এরনা স্নেইডার হুভার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(এরনা হুভার থেকে পুনর্নির্দেশিত)
এরনা হুভার
জন্ম (1926-06-19) ১৯ জুন ১৯২৬ (বয়স ৯৭)
নাগরিকত্বযুক্তরাষ্ট্র
মাতৃশিক্ষায়তনওয়েলসলি বি.এ.,
ইয়েল পিএইচডি
পরিচিতির কারণকম্পিউটারনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা
ফোন ট্র্যাফিকের জন্য[২]
পুরস্কারন্যাশনাল ইনভেন্টরস হল অব ফ্রেম, ২০০৮[৩]
ওয়েলসলি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
বিশেষ কৃতিত্ব পুরস্কার[২]
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
প্রতিষ্ঠানসমূহবেল ল্যাব
অভিসন্দর্ভের শিরোনামঅ্যান এনালাইসিস অব
কনট্র্যারি-টু-ফ্যাক্ট
কন্ডিশনাল সেন্‌টেনসেস[২]
 (১৯৫১)

ড. এরনা স্নেইডার হুভার (ইংরেজি: Dr. Erna Schneider Hoover; ১৯ জুন, ১৯২৬ - ) যুক্তরাষ্ট্রের গণিতবিদ। তিনি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত টেলিফোন সুইচ করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। বিভিন্ন রিপোর্টের মতানুসারে এই আবিষ্কার আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।[১][৪] এটি ব্যস্ত নেটওয়ার্কগুলোকে পরিচালনায় নতুন মাত্রা নিয়ে আসে।[৪] অধিক বার্তা আদান-প্রদানের সময়ে কল ড্রপ ও সিগন্যাল ব্যস্ত থাকার ঝামেলা এড়াতে এটি বিশেষভাবে সহায়তা করে।[১] তিনি ৩২ বছরেরও অধিক সময় ধরে বেল পরীক্ষাগারে কাজ করেন।[৫] তিনি কম্পিউটার প্রযুক্তি খাতে নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব।[২] কম্পিউটার সফটওয়্যারের প্রথমদিকের একটি পেটেন্ট তার নামাঙ্কিত।[২] ২০০৮ সালে তিনি ন্যাশনাল ইনভেন্টরস হল অব ফ্রেমের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।.[৬]

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

হুভারের জন্ম ১৯শে জুন, ১৯২৬ সালে,[৭] ইরভিংটন, নিউ জার্সিতে[২] তার পরিবার সাউথ অরেঞ্জ, নিউ জার্সিতে বসবার করতেন। তার পিতা ছিলেন একজন দন্ত-চিকিৎসক এবং মাতা ছিলেন শিক্ষক।[২] তার একটি ভাই ছিল, যে পাঁচ বছর বয়সে পোলিও রোগে মারা যায়।[২] ছোটবেলা থেকেই হুভার সাঁতার কাঁটা, নৌকা চালানো, ক্যানয় (একধরনের ডোঙা) চালানো পছন্দ করতেন। এসময় থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি তার অসীম আগ্রহ ছিল।[২] ঐ সময়ে সমাজে নারীদের বৈষম্য সম্পর্কে জেনেও তিনি ম্যারি ক্যুরির জীবনী পড়ে বিজ্ঞানের জগতে কিছু একটা করে যাবার প্রেরণা লাভ করেন বলে শোনা যায়।[২] তিনি ওয়েলসলি কলেজে শাস্ত্রীয় এবং মধ্যযুগীয় দর্শনইতিহাস বিষয়ের ওপরে পড়াশোনা করেন।[১][৭][৮][৯] তিনি ১৯৪৮ সালে ওয়েলসলি থেকে বি.এ. ডিগ্রীসহ অনার্স পাস করেন। তাকে ফি বেটআ কাপ্পায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং ডুরান্ট স্কলার হিসেবে সম্মানিত করা হয়।[২] তিনি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন বিষয়ে পিএইচ.ডি. লাভ করেন এবং সেখানেই গণিত বিষয়ে ১৯৫১ সালে তিনি গণিতে ফাউন্ডেশনস লাভ করেন।[১][৭]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

