কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই
"কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই" | ||
---|---|---|
মান্না দে কর্তৃক সঙ্গীত | ||
ভাষা | বাংলা | |
মুক্তিপ্রাপ্ত | অডিওঃ ১৯৮৩ | |
বিন্যাস | অডিও ক্যাসেট | |
রেকর্ডকৃত | ১৯৮৩ | |
দৈর্ঘ্য | ০৬:২১ | |
লেবেল | সারেগামা | |
গান লেখক | গৌরী প্রসন্ন মজুমদার | |
সুরকার | সুপর্ণকান্ত ঘোষ | |
সঙ্গীত ভিডিও | ||
ইউটিউবে "কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই" |
‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত বাংলা সঙ্গীত। স্মৃতিচারণী এই সঙ্গীত বা গানটি ১৯৮৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত।[১]
গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের লেখা ও সুপর্ণকান্ত ঘোষের সুরে এই গানে কন্ঠ দেন মান্না দে[১][২]।
পটভূমি[সম্পাদনা]
১৯৮৩ সালের দিকে, গীতিকার গৌরী প্রসন্ন মজুমদার অনেক জনপ্রিয় প্রেমের গান লিখে ফেলেছেন, কিন্তু তখনো তিনি মান্না দের জন্য গান লিখেনি। কারন, ঔ সময় মান্না দের জন্য কেবল পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় গান লিখতেন। গীতিকার গৌরী প্রসন্নের মনে মান্না দের জন্য পূজার গান লেখার ইচ্ছা ছিল। সেই সময় নচিকেতা ঘোষ ও গৌরী প্রসন্ন মজুমদার বাংলা সংগীতের সেরা সুরকার-গীতিকার জুটি হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন। কিছুদিন পর গীতিকার গৌরী প্রসন্ন মজুমদার, শক্তি ঠাকুরকে দিয়ে একটি গানে কন্ঠদানের জন্য একদিন নচিকেতা ঘোষের নিউ আলিপুরের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যকার সম্পর্কও ছিল বেশ মুধুর, সেই সূত্রে নচিকেতার ছেলে সুপর্ণকান্তির সঙ্গেও গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের বেশ ভাল সম্পর্ক ছিল। গৌরী প্রসন্ন, নচিকেতার বাড়িতে আসার বেশ অনেকক্ষণ পরে নচিকেতার ছেলে সুপর্ণকান্তির সাথে সাক্ষাত হওয়াতে গৌরী প্রসন্ন মজুমদার অনেকটা মজা করেই সুপর্ণকান্তিকে বলেন, কী বাইরে আড্ডা মেরেই সময় কাটাচ্ছ বুঝি? উত্তরে সুপর্ণকান্তি তার গৌরী কাকাকে বলেন, কী সব গদগদে প্রেমের গান লিখছো একটা অন্যরকম গান লিখে দেখাও না, এই আড্ডা নিয়েও তো গান লিখতে পারো।
জবাবে গৌরী প্রসন্ন বলেন, তুমি (সুপর্ণকান্তি) তো বিশ্ববিখ্যাত অক্সফোর্ড থেকে এমএ লাভ করেছো। তুমি আড্ডা নিয়ে কি আর বাংলা গান গাইবে? সুপর্ণ এবার বলে, কেন নয়। কফি হাউসের আড্ডা নিয়েও তো একটা গান লিখতে পারো। গৌরী প্রসন্ন বলেন, লিখলে তোমার বাবা (নচিকেতা ঘোষ) কি সে গান গাইবেন? তাদের দুজনের কথারবার্তার ফাঁকেই গৌরী প্রসন্ন মনে মনে তৈরি করে ফেলেন গানের দুটি লাইন।
এরপর সুপর্ণকান্তিকে বলেন, আচ্ছা তাহলে লিখে নাও - কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই / কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই। সুপর্ণও সঙ্গে সঙ্গে সেই গানের দুটো লাইনেই সুর দিয়ে শুনিয়ে দেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত শক্তি ঠাকুর গানটি সুপর্ণকে সেবার পূজায় গানটা গাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন কিন্তু সুপর্ণ তাতে রাজি হননি। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই ঠিক করে নিয়েছিলেন যে গানটি মান্না দে কে দিয়ে গাইবার কথা।
