এলিনা গুইমারেস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
এলিনা গুইমারেস
জন্ম
এলিনা জুলিয়া শ্যাভেস পেরেইরা গুইমারেস

(১৯০৪-০৮-০৮)৮ আগস্ট ১৯০৪
মৃত্যু২৬ জুন ১৯৯১(1991-06-26) (বয়স ৮৬)
লিসবন
জাতীয়তাপর্তুগিজ
পেশালেখক
পরিচিতির কারণনেতৃস্থানীয় নারীবাদী এবং মেয়েদের উন্নত শিক্ষার প্রবক্তা
উল্লেখযোগ্য কর্ম
কোইসাস ডি মুলহেরেস; মুলহেরেস পর্তুগিসাস: অন্টেম ই হোজে

এলিনা গুইমারেস (১৯০৪ - ১৯৯১) ২০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে পর্তুগালের একজন লেখক এবং নারীবাদী নেতা ছিলেন।

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

এলিনা জুলিয়া শ্যাভেস পেরেইরা গুইমারেস ১৯০৪ সালের ৮ই আগস্ট লিসবনে জন্মগ্রহণ করেন, তিনি অ্যালিস পেরেইরা গুইমারেস এবং ভিটোরিনো ম্যাক্সিমো ডি কারভালহো গুইমারেসের একমাত্র কন্যা। তাঁর বাবা পর্তুগিজ সেনাবাহিনীতে ছিলেন এবং প্রথম পর্তুগিজ প্রজাতন্ত্রের সময় ১৯২৫ সালে সংক্ষিপ্তভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, যেটি প্রধানমন্ত্রী পদের সমতুল্য। এইভাবে এলিনা জুলিয়া রাজনীতির আধিপত্যপূর্ণ পরিবেশে বেড়ে ওঠেন এবং ছোটবেলা থেকেই তিনি রাজনৈতিক পদক্ষেপে আগ্রহী হয়ে ওঠেন, বিশেষ করে নারী অধিকারে। উচ্চ বুর্জোয়াদের বেশিরভাগ মেয়েদের মতো তিনি বাড়িতে অধ্যয়ন করেন এবং তারপরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়েন। এরপর তিনি লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে ভর্তি হয়ে ১৯২৬ সালে স্নাতক হন। তিনি কখনই আইন অনুশীলন করেননি, যদিও তিনি একটি শিশু আদালতে কাজ করেছিলেন। যাইহোক, আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে নারীর অধিকার সম্পর্কে তাঁর জ্ঞানের সাহায্যে, অনেক নারীকে তাদের অধিকার সম্পর্কে অবহিত করতে তাঁর ভূমিকা অপরিহার্য ছিল।[১]

লেখালেখি এবং সক্রিয়তা[সম্পাদনা]

