বিষয়বস্তুতে চলুন

কার্থেজের অবরোধ (৩য় পিউনিক যুদ্ধ)

স্থানাঙ্ক: ৩৬°৫১′১১″ উত্তর ১০°১৯′২৩″ পূর্ব / ৩৬.৮৫৩১° উত্তর ১০.৩২৩১° পূর্ব / 36.8531; 10.3231
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কার্থেজের অবরোধ (৩য় পিউনিক যুদ্ধ)
মূল যুদ্ধ: তৃতীয় পিউনিকের যুদ্ধ

এডওয়ার্ড পয়েন্টারের কাতাপুলা। তৃতীয় পিউনিকের যুদ্ধে কার্থেজ অবরোধে রোমান অবরোধ যন্ত্র।
তারিখc. 149 – spring 146 BC
অবস্থান
কার্থেজ (আধুনিক তিউনিসের নিকট)
ফলাফল
  • রোমানদের অবধারিত বিজয়
    • পিউনিক যুদ্ধের অবসান
    • প্রাচীন কার্থেজের ধ্বংস, এবং সংগ্রামীদের দাসত্ব বরণ
    • রোম প্রজাতন্ত্র বাকি কার্থেজিয়ান অঞ্চল দখল করে নেয় এবং আফ্রিকা প্রোকনসুলারিস স্থাপিত হয়।
বিবাদমান পক্ষ
রোম প্রজাতন্ত্র প্রাচীন কার্থেজ
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
হাসদ্রুবাল দ্য বোয়েদার্চ
শক্তি
৮০,০০০ পদাতিক[]
৪,০০০ অশ্বারোহী[]
৫০ কুইনক্যুরেমস[]
৩০,০০০ সৈনিক[]
১৫০,০০০-৫০০,০০০ বেসামরিক[][]
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
  • ১০০,০০০-৪৫০,০০০ নিহত[]
  • ৫০,০০০ জনের দাসত্ব বরণ[]
কার্থেজের অবস্থান

কার্থেজ অবরোধ ছিল আফ্রিকার পিউনিক শহর এবং রোমান প্রজাতন্ত্রের মধ্যে তৃতীয় পিউনিক যুদ্ধের প্রধান লড়াই। এটি ছিল একটি অবরোধ অভিযান, যা ১৪৯ বা ১৪৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কোনো এক সময় শুরু হয়, এবং ১৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শেষ হয়। এ অবরোধ রোমানদের দ্বারা কার্থেজ শহরকে সম্পূর্ণ বিনষ্ট করা এবং সম্পূর্ণ ধ্বংসের মাধ্যমে শেষ হয়।

প্রাথমিক উৎস্য

[সম্পাদনা]
A monochrome relief stele depicting a man in classical Greek clothing raising one arm
পলিবিয়াস

প্রায় সকল দৃষ্টিকোণ থেকেই তৃতীয় পিউনিক যুদ্ধের[note ১] প্রধান উৎস ছিল ইতিহাসবিদ পলিবিয়াস (আনু. 200আনু. 118 BC) তাকে একজন গ্রিক জিম্মি হিসেবে ১৬৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমে পাঠানো হয়।[] তার কাজের মধ্যে ছিল সামরিক কৌশলের[] উপর একটি হারিয়ে যাওয়া ম্যানুয়াল তৈরী, কিন্তু তিনি এখন দ্য হিস্টোরিজ এর জন্য পরিচিত, যা খ্রিস্টপূর্ব ১৪৬ অব্দে রচিত।[][] পলিবিয়াসের কাজ ব্যাপকভাবে নিরপেক্ষ এবং অন্তত কার্থাজিনিয়ান এবং রোমান দৃষ্টিভঙ্গিতে নিরপেক্ষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[১০][১১] পলিবিয়াস ছিলেন একজন বিশ্লেষণী ইতিহাসবিদ।[১২][১৩][১৪] তিনি যে সব ঘটনা রচনা করেছেন সেসবের জন্য যেখানে সম্ভব ব্যক্তিগতভাবে তিনি উভয়পক্ষের অংশগ্রহণকারীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তিনি উত্তর আফ্রিকায় তার অভিযানের সময় রোমান সেনাপতি স্কিপিও এমিলিয়ানাসের সাথে যান, যার ফলে যুদ্ধে কারহেজ ও রোমানদের বিজয় হয়।[১৫]

