কনরাড এমিল ব্লোচ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কনরাড এমিল ব্লোচ
জন্ম২১ জানুয়ারি ১৯১২
নাইসা, পোল্যান্ড, প্রুশিয়া রাজ্য, জার্মান সাম্রাজ্য
মৃত্যু১৫ অক্টোবর ২০০০(2000-10-15) (বয়স ৮৮)
বার্লিংটন, ম্যাসাচুসেটস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
নাগরিকত্ব
  • জার্মানি
  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
পুরস্কারচিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার (১৯৬৪)
আর্নেস্ট গুয়েন্থার পুরস্কার (১৯৬৫)
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
প্রতিষ্ঠানসমূহশিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়

কনরাড এমিল ব্লোচ (২১ জানুয়ারি ১৯১২ - ১৫ অক্টোবর ২০০০)[১] ছিলেন একজন জার্মান মার্কিনী প্রাণরসায়নবিদকোলেস্টেরল এবং স্নেহজ অ্যাসিড বিপাকের প্রক্রিয়া এবং নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আবিষ্কারের জন্য তিনি ১৯৬৪ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান।[২]

প্রারম্ভিক জীবন ও কর্মজীবন[সম্পাদনা]

ব্লোচ আনু. 1963

কনরাড ব্লোচ জার্মান সাম্রাজ্যের প্রুশিয়ান প্রদেশের পোলান্ডের নেইসে (বর্তমানে নাইসা) শহরে একটি ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[৩] মধ্যবিত্ত পরিবারের পরিমণ্ডলে তিনি বেড়ে ওঠেন। তিনি ছিলেন পিতা হেডউইগ (স্ট্রাইমার) এবং মাতা ফ্রেডরিখ ডি. "ফ্রিটজ" ব্লোচের দ্বিতীয় সন্তান।[৪] স্থানীয় স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর, ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত ব্লচ মিউনিখ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৩৪ সালে ইহুদিদের উপর নাৎসি নিপীড়নের কারণে তিনি সুইজারল্যান্ডে চলে যান এবং সেখানে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত বাস করেন। সুইজারল্যান্ডে থাকাকালীন, তিনি তার প্রথম প্রকাশিত প্রাণ রাসায়ন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তিনি ডাভোসের সুইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটে গবেষণার কাজে যুক্ত ছিলেন।

ব্লোচ উচ্চ শিক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের নাম নথিভুক্ত করেন। ১৯৩৮ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জৈব রসায়নে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কাজে যুক্ত ছিলেন। সেখান থেকে তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন। তারপর ১৯৫৪ সালে প্রাণরসায়ন বিজ্ঞানের হিগিন্স অধ্যাপক হিসাবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। এই পদে তিনি ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তার দায়িত্বভার সামলেছেন। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত তিনি ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ পাবলিক হেলথের বিজ্ঞানের অধ্যাপকের দায়িত্বে ছিলেন।[৫] হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির কলেজ অফ হিউম্যান সায়েন্স বিভাগে বিশিষ্ট অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্বভার পালন করেন।[২]

কোলেস্টেরল এবং স্নেহজ অ্যাসিড বিপাকের প্রক্রিয়া এবং এর নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত আবিষ্কারের জন্য ব্লচ ১৯৬৪ সালে তার দেশেরই ফিওডর লিনেন-এর সাথে যুগ্মভাবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান। তারা দেখিয়েছেন যে শরীরের অনেক ধাপে অ্যাসিটেট থেকে তারপিনঘটিত জৈব যৌগ স্কোয়ালিন তৈরি হয় এবং পরে স্কোয়ালিন থেকে কোলেস্টেরলে রূপান্তর ঘটে। তিনি কোলেস্টেরলের সমস্ত কার্বন পরমাণুকে অনুসরণ করে দেখেছিলেন এগুলি অ্যাসিটেটে ফিরে আসে। তিনি তেজস্ক্রিয় অ্যাসিটেট ব্যবহার করে রুটির মোল্ডের উপর কিছু গবেষণা করেন। এর কারণ হলো ছত্রাকও স্কোয়ালিন তৈরি করে। তিনি তার পরীক্ষা ইঁদুরের উপর প্রয়োগ করে তার ফলাফল নিশ্চিত করেন। বেশ কয়েকজন গবেষকদের মধ্যে ব্লোচ একজন ছিলেন যারা দেখিয়ে ছিলেন যে, অ্যাসিটাইল কোএনজাইম এ জৈব যৌগ মেভালোনিক অ্যাসিডে পরিণত হয়। বিজ্ঞানী ব্লোচ এবং লিনেন উভয়ই গবেষণা করে দেখেছিলেন যে, মেভালোনিক অ্যাসিড রাসায়নিকভাবে সক্রিয় আইসোপ্রিনে রূপান্তরিত হয়, যা জৈব যৌগ স্কোয়ালিনের পূর্বসূরী।[৬] ব্লোচ আরও আবিষ্কার করেছিলেন যে, পিত্ত এবং একটি মহিলা যৌন হরমোন কোলেস্টেরল থেকে তৈরি হয়। এই আবিষ্কার ফলে জানা যায় যে, সমস্ত স্টেরয়েড কোলেস্টেরল থেকে তৈরি হয়। [৭] তার নোবেল বক্তৃতা ছিল "কোলেস্টেরলের জৈবিক সংশ্লেষণ" বিষয় নিয়ে।[৮]

