ক্রান্তীয় ভূগোল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
১৯৪৫ সালে আন্তঃক্রান্তীয় অঞ্চলটি হাইলাইট করে বিশ্বের উপনিবেশিক অবস্থা দেখানো মানচিত্র।

ক্রান্তীয় ভূগোল ক্রান্তি বলয়ের স্থান ও বসবাসকারী জনগণ সংক্রান্ত অধ্যয়নকে বোঝায়। যখন এটি প্রথম একটি অধ্যয়নের বিষয় হিসাবে উত্থিত হয়েছিল তখন ক্রান্তীয় ভূগোল সাম্রাজ্যবাদ এবং ইউরোপীয় সাম্রাজ্যের ঔপনিবেশিক বিস্তারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল কারণ অবদানকারী পণ্ডিতরা ক্রান্তি বলয়ের স্থানগুলোকে "প্রারম্ভিক" এবং মানুষকে "সভ্যতার আলোকবঞ্চিত" এবং "নিচুশ্রেণী" হিসাবে চিত্রিত করার প্রবণতা দেখিয়েছিলেন। [১] অষ্টাদশ থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে প্রাণিবিদ্যা, জলবায়ুবিদ্যা, ভূতত্ত্ব, অর্থনীতি এবং সাংস্কৃতিক অধ্যয়নসহ বিস্তৃত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। [২]

উক্ত অনুশাসনটি এখন সাধারণত উন্নয়ন ভূগোল হিসাবে পরিচিত কারণ ১৯৫০ এর দশকে অর্থনৈতিক বিকাশ আন্তর্জাতিক ও বৈশ্বিক মিথস্ক্রিয়ার মূল আদর্শিক চালক হিসাবে উপনিবেশ স্থাপনকে প্রতিস্থাপন করেছিল। [৩] :১১৮ বর্তমানে অনেক বিদ্বান ক্রান্তীয় ভূগোল শব্দটি ব্যবহার করেন।

উৎপত্তি[সম্পাদনা]

ক্রান্তীয় ভূগোলের উৎপত্তি পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে যখন কলম্বাস প্রথমবারের মতো ক্রান্তীয় আমেরিকার ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কার করেছিলেন। ইউরোপীয় অভিযাত্রী, বণিক, প্রকৃতিবিদ, ঔপনিবেশিক এবং বসতি স্থাপনকারী যারা ক্রান্তীয় অঞ্চলে ভ্রমণ এবং বসবাস করেছিলেন তাদের লেখাগুলিই পরবর্তী গবেষণার মূল উৎস ছিল।

আলেকজান্ডার ফন হুমবোল্‌ড্‌ট্, জোসেফ ডাল্টন হুকার, চার্লস ডারউইন এবং আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। এটি যুক্তিযুক্ত যে তাদের কেতাবি খ্যাতি এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির কারণে এই অঞ্চলের উদ্ভিদ, বন্যজীবন, জলবায়ু, ভূতত্ত্ব এবং সংস্কৃতিতে বিশাল পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও ক্রান্তীয় ভূগোলকে ইউরোপে ব্যাপকভাবে অধ্যয়ন করা হয়েছিল। [৪]

ঝামেলা উপস্থাপনা[সম্পাদনা]

ক্রান্তীয় অঞ্চলে ইউরোপের প্রবৃত্তির ধরনের পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া হিসাবে ক্রান্তীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবনধারা সময়ের সাথে বিকশিত হয়েছে।

উপনিবেশবাদী এবং প্রকৃতিবাদীরা নাতিশীতোষ্ণ ও ক্রান্তীয় মানুষদেরকে "প্রগতিশীল বনাম অনগ্রসর," "সভ্য বনাম আদিম," "কঠোর পরিশ্রমী বনাম অলস" এবং "উন্নত বনাম অনুন্নত" এর মতো যুগ্ম দলে উপস্থাপন শুরু করায় বিভিন্ন পরিবেশ নির্ধারণবাদ উত্থিত হয়েছিল। [৫] জাতি, একটি উদ্ভাবিত ধারণা যা জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে মানুষের বিভিন্ন 'বর্ণ' হিসাবে অনুভূত বিভাজনের ঘনিষ্ঠতার চেষ্টা করার জন্য সুবিধাজনক এবং সহজেই প্রয়োগ হয়েছিল"।