গত ১৫০ বছর ধরে পলিবিয়াসের বিচার ক্ষমতার যথার্থতা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু আধুনিক ঐকমত্য হচ্ছে, এটিকে মূলত তার ফেস ভ্যালুর কারণে গ্রহণ করা হয়েছিল। এবং আধুনিক উৎসগুলোতে যুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ মূলত পলিবিয়াসের বিচারের ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে।[][১৬][১৭] আধুনিক ঐতিহাসিক অ্যান্ড্রু কারি পলিবিয়াসকে "মোটামুটি নির্ভরযোগ্য"[১৮] হিসেবে দেখেন; যেখানে ক্রেইগ চ্যাম্পিয়ন তাকে বর্ণনা করেছেন "একজন লক্ষণীয়ভাবে সুবিজ্ঞ, পরিশ্রমী এবং অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ঐতিহাসিক"।[১৯]

অন্যরা পরবর্তীতে যুদ্ধের প্রাচীন ইতিহাস রচনা করেছে, যদিও ওগুলো প্রায়ই খণ্ডিত বা সংক্ষিপ্ত আকারে বিদ্যমান।[২০] তৃতীয় পুনিক যুদ্ধের আপ্পিয়ানের বিবরণ বিশেষভাবে মূল্যবান।[২১] আধুনিক ঐতিহাসিকগণ সাধারণত বিভিন্ন রোমান বিশ্লেষণ, কিছু সমসাময়িক রচনা বিবেচনা করেন; যেমন- সিসিলির গ্রিক ডিওডোরাস সিকুলাস, পরবর্তী রোমান ঐতিহাসিক লিভি (যিনি পলিবিয়াসের উপর প্রচুর নির্ভর করে থাকেন[২২]), প্লুটার্ক এবং ডিও ক্যাসিয়াসের[২৩] উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করতেন। ক্লাসিকিস্ট আদ্রিয়ান গোল্ডসওয়ার্থি বলেছেন "পলিবিয়াসের বিচার সাধারণত অগ্রাধিকার দেওয়া হয় যখন এটি আমাদের অন্য কোন বিচারের সাথে পার্থক্য তৈরী করে"।[note ২][১৩] অন্যান্য উৎসের মধ্যে রয়েছে মুদ্রা, শিলালিপি, প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ এবং পুনর্নির্মাণ থেকে অভিজ্ঞতামূলক প্রমাণ যেমন ট্রাইরেম অলিম্পিয়াস।[২৪]

পটভূমি

[সম্পাদনা]
কার্থেজের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন

কার্থেজ ও রোমের মধ্যে ২১৭ থেকে ২০১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত ১৭ বছর ব্যাপী দ্বিতীয় পিউনিক যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধ রোমানদের বিজয় দিয়ে শেষ হয়। কার্থাজেনীয়দের উপর আরোপিত শান্তি চুক্তি কার্থেজেনীয়দের সমস্ত বিদেশী অঞ্চল এবং তাদের কিছু আফ্রিকান এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে ১০,০০০ রৌপ্য ট্যালেন্ট (প্রাচীন মুদ্রা) ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ছিল।[note ৩][note ৪] জিম্মিদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কার্থেজদের জন্য যুদ্ধে ব্যবহৃত হাতি রাখা নিষিদ্ধ ছিল এবং যুদ্ধজাহাজের বহর ১০ টি তে সীমাবদ্ধ রাখার কথা বলা হয়েছিল। আফ্রিকার বাইরে যুদ্ধ পরিচালনা নিষিদ্ধ ছিল এবং শুধুমাত্র রোমের এক্সপ্রেস অনুমতি নিয়ে আফ্রিকায় যুদ্ধ করার অনুমতি ছিল। অনেক জ্যেষ্ঠ কার্থাগিনিয়ান তা প্রত্যাখ্যান করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু হ্যানিবাল জোরালোভাবে এর পক্ষে কথা বলেন এবং ২০১ খ্রিস্টপূর্বাব্দের বসন্তে তা গৃহীত হয়।[২৭][২৮] এরপর থেকে এটা পরিষ্কার যে কার্থেজ রাজনৈতিকভাবে রোমের অধীনস্থ ছিল।[২৯]

