কাও ধনেশ
কাও ধনেশ Anthracoceros albirostris | |
---|---|
![]() | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণী জগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Coraciiformes |
পরিবার: | Bucerotidae |
গণ: | Anthracoceros |
প্রজাতি: | A. albirostris |
দ্বিপদী নাম | |
Anthracoceros albirostris (শ' & Nodder, ১৮০৭) | |
প্রতিশব্দ | |
Buceros malabaricus (Gmelin, ১৭৮৮) |
কাও ধনেশ (Anthracoceros albirostris) (ইংরেজি: Oriental Pied Hornbill বা Indian Pied Hornbill), কাউ ধনেশ বা পাকড়া ধনেশ বিউসেরোটিডি (Bucerotidae) পরিবার বা গোত্রের অন্তর্গত একটি মোটামুটি বৃহদাকার ধনেশ প্রজাতির পাখি।[১] ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্বাংশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উত্তর-পূর্বাংশের বিভিন্ন দেশ কাও ধনেশের প্রধান আবাসস্থল।
বিস্তৃতি
[সম্পাদনা]বাংলাদেশ, ভারত (উত্তর-পূর্বাঞ্চল), ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, লাওস, ব্রুনাই, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুর এবং চীন (দক্ষিণাঞ্চল, মূলত ইউনান প্রদেশ) কাও ধনেশের প্রধান আবাসস্থল। এরা মূলত পাহাড়ী মিশ্র চিরসবুজ বনের বাসিন্দা।[২]
উপপ্রজাতি
[সম্পাদনা]কাও ধনেশের দুটো উপপ্রজাতি শনাক্ত করা গেছে। এরা হল-
- Anthracoceros albirostris albirostris (Shaw, 1808)
- Anthracoceros albirostris convexus (Temminck, 1832)
বর্ণনা
[সম্পাদনা]![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/5/52/Anthracoceros_albirostris_convexus1.jpg/220px-Anthracoceros_albirostris_convexus1.jpg)
কাও ধনেশের উপরের দিক চকচকে কালো রঙের, নিচের দিক সাদা। ডানার ওড়ার পালকের ডগা এবং লেজের বাইরের পালকের আগার দিক সাদা। গলায় পালকহীন নীল চামড়ার পট্টি থাকে। চোখের চারপাশে ও গলায় নীলাভ-সাদা চামড়া দেখা যায়। পা ও পায়ের পাতা স্লেট রঙের সবুজ। চোখের তারা লালচে। নিচের দিকে বাঁকানো বড় ঠোঁটের উপরের বর্ম মাথার পেছনের দিকে বেশি প্রলম্বিত কিন্তু সামনের দিকে একটু বাড়ানো ও এক ডগাযুক্ত। আপাতদৃষ্টিতে এদের ঠোঁট অনেক ভারি মনে হলেও আসলে বেশ হালকা, কারণ ঠোঁট আর বর্মের ভেতর আছে অনেক ফাঁপা প্রকোষ্ঠ। পুরুষ পাখির বর্মের সামনে-পেছনে কালো অংশ আছে, কিন্তু মূল ঠোঁটে কোন কালো অংশ নেই। স্ত্রী ধনেশ যে কেবল আকারে ছোট তাই নয় তাদের বর্ম পর্যন্ত ছোট এবং এর ঠোঁটের উপর কালোর ছোপ বেশি আর নিচের ঠোঁটের গোড়ায় লালচে অংশ আছে। তাছাড়া এর চোখও বাদামী। কাও ধনেশ দৈর্ঘ্যে কমবেশি ৯০ সেন্টিমিটার।[১]
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/2/2a/Buceros_bicornis_8_%281%29.jpg/220px-Buceros_bicornis_8_%281%29.jpg)
আচরণ
[সম্পাদনা]![সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, হবিগঞ্জ থেকে তোলা উড়ন্ত পাকড়া ধনেশ](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/2/2d/%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%BE_%E0%A6%A7%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B6.png/220px-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%BE_%E0%A6%A7%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B6.png)
সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় থাকে। কখনও সঙ্গে অপরিণত ছানাও থাকতে পারে। বনের বটজাতীয় গাছের যখন ফল পাকে, তখন অন্য অনেক প্রজাতির পাখি ও স্তন্যপায়ীদের সাথে মিলে সে খাবারে হামলা চালায়। বনের ছোট বড় সকল নরম ফল খেতে পারদর্শী, সেই সাথে খেয়ে থাকে পাখির ছানা, ডিম, ইঁদুর, ব্যাঙ, সরিসৃপ প্রভৃতি।[১]
এক জোড়া একই এলাকায় বছরের পর বছর থাকতে পছন্দ করে। বেশিরভাগ সময়ে একই মরা গাছের উপরের দিকের কান্ডে গর্ত করে বাসা বানায়। কোনো কোনো গাছে পর পর কয়েকটি গর্ত থাকতে পারে।[১] স্ত্রী ধনেশ বাসায় ঢুকে নিজের বিষ্ঠা দিয়ে বন্ধ করে দেয় বাসার প্রবেশ পথ। ডিম পাড়া থেকে বাচ্চা বড় না হওয়া পর্যন্ত মা ধনেশ গর্তের বাসায় বন্দী থাকে। ছোট একটি ফুটো দিয়ে বাবা ধনেশ এই দীর্ঘ সময় স্ত্রী পাখি ও বাচ্চা পাখির খাবারের জোগাড় করে। ব্যাপারটা খুবই বিস্ময়কর এবং একাজের জন্য অস্বাভাবিক ধৈর্যের প্রয়োজন পড়ে। ছানা ডিম ফুটে বের হওয়ার পর বাবা ধনেশ বাসার মুখ ভেঙে দেয়।
অস্তিত্বের ঝুঁকি এবং এর কারণ
[সম্পাদনা]![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/f/f0/Anthracoceros_DC.jpg/220px-Anthracoceros_DC.jpg)
বিভিন্ন দেশে বন ধ্বংস এবং বন এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায় কর্তৃক এদেরকে ধরে খাওয়া, হাতুড়ে চিকিৎসায় ও গৃহপালন বা চিড়িয়াখানায় সংগ্রহের কারণে এদের সংখ্যা অতি দ্রুত কমে আসছে।[১] চিড়িয়াখানায় এদের বংশবিস্তারের প্রচেষ্টা কয়েকবার ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশে ধনেশ পাখির তেল বিক্রির নামে কাও ধনেশ ব্যাপক হারে মারা হচ্ছে। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্রেতারা ধনেশ পাখির তেল মনে করে পোড়া মবিল নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। এক্ষেত্রে ধনেশ পাখি মারা হয় কেবলমাত্র তেলের বিজ্ঞাপনের জন্য।[৩]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ ঙ বাংলাদেশের পাখি, রেজা খান, বাংলা একাডেমী, ঢাকা (২০০৮), পৃ. ১২৬।
- ↑ [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ মার্চ ২০১২ তারিখে, BirdLife International, কাও ধনেশ বিষয়ক পাতা।
- ↑ [২], ধনেশ পাখির তেল!, রাশাদ রহমান, দৈনিক সকালের খবর, তথ্য সংগ্রহঃ ১০-০৫-২০১২।
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/4/4a/Commons-logo.svg/30px-Commons-logo.svg.png)
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- আইইউসিএন লাল তালিকার ন্যূনতম উদ্বেগজনক প্রজাতি
- ধনেশ
- বাংলাদেশের পাখি
- এশিয়ার পাখি
- ভারতের পাখি
- নেপালের পাখি
- ভুটানের পাখি
- মিয়ানমারের পাখি
- থাইল্যান্ডের পাখি
- ভিয়েতনামের পাখি
- মালয়েশিয়ার পাখি
- ইন্দোনেশিয়ার পাখি
- সিঙ্গাপুরের পাখি
- লাওসের পাখি
- কম্বোডিয়ার পাখি
- ব্রুনাইয়ের পাখি
- চীনের পাখি
- অ্যানথ্রাকোসেরোস
- ১৮০৭-এ বর্ণিত পাখি
- দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাখি