আবদুল হাফিজ পীরজাদা
আবদুল হাফিজ পীরজাদা عبدالحفیظ پیرزادہ | |
---|---|
১২তম অর্থ, রাজস্ব ও অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ৩০ মার্চ ১৯৭৭ – ৫ জুলাই ১৯৭ | |
রাষ্ট্রপতি | ফজল ইলাহি চৌধুরী |
প্রধানমন্ত্রী | জুলফিকার আলী ভুট্টো |
পূর্বসূরী | রানা হানিফ খান |
উত্তরসূরী | গোলাম ইসহাক খান |
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ১৪ আগস্ট ১৯৭৩ – ৩০ মার্চ ১৯৭৭ | |
রাষ্ট্রপতি | ফজল ইলাহি চৌধুরী |
প্রধানমন্ত্রী | জুলফিকার আলী ভুট্টো |
পূর্বসূরী | মাহমুদ আলী কাসুরি |
উত্তরসূরী | শরীফউদ্দিন পীরজাদা |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | সুক্কুর, ব্রিটিশ ভারত | ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৫
মৃত্যু | ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রেডিং, বার্কশায়ার, ইংল্যান্ড, যুক্তরাজ্য | (বয়স ৮০)
সমাধিস্থল | সুক্কুর, পাকিস্তান |
রাজনৈতিক দল | পাকিস্তান পিপলস পার্টি (১৯৬৮–১৯৮০) |
পেশা | আইনজীবী |
আবদুল হাফিজ পীরজাদা (উর্দু: عبدالحفیظ پیرزادہ; ২৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৩৫ - ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫) ছিলেন একজন পাকিস্তানি আইনজীবী, আইনতাত্ত্বিক ও রাজনীতিবিদ, যিনি ১৯৭১ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর অধীনে তথ্য মন্ত্রী, আইন মন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রী হিসাবে বিভিন্নভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আইনমন্ত্রী হিসেবে তিনি ১৯৭৩ সালে পাস করা পাকিস্তানের সংবিধানের একজন প্রধান খসড়া লেখক হিসেবে কৃতিত্ব লাভ করেন।
লিংকনস্ ইনে ব্যারিস্টার হিসেবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পীরজাদা পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে নির্বাচিত হয়ে ভুট্টো সরকারে বেশ কয়েকটি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালে জেনারেল জিয়া-উল-হক কর্তৃক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরে পীরজাদা ভুট্টোকে হত্যার অপরাধমূলক বিচারে তার প্রতিরক্ষায় ব্যর্থভাবে সহায়তা করেন। জিয়া শাসনামলে কারারুদ্ধ হওয়ার আগে তিনি সংক্ষিপ্তভাবে পিপিপির নেতৃত্ব দেন, অবশেষে বেনজীর ভুট্টোর সাথে মতপার্থক্যের কারণে দল ত্যাগ করেন ও রাজনীতি থেকে অবসর নেন।
ব্যক্তিগত পেশায় ফিরে গিয়ে পীরজাদা দেশের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীদের একজন হয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেটের পদে উন্নীত হন।[১] তিনি ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে রেডিংয়ে রয়্যাল বার্কশায়ার হাসপাতালে চিকিৎসা সংক্রান্ত জটিলতায় মারা যান। তাকে 'পাকিস্তানের সংবিধানের জনক' হিসেবে উল্লেখ করা হয়।[২]
প্রারম্ভিক জীবন ও পরিবার
[সম্পাদনা]ব্রিটিশ ভারতের সিন্ধু প্রদেশের সুক্কুরে জন্মগ্রহণ করা সিন্ধি পরিবারের অন্তর্গত আবদুল হাফিজ পীরজাদা ছিলেন সিন্ধুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আবদুল সাত্তার পীরজাদার ছেলে। তার পরিবার রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছে: তার ভাই আব্দুল মুজিব পাকিস্তান মুসলিম লীগ (এফ)-এর সদস্য।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
সিন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম করার আগে পীরজাদা করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও সাম্যবাদের উত্থানের উপর তার গবেষণামূলক প্রবন্ধে মনোনিবেশ করার পর এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। তারপরে তিনি লন্ডনের লিংকনস্ ইনে ব্যারিস্টার হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন, যেমনটি তার বাবা ও দাদা নিয়েছিলেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
