খৈয়াম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
খৈয়াম
উর্দু সংস্করণের প্রচ্ছদ
লেখকসুলাইমান নদভী
মূল শিরোনামউর্দু: خیام‎‎
ভাষাউর্দু (মূল)
বিষয়ওমর খৈয়াম
ধরনজীবনী
প্রকাশিত১৯৩৩
প্রকাশকদারুল মুসান্নিফীন
আইএসবিএন৯৭৮৯৬৯৯৩৯৬১৬৮
ওসিএলসি৮৮৯৩২৬৬৫৯
২৯৭.০৯

খৈয়াম (উর্দু: خیام‎‎) ওমর খৈয়ামকে নিয়ে রচিত সুলাইমান নদভীর একটি গবেষণাধর্মী জীবনী সাহিত্য।[১] উর্দু সাহিত্যে ওমর খৈয়াম সম্পর্কে এরূপ তথ্যবহুল আলোচিত গ্রন্থ এটিই প্রথম। এসব দিক বিবেচনায় একটি জীবনীমূলক গ্রন্থ হিসেবে এ গ্রন্থটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাপক। ১৯৩৩ সালে দারুল মুসান্নিফীন থেকে এটি প্রথম প্রকাশ করা হয়। গ্রন্থটি ভারতবর্ষের শিক্ষামহলে এক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং ইরান ও আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে গুরুত্ব ও সম্মানের সাথে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। একটি জীবনীমূলক গ্রন্থ হিসেবে এ গ্রন্থে ওমর খৈয়ামের জন্ম, মৃত্যু, শিক্ষা, শিক্ষকবৃন্দ, ছাত্রবৃন্দ, রাজদরবারের সাথে তার সম্পর্ক, তার সম্মান ও পদমর্যাদা, সাহিত্যাঙ্গণে তার অবদান, আচার-আচরণ ও অভ্যাস, জ্যোতির্বিজ্ঞানে তার পারদর্শিতা ও রুবায়ী কাব্যে সফলতা ইত্যাদি বিষয়াদী এক নজরে চলে আসে। এতে প্রথমবারের মত ওমর খৈয়ামকে শুধু একজন কবি ও মদ্যপ হিসেবে নয়; বরং একজন সম্মানিত জ্ঞানী, দার্শনিক, জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও খাঁটি মুসলিম হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তার রুবাইয়্যাত সম্পর্কে একটি জ্ঞানগর্ভ আলোচনা উপস্থাপন করা হয়েছে এবং তার জীবনের সাথে সম্পৃক্ত কিছু ঘটনা ও তার বয়স সম্পর্কে একটি সঠিক তথ্যবহুল পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়েছে। গ্রন্থটি রচনার পর কবি মুহাম্মদ ইকবাল সুলাইমান নদভীকে লিখেন, ‘ওমর খৈয়ামের উপর আপনি যা কিছু লিখে দিয়েছেন, তাতে পূর্ব-পশ্চিমের আর কারও পক্ষেই এ বিষয়ে নতুন কিছু লিখা সম্ভব হবে না। আলহামদুলিল্লাহ, আপনার হাতেই এ বিষয়ে রচনার পরিসমাপ্তি ঘটে গেল।’[২]

প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

এটি মূলত সুলাইমান নদভীর একটি প্রবন্ধ ছিল। ডিসেম্বর ১৯৩০ সালে পাটনায় অনুষ্ঠিত ‘অল ইন্ডিয়া ওরিয়েন্টাল কনফারেন্স’–এর বার্ষিক সভায় ‘ওমর খৈয়াম’ শিরোনামে তিনি এ প্রবন্ধটি পাঠ করেন। প্রবন্ধটি বিদ্বান মহলে ব্যাপক সাড়া জাগায়। পরবর্তীতে এতে ‘রুবাইয়্যাত’ (কবিতার একটি প্রকার) সম্পর্কে একটি আলোচনা সংযুক্ত করে আলাদা গ্রন্থ হিসেবে অক্টোবর ১৯৩৩ সালে দারুল মুসান্নিফীন থেকে প্রথম প্রকাশ করেন।[২]

বিষয়বস্তু[সম্পাদনা]

ওমর খৈয়াম প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে বেশি সমাদৃত। পশ্চিমা লেখকগণ তার রুবাইয়্যাতের বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করেছেন। ইউরোপের বড় বড় লেখকগণ তার সম্পর্কে অনেক কিছুই রচনা করেছেন। কিন্তু সাথে সাথে ব্যক্তি ওমর খৈয়ামের উপর কিছু নেতিবাচক ঘটনা ও তথ্য তার সম্পর্কে প্রচার করেছেন। যেমন: অন্য লেখকদের কিছু গ্রন্থ তার বলে চালিয়ে দিয়েছেন এবং অন্য কবিদের কিছু রুবাইয়্যাত তার রুবাইয়্যাতের সাথে যুক্ত করে দিয়েছেন। এভাবে তাকে একজন মদ্যপ কবি হিসেবে পরিচিত করানোর চেষ্টা করেছেন। জার্মানির লেখক হাইমার তাকে মুক্তচিন্তার কবি ও ধর্মে পরিহাসকারী কবি বলে আখ্যা দিয়েছেন। লর্ড টেনিসন তাকে একজন বড় মাপের কাফের বলেছেন। টমাস কারলাইল তাকে একজন ইরানি কুচরিত্রের কবি হিসেবে উপস্থাপন করেছেন এবং এক ইংরেজ পাদ্রি তাকে ইবলিসের বড় দূত বলে আখ্যায়িত করেছেন।[২]

