গিরীন্দ্রশেখর বসু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গিরীন্দ্রশেখর বসু
জন্ম
গিরীন্দ্রশেখর বসু

(১৮৮৭-০১-৩০)৩০ জানুয়ারি ১৮৮৭
মৃত্যু৩ জুন ১৯৫৩(1953-06-03) (বয়স ৬৬)
জাতীয়তাভারতীয়
মাতৃশিক্ষায়তনকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

গিরীন্দ্রশেখর বসু (৩০ জানুয়ারি  ১৮৮৭ – ৩ জুন  ১৯৫৩) ছিলেন বিংশ শতকের প্রথম দিকের   দক্ষিণ এশিয়ার মনোবিজ্ঞানী এবং  ইন্ডিয়ান সাইকোঅ্যানালিটিক  সোসাইটির প্রথম সভাপতি (১৯২২ -১৯৫৩)। [১] মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মনোচিকিৎসা পদ্ধতির উদ্ভাবক সিগমুন্ড ফ্রয়েডের সাথে দীর্ঘ কুড়ি বৎসরের যোগাযোগ ছিল তাঁর। তবে ফ্রয়েড সৃষ্ট ইডিপাস কমপ্লেক্স তথা দেহ-মনের অবদান ক্রিয়া সম্পর্কে পশ্চিমী এবং অপশ্চিমী পদ্ধতি সাপেক্ষে তাঁর মতের পার্থক্য দেখা দিয়েছিল। এ সম্পর্কে তাঁর মতবাদ থিয়োরি অফ অপোজিট উইশ নামে খ্যাত। [২] তিনি ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতে প্রথম কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে জেনারেল হসপিটাল সাইকিয়াট্রি ইউনিট (সংক্ষেপে জিএইচপি ইউ) চালু করেন।[৩]

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

গিরীন্দ্রশেখরের জন্ম ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দের ৩০ শে জানুয়ারি তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অধুনা বিহার রাজ্যের   দ্বারভাঙ্গায় পিতার কর্মস্থলে।তবে পৈতৃক নিবাস ছিল অবিভক্ত বাংলার অধুনা পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার উলা বীরনগরে। পিতা পণ্ডিত ও দার্শনিক  চন্দ্রশেখর বসু ছিলেন দ্বারভাঙ্গা রাজ-এস্টেটের দেওয়ান এবং মাতা লক্ষ্মীমণি। তাঁদের পাঁচ কন্যা ও চার পুত্র - মোট নয় সন্তানের সর্ব কনিষ্ঠ হলেন গিরীন্দ্রশেখর। তাঁর অন্য তিন অগ্রজেরা হলেন শশিশেখর, রাজশেখর ও কৃষ্ণশেখর। সকলেরই শৈশব কেটেছে দ্বারভাঙ্গায় এবং স্কুলের পড়াশোনাও। পরে চলে আসেন কলকাতার পার্সিবাগানে। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে রসায়ন শাস্ত্রে বি.এসসি এবং ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে এমবি পাশ করেন। প্রতিদিন সকালে বাড়িতে বিনা পারিশ্রমিকে পাশের বস্তিতে গরিব মানুষের চিকিৎসা করতেন। সে সময় ভারতে মানসিক রোগেরঞ চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা, এমনকি শিক্ষাকেন্দ্র ছিল না। ফ্রয়েডের উদ্ভাবিত মনঃসমীক্ষা-পদ্ধতির সঙ্গে এদেশের বিশেষ পরিচয় ছিল না। ফ্রয়েড রচিত জার্মান গ্রন্থের ইংরাজী অনুবাদও ভারতে আসেনি। এমতাবস্থায় তিনি অনুশীলনের দ্বারা ওই রোগের চিকিৎসায় ব্রতী হন। নিজে রোগীদের কিছু পদ্ধতিও উদ্ভাবন করেন। মানসিক রোগীদের অস্বাভাবিক মনকে স্বাভাবিক মনে ফিরিয়ে আনতে তাদের নিজের বাড়ির লোক ভেবে তাদের মানসিক ক্ষতটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করতেন নিরন্তর। হাসপাতালে মানসিক রোগের বিভাগ খোলা, বা মানসিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার অনেক আগেই তিনি এ ব্যাপারে নিজের চেষ্টায় বিশেষ শিক্ষা লাভ করেন। চিকিৎসা করতে করতেই তিনি বিশেষ অনুমতি নিয়ে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞানে এমএ ক্লাশে ভর্তি হন এবং ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে  প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে এমএসসি পাশ করেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ফলিত মনোবিজ্ঞানে মানসিক অবদমন এর উপর গবেষণা করে ডি এসসি ডিগ্রি লাভ করেন। [৪] এই বছর থেকেই সম্পূর্ণরূপে মানসিক রোগ চিকিৎসায় আত্মনিয়োগ এবং এই বিষয় নিয়ে সিগমুন্ড ফ্রয়েডের সাথে পত্রালাপ শুরু করেন। তাতে লক্ষ্য করা গেল যে, গিরীন্দ্রশেখর-উদ্ভাবিত চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে ফ্রয়েডীয়-পদ্ধতির সমতা ছিল।