কিন্তু গানের বাকি লাইনগুলো তখনো অসম্পূর্ণ ছিল, পরের দিন সকালেই গৌরী প্রসন্নের স্ত্রী সুপর্ণকান্তিকে ফোন দিয়ে জানান যে, বহুদিন পরে সারা রাত জেগে অসুস্থ গৌরী প্রসন্ন গান লিখেছেন। ঐ সময় তখন গৌরী প্রসন্ন ক্যান্সারেও আক্রান্ত ছিলেন। দু’দিন পরে গৌরী প্রসন্ন গানটা প্রস্তুত করে নিয়ে হাজির হয়। কিন্তু গৌরী প্রসন্ন শেষ স্তবক যোগ করার পক্ষপাতী ছিলেন না। কিন্তু সুপর্ণকান্তির ইচ্ছাতেই শেষ পর্যন্ত গৌরী প্রসন্ন আরও একটি স্তবক যোগ করতে রাজি হন। এরপর দুর্দান্ত সেই লাইন লেখেন- সেই সাতজন নেই, তবুও টেবিলটা আজও আছে। কিন্তু সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে তিনি(গৌরী প্রসন্ন) শেষ তিনটি লাইন তিনি লিখেছিলেন চেন্নাইয়ে চিকিৎসা করাতে যাওয়ার পথে হাওড়া স্টেশনে বসে একটি সিগারেটের প্যাকেটের উল্টো পিঠের খালি সাদা অংশে করে। যা একজন পরিচিত লোকের মাধ্যমে তা সুপর্ণকান্তির কাছে পাঠিয়ে দেন।
তারপর সুপর্ণকান্তির গানটিতে সুরকরে মুম্বইয়ে মান্না দে কে দিয়ে গানটি রেকর্ড করান। যে গান তৈরি হয়ে যায় বাংলা গানের একটি ইতিহাস[১]।
সঙ্গীত পরিচালনা[সম্পাদনা]
গান লিখেছিলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন সুপর্ণকান্তি ঘোষ[৩], গেয়েছিলেন মান্না দে[১][২]।
মুক্তি ও জনসংস্কৃতিতে প্রভাব[সম্পাদনা]
১৯৮৩ সাল কালজয়ী এই গানটি মুক্তির পর থেকে আজও গানটি শ্রোতাপ্রিয় হয়ে আছে[১][২]। ২০০৬ সালে বিবিসি জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গানের তালিকায় এই গানটি চতুর্থ স্থানে রয়েছে।[৪]
প্রভাব[সম্পাদনা]
গানটি এতই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে শ্রোতাগণ এর সত্যার স্মৃতীচিহ্ন খুজতে চলে আসে সেই কফি হাউসে, যেখানে গানের পটভূমি অনুযায়ী মান্না দে তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতেন বলে জনশ্রুতি[৫][৬][৭][৮]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "কফিহাউজ গানের জন্মকাহিনী"। banglanews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০২০।
- ↑ ক খ গ "কফি হাউজের সেই আড্ডাটা...: 'মান্না কাকা বলেছিলেন, এ কিরকম গান?' | কালের কণ্ঠ"। Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০২০।
- ↑ "এ সপ্তাহের সাক্ষাৎকার: সুরকার সুপর্ণকান্তি ঘোষ"। BBC News বাংলা। ২০১৫-০৫-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-২৮।
- ↑ বিবিসি বাংলা আর্কাইভ
- ↑ "কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজও আছে"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০২০।
- ↑ "মান্না দে'র কফি হাউজে"। Risingbd.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০২০।
- ↑ "মান্না দে'র বিখ্যাত কফি হাউজে ক্ষণিকের আড্ডা"। jagonews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০২০।
- ↑ "কফি হাউজের সেই আড্ডাটা সত্যিই আর নেই"। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০২০।