১৯৬৮ সালে ব্লোচ ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে উইলিয়াম লয়েড ইভান্স পুরস্কার পান। ১৯৮৫ সালে তিনি রয়্যাল সোসাইটির একজন ফেলো নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে তিনি বিজ্ঞানের জাতীয় পদক লাভ করেন।[৯] তিনি আমেরিকান একাডেমি অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের একজন নির্বাচিত সদস্য ছিলেন।[১০] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস তাকে নির্বাচিত সদস্যের পদ দিয়ে সম্মান জানায়।[১১] তিনি আমেরিকান ফিলোসফিক্যাল সোসাইটিরও একজন নির্বাচিত সদস্য ছিলেন।[১২]

১৯৬৪ সালে স্টকহোমে স্ত্রী এবং সন্তানদের সাথে কনরাড এমিল ব্লোচ

ব্লোচ এবং তার স্ত্রী লোর টেউটসের প্রথম সাক্ষাৎ হয় জার্মানির মিউনিখে। ১৯৪১ সালে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই সন্তান, পিটার কনরাড ব্লচ এবং সুসান এলিজাবেথ ব্লোচ। দুই নাতি-নাতনি, বেঞ্জামিন নিম্যান ব্লোচ এবং এমিলি ব্লোচ সন্ডেল। স্কিইং, টেনিস এবং সঙ্গীতের প্রতি কনরাড ব্লোচ অনুরাগী ছিলেন।[৬] ২০০০ সালে ৮৮ বছর বয়সে এই নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের বার্লিংটন শহরে জীবনাবসান হয়।[১৩] ২০১০ সালে ৯৮ বছর বয়সে লর ব্লোচ মারা যান।[১৪] [১৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Westheimer, F. H. (২০০২)। "Konrad Bloch. 21 January 1912 - 5 October 2000"। Biographical Memoirs of Fellows of the Royal Society48: 43–49। ডিওআই:10.1098/rsbm.2002.0003অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  2. Konrad E. Bloch. Encyclopaedia Britannica
  3. "Jewish Nobel Prize Winners in Medicine"www.jinfo.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-৩০ 
  4. Bloch, K. (১৯৮৭)। "Summing Up": 1–19। ডিওআই:10.1146/annurev.bi.56.070187.000245অবাধে প্রবেশযোগ্যপিএমআইডি 3304130 
  5. "Konrad Bloch, Nobel winner, dies at 88"। The Harvard Gazette। অক্টোবর ১৯, ২০০০। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০২২ 
  6. "Konrad Bloch Biography (1912-)"। Internet FAQ Archive। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১১-১৪ 
  7. S. Bergström (১৯৬৪-১২-১১)। "The 1964 presentation speech of the Nobel Prize for Physiology or Medicine"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১১-১৪ , quoted by Larry Moran at Sandwalk blog in "Nobel Laureates: Konrad Bloch and Feodor Lynen," 2007-11-21.
  8. Bloch, Konrad E. (২০১৩)। "Nobel Lecture: The Biological Synthesis of Cholesterol"Nobelprize.org। Nobel Media AB। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১১-১৪ 
  9. The President's National Medal of Science: Recipient Details. Konrad E. Bloch. National Science Foundation. Retrieved on 2020-07-31.
  10. "Konrad Emil Bloch"American Academy of Arts & Sciences (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২৮ 
  11. "Konrad E. Bloch"www.nasonline.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২৮ 
  12. "APS Member History"search.amphilsoc.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২৮ 
  13. "Konrad Bloch, Nobel winner, dies at 88"Harvard Gazette। ১৯ অক্টোবর ২০০০। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০২০ 
  14. Lore Bloch Obituary - Lexington, Massachusetts. Legacy.com. Retrieved on 2020-07-31.
  15. Lore Bloch Obituary - Lexington, MA | Boston Globe. Legacy.com (2010-02-21). Retrieved on 2020-07-31.