পীরজাদা সিন্ধু হাইকোর্টে নিজ আইনি কর্মজীবন শুরু করেন, যা তখন পশ্চিম পাকিস্তান হাইকোর্ট নামে পরিচিত। তিনি প্রথম সহকর্মী আইনজীবী জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে দেখা করেন যখন দুজনেই করাচিতে ডিঙ্গোমাল রামচাঁদানির আইন চেম্বারে সহযোগী ছিলেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
পিপিপির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ফেডারেল মন্ত্রী
[সম্পাদনা]পীরজাদা ৩০ জন সদস্যের অন্যতম ছিলেন যারা ৩০ নভেম্বর ১৯৬৭ সালে ভুট্টোর নেতৃত্বে পাকিস্তান পিপলস পার্টি সহ-প্রতিষ্ঠা করেন। আইয়ুব খানের সামরিক শাসন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মামলাগুলোয় ভুট্টোর আইনী পরামর্শদাতা হিসাবে পীরজাদা সফলভাবে মামলাগুলো জিতেন ও পার্টিতে আরও বড় ভূমিকা পালন করতে থাকেন।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে পীরজাদা ৬৪,০০০ ভোট পেয়ে মালির থেকে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।[২] ১৯৭১ সালে ভুট্টোকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দেওয়া হলে তিনি তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী রোয়েদাদ খানকে বরখাস্ত করে তার স্থানে পীরজাদাকে নিয়োগ করেন। পীরজাদা এক বছর পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও পান।[৩][৪]
সংবিধানের জনক
[সম্পাদনা]১৯৭৩ সালে ভুট্টোর সাথে মতপার্থক্যের কারণে মাহমুদ আলী কাসুরি পদ থেকে পদত্যাগ করার পর পীরজাদা আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালের সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন ও চূড়ান্তভাবে পাস করার ক্ষেত্রে অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা পালন করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
সরকারের আলোচনা দলের সদস্য
[সম্পাদনা]১৯৭৭ সালে পীরজাদাকে অর্থমন্ত্রী করা হয়। একই বছরে আবার এমএনএ হিসেবে নির্বাচিত পীরজাদা তিন সদস্যের সরকারি দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন যেটি পিএনএ বিরোধী গ্রুপিংয়ের সাথে আলোচনায় ব্যর্থ হয়। পিপিপি-এর নেতৃত্বাধীন সরকার সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে (ফেয়ার প্লে দেখুন) জেনারেল জিয়া-উল-হক, তৎকালীন সেনাপ্রধান কর্তৃক উৎখাত হওয়ার আগে সেই সময়ে তিনি তিন মাসের কিছু বেশি সময় ধরে তিনি পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ছিলেন।[৫]
অভ্যুত্থান ও গ্রেপ্তার
[সম্পাদনা]১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭-এ পীরজাদা ড. হাসান ও ভুট্টোর সাথে সামরিক পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হন,[৫] ১৯৭৮ সালে তিনি মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার পর পীরজাদা সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ আবেদনের আবেদন করেন। এরপর তিনি মুবাশ্বির হাসানের মুক্তির জন্য একটি পিটিশনও দাখিল করেন কিন্তু সামরিক পুলিশ ডক্টর হাসানকে অজ্ঞাত ফৌজদারি অভিযোগে আটকে রাখায় আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করা হয়।[৫]
ভুট্টোর মামলা লড়া
[সম্পাদনা]২৪ ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্ট পর্যালোচনার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে ও তাই আদালত নিজ মূল সিদ্ধান্ত বহাল রাখে।[৫] পীরজাদা তখন বিভক্তির সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ভুট্টোর সাজা কমানোর চেষ্টা করেন।[৫] এ বার যুক্তিতর্ক শুনানির সিদ্ধান্ত নেয় আদালত।[৫] ২৮ ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনী ড. হাসানের কলেজের সমস্ত পাঠ্য বই নিষিদ্ধ করে ও প্রধান বইয়ের দোকান থেকে বইগুলো জোর করে তুলে নেয়।[৫] ১২ মার্চে সুপ্রিম কোর্ট পিটিশনটি পর্যালোচনা শুরু করে এবং পরবর্তী ১২ দিনের জন্য তা করেছিল।