সোয়ার্থমোর কলেজের শিক্ষক হিসেবে তিনি ১৯৫১ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন,[১] যেখানে তিনি দর্শন এবং যুক্তিবিদ্যা পড়াতেন।[২] তবে পরবর্তীতে, সম্ভবত নারী হওয়ায় এবং বৈবাহিক কারণে তিনি দীর্ঘমেয়াদের কোন ভাল স্থান লাভ করেননি।১৯৫৩ সালে তিনি চার্লস উইলসন হুভার জুনিয়রকে বিয়ে করেন। চার্লস তাকে নিজের ক্যারিয়ারের উপর পূর্ণ স্বাধীনতা এবং উৎসাহ দিয়ে যান।[২]

১৯৫৪ সালে হুভার বেল ল্যাবে একজন সিনিয়র টেকনিক্যাল সহযোগী হিসেবে যোগদান করেন এবং পরে ১৯৫৬ সালে। ধারণা করা হয় এর অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ কর্মসূচী কম্পিউটার প্রকৌশলে স্নাতকোত্তরের সমতুল্য। সুইচিং সংক্রান্ত বিষয়গুলো এবং তড়িৎ থেকে কম্পিউটার - এর মধ্যেই অন্তর্নিহিত ছিল। সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে যখন কল সেন্টারে অনেক ফোন আসে, তখন জট পাকে এবং পুরো সিস্টেমে সমস্যা দেখা দেয়।[২]

হুভার সাংকেতিক যুক্তিপ্রবাহ এবং ফিডব্যাক তত্ত্বদ্বারা কল-সেন্টারের নিয়ন্ত্রণজনিত কার্যাবলীকে প্রোগ্রাম করেন, যেন গোটা সিস্টেমে ইনকামিং কলগুলোর তথ্যের কোন সমস্যা না হয়।[২] এটি কম্পিউটার ইলেকট্রনিক পদ্ধতি দ্বারা ইনকামিং কলের কম্পাঙ্ক নিয়ন্ত্রণ করে।[১০] তার এ পদ্ধতি রেকর্ড রাখা এবং বিল করা - এসব গৌণ কার্যাবলীর চেয়ে ইনপুট এবং আউটপুট, তথা এই মুখ্য কার্যাবলীর প্রতিই অধিক গুরুত্বারোপ করে।[২][৭] এভাবে কম্পিউটার কল সেন্টারের গ্রহণকরার ক্ষমতা নিজেই নিয়ন্ত্রণ করে নিতে পারবে, যেন মাত্রাতিরিক্ত বোঝার দায় বইতে না হয়।[৯] এই পদ্ধতি সঞ্চিত প্রোগ্রাম নিয়ন্ত্রণ নামে পরিচিতি লাভ করে।[৬]

এই আবিষ্কারের বিষয়ে হুভার হাসপাতালে বসে চিন্তা করেন, যখন তিনি তার দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন।[৬][৭][১১] বেল ল্যাবের আইনজীবী এই আবিষ্কারের পেটেন্টসংক্রান্ত কাগজপত্রে সই করানোর জন্য তার বাসায় গিয়েছিলেন, কারণ তখন হুভার মাতৃত্বকালীন ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন।[১] এই আবিষ্কারের ফলে গ্রাহকদের শক্তিশালী সেবা দেয়া সম্ভব হয়, এমনকি যখন বার্তা আদান-প্রদানের প্রচণ্ড চাপ থাকে তখনও।

To my mind it was kind of common sense ... I designed the executive program for handling situations when there are too many calls, to keep it operating efficiently without hanging up on itself. Basically it was designed to keep the machine from throwing up its hands and going berserk.

— এরনা স্নেইডার হুভার, ২০০৮[৪]
ভবন।
উচ্চশিক্ষাখাতে হুভার একজন আজীবনের পরামর্শক। দ্য কলেজ অব নিউ জার্সির একজন বোর্ড সদস্য হিসেবে তিনি রাজ্যের শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী, নারীদের জন্য বিভাগ এবং রাজ্যসহায়তা আকর্ষিত করার চেষ্টায় রত ছিলেন।

