আল দা'আসা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আল দা'আসা
الدعسة
আল দা'আসা কাতার-এ অবস্থিত
আল দা'আসা
আল দা'আসা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের আনুমানিক অবস্থান
অবস্থানপশ্চিম কাতার
স্থানাঙ্ক২৫°২২′১০″ উত্তর ৫০°৪৮′৩২″ পূর্ব / ২৫.৩৬৯৪৪° উত্তর ৫০.৮০৮৮৯° পূর্ব / 25.36944; 50.80889
ধরনজনবসতি
ইতিহাস
সময়কালনব্যপ্রস্তরযুগ
সংস্কৃতিউবাইদ
স্থান নোটসমূহ
খননের তারিখ১৯৬১
১৯৭৮
প্রত্নতত্ত্ববিদহোলগার ক্যাপেল
বেট্রিস ডে কার্ডি

আল দা'আসা (আরবি: دعسة) কাতারের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এটি কাতারে উবাইদ যুগের সবচেয়ে বড় নিদর্শন। ১৯৬১ সালে একদল ডেনীয় এই প্রত্নস্থলটি আবিষ্কার করেন।[১]

ধারণা করা হয় যে, একদল মৎস্য শিকারীরা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় স্থানটিতে বসবাস করত যারা নিয়মিত পরিদর্শন করত।[২] ঘটনাস্থলে প্রাপ্ত চাঁছনি, ছেদনী, ব্লেড এবং তীরের ফলা প্রভৃতি ধারালো সরঞ্জাম এবং মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত প্রায় ষাটটি চুল্লীই এর প্রমাণ। এছাড়াও, আগুনের গর্তগুলোতে উবাইদ যুগের বেশ কিছু রঙিন মৃৎপাত্রের টুকরো এবং একটি কার্নেলিয়ানের গুটি পাওয়া গেছে, যা থেকে ধারণা করা হয় যে, বিদেশের সাথেও তাদের যোগাযোগ ছিল।[৩]

১৯০০ এর দশকের মাঝামাঝিতে জাবালে দুখানের উত্তরে তেল আবিষ্কৃত হলে দুখান তেল ক্ষেত্রের কর্মীদের জন্য অবকাঠামো ও পরিষেবা সরবরাহ করতে শিল্প শহর দুখান তৈরি করা হয়েছিল। দুখানে নিযুক্ত তেল শ্রমিকদের জন্য আল দা'আসায় একটি গ্রাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[৪]

নামকরণ[সম্পাদনা]

কাতারের পৌরসভা ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে আরবি ভাষায় দা'আসা শব্দটি ফুটপাথ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। স্থানটিতে প্রাচীন পায়ে হাঁটার পথ পাওয়া গিয়েছে বলে এর নামকরণ করা হয়েছে আল দা'আসা[৫]

প্রত্নতত্ত্ব[সম্পাদনা]

আবিষ্কার[সম্পাদনা]

১৯৬০ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত কাতারের বিভিন্ন স্থানে ডেনিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ হোলার ক্যাপেলের নেতৃত্বে খনন কার্য পরিচালনা করা হয়। এই স্থানগুলোর মধ্যে আল দা'আসা ছিল সবচেয়ে বড়। এটি ১৯৬১ সালে আবিষ্কৃত হয়। বিস্তারিত গবেষণার জন্য সেখান থেকে বেশ কয়েকটি পোড়া মাটির দ্রব্য সংগ্রহ করা হয়। এর কিছুদিনের মধ্যেই একটি ব্রিটিশ খননকারী দল স্থানটির সন্ধান পায়। তারা পোড়ামাটির জিনিসগুলোকে উবাইদ যুগে তৈরি বলে চিহ্নিত করেন।[৬]

খনন[সম্পাদনা]

হোলার ক্যাপেলের নেতৃত্বে ১৯৬১ সালের খননকার্যের পর ১৯৭৮ সালে বেট্রিস ডি কার্ডির নেতৃত্বে একটি দল প্রত্নস্থলটিতে আরেকবার খননকার্য পরিচালনা করে।[৬]

প্রথম খননকালে স্থানটিতে কোয়ার্ন পাথরের টুকরো, চুল্লী এবং উবাইদ মৃৎশিল্পের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। এছাড়াও সেখানে একটি কার্নেলিয়ানের গুটি এবং লাল রঙের অ-উবাইদ মাটির পাত্রের তিনটি টুকরা পাওয়া যায়। মৃৎপাত্রটি আরব উপকূলে নির্মিত বলে মনে করা হয়।[৩][৭]