[৫] ২৪ মার্চে পীরজাদা কারাগারে ভুট্টোকে জানান যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি মৃত্যুদণ্ডের একটি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন।[৫] পীরজাদা গোপনে রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়া-উল-হকের কাছে একটি পিটিশন দায়ের করেন, যিনি সেই সময়ে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।[৫] পীরজাদা রাষ্ট্রপতিকে "সংবিধানের ধারা ৪৫" ব্যবহার করে সাজাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রূপান্তর করতে বলেন।[৫] তবে জেনারেল জিয়া-উল-হক আবেদনটি অস্বীকার করে বলেন যে সেই আবেদন হারিয়ে গেছে।[৫] পীরজাদা অবিলম্বে তার কক্ষে ভুট্টোর সাথে দেখা করতে যান যেখানে তিনি ভুট্টোকে আবেদনের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেন। এর পরে পীরজাদা একটি সংবাদ সম্মেলন করেন ও গণমাধ্যমকে বলেন যে ভুট্টো মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত ও করুণার জন্য আর আবেদন করবেন না।[৫]
গণতন্ত্রপন্থী সক্রিয়তা
[সম্পাদনা]১ অক্টোবর ১৯৮২-এ পীরজাদাকে জিয়া-উল-হকের ইসলামিকরণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়, যেখানে তিনি নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের দাবি করেন।[৫] পিপিপি সরকারের উৎখাত ও জেনারেল মুহাম্মদ জিয়া-উল-হক কর্তৃক সামরিক আইন জারি করার পর পীরজাদা নুসরাত ও বেনজীর ভুট্টোর সাথে দূরত্ব গড়ে তোলেন। পাকিস্তানে সামরিক শাসনের সময় তিনি যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত ছিলেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ব্যক্তিগত পেশায় ফেরা
[সম্পাদনা]১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে পাকিস্তানে ফিরে আসার পর পীরজাদা সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে আসেন ও সম্পূর্ণরূপে তার আইনি কর্মজীবনে মনোনিবেশ করেন। পীরজাদা ছিলেন পাকিস্তানের অন্যতম সফল আইনজীবী।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
মৃত্যু
[সম্পাদনা]১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ তারিখে পীরজাদা যুক্তরাজ্যের রেডিংয়ের রয়্যাল বার্কশায়ার হাসপাতালে মারা যান। তাকে পীরজাদা পরিবারের পৈতৃক জন্মভূমি সুক্কুরে সমাহিত করা হয়।[৬]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Govt on collision course with SC"। The Nation। ৯ জুন ২০১১। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১১।
- ↑ ক খ Mansoor, Hasan। "Profile: Abdul Hafeez Pirzada – a lawyer par excellence"। DAWN.com। Dawn News।
- ↑ "Author of 1973 Constitution Abdul Hafeez Pirzada passes away"। The Express Tribune (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৫-০৯-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-০৩।
- ↑ "Renowned lawyer Hafeez Pirzada is no more"। www.thenews.com.pk (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-০৩।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ Zaman, Fakhar। "Pakistan Peoples Party – Past and Present" (পিডিএফ)। Fakhar Zaman। Fakhar Zaman and Pakistan Peoples Party's Media Research Cell Directorate। ১৫ এপ্রিল ২০১০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০১৬।
- ↑ "Prominent law expert Abdul Hafeez Pirzado passes away"। The Sindh Times। ২০১৫-০৯-০২। ২০১৬-০৩-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৫-১৪।
রাজনৈতিক দপ্তর | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী রানা মোহাম্মদ হানিফ খান |
পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ১৯৭৭ |
উত্তরসূরী গোলাম ইসহাক খান |