১৯২৫ সালে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী থাকা অবস্থায়, তিনি নারীবাদী আন্দোলনে যোগদান করেন। তিনি ভিডা অ্যাকাডেমিকা জার্নাল প্রকাশ করেছিলেন, জুলিও দান্তাসের লেখা তৃতীয় লিঙ্গ)তে (পর্তুগিজ: O Terceiro Sexo)) কর্মজীবী মহিলাদের সম্পর্কে করা অবমাননাকর মন্তব্যের প্রতি একটি চ্যালেঞ্জ ক'রে এটি করা হয়েছিল। সেখানে তিনি বলেছিলেন, যে সব নারী পড়াশুনা করেছে বা কাজ করেছে, তারা আর নারী না থেকে তৃতীয় লিঙ্গে পরিণত হয়েছে। এলিনার নিবন্ধের ফলস্বরূপ, অ্যাডিলেড ক্যাবেট তাঁকে কনসেলহো ন্যাসিওনাল দাস মুলহেরেস পর্তুগিসাস (সিএনএমপি - পর্তুগিজ মহিলাদের জাতীয় কাউন্সিল) এ যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ১৯২৭ সালে তিনি সিএনএমপির মহাসচিব হন। ১৯২৮ সালে তিনি সিএনএমপির বোর্ডের উপ সভানেত্রী নির্বাচিত হন এবং নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অধিকার ও নারী ভোটাধিকারের পক্ষে যুক্তি দিতে খুব সক্রিয় হতে শুরু করেন। সহ-শিক্ষা, নারীর রাজনৈতিক অধিকার এবং পেশাদার জীবনে নারীদের প্রবেশাধিকারের জন্য যুক্তি দিয়ে, নারীবাদী এবং আইনি বিষয় সহ তাঁর নিবন্ধগুলি প্রায়শই ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ১৯২৯ সালে সিএনএমপির সংবাদ বিবৃতি আলমা ফেমিনিনার সম্পাদক ছিলেন, এবং ১৯৩০ সালে পর্তুগাল ফেমিনিনো পত্রিকায় "ফেমিনিস্ট পেজ" -এর জন্য দায়ী ছিলেন। তিনি ডায়রিও ডি নোটিসিয়াস, ও প্রাইমিরো দে জেনেরিও এবং আইনি জার্নাল গ্যাজেটা ডা অর্ডেম ডস অ্যাডভোগাডোস (এখন গ্যাজেটা জুরিডিকা) সহ একাধিক সংবাদপত্র ও সাময়িকীর জন্য লিখেছেন।[১][২]

১৯২৮ সালে, তিনি একজন আইনজীবী এবং আইনের অধ্যাপক অ্যাডেলিনো দা পালমা কার্লোসকে বিয়ে করেছিলেন। কার্লোস ১৯৭৪ সালের ২৫শে এপ্রিল কার্নেশন বিপ্লবের পর প্রথম সরকারের প্রধান হয়েছিলেন, এই বিপ্লবে ডানপন্থী, কর্তৃত্ববাদী এস্তাদো নভো (পর্তুগিজ: Estado Novo) সরকারের উৎখাত হয়েছিল। এই দম্পতির দুটি সন্তান ছিল। ১৯৩১ সালে তিনি সেইসব বুদ্ধিজীবী ও কর্মীদের মধ্যে ছিলেন, যাঁরা প্রাথমিক শিক্ষায় সহশিক্ষা দমনের বিরুদ্ধে জনশিক্ষা মন্ত্রীর কাছে প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি আরও যুক্তি দিয়েছিলেন যে, বিজ্ঞান, ভূগোল এবং ইতিহাস সম্পর্কে ছেলেদের যেভাবে শেখানো হয় সমস্ত মেয়েদের সেরকমই শেখানো উচিত। ১৯৪৫ সালে তিনি গণতান্ত্রিক ঐক্য আন্দোলনে যোগ দেন (পর্তুগিজ: Movimento de Unidade Democrática বা এমইউডি), এটি সংস্থাগুলির একটি আধা-আইনি মঞ্চ, যারা এস্তাদো নভো-র বিরোধিতা করেছিল। ১৯৪৬ সালে তিনি সিএনএমপির সাধারণ পরিষদের উপ সভাপতি নির্বাচিত হন, সেই সময়ে মারিয়া লামাস সভাপতি ছিলেন, ১৯৪৭ সালে তিনি সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হন, সেই বছর এস্তাদো নভো শাসন কর্তৃপক্ষ এটি বন্ধ করার আদেশ দেয়। তিনি ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ উইমেন এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যালায়েন্স ফর উইমেনস সাফ্রেজ সহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার একজন বিশিষ্ট সদস্য ছিলেন।[২]