তার আবিষ্কার ফিডব্যাক কন্ট্রোল মনিটর ফর স্টোরড প্রোগ্রাম ডাটা প্রসেসিং সিস্টেম-এর জন্য তিনি ১৯৭১ সালের নভেম্বরে পেটেন্ট #৩,৬২৩,০০৭ লাভ করেন। এটি তখনকার সময়ে অন্যতম প্রথমদিককার সফটওয়্যার বিষয়ক পেটেন্ট ছিল।[১০] ১৯৬৭ সালে পেটেন্টের জন্য আবেদন করা হয় এবং ১৯৭১ সালে এটি দেয়া হয়।[২] এই আবিষ্কারের ফলশ্রুতিতে তিনি বেল পরীক্ষাগারের প্রথম নারী অধীক্ষক হিসেবে প্রযুক্তি বিভাগে যোগ দেন।[৪][৭] তিনি ১৯৮৭ সালে নতুন ক্রিয়াকলাপ সমর্থিত বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৫] আজ, একবিংশ শতকেও তার আবিষ্কারের প্রধান নীতিগুলোকেই অনুসরণ করা হচ্ছে।

এরপরে তিনি নানাবিধ উচ্চস্তরের প্রায়োগিক খাতে কাজ করেন। যেমন তিনি ক্ষেপণাস্ত্র-বিরোধী মিসাইল পদ্ধতির নিরাপত্তার বিষয়ে কাজ করেন। এই পদ্ধতি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র টর্পেডোকে বিচ্ছিন্ন করার শক্তিসম্পন্ন ছিল।[২] এছাড়াও তার বিভাগ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নানা দিক নিয়ে কাজ করে। তারা আরও কাজ করেন বিশাল ডাটাবেজ, লেনদেনসংক্রান্ত সফ্টওয়্যার এবং টেলিফোন নেটওয়ার্কের সমর্থনজনিত নানা বিষয় নিয়ে।[২] তিনি বেল পরীক্ষাগারে সুদীর্ঘ ৩২ বছর কাজ করে ১৯৮৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন।[৫] তদুপরি, তিনি নিউ জার্সির উচ্চশিক্ষা বোর্ডেও কাজ করেন।[২] দ্য কলেজ অব নিউ জার্সির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে তিনি নারীদের জন্য বিভাগ খোলা ছাড়াও উক্ত প্রতিষ্ঠানকে রাজ্যের শ্রেষ্ঠ হাইস্কুল করার চেষ্টায়ও রত ছিলেন। তিনি উচ্চশিক্ষাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবার জন্য রাজ্যের অনুদানকে উৎসাহিত করবার চেষ্টাও করেন।[১২]

পুরস্কার[সম্পাদনা]

২০০৮ সালে ন্যাশনাল ইনভেন্টরস হল অব ফ্রেমে হুভার স্থান পান।[৩] তিনি ওয়েলসলি কলেজ থেকে পুরস্কার লাভ করেন।[২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Hall of Fame -- induction info"National Inventors Hall of Fame (invent.org)। ২০০৮। ২০১২-০৪-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৬-০৫ 
  2. "এরনা হুভার - জীবনী"ওয়ার্ল্ড অব কম্পিউটার সায়েন্স। ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৬-১৭ 
  3. "National Inventors Hall of Fame"। ৯ জুলাই ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১০ 
  4. অ্যামি এলিস নাট (১৮ জুন ২০০৮)। "Fame calls on 2 titans of telephony in NJ"দ্য স্টার-লেজার। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৬-০৫ 
  5. CALVIN SIMS (৯ মার্চ ১৯৮৭)। "BELL LABS: ADAPTING TO MONOPOLY'S END"দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৬-০৫ 
  6. "Hoover, Erna (Schneider) (1926- )"Smart Computing। ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৬-১৭ 
  7. "Erna Schneider Hoover"Global History Network of IEEE। ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৬-১৭ 
  8. "জীবনী"ফ্যাক্ট মনস্টার। ২০১২-০৬-১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৬-১৭ 
  9. "Erna Schneider Hoover"Maximumpc.com। ২০১২-০৬-১৭। ২০১৫-০৫-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৬-১৭ 
  10. Alpha Doggs (১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮)। "Phone switching pioneers to be inducted in National Inventors Hall of Fame"Network World। ২০১১-০১-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৬-১৭ 
  11. "Inventor of the Week"Massachusetts Institute of Technology। ২০১২। ২০১৪-০২-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৬-১৭ 
  12. "Former TCNJ Board member elected to National Inventors Hall of Fame"দ্য কলেজ অব নিউ জার্সি। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৬-১৭ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]