ক্রান্তীয় ভূগোলবিদরা ক্রান্তীয় স্থান এবং সেখানের লোকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং শক্তিশালী বা মারাত্মক এবং বর্বর হিসেবে পেলেও তাদেরকে নাতিশীতোষ্ণ ও দুর্দান্ত পশ্চিমা সভ্যতার তুলনায় নিকৃষ্ট হিসাবে ধরেছিল। এডওয়ার্ড সাইদ তাঁর বিখ্যাত রচনা ওরিয়েন্টালিজমে সমালোচনা করেছিলেন যে, ক্রান্তীয় ভূগোলের শিক্ষা নাতিশীতোষ্ণ বিশ্বে বসবাসকারী ইউরোপীয় বিদ্বানদের স্বার্থকে পরিবেশন করছিল যারা একটি বিদেশি সংস্কৃতি ব্যাখ্যা করতে পেরেছিল যা পরবর্তীতে তাদের নিজেদের সংজ্ঞায়িত করতে সহায়তা করেছে। [৬]

বর্তমানের ক্রান্তীয় ভূগোল[সম্পাদনা]

বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্তও সাম্রাজ্যবাদী, বর্ণবাদী এবং ইউরো কেন্দ্রিক ভৌগোলিক সংস্করণ সমৃদ্ধ ছিল কারণ ভূতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞ পিয়ের গৌরুর লেস পেস ট্রপিক্যাক্সের মতো প্রভাবশালী রচনাগুলি প্রকাশিত হচ্ছিল । [৭] ১৯৫০ এর দশকের পর থেকে, উন্নয়নশীল ভূগোল ক্রান্তীয় ভূগোলকে ভূগোলের উপ-ক্ষেত্র হিসাবে প্রতিস্থাপন করেছে। [৮] ফলস্বরূপ, অধ্যয়নিত অঞ্চলগুলিকে "তৃতীয় বিশ্ব" এবং "বৈশ্বিক দক্ষিণ" এর মতো নতুন পরিভাষা দেওয়া হয়েছিল।

সমালোচক ভূগোলবিদরা ক্রান্তীয় ভূগোলকে উন্নয়ন ভূগোল দ্বারা প্রতিস্থাপনকে উপনিবেশিকরণ থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ কৌশলের ঐতিহাসিক মোড়কে চিহ্নিত করেছে। [৯] যদিও একটি ভিন্ন শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে আঁকার দেওয়া হয়েছে, ক্রান্তীয় ভূগোলের মতাদর্শগত শিকড় পশ্চিমা বিশ্বের শ্রেষ্ঠত্ব, উন্নতি, সভ্যতা ও প্রযুক্তিগত উন্নতির মূল উৎস।

বর্তমানে শিক্ষায়তনিক সাময়িকী সিঙ্গাপুর জার্নাল অফ ট্রপিকাল জিওগ্রাফি [১০] ক্রান্তীয় ভূগোলবিদদের কাছে নতুন গবেষণা এবং ক্রান্তীয় বিশ্ব এবং মানুষের উপর বিদ্যমান শিক্ষার সমালোচনা এবং উপস্থাপনের জন্য একটি ফোরাম হিসাবে অব্যাহত রয়েছে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Arnold, David, 2000. "Illusory Riches": Representations of the Tropical World, 1840-1950. Singapore Journal of Tropical Geography. 21(1), 2000, 6-18.
  2. Jarrett, H.R., 1977. Tropical geography: An introductory study of the humid tropics, Macdonald and Evans,p.2.
  3. Gallaher, Carolyn; Dahlman, Carl T. (২০০৯)। Key Concepts in Political Geography। SAGE। পৃষ্ঠা 392। আইএসবিএন 978-1-4129-4672-8। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৩১, ২০১৪ 
  4. Arnold, David, 2000. pp9-10.
  5. Gilmartin, Mary, 2008. p177.
  6. Said, Edward W., 2007. "Latent and Manifest Orientalism." Race and Racialization: Essential Readings. pp45-55.
  7. Gregory, D. et al., 2009. The Dictionary of Human Geography 5th ed., Wiley-Blackwell, p.777.
  8. Painter, J. & Jeffrey, A. 2009. "Imperialism and Postcolonialism". Political Geography 2nd ed. Sage, London. pp169-195.
  9. Lawson, Victoria, 2007. "Development as Intervention: From Modernisation to Neo-liberalisation." Making Development Geography. Hodder Arnold. p70.
  10. Singapore Journal of Tropical Geography. Available at: http://onlinelibrary.wiley.com/journal/10.1111/(ISSN)1467-9493 [Accessed November 23, 2012].

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]