ইন্দ্রিয়গোচর ঘটনা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দেশলাই কাঠির দহন একটি পর্যবেক্ষণযোগ্য সংঘটন বা ঘটনা, তাই এটি একটি দৃষ্টিগোচর ঘটনা বা ফেনোমেনন

ইন্দ্রিয়গোচর ঘটনা বা পরিঘটনা [(ইংরেজি): Phenomenon] বলতে পর্যবেক্ষণযোগ্য ঘটনাকে বোঝায়।[১] দর্শনে পরিভাষাটি এ অর্থে প্রথম ব্যবহৃত হয় ইমানুয়েল কান্ট এর হাত ধরে, যিনি ফেনোমেনন বা ইন্দ্রিয়গোচর ঘটনাকে নোমেনন ((ইংরেজি): Noumenon) অর্থাৎ যা সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা যায় না এর সাথে তুলনা করেন। ফেনোমেনন এবং নোমেনন দুটি পরস্পর সম্পর্কিত পরিভাষা। এই সংক্রান্ত দর্শনে কান্ট গটফ্রিড উইলহেলম লিবনিৎজ দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। এরও অনেক পূর্বে, প্রাচীন গ্রিক পাইরোবাদী দার্শনিক সেক্সটাস এমপিরিকাসও ফেনোমেনননোমেনন এর মতো ব্যবহারিক পরিভাষাগুলো ব্যবহার করেছিলেন।

সাধারণ ব্যবহার[সম্পাদনা]

সাধারণ ব্যবহারে, ইন্দ্রিয়গোচর ঘটনা বা ফেনোমেনন বিশেষ কোনো ঘটনা বোঝাতেই ব্যবহৃত হয়। শব্দটি সাধারণত এমন ঘটনা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় যেটি সাধারণ ব্যাখ্যার বাইরে অথবা পর্যবেক্ষককে বিভ্রান্ত করে। ডিকশনারি অব ভিজ্যুয়াল ডিসকোর্স অনুসারে:[২]

সাধারণ ভাষায় ফেনোমেনন (বহুবচনে ফেনোমেনা) বলতে উল্লেখযোগ্য এবং যাচাইযোগ্য কোনো ঘটনাকে বোঝায়, যা সাধারণত কোনো অপ্রত্যাশিত বা অস্বাভাবিক ঘটনা, ব্যক্তি বা তথ্য: যার বিশেষ তাৎপর্য আছে বা অন্য কোনো কারণে উল্লেখযোগ্যতা আছে।

দর্শন[সম্পাদনা]

আধুনিক দর্শনে, ইন্দ্রিয়গোচর ঘটনা বা ফেনোমেনন শব্দের অর্থ সেসকল জিনিস যা অনুভূতির দ্বারা উপলব্ধি করা যায় এবং মন দ্বারা ‘‘অন্যান্য ঘটনা (ফেনোমেনন) এবং যা ঘটনা নয় (নোমেনন)’’ থেকে পার্থক্য সূচিত করে বিশ্লেষণ করা যায়। অন দ্য ফর্মস অ্যান্ড প্রিন্সিপলস অব দ্য সেন্সিবল অ্যান্ড ইন্টেলিজিবল ওয়ার্ল্ড এ, ইমানুয়েল কান্ট (১৭৭০) তার উদ্বোধনী প্রবন্ধে তত্ত্ব দিয়েছেন যে, মানুষের মন যৌক্তিক জগতে সীমাবদ্ধ এবং তাই মানুষ কোনো ঘটনাকে এর দৃশ্যমান উপস্থিতির ভিত্তিতে ব্যাখ্যা করতে এবং বুঝতে পারে। তিনি লিখেছিলেন, মানুষ কেবল তাদের ইন্দ্রিয়ের আওতায় কিছু অনুভব করতে পারে, কিন্তু কোনো বস্তুকে ঐ বস্তু হিসেবে প্রকৃতপক্ষে অনুভব করতে পারে না।[৩] সুতরাং, ফেনোমেনন বা "দৃষ্টিগোচর ঘটনা" শব্দটি পর্যবেক্ষণ এবং তদন্তের যোগ্য যেকোন প্রক্রিয়া বা ঘটনাকে বোঝায়, যার স্বতন্ত্র অথবা অস্বাভাবিক কোনো গুরুত্ব আছে।[২]

