বিষয়বস্তুতে চলুন

আপবীতি (কান্ধলভি)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আপবীতি (কান্ধলভি)
প্রচ্ছদ
লেখকমুহাম্মদ জাকারিয়া কান্ধলভি
মূল শিরোনামউর্দু: آپ بیتی‎‎
প্রকাশনার স্থানভারত
ভাষাউর্দু
বিষয়আত্মজীবনী
প্রকাশিত১৯৭০
মিডিয়া ধরনশক্তমলাট
পৃষ্ঠাসংখ্যা১৫০০
আইএসবিএন ৮১৭১০১২৪৮৫ ইংরেজি সংস্করণ
ওসিএলসি২৩৬৮৭৯২০
৯২০.৭১
এলসি শ্রেণীবিপি৮০.জেড২২৭৫ এ৩১৩ ২০০৩

আপবীতি (উর্দু: آپ بیتی‎‎) ভারতীয় দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত মুহাম্মদ জাকারিয়া কান্ধলভির উর্দু ভাষায় রচিত আত্মজীবনী। এটি ১৯৭০ সালে ৭ খণ্ডে প্রকাশিত হয়। আপবীতি একটি ফার্সি শব্দ, যার অর্থ আত্মজীবনী। এটি জাকারিয়া কান্ধলভির গতানুগতিক ধারায় লিখিত কোনো গ্রন্থ নয়। তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে, অবসর সময় কাটানোর জন্য তার অতীত জীবনের ঘটনাবলির স্মৃতিচারণ করে যান এবং একজন লেখক তা লিপিবদ্ধ করেন। এভাবে ১৮ দিনে গ্রন্থটি রচিত হয়। এটি আত্মজীবনী হলেও এর মাধ্যমে আকাবিরদের অবস্থা জানা, আত্মিক সংশোধন , বিশ্বাস ও ইয়াকিনের দৃঢ়তার শিক্ষা রয়েছে। মুহাম্মদ তাকি উসমানি বলেন, ‘এই কিতাবটি প্রত্যেক মুসলমানের জন্য এবং বিশেষ করে আলেমদের জন্য খুবই উপযোগী। এই কিতাবটি হজরত শায়খুল হাদিসের অন্যান্য সকল কিতাব থেকে আলাদা।’[][]

প্রেক্ষাপট

[সম্পাদনা]

এটি জাকারিয়া কান্ধলভির স্বতন্ত্র কোনো রচনা নয়। মুহাম্মদ ইউসুফ কান্ধলভির মৃত্যুর পর মুহাম্মদ সানী নদভী "সাওয়ানেহে ইউসুফী" নামে তার জীবনচরিত রচনা করেন। যেহেতু জাকারিয়া কান্ধলভি ছিলেন ইউসুফ কান্ধলভির উস্তাদ ও মুরব্বি, তাই এ গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়টি ছিল জাকারিয়া কান্ধলভি সম্পর্কে। গ্রন্থটি প্রকাশের পর জাকারিয়া কান্ধলভি যখন তার উপর লিখিত অধ্যায়টি দেখেন তখন পরবর্তী সংস্করণে সংযোজনের জন্য তিনি এর পরিপূরক হিসেবে কিছু ঘটনা লিখে দেন এবং কিছু বিষয়ের সমালোচনাও করেন। পরবর্তীতে বন্ধুদের অনুরোধে তার রচিত স্ট্রাইক গ্রন্থের অংশ হিসেবে "আপবীতি" নামে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটি প্রকাশের পর পাঠকমহল থেকে আপবীতির উপকারিতা ও আকাবিরদের হালত জানার সহায়ক বলে মন্তব্য আসতে থাকে এবং তাকে কলেবর বৃদ্ধি করার এবং তার জীবনের