১৯৭৪ সালের ২৫শে এপ্রিলের কার্নেশন বিপ্লবের ঠিক দুই বছর পর পর্তুগালের নতুন রাজনৈতিক সংবিধান কার্যকর হয়। এটি সকল স্তরে লিঙ্গের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠা করেছিল, এমনকি পরিবারের মধ্যেও। ১৯৭০ এবং ১৯৭৫ সালের মধ্যে দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত তাঁর নিবন্ধগুলি নারী বিষয়ক (পর্তুগিজ: 'Coisas de Mulheres') বইতে সংকলিত করা হয়েছিল। ১৯৭৯ সালে, কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অফ উইমেন একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে, যার শিরোনাম ছিল পর্তুগিজ নারী অতীত এবং বর্তমান (পর্তুগিজ: Mulheres Portuguesas: Ontem e Hoje), যেটি গুইমারেসের লেখা। ১৯৮৭ সালে, এটি ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়েছিল। এই পুস্তিকাটিতে, তিনি পর্তুগালের নারীবাদের খুব সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করেছেন। সেই সময়ে দেশে যৌন অসমতার নিন্দা ক'রে, তিনি পরে উল্লেখ করেছিলেন যে, "ব্যক্তিগতভাবে, আমি এটি অপমানজনক বলে মনে করেছি যে পুরুষরা, যারা কেবল পড়তে এবং লিখতে পারে, তাদের মতো অধিকার পাবার জন্য নারীদের দীর্ঘ বছর গবেষণা করা প্রয়োজন"।[২]

এলিনা গুইমারেস ১৯৯১ সালের ২৬শে জুন, লিসবনে মারা যান। ১৯৮৫ সালের ২৬শে এপ্রিল, তাঁকে অফিসারের অর্ডার অফ লিবার্টি (পর্তুগিজ: Ordem da Liberdade) করা হয়েছিল। গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতার জন্য পরিষেবার জন্য দেওয়া এটি একটি পর্তুগিজ নাগরিক আদেশ। কার্নেশন বিপ্লবের পরে ১৯৭৬ সালে অর্ডারটি তৈরি করা হয়েছিল। এলিনা গুইমারেস ছিলেন সাতজন মহিলার মধ্যে একজন যাঁকে রাষ্ট্রপতি রামালহো এনেস ব্যক্তিগতভাবে এই পদের জন্য বেছে নিয়েছিলেন, "পর্তুগিজ সমাজে নারীদের কর্মকে তুলে ধরার জন্য তাঁর হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে তাঁর উদাহরণ এবং কার্যকলাপের জন্য"।[২] পর্তুগিজ বার অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল কাউন্সিল দ্বারা পরিচালিত তাঁর নামে তৈরি একটি তহবিল, ২০১৬ সাল থেকে বার্ষিক এলিনা গুইমারেস পুরস্কার প্রদান করে, যে ব্যক্তি বা সংস্থা নারীর অধিকার এবং লিঙ্গ সমতার প্রতিরক্ষায় সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন তাঁকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।

প্রকাশনা[সম্পাদনা]

পর্তুগিজ বার অ্যাসোসিয়েশনের লাইব্রেরির ওয়েব সাইটে পাওয়া এলিনা গুইমারেসের সংবাদপত্র এবং জার্নাল নিবন্ধ এবং অন্যান্য প্রকাশনার তালিকা প্রায় ৪০০। তাঁর আরো গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো নিচে তালিকাভুক্ত করা হলো:

  • ডস ক্রাইমস কুলপোসোস (১৯৩০)
  • ও পোডার মেটারনাল (১৯৩৩)
  • লা কণ্ডিশন দে লা ফেমে ও পর্তুগাল (১৯৩৮)
  • এ কণ্ডিকাও জুরিডিকা ডা মুলহার নো ডিরেইটো ডি ফ্যামিলিয়া পেরান্তে অ্যাজ নাকোস উনিদাস (১৯৬২)
  • কোইসাস ডি মুলহেরেস (সংগ্রহ, ১৯৭৫)
  • মুলহেরেস পর্তুগিসাস: অন্টেম ই হোজে (১৯৭৮)
  • পর্তুগিজ উইমেন: পাস্ট অ্যাণ্ড প্রেজেন্ট (১৯৮৭)
  • সেটে দেকাদাস ডি ফেমিনিজম ও (১৯৯১)

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Elina Guimarães (1904-1991)"O Leme। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০২০ 
  2. "Elina Guimarães"Movimento democrático de mulheres: Mulheres de Abril। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০২০