বিজ্ঞান[সম্পাদনা]

পৃথিবী (বামে) ও ওজনশূন্য পরিবেশ যেমন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন এ (ডানে) একটি দীপ্তিমান মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের তুলনা।
একই ঘটনা দহন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, তবে ভিন্ন আকারবর্ণও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ক্লাউড চেম্বার ঘটনা (ফেনোমেনন)। বিজ্ঞানীরা অনুকল্পের সত্যতা যাচাই বা কখনো কখনো তত্ত্ব বাতিল করতে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ঘটনা বা ফেনোমেনন এর সাহায্য নেন। আরও দেখুন: এর অ্যানিমেটেড রূপ

বৈজ্ঞানিক ব্যবহারে, ইন্দ্রিয়গোচর ঘটনা হল যে কোনো ঘটনা যা পর্যবেক্ষণযোগ্য, যাতে তথ্য পর্যবেক্ষণ, লিপিবদ্ধকরণ বা সংকলনের জন্য যন্ত্রের ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত থাকে। বিশেষ করে পদার্থবিদ্যায়, একটি ঘটনার অধ্যয়নকে পদার্থ, শক্তি বা সময়ের সাথে সম্পর্কিত পরিমাপ হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে, যেমন আইজাক নিউটনের চাঁদের কক্ষপথ এবং মহাকর্ষ পর্যবেক্ষণ; বা পেন্ডুলামের গতি সম্পর্কে গ্যালিলিও গ্যালিলির পর্যবেক্ষণ।[৪]

প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে, একটি ইন্দ্রিয়গোচর ঘটনা হল একটি পর্যবেক্ষণযোগ্য ঘটনা বা সত্য। প্রায়শই শব্দটি একটি নির্দিষ্ট ঘটনার পেছনের কারণ উপেক্ষা করে ঘটনাটিকে বর্ণনা করতে ব্যবহার করা হয়। এরূপ ভৌত ঘটনার উদাহরণ হলো: চাঁদের কক্ষপথ বা একটি পেন্ডুলামের দোলন।[৪]

আবার যান্ত্রিক ঘটনা বা মেকানিক্যাল ফেনোমেনন হল বস্তুর ভারসাম্য বা গতির সাথে সম্পর্কিত একটি ভৌত ঘটনা।[৫] যার উদাহরণ হিসেবে নিউটনের দোলনা, ইঞ্জিন এবং ডাবল পেন্ডুলামের কথা বলা যায়।

সমাজবিজ্ঞান[সম্পাদনা]

গোষ্ঠীগত ঘটনা বা গ্রুপ ফেনোমেনন এ একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বতন্ত্র সত্ত্বা, সাধারণত জীব এবং বিশেষ করে মানুষের আচরণ আলোচিত হয়। একক সত্ত্বার আচরণ প্রায়শই একটি গোষ্ঠীগত পরিবেশে বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়, এবং একটি গোষ্ঠীরও নিজস্ব আচরণ থাকতে পারে যা দলগত প্রবণতার কারণে একক সত্ত্বার মধ্যে দেখা যায় না।

সামাজিক ঘটনা বা সোশ্যাল ফেনোমেনন বিশেষভাবে জীব এবং মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং এর ইঙ্গিত সরাসরিভাবে শব্দটিতে নিহিত। একটি গোষ্ঠীর বিশেষ মনোভাব বা ঘটনা ঐ গোষ্ঠীর বাইরে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে, যা বৃহত্তর সমাজ দ্বারা গ্রহণযোগ্য হয়, অথবা বিভ্রান্তিকর হিসাবে দেখা হয়, শাস্তি দেওয়া হয় বা এড়িয়ে যাওয়া হয়।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Phenomenon"The Columbia Encyclopedia। ২০০৮। 
  2. "Phenomenon/Phenomena"Dictionary of Visual Discourse: A Dialectical Lexicon of Terms। ২০১১। 
  3. Kant, Immanuel. [1770] 2019. On the Form and Principles of the Sensible and Intelligible World, translated by W. J. Eckoff (1894). – via Wikisource.
  4. Bernstein, Jeremy (১৯৯৬)। A Theory for Everything। New York: Copernicus। 
  5. "Mechanical Phenomenon"AudioEnglish.org। Tudorancea Media Network। ২৩ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মে ২০১১ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]