জন্ম: ২৫ মার্চ , ১৯২৫ — মৃত্যু: ২৮ এপ্রিল ,২০১০) একজন বাঙালি ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক।[১]

জন্ম ও শিক্ষা জীবন[সম্পাদনা]

গুণময় মান্নার জন্ম পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমার আড়গোড়া গ্রামে। পিতার নাম দীননাথ মান্না, মাতা প্রাণবালা। এদের পরিবারে তখন লেখাপড়ার বিশেষ চল ছিল না। মাত্র চার বৎসর বয়সে তার পিতৃবিয়োগ হয়। বেশ কয়েক বৎসর তার পাঠশালায় না গিয়ে কেটে গেছে। এই সমস্ত কারণে তার পড়াশোনার শুরু ও অগ্রগতি বিলম্বিত হয়। কিন্তু তার মা প্রাণবালার উৎসাহে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে। মা'র অনুরোধে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৎকালীন শিক্ষক রাসবিহারী আচার্য বিনা বেতনে ভর্তি করে নিয়েছিলেন। বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে প্রাথমিক শেষ পরীক্ষায় বৃত্তি পেয়ে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে শিলাই নদী পেরিয়ে ভর্তি হন ঘাটাল বিদ্যাসাগর উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে। সরকারি বৃত্তি পেয়ে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে বেলুড়মঠে রামকৃষ্ণ বিদ্যামন্দির থেকে প্রথম বিভাগে আই.এ. পরীক্ষায় পাশ করে বৃত্তি লাভ করেন । ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স সহ বি.এ পাশ করেন। বঙ্কিমচন্দ্র সুবর্ণ পদক ও স্যার আশুতোষ জন্ম বার্ষিক পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলা সাহিত্যে এম. এ পাশ করেন এবং পরবর্তীতে ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে পি. এইচ.ডি. লাভ করেন। বিষয় ছিল রবীন্দ্র কাব্যরূপের বিবর্তন রেখা

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

গুণময়ের কর্মজীবন শুরু ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে ঘাটাল বিদ্যাসাগর উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে মাত্র ছয় মাসের শিক্ষকতা নিয়ে। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন কাঁথির প্রভাতকুমার কলেজে, ১৯৫৮ - ৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বহরমপুর গার্লস কলেজে এবং ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে অধ্যাপনা হতে অবসর নেন।

সাহিত্যকর্ম[সম্পাদনা]

ছাত্রাবস্থা হতেই তিনি লেখালেখিতে লিপ্ত থেকেছেন । তার প্রথম উপন্যাস লখিন্দর দিগার প্রকাশিত হয় ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে। বাংলায় তথাকথিত জনপ্রিয় লেখক না হলেও, তার 'কটা ভানারি', 'জুনাপুর স্টীল' ও 'লখীন্দর দিগার' এই তিন উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য সংযোজন । তার প্রবন্ধ ও গল্পগুলিও ভিন্নমাত্রার। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থী প্রসঙ্গ এসেছে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে ও তার পরের তার লেখা গল্পে। তার ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত 'শালবনি' উপন্যাস ইংরাজী ভাষাতেও অনূদিত হয়েছে। অনুবাদক পাপড়ি শ্রীরমন। তার রচিত উপন্যাস ছোটগল্প ও প্রবন্ধগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলি হল -

উপন্যাস-

  • লখীন্দর দিঘার ( ১৯৫০)
  • কটা ভিনারি (১৯৫৪)
  • জুনাপুর স্টীল (পূর্ব খণ্ড) (১৯৬০)
  • জুনাপুর স্টীল (উত্তর খণ্ড) (১৯৬২)
  • বিদ্ধবিহঙ্গ ( ১৯৬৬)
  • জননী (১৯৬৮)
  • অসামাজিক (১৯৭২)
  • শালবনি (১৯৭৮)
  • মুটে (১৯৯২)
  • ঘরানা ( ১৯৯৭)
  • বিদ্রোহী স্বর(১৯৯৯)
  • গঙ্গাপ্রবাহিনী (২০০৬)

ছোটগল্প-

  • নতুন প্রেমকথা ( ১৯৮৫)
  • এক গুচ্ছ গল্প ( ১৯৯৭)

প্রবন্ধ-

  • রবীন্দ্রনাথ ( ১৯৬৬)
  • রবীন্দ্র -কাব্যরূপের বিবর্তন রেখা (১৯৬৬)
  • গদ্যের সৌন্দর্য (১৯৭৪)
  • রবীন্দ্ররচনার দর্শনভূমি (১৯৯৩)
  • বাঙলা উপন্যাসের শিল্পাঙ্গিক : আধুনিক যুগ (১৯৯৫)

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

গুণময় মান্না এম.এ পড়ার সময়ই উমা দেবীকে বিবাহ করেন। তাঁদের চার পুত্র এবং তিন কন্যা। এঁরা সকলেই কৃতি ও উচ্চশিক্ষিত। অবসরের পর তিনি বহরমপুরে বাড়ি করে বসবাস করতে থাকেন। ২০১০ খ্রিস্টাব্দের ২৮ শে এপ্রিল তিনি প্রয়াত হন।

সম্মাননা[সম্পাদনা]

১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকার গুণময় মান্নাকে বঙ্কিম পুরস্কারে সম্মানিত করে।[২][৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯, পৃষ্ঠা ১১১, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. টেমপ্লেট:Cite url
  3. "~:: WB SCL ::~"www.wbpublibnet.gov.in। ২০১৮-১০-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-২৩