মানসিক রোগীদের চিকিৎসায় অবদান[সম্পাদনা]

তিনি ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার ১৪ নম্বর পার্শীবাগান লেনে নিজের বাড়িতে ভারতীয় মনঃসমীক্ষা  সমিতি স্থাপন করেন। পরে সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও আর্নেস্ট জোনস-এর সহযোগিতায় সমিতির এটি আন্তর্জাতিক সংস্থা-  ‘ইন্টারন্যাশনাল সাইকোঅ্যানালিটিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর অনুমোদন লাভ করে। ১৯৯৪০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর অগ্রজ পরশুরাম ছদ্মনামে সমধিক প্রসিদ্ধ রাজশেখর বসুর দান করা তিন-শয্যাযুক্ত মানসিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান লুম্বিনী পার্ক মানসিক হাসপাতাল নামে সুপরিচিত।

১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মেডিক্যাল কলেজের শারীরবিদ্যার অধ্যাপক এবং ১৯১৭-৪৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাবনর্ম্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। দীর্ঘসময়ে তিনি অধ্যক্ষ, প্রধান অধ্যাপক ইত্যাদি পদে অধিষ্ঠিত থেকে অসুস্থতার কারণে পদত্যাগ করেন।

রচিত গ্রন্থাবলি[সম্পাদনা]

গিরীন্দ্রশেখর একদিকে যেমন মনোবিদ্যা ও মনঃসমীক্ষণের লোকরঞ্জক অথচ সারবান বর্ণনা-প্রদানে প্রয়াসী হয়েছিলেন, অন্যদিকে মনোবিদ্যার পরিভাষা রচনা ও চয়নে প্রচুর শ্রম ও সময় ব্যয় করে করেছিলেন। তাঁর রচিত মনোবিজ্ঞানের গ্রন্থ ও অন্যান্য রচনা গ্রন্থ গুলি হল-

মনোবিজ্ঞানের গ্রন্থ-
  • স্বপ্ন
  • এভরিডে-সাইকোঅ্যানালিসিস
  • কনসেপ্ট অফ রিপ্রেশন
  • মনোবিদ্যার পরিভাষা
অন্যান্য-
  • লালকালো (শিশু সাহিত্য)
  • পুরাণ প্রবেশ
  • ভগবদ্গীতা

একজন বিজ্ঞানী হয়েও,

ভারতীয় দর্শনে তাঁর প্রবল আসক্তি ছিল। ভারতীয় দর্শন তাঁর বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারাকে যে কী পরিমাণে প্রভাবিত করেছিল তা তাঁর রচিত বিভিন্ন গ্রন্থে পাওয়া যায়। তার মধ্যে নিউ থিয়োরি অফ মেন্টাল লাইফ অন্যতম।

পারিবারিক জীবন[সম্পাদনা]

গিরীন্দ্রশেখর মাত্র সতের বৎসর বয়সে ইন্দুমতী দেবীকে বিবাহ করেন। তাঁদের দুই কন্যা সন্তান। জ্যেষ্ঠা কন্যা ছিলেন দুর্গাবতী।

জীবনাবসান[সম্পাদনা]

গিরীন্দ্রশেখর ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ৩রা জুন কলকাতায় প্রয়াত হন।


তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Sudhir Kakar, 'Girindrasekhar Bose (1886-1953), International Dictionary of Psychoanalysis. Reprinted online at answers.com
  2. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট  ২০১৬, পৃষ্ঠা ১৮৭,১৮৮ আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  3. Bhattacharyya, Ranjan (২০১৮-০২-০১)। "The development of mental hospitals in West Bengal: A brief history and changing trends" (ইংরেজি ভাষায়): 198। আইএসএসএন 0019-5545ডিওআই:10.4103/psychiatry.IndianJPsychiatry_432_17পিএমআইডি 29527048 
  4. "ফ্রয়েডের বন্ধু"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-০৫