এ. টি. এম. আজহারুল ইসলাম
এ টি এম আজহারুল ইসলাম | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী-এর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল | |||||||||||||
নির্বাচনী এলাকা | রংপুর-২ | ||||||||||||
ব্যক্তিগত বিবরণ | |||||||||||||
জন্ম | ১৯৫২ (বয়স ৭২–৭৩) লোহানীপাড়া, বদরগঞ্জ উপজেলা, রংপুর জেলা, পূর্ব বাংলা, পাকিস্তান অধিরাজ্য | ||||||||||||
জাতীয়তা | বাংলাদেশি | ||||||||||||
রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী | ||||||||||||
পেশা | রাজনীতিবিদ | ||||||||||||
|
এ টি এম আজহারুল ইসলাম বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ। মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ছিলেন। ২০১২ সালে ২২ অগাস্ট তাকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় ও বর্তমানে তার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো বিচারাধীন অবস্থায় আছে।[১][২] তিনি রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন।
রাজনৈতিক জীবন
[সম্পাদনা]এটিএম আজহারুল ইসলাম বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রথম সভাপতি ছিলেন। গ্রেফতারের পূর্বে তিনি জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। তিনি ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-২ (তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ) আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন।[৩]
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ
[সম্পাদনা]২০১২ সালের ২২ আগস্ট মগবাজার থেকে আজহারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।[৪] আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) তার বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ গঠন করে। এর মধ্যে গণহত্যা, হত্যা ও অপহরণের অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত ছিল।[৫] সে সময় তিনি জামায়াতে ইসলামীর সহকারী মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।[৬]
তার বিরুদ্ধে মামলায় প্রসিকিউটর ছিলেন নূরজাহান বেগম মুক্তা।[৪] তার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে ছিলেন প্রবীণ আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ শিশির মনির এবং ইমরান সিদ্দিক।
একজন নারী সাক্ষ্য দেন যে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় আজহারুল ইসলাম রংপুর টাউন হলে এক গর্ভবতী নারীকে টানা ১৯ দিন ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ছিলেন।[৭][৮] ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের দায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।[৯][১০]
তিনি ঝাড়ুয়ারবিল গণহত্যায় জড়িত ছিলেন, যেখানে ১২০০-র বেশি হিন্দু নিরীহ বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করা হয়েছিল।[১১] এছাড়াও, রংপুর টাউন হলে এক গর্ভবতী নারীকে ধর্ষণের ঘটনায়, মুক্তিবাহিনীর এক সদস্য ও তার ভাইকে আল-বদর ক্যাম্পে নির্যাতনের ঘটনায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।[৯][১২] তবে, রংপুরে ১০ জন হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সে মামলায় তিনি নির্দোষ হিসেবে বিবেচিত হন।[৯]
তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালের প্রধান ছিলেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।[৯] রায় ঘোষণার পর ইসলাম প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, "... আল্লাহ তোমাদের বিচার করবেন, ইনশাআল্লাহ"।[৯]
এই রায়ের পর জামায়াতে ইসলামী দুই দিনের ধর্মঘট (হরতাল) ডাকার ঘোষণা দেয়।[৯][১৩]
ইসলামের আইনজীবীরা দাবি করেন যে, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট তার আপিল খারিজ করে দেয়।[১৪] আপিল বিভাগের বেঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।[১৫]
আপিলের সময় ইসলামের প্রধান আইনজীবী ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, যিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতিবিদ ছিলেন।[১৫]
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠন এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, বিচারের সময় বেশ কিছু অনিয়ম হয়েছে।[১৬]
শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান ইসলামের মুক্তি দাবি করেন। পাশাপাশি, নির্বাচন কমিশনের কাছে দলটির নিবন্ধন পুনর্বহালের আহ্বান জানান।[১৭][১৮]
দলের নেতাকর্মীরা এ. টি. এম. আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে গাজীপুর জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।[১৯]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম গ্রেপ্তার"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-১৬।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "এ টি এম আজহারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমার নির্দেশ"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-১৬।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "তদন্ত কর্মকর্তাকে এটিএম আজহারের তথ্য জানালো ইসি"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-১৬।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ "Jamaat leader Azharul held"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১২-০৮-২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-২২।
- ↑ "Bangladesh upholds death sentence of Islamist chief Azharul Islam"। Al Jazeera (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-০৩।
- ↑ Dandekar, Deepra। Boundaries and Motherhood: Ritual and Reproduction in Rural Maharashtra (ইংরেজি ভাষায়)। Zubaan। আইএসবিএন 978-93-85932-10-6।
- ↑ "Pregnant woman got no mercy"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-১২-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-২২।
- ↑ "He got pregnant woman raped"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-০৩-০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-২২।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ "Punished to the Maximum"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-১২-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-২২।
- ↑ "Killing Teachers"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-১২-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-২২।
- ↑ Grant, Peter (২০১৫-০৭-০২)। State of the World’s Minorities and Indigenous Peoples 2015: Focus on cities (ইংরেজি ভাষায়)। Minority Rights Group। পৃষ্ঠা 170। আইএসবিএন 978-1-907919-63-3।
- ↑ "Jharuarbeel-Padmapukur genocide testifies crimes against humanity -"। The Daily Observer। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-২২।
- ↑ "Jamaat calls hartal for Wednesday, Thursday"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-১২-৩০। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-২২।
- ↑ "Crimes Against Humanity: SC upholds Azhar's death penalty"। দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-০৩।
- ↑ ক খ "Crimes Against Humanity: SC upholds Azhar's death penalty"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-১১-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-২২।
- ↑ "Bangladesh: Political leader at imminent risk of execution: ATM Azharul Islam"। Amnesty International (ইংরেজি ভাষায়)। ১৭ মার্চ ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-০৩।
- ↑ "'Release Azharul, restore party registration'"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৫-০২-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-২২।
- ↑ "Release Azharul Islam or prepare to imprison 3 crore people: Jamaat chief to govt"। The Business Standard (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৫-০২-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-২২।
- ↑ "Jamaat stages protest in Gazipur, demands Azharul's release"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৫-০২-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-২২।