বিষয়বস্তুতে চলুন

গীবত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ইসলামে পরনিন্দাকে গীবত (غيبة) বলা হয়। ইসলামে একে সাধারণভাবে বড় পাপ হিসেবে ধরা হয়েছে এবং কুরআনে একে মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়ার মত ঘৃণিত কাজের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।[]

কুরআন

[সম্পাদনা]

গীবত বিষয়ে কুরআনে দুটি আয়াত রয়েছে। কুরআনের সূরা আল-হুজুরাতের ১২ নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ

মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।

সূরা আল-হুজুরাত (৪৯): আয়াত: ১২

সূরা নিসার ১৪৮ আয়াতে বলা হয়েছেঃ

মন্দ কথার প্রচার আল্লাহ পছন্দ করেন না, তবে কারো উপর যুলম করা হলে ভিন্ন কথা। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।

সূরা নিসা (৪)ঃ আয়াতঃ ১৪৮

হাদিস

[সম্পাদনা]

হাদিসে গীবতের সংজ্ঞা প্রদানপূর্বক তা না করার ও অন্যের দোষ ত্রুটি প্রচার না করতে ও গোপন রাখতে (كتمان الأسرار, কিতমান আসরার[][][]) সাধারণভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।[]

ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব, কুতাইবাহ ও ইবনু হুজর (রহঃ) ..... আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি জান, গীবত কী জিনিস? তারা বললেন, আল্লাহ ও তার রসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেন, (গীবাত হলো) তোমার ভাইয়ের সম্পর্কে এমন কিছু আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে। প্রশ্ন করা হলো, আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাই এর মধ্যে বাস্তবিকই থেকে থাকে তবে আপনি কি বলেন? তিনি বললেন, তুমি তার সম্পর্কে যা বলছ তা যদি তার মধ্যে প্রকৃতই থেকে থাকে তাহলেই তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তা তার মধ্যে না থাকে তাহলে তো তুমি তার প্রতি অপবাদ আরোপ করলে।

মুসলিম ২৫৮৯

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,‘তোমরা মুসলমানদের দোষ-ত্রুটি, ভুলভ্রান্তি খুঁজে বের করো না। যে ব্যক্তি অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ায় ও প্রকাশ করে দেয়, স্বয়ং আল্লাহ তার দোষ প্রকাশ করে দেন। আর আল্লাহ যার দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করেন তাকে নিজের বাড়িতেই লাঞ্ছিত করেন।’

(আবু দাউদ : ৪৮৮০, তিরমিজি, হাদিস : ২০৩২)

নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপনীয় বিষয় গোপন রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার গোপনীয় বিষয় গোপন রাখবেন। আর যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপনীয় বিষয় ফাঁস করে দেবে, আল্লাহ তার গোপনীয় বিষয় ফাঁস করে দেবেন। এমনকি এই কারণে তাকে তার ঘরে পর্যন্ত অপদস্থ করবেন।

(ইবনু মাজাহ : ২৫৪৬)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার সব উম্মতের গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে; কিন্তু দোষ-ত্রুটি প্রকাশকারীর গোনাহ মাফ করা হবে না। দোষ-ত্রুটি সে এভাবে প্রকাশ করে যে, কোনো ব্যক্তি রাতের বেলা কোনো কাজ করল, অতঃপর সকাল হলো। মহান আল্লাহ তার এ কাজটি গোপন রাখলেন। সে (সকালবেলা মানুষের কাছে) বলে, হে অমুক! আমি গত রাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে রাতযাপন করেছিল এমন অবস্থায় যে, আল্লাহ তার কাজগুলো গোপন রেখেছিলেন আর সে সকালবেলা আল্লাহর এ অন্তরাল সরিয়ে দিল।’

(বুখারি, হাদিস : ৬০৬৯)

নবী করিম (সা.) এরশাদ করেছেন ‘যে-কেউ অন্যের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন।’

(মুসলিম : ২৬৯৯)

বৈধতার ক্ষেত্র

[সম্পাদনা]

উল্লেখিত দ্বিতীয় আয়াত ও কিছু নির্ভরযোগ্য হাদীসের ভিত্তিতে[] ইসলামী আইনবিদগণ ৬ টি বিষয়ে পরনিন্দা বা গীবতকে বৈধ বলেছেন- অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে মজলুম ও বিচার চাওয়া বা নির্ভরযোগ্য কারও কাছে সমস্যার সমাধান চাওয়া, ইসলামের ও ধর্মীয় ভুল প্রচারকারী, অব্যাহত কবীরাহ গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি, বিবাহ, ব্যবসা ও চুক্তি, কাওকে বিপদ ও ক্ষতি হতে সাবধান করা, ও কারও পরিচয়বাচক সুবিদিত বৈশিষ্ট্য।[][]

এছাড়াও যে সকল ব্যক্তি প্রকাশ্যে ক্রমাগত অপরাধ করে ও কোন অনুশোচনাবোধ রাখে না, ও অনুতপ্ত হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা যায় না, তাদের ক্ষেত্রে যদি প্রকাশ্যে গীবত করে তাদের সতর্ক করা যায় এবং তাদের ক্ষতি থেকে অপরকে বাচানো যায়, তবে সেক্ষেত্রে তাদের গীবত জায়েজ।[]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Rafik Berjak (২০০৬), "Backbiting", The Qur'an: an encyclopedia, Taylor & Francis
  2. "كتمان السر من خصال الكرام"ইসলামওয়েব (আরবি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০২৫
  3. "كتمان السر من خصال الكرام"ইসলামওয়ে (আরবি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০২৫
  4. "كتمان السر"ইসলামওয়ে (আরবি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০২৫
  5. "অন্যের দোষ গোপন রাখার পুরস্কার"ডিএমপি নিউজ (মার্কিন ইংরেজি ভাষায়)। ১০ নভেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০২৩
  6. Nawawi, Imam (২০১৪)। Riyad As Salihin: The Gardens of the Righteous (আরবি ভাষায়)। Tughra Books। আইএসবিএন ৯৭৮-১-৫৯৭৮৪-৬৮০-৬। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মে ২০২০Quote no-1539, 1540, 1541, 1542, 1543
  7. Abdul-Rahman, Muhammad Saed (২০০৩)। Islam: Questions And Answers - The Heart Softeners (Part 1) (ইংরেজি ভাষায়)। MSA Publication Limited। পৃ. ২৭৮। আইএসবিএন ৯৭৮-১-৮৬১৭৯-৩২৮-৭। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০২০
  8. "Situations in Which Gheebah ("Backbiting") is Permitted - Islam Question & Answer"islamqa.info (ইংরেজি ভাষায়)। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০২০
  9. "Concealing people's sins is a matter that is subject to further discussion - Islam Question & Answer"Islam-QA (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০২৫

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]