যুদ্ধ শেষে রোমান মিত্ররা মাসিনিসা নুমিডিয়ানদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী শাসক হিসেবে আবির্ভূত হন।[৩০] পরবর্তী ৪৮ বছর তারা বারবার তার সম্পত্তি রক্ষা করতে ক্যার্থেজের অক্ষমতার সুযোগ নেয়। যখনই কার্থাজ রোমকে প্রতিকারের জন্য অনুরোধ বা সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের অনুমতি চায়, তখন রোম তার মিত্র মাসিনিসাকে সমর্থন করে এবং প্রত্যাখ্যান করে।[৩১] মাসিনিসদের কার্থাগিনিয়ান অঞ্চল দখল এবং এ অঞ্চলে অভিযান ক্রমশ অনিবার্য হয়ে ওঠে। ১৫১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কার্থাজ হাসদ্রুবালের নেতৃত্বে একটি বৃহৎ সৈন্যদল প্রস্তুত করে এবং চুক্তি সত্ত্বেও, নুমিদের পাল্টা আক্রমণ করেন। অভিযানটি বিপর্যয়ের মধ্য শেষ হয় এবং সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে[৩২]। এর গণহত্যা সংঘটিত হয়।[৩৩] হাসদ্রুবাল কার্থাজে পালিয়ে যায়। সেখানে রোমের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়।[৩৪] কার্থাজ তার ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করেছিলেন এবং অর্থনৈতিকভাবেও সমৃদ্ধ হিয়েছিল, কিন্তু রোমের জন্য কোন সামরিক হুমকি ছিল না।[৩৫][৩৬] রোমান সিনেটের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে ক্যার্থেজকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। এ কারণে কাসাস বেলি চুক্তির শর্ত ভঙ্গের ফলে ১৪৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।[৩২]

ফলাফল

[সম্পাদনা]
a colour photograph of excavated ruins from the classical period on a sunny day
কার্থেজের ধ্বংসাবশেষের একটি অংশ

অবশিষ্ট কার্থেজেনীয় অঞ্চল রোম দখল করে নেয় এবং আফ্রিকার রোমান প্রদেশ উটিকার সঙ্গে এটিকে তার রাজধানী হিসাবে পুনর্গঠন করা হয়।[৩৭] প্রদেশটি শস্য এবং অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের একটি প্রধান উৎস হয়ে ওঠে।[৩৮] মৌরিতানিয়ার অসংখ্য বৃহৎ পিউনিক শহর রোমানদের দখলে চলে যায়,[৩৯] যদিও তাদের পিউনিক সরকার ব্যবস্থা বজায় রাখার অনুমতি দেওয়া হয়।[৪০] এক শতাব্দী পরে, কার্থাজ সাইট জুলিয়াস সিজার দ্বারা পরিপূর্ণ রোমান শহর হিসাবে পুনর্নির্মিত হয়, এবং এ সাম্রাজ্যের সময় এটি রোমান আফ্রিকার অন্যতম প্রধান শহর হয়ে ওঠে।[৪১][৪২] রোম এখনও ইতালির রাজধানী হিসেবে বিদ্যমান; কার্থাজের ধ্বংসাবশেষ উত্তর আফ্রিকার উপকূলে আধুনিক তিউনিস থেকে ১৬ কিলোমিটার (১০ মাইল) পূর্বে অবস্থিত।[৪৩]

নোট, উদ্ধৃতি ও তথ্যসূত্র সমূহ

[সম্পাদনা]
  1. The term Punic comes from the Latin word Punicus (or Poenicus), meaning "Carthaginian", and is a reference to the Carthaginians' Phoenician ancestry.[]
  2. Sources other than Polybius are discussed by Bernard Mineo in "Principal Literary Sources for the Punic Wars (apart from Polybius)".[২৩]
  3. 50,000 talents was approximately ১২,৮৫,০০০ কেজি (১,২৬৫ লং টন)[২৫]
  4. Several different "talents" are known from antiquity. The ones referred to in this article are all Euboic (or Euboeic) talents, of approximately ২৬ কিলোগ্রাম (৫৭ পা).[২৫][২৬]

