ইহুদি-বিদ্বেষ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
একজন ইহুদি পৃথিবীকে ঘিরে ধরেছে - ইহুদি-বিদ্বেষী কার্টুন (ফ্রান্স, ১৮৯৮)

ইহুদি-বিদ্বেষ বলতে ইহুদি জাতি, গোষ্ঠী বা ধর্মের প্রতি যেকোনো ধরনের বৈরিতা বা কুসংস্কারকে বোঝানো হয়ে থাকে।[১][২][৩][৪][৫]এধরনের বিদ্বেষের মধ্যে ব্যক্তিগত ঘৃণা থেকে শুরু করে এমনকি সংঘবদ্ধ জাতি-নিধনও পড়ে। ইংরেজিতে একে বলা হয় এন্টি-সেমিটিজম (Anti-Semitism) ,যার অর্থ দাঁড়ায় সেমিটীয় সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ।[৬][৭] সেমিটীয় একটি বৃহৎ ভাষাভাষী গোষ্ঠী যার মধ্যে হিব্রুভাষী ছাড়াও আরবিভাষীরাও অন্তর্ভুক্ত। তথাপি অ্যান্টি-সেমিটিজম ইহুদি-বিদ্বেষ বোঝাতেই ব্যবহৃত হয়। ইহুদি-বিদ্বেষের ইতিহাস প্রাচীন হলেও এটি চরম আকার ধারণ করে হিটলার-শাসিত জার্মানিতে

ধর্মীয় বিদ্বেষ[সম্পাদনা]

উনিশ শতকের পূর্বে ইহুদি-বিদ্বেষ ছিল মূলত ধর্ম-ভিত্তিক। খ্রিস্টানরা ইহুদি ধর্মের ব্যাপারে নিজস্ব ধর্মীয় ব্যাখ্যা ও দৃষ্টিকোণের আলোকে এই বিদ্বেষভাব পোষণ করতো। তৎকালীন খ্রিস্টান-শাসিত ইউরোপে বৃহত্তম সংখ্যালঘু ধর্মীয়-গোষ্ঠী হিসেবে ইহুদিরা বিভিন্নসময় ধর্মীয় বিদ্বেষ, নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হত। ধর্মীয় নির্যাতনের মধ্যে ছিল - ধর্ম-পালনে বাধা, জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ, দেশ থেকে বিতাড়ন, ইত্যাদি।

জাতিগত বিদ্বেষ[সম্পাদনা]

শিল্প-বিপ্লবের পর ইহুদিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়। এসময় ইউরোপে জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটলে ইহুদিদের প্রতি জাতিগত বিদ্বেষ দেখা দেয়। জাতিতত্ত্ব সংক্রান্ত অপ-বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এই বিদ্বেষে ইন্ধন যোগায়। ইহুদিরা অনার্য ও আর্যদের চেয়ে হীন, এমন মতবাদ দেয়া হয় এবং জাতিগতভাবে তাদের বিরুদ্ধে অর্থলিপ্সা, শ্রমবিমুখতা, ধূর্ততা, গোত্রপ্রীতি ও দেশপ্রেমহীনতার অভিযোগ দেয়া হয়।

তৎকালীন ইউরোপীয় বুদ্ধিজীবী সমাজ ধর্মভিত্তিক বিদ্বেষকে অসংস্কৃত আচরণ মনে করলেও এই বংশানুগতিক অপতত্ত্বকে 'বৈজ্ঞানিক' তত্ত্ব মনে করে এধরনের জাতিগত সংস্কারের যথার্থতা স্বীকার করে নেয়।

নাৎসিদের ইহুদি-নিধনযজ্ঞ[সম্পাদনা]

এই জাতিগত বিদ্বেষ ভয়াবহ চরম আকার ধারণ করে বিংশ শতকের তৃতীয় দশকে, হিটলারের নাৎসি দল-শাসিত জার্মানিতে। ইহুদি-বিরোধী এই জাতিতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের দায়ও ইহুদিদের উপর চাপিয়ে দিয়ে তারা বিভিন্ন অত্যাচার এবং নিধনমূলক আইন-কানুন প্রণয়ন করে। ১৯৩৯ সালে হিটলার বিভিন্ন দেশ আক্রমণের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটালে ইউরোপে ইহুদি নির্যাতন ও নিধন চরমরূপ নেয়। তারা আইন করে ইহুদিদের নিজস্ব নিবাস অধিগ্রহণ করে বন্দী-নিবাসে প্রেরণ করে এবং পর্যায়ক্রমে হত্যা করে। প্রায় ৬০ লক্ষ ইহুদিকে হত্যা করা হয়; এ ঘটনা 'হলোকস্ট' (Holocaust) নামে পরিচিত। নব্য ইহুদি-বিদ্বেষীরা এই নিধনযজ্ঞের ঘটনাকেও সন্দেহ বা অস্বীকার করে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "anti-Semitism"Oxford Dictionaries - English। ৮ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০১৮ 
  2. "anti-Semitism"Merriam-Webster Dictionary। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০১৮ 
  3. Lewis, Bernard. "The New Anti-Semitism" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে, The American Scholar, Volume 75 No. 1, Winter 2006, pp. 25–36. The paper is based on a lecture delivered at Brandeis University on 24 March 2004.
  4. Johnson, Paul (১৯৮৮)। A History of the Jews। HarperPerennial। পৃষ্ঠা 133। 
  5. "Anti-Semitism"। Encyclopædia Britannica। ২০০৬। 
  6. "United Nations Official Document"www.un.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৯ 
  7. Nathan, Julie (৯ নভেম্বর ২০১৪)। "2014 Report on Antisemitism in Australia" (পিডিএফ)Executive Council of Australian Jewry। পৃষ্ঠা 9। ১২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০১৮ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]