পেশা[সম্পাদনা]

আল দা'আসায় উর অঞ্চলের জেলে ও বণিকগণ বসবাস করতেন বলে মনে করা হয়। সেখান থেকে আবিষ্কৃত পাথরের হাতিয়ারগুলো উবাইদ সময়কালে আরবের অন্যত্র ব্যবহৃত সরঞ্জামগুলোর অনুরূপ। কিন্তু দক্ষিণ মেসোপটেমিয়ায় ব্যবহৃত সরঞ্জামগুলোর সাথে এর খুব একটা মিল নেই।[৮]

খননকারীরা সেখানে বেশ কিছু পোস্টহোল লক্ষ্য করেছিলেন, যা চুল্লীর কাজে ব্যবহৃত হত।[৯] এই চুল্লীর সংখ্যা দেখে অনুমান করা হয় যে, পেশাগত সময়কালে এখানে গণ ক্রিয়াকলাপ পরিচালনার জন্য বেশ একটি বড় জনসমাগম হত, যাতে প্রতিটি পরিবার আলাদা আলাদা অগ্নিকুণ্ডে রান্না করত। আবার এমনও হতে পারে যে, প্রচুর পরিমাণে মাছ শুকানো ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য এই চুল্লীগুলো তৈরি করা হয়েছিল।[৩]

সাম্প্রতিক ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯৫৬ সালে দুখান শিল্প নগরীতে নিযুক্ত তেল শ্রমিকদের আবাসনের জন্য সেখানে একটি গ্রাম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ১৯৯০ সালে সেখানে প্রায় ৭০টি পরিবার ছিল। তেল শিল্প ছাড়াও গ্রামটির কিছু বাসিন্দা মাছ ধরে সেগুলো দোহায় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।[৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "History of Qatar" (পিডিএফ)www.qatarembassy.or.th (ইংরেজি ভাষায়)। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কাতার। লন্ডন: স্ট্যাসি ইন্টারন্যাশনাল, ২০০০। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০১৫ 
  2. রাইস, মাইকেল (১৯৯৪)। Archaeology of the Arabian Gulf (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। পৃষ্ঠা ২০৬, ২৩২–২৩৩। আইএসবিএন 978-0415032681 
  3. মাসরী, আবদুল্লাহ (১৯৯৭)। Prehistory in Northeastern Arabia: The Problem of Interregional Interaction (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। পৃষ্ঠা ৯৪। আইএসবিএন 978-0710305367 
  4. ফাহাদ আবদুল রহমান হামাদ আল-থানি (১৯৯২)। "The Spatial Impact of the Hydrocarbon Industry on Land and Sea Use in Qatar" (পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। দুরহাম বিশ্ববিদ্যালয়; দুরহাম ই-থিসিস। পৃষ্ঠা ১৪৯। 
  5. "GIS Portal" (ইংরেজি ভাষায়)। পৌরসভা ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। ১৮ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  6. হেনরিকসন, এলিজাবেথ এফ.; থিউসেন, ইনগলফ (১৯৮৯)। Upon this Foundation. - The 'Ubaid Reconsidered (ইংরেজি ভাষায়)। Museum Tusculanum Press। পৃষ্ঠা ৪১১। 
  7. Casey, Paula; Vine, Peter (১৯৯১)। The Heritage of Qatar (ইংরেজি ভাষায়)। ইমেল পাবলিশিং। পৃষ্ঠা ১২আইএসবিএন 978-0907151500 
  8. Casey, Paula; Vine, Peter (১৯৯১)। The Heritage of Qatar (ইংরেজি ভাষায়)। ইমেল পাবলিশিং। পৃষ্ঠা ১৪আইএসবিএন 978-0907151500The stone-tools unearthed so far at al Da'asa and other Ubaid sites are identical with those of the Ubaid period in Arabia and bear no relationship with the tools of southern Mesopotamia; thus causing experts difficulty in explaining why merchants or fishermen from Ur, encamped at al Da'asa, would not have used and discarded some of their own stone-tools or weapons. 
  9. আবদুল নাইম, মুহাম্মাদ (১৯৯৮)। Qatar Prehistory and Protohistory from the Most Ancient Times (Ca. 1,000,000 to End of B.C. Era) (ইংরেজি ভাষায়) (মুদ্রিত সংস্করণ)। হায়দারাবাদ পাবলিশার্স। পৃষ্ঠা ১১৬। আইএসবিএন 9788185492049