সুলাইমান নদভী এসব অভিযোগকে সামনে রেখে এ গ্রন্থ রচনা শুরু করেন। তিনি স্বীয় অনুসন্ধানের মাধ্যমে এ গ্রন্থে ওমর খায়্যামের জীবনী রচনার পাশাপাশি তার উপর আরোপিত এসব অপবাদের কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ করেন এবং তার সম্পর্কে সঠিক তথ্য বিশ্লেষণ করেন। যেসব রুবায়ী তার সাথে সম্বন্ধযুক্ত করা হয়েছে তা ভুল প্রমাণিত করে তার আসল রুবায়ী সম্পর্কে সকলকে অবহিত করেন। স্বীয় অনুসন্ধান দ্বারা এ গ্রন্থে প্রমাণ করেন যে, দর্শনশাস্ত্র ও বিজ্ঞানে আবু আলী সীনার পরেই ওমর খৈয়ামের স্থান।[২]

সুলাইমান নদভী এই গ্রন্থের উৎসমূল গ্রন্থাবলীর নাম ও তৎসম্পর্কিত আলোচনার মাধ্যমে এ গ্রন্থের সূচনা করেন। অতঃপর একটি জীবনীসাহিত্য মূলক গ্রন্থ হিসেবে এ গ্রন্থে ওমর খৈয়ামের জন্ম, মৃত্যু, বয়স ও জন্মস্থান সম্পর্কিত একটি বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা আনেন। এতে তিনি ওমর খৈয়ামের বয়স ও জন্মস্থান সম্পর্কিত বিরুদ্ধবাদীদের ভুল তথ্যের প্রতিবাদ করে সঠিক তথ্য তুলে ধরেন।[২]

তিনি খৈয়ামের তথ্যসূত্রভিত্তিক রচনাবলীর গভীর অধ্যয়ন ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ওমর খৈয়াম ৪৪০ হিজরি মোতাবেক ১০৪৮ খ্রিস্টাব্দে নিশাপুরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৫২৬ হিজরী মোতাবেক ১১৩৪ খ্রিস্টাব্দে ৮৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। অতঃপর তিনি ওমর খৈয়ামের শিক্ষাজীবন ও তার শিক্ষকবৃন্দ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনায় বলেন, তার জ্যোতির্বিজ্ঞানের শিক্ষাগুরু ছিলেন উস্তাদ আবুল হাসান আন্বারী। এমনকি আবু আলী সীনাও তার শিক্ষক ছিলেন। এরপরেই লেখক ওমর খৈয়ামের অবস্থান ও মর্যাদা এবং তার সাহিত্যকর্ম, সমসাময়িক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে তার সম্পর্ক, রাজদরবারের লোকদের সাথে সম্পর্ক, তার ছাত্রবৃন্দ ও তার রচিত গ্রন্থাবলীর বিষয় আলোচনায় আনেন। খৈয়ামের গ্রন্থাবলী সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা দ্বারা লেখক প্রমাণ করেন যে খৈয়াম রচিত সর্বসাকুল্যে গ্রন্থ হল দশটি। তিনি এ গ্রন্থে ‘শায়ের খৈয়াম’ বা কবি হিসেবে ওমর খৈয়াম শিরোনামক একটি অধ্যায় আনেন, যাতে তার কাব্যের বৈশিষ্ট্য, রুবায়ী কাব্যের ইতিহাস ও রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম–এর উপর একটি বিশদ পর্যালোচনা করেন। এভাবে সুলাইমান নদভী গ্রন্থের শেষ দিকে ওমর খৈয়ামের ধর্মীয় মতবাদ সম্পর্কে আলোচন করে প্রমাণ করেন, তিনি একজন খাঁটি মুসলিম ছিলেন। গ্রন্থের একেবারে শেষ পর্বটি ‘নকল খৈয়াম’ শিরোনামে উপস্থাপন করে দেখান যে, ওমর খৈয়ামকে মদ্যপ কবি, ধর্ম বিরোধী কবি, বড় কাফের বা এ ধরনের কটুবাক্য বলা নেহাতই মিথ্যা অপবাদ ও বানোয়াট। সুলাইমান নদভী বলেন, এ ধরনের অপবাদসূচক বাক্য কেবল নকল খৈয়ামের ক্ষেত্রেই সাজে; আসল ওমর খৈয়ামের ব্যাপারে তা কখনো যুক্তিযুক্ত নয়। পরিশেষে ওমর খৈয়ামের সাতাইশটি রুবায়ী উপস্থাপনের মাধ্যমে গ্রন্থের ইতি টানেন।[২]

মূল্যায়ন[সম্পাদনা]

গ্রন্থটির গুরুত্ব বর্ণনা করে সৈয়দ ছবাহ উদ্দিন আব্দুর রহমান লিখেন,[২]

এ গ্রন্থটি সম্পর্কে অধ্যাপক খালিক আহমদ নিযামী বলেন,[২]

সুলাইমান নদভী নিজে এ রচনা সম্পর্কে এই বলে মন্তব্য করেন,[২]

গ্রন্থটি সম্পর্কে প্রাচ্যের কবি ড. মুহাম্মদ ইকবাল সুলাইমান নদভীকে পত্র মারফত লিখেন,[২]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. ইমরান, আতিফ (২০২০)। Contribution of Syed Sulaiman Nadvi to Islamic studies [ইসলামিক স্টাডিজে সৈয়দ সুলাইমান নদভীর অবদান] (গবেষণাপত্র)। ভারত: আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ৫১–৫৭। hdl:10603/346360 
  2. বাহারুল ইসলাম, মোহাম্মদ (২০১৭)। উর্দু সাহিত্যে সৈয়দ সুলাইমান নদভীর অবদান (গবেষণাপত্র)। উর্দু বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ১২৭–১৩২। 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]