উদ্ধৃতি

[সম্পাদনা]
  1. Appian [১]
  2. Tucker, Spencer (২০১০)। Battles That Changed History: An Encyclopedia of World Conflict। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 66। আইএসবিএন 978-1-598-84429-0 
  3. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; The Punic Wars নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  4. Dutton, Donald G. (২০০৭)। The Psychology of Genocide, Massacres, and Extreme Violence: Why "normal" People Come to Commit AtrocitiesGreenwood Publishing Group। পৃষ্ঠা 14আইএসবিএন 978-0275990008 
  5. Sidwell ও Jones 1998, পৃ. 16।
  6. Goldsworthy 2006, পৃ. 20–21।
  7. Shutt 1938, পৃ. 53।
  8. Goldsworthy 2006, পৃ. 20।
  9. Walbank 1990, পৃ. 11–12।
  10. Lazenby 1996, পৃ. x–xi।
  11. Hau 2016, পৃ. 23–24।
  12. Shutt 1938, পৃ. 55।
  13. Goldsworthy 2006, পৃ. 21।
  14. Champion 2015, পৃ. 98, 101।
  15. Champion 2015, পৃ. 96।
  16. Lazenby 1996, পৃ. x–xi, 82–84।
  17. Tipps 1985, পৃ. 432।
  18. Curry 2012, পৃ. 34।
  19. Champion 2015, পৃ. 102।
  20. Goldsworthy 2006, পৃ. 21–23।
  21. Le Bohec 2015, পৃ. 430।
  22. Champion 2015, পৃ. 95।
  23. Mineo 2015, পৃ. 111–127।
  24. Goldsworthy 2006, পৃ. 23, 98।
  25. Lazenby 1996, পৃ. 158।
  26. Scullard 2006, পৃ. 565।
  27. Miles 2011, পৃ. 317।
  28. Goldsworthy 2006, পৃ. 308–309।
  29. Eckstein 2006, পৃ. 176।
  30. Kunze 2015, পৃ. 398।
  31. Kunze 2015, পৃ. 398, 407।
  32. Kunze 2015, পৃ. 407।
  33. Bagnall 1999, পৃ. 307।
  34. Bagnall 1999, পৃ. 308।
  35. Kunze 2015, পৃ. 408।
  36. Le Bohec 2015, পৃ. 434।
  37. Scullard 2002, পৃ. 310, 316।
  38. Whittaker 1996, পৃ. 596।
  39. Pollard 2015, পৃ. 249।
  40. Fantar 2015, পৃ. 455–456।
  41. Richardson 2015, পৃ. 480–481।
  42. Miles 2011, পৃ. 363–364।
  43. UNESCO 2020

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  • Fantar, M’hamed-Hassine (২০১৫) [2011]। "Death and Transfiguration: Punic Culture after 146"। Hoyos, Dexter। A Companion to the Punic Wars। Chichester, West Sussex: John Wiley। পৃষ্ঠা 449–466। আইএসবিএন 978-1-1190-2550-4 
  • Rankov, Boris (২০১৫) [2011]। "A War of Phases: Strategies and Stalemates"। Hoyos, Dexter। A Companion to the Punic Wars। Chichester, West Sussex: John Wiley। পৃষ্ঠা 149–166। আইএসবিএন 978-1-4051-7600-2 
  • Richardson, John (২০১৫) [2011]। "Spain, Africa, and Rome after Carthage"। Hoyos, Dexter। A Companion to the Punic Wars। Chichester, West Sussex: John Wiley। পৃষ্ঠা 467–482। আইএসবিএন 978-1-1190-2550-4 
  • Scullard, Howard H. (২০০৬) [1989]। "Carthage and Rome"। Walbank, F. W.; Astin, A. E.; Frederiksen, M. W. & Ogilvie, R. M.। Cambridge Ancient History: Volume 7, Part 2, 2nd Edition। Cambridge: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 486–569। আইএসবিএন 978-0-521-23446-7