বিষয়বস্তুতে চলুন

আমীর হামজা (কাব্যগ্রন্থ)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আমীর হামজা
লেখক
দেশব্রিটিশ ভারত
ভাষাবাংলা, ১৮-১৯ শতকের মিশ্র ভাষা
বিষয়পুথি সাহিত্য
ধরনকবিতা, কাব্য
প্রকাশিত১৬৮৪
মিডিয়া ধরনমুদ্রিত গ্রন্থ (শক্তমলাট)

আমীর হামজা বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের দোভাষী পুথিসাহিত্যের একটি জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ।[] কাব্যটি ১৬৮৪ সালে চট্টগ্রামের কবি আবদুন নবী রচনা করেছেন, এটি ফারসি সাহিত্য দস্তান-ই আমীর হামজার অনুকরণে রচনা করা হয়েছিলো।[] পরে অবশ্য ফকির গরিবুল্লাহসৈয়দ হামজা একই বিষয়ের উপর কাব্য লিখেছেন। আমীর হামজা কাব্যটি ৭০টি পর্ব নিয়ে বিশাল আকারের রচনা সমাপ্ত হয়। ফকির গরিবুল্লাহ কাব্যটির প্রথম অংশ রচনা করেন এবং বাকি অংশ তার শিষ্য সৈয়দ হামজা ১৭৯৪ সালের মধ্যে সমাপ্ত করেন। কিন্তু আবদুন নবীর হস্তলিখিত কাব্য পানডুলিপির আকারেই একটি অঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে যায়। কাব্যটি কলকাতার বটতলার কমদামী ছাপাখানায় এটি মুদ্রিত হয়েছিলো। ফলে অধিক প্রচার হয় এবং তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এইজন্য কাব্যটিকে বটতলার পুথি বলা হতো। কাব্যটিতে ছন্দে ছন্দে বীর যোদ্ধা আমীর হামজার যুদ্ধ বিজয়ের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে।

প্রেক্ষাপট

[সম্পাদনা]

কাব্যটির কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম ছিলো আমীর হামজা (হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব), যিনি মুহাম্মদ (স.) এর পিতৃ সমতুল্য ছিলেন। কাব্যটি হামজার সাথে ইরানের রাজা নওশেরোয়ানের যুদ্ধের বর্ণনায় পরিপূর্ণ ছিলো। এভাবে কাব্যটিতে অনেক রাজার সাথে যুদ্ধের বর্ণনা করা হয়েছে। কাব্যটিতে যুদ্ধের প্রাধান্য থাকার কারণে ‘আমীর হামজার জঙ্গনামা’ নামেও পরিচিত হয়ে উঠেছিলো। সকল রাজাই হামজার নিকটে পরাজিত হয়েছে এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। ফলে হামজা তাদেরকে দেশ শাসনের অনুমতি দিয়েছে। কাব্যটিতে হামজার যুদ্ধবিগ্রহ ও শৌর্যবীর্যের পাশাপাশি প্রেম, ভালোবাসা ও সম্ভোগেরও নানা বর্ণনা করা আছে। এরমধ্যে আমীর হামজা ও মেহেরনিগারের প্রেমের কাহিনি চমকপ্রদ করে বর্ণনা করা হয়েছে। মেহেরনিগার অসামান্য রূপের একজন নারী ছিলেন। হামজা তার সাথে দেখা করার জন্য একটি সুড়ঙ্গপথ বেছে নিয়েছিলেন, তবে কোতোয়ালী নামক ব্যক্তির নিকট ধরা পড়ে নানারকম দুঃখকষ্ট ভোগ করেন। অবশেষে হামজা ও মেহেরনিগারের মধুর মিলনের মধ্য দিয়ে কাব্যটির সমাপ্তি ঘটে।[]

রচনাশৈলী

[সম্পাদনা]

কাব্যটিতে নানারকম লৌকিক, অলৌকিক ব্যপার, ঐতিহাসিক ঘটনা, কাল্পনিক ব্যপারের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। এতে প্রধান ও অপ্রধান চরিত্রের সমাবেশে কাহিনী ঘনীভূত করা হয়েছে, এতে করে কাব্যটি বিশালতা লাভ করে একটা মহাকাব্যের রূপ লাভ করেছে। কাব্যটি আঠারো ও উনিশ শতকে মিশ্র ভাষায় রচিত হয়েছে, জৈগুনের পুথি, সোনাভান, হাতেম তাই এসব কাব্যতেও একই ধরণের ভাষার প্রয়োগ হয়েছিলো। আসলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে মুসলমানগণ বীর পুরুষের গল্প, বীর রমণীর গল্প, মুসলমানদের যুদ্ধ ও বীরত্বের কাহিনী শুনতে পছন্দ করতো। মুসলমানদের বিজয়ের কাহিনিতে তারা এক প্রকার মানসিক আনন্দ ও আত্মপ্রসাদ লাভ করত। এসব কাব্যে পাঠক ও শ্রোতা ভাষা ও রচনাশৈলীর চেয়ে বিষয়গৌরবের কাহিনির প্রতি বেশি মনোযোগ দিতো। তৎকালীন সময়ে বাংলার প্রায় সকল মুসলমান মোহাচ্ছন্নের মতো এসব কাব্য শ্রবন ও পাঠ করতো। এসব বিজয় কাব্যে মুসলমানগন অতীত ঐতিহ্য অবগাহন করে নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখতো।

  1. জামিল, মাহবুব (১৭ ডিসেম্বর ২০২১)। "পুঁথি সাহিত্যে মুসলমানদের অবদান"যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২৪ 
  2. "আমীর হামজা - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৫ 
  3. হাসান, শহিদুল (২৯ জুলাই ২০১৮)। "শেরবাজ খানের "ফাতেমার সুরতনামা" পাঠোদ্ধার ও ঐতিহাসিক মূল্যায়ন" (পিডিএফ)রিসার্চগেইট। পৃষ্ঠা ১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২৪