আবুল কাসেম (রাজনীতিবিদ)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আবুল কাসেম
জন্ম(১৮৭২-০২-০২)২ ফেব্রুয়ারি ১৮৭২
মৃত্যু১০ অক্টোবর ১৯৩৬(1936-10-10) (বয়স ৬৪)
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত
মাতৃশিক্ষায়তনপ্রেসিডেন্সি কলেজ
পেশারাজনীতি, সাংবাদিকতা
রাজনৈতিক দলভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস,
ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন
বেঙ্গল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন
আন্দোলনবঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন,
খিলাফত আন্দোলন
সন্তানআবুল হাশিম[১]
পিতা-মাতাআবদুল মজিদ (পিতা)
আত্মীয়খান বাহাদুর গোলাম আসগর (দাদা),
নবাব আবদুল জব্বার (চাচা),
খান বাহাদুর আবদুল মোমেন (চাচাত ভাই)

আবুল কাসেম (২ ফেব্রুয়ারি ১৮৭২ - ১০ অক্টোবর ১৯৩৬) ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের একজন বাঙালি রাজনীতিবিদ।[১]

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

আবুল কাসেম ১৮৭২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির বর্ধমান জেলার কাশিয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আবদুল মজিদ সরকারের আবগারি শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তা ছিলেন। তার দাদা খান বাহাদুর গোলাম আসগর ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিচার বিভাগের প্রধান সদর আমিন।[১]

তিনি ১৮৯৪ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন।[১]

রাজনীতি[সম্পাদনা]

আবুল কাসেম ১৮৯৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন। ১৮৯৬ সালে কলকাতায় কংগ্রেসের ১২তম বার্ষিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। তিনি এই অধিবেশনে কলকাতার প্রতিনিধি ছিলেন।[১]

তার চাচা নবাব আবদুল জব্বার ভোপালের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ১৮৯৭ থেকে ১৯০২ সাল পর্যন্ত তিনি তার ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯০৪ সালে তিনি কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটি এবং সাংবিধানিক কমিটির সদস্য হন। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী মুসলিমদের মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন এবং বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন।[১]

কলকাতায় গঠিত ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন নামক সংগঠনে তিনি বাংলা থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। সংগঠনের সভাপতি ছিলেন মাদ্রাজের সৈয়দ মুহাম্মদ বাহাদুর। ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সেক্রেটারি ছিলেন যথাক্রমে মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ এবং ব্যরিস্টার আবদুর রসুল। এছাড়া আবুল কাসেম বেঙ্গল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সেক্রেটারি ছিলেন। আবদুর রসুল ছিলেন এর প্রেসিডেন্ট। আবুল কাসেম ছিলেন বর্ধমান মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা।[১]

১৯১৩ সালে তিনি বঙ্গীয় আইন পরিষদে বর্ধমান-বাঁকুড়া থেকে নির্বাচিত হন। ১৯১৯ সালে সংঘটিত জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড এবং রাউলাট আইনের প্রতিবাদে তিনি ১৯২০ সালে আইন পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন।[১]

খিলাফত আন্দোলন শুরু হওয়ার পর তিনি ১৯২০ সালে আন্দোলনে যোগ দেন এবং খিলাফত কমিটির সদস্য হন। ১৯২০ সালে মাওলানা মুহাম্মদ আলির নেতৃত্বে ইউরোপে প্রেরিত প্রতিনিধি দলে তিনিও সদস্য ছিলেন।[১]

আন্দোলনের পরে তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করেন। ১৯১৯ সালে প্রণীত মন্টেগু চেমসফোর্ড‌ আইন অনুযায়ী গঠিত ভারতীয় আইন পরিষদে (১৯২১-১৯২৩) তিনি সদস্য ছিলেন। ১৯২৪-১৯২৬ সালে তিনি বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। ১৯২৭ সালে তিনি নির্বাচিত সদস্য হিসেবে পুনরায় সদস্য হন। আমৃত্যু তিনি এই পদে ছিলেন।[১]

সাংবাদিকতা[সম্পাদনা]

সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী‌র দ্য বেঙ্গলি পত্রিকায় আবুল কাসেম জীবনের প্রথমদিকে সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯০৬ সালে তিনি ও ব্যারিস্টার আবদুর রসুল দ্য মোসলমান প্রকাশ করেন। তিনি পত্রিকার প্রথম সম্পাদক হন। এছাড়াও তিনি মুসলিম ক্রনিকল, মুসলিম আউটলুক পত্রিকার সাথে যুক্ত ছিলেন। সাপ্তাহিক পত্রিকা নবযুগ প্রকাশের সময় তিনি এ. কে. ফজলুল হককে সহায়তা করেছেন। তার প্রকাশিত ও সম্পাদিত পত্রিকার মধ্যে আরো রয়েছে প্রোগ্রেস, মুসলিম স্ট্যান্ডার্ড এবং সাপ্তাহিক মোসলেম বাণী পত্রিকা।[১]

সমাজসেবা[সম্পাদনা]

বন্যাপ্রবণ বর্ধমান, বীরভূম ও বাঁকুড়া জেলার ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় আবুল কাসেম সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন। দামোদর, অজয় ও কুনু নদীর প্রভাবে এসব অঞ্চলে প্রায় প্রতিবছর বন্যা দেখা দিত। রাস্তা, বিনামূল্যের স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণে তিনি সহায়তা করেছেন। বর্ধমান টাউন স্কুল তার উদ্যোগে নির্মিত হয়।[১]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

আবুল কাসেম ১৯৩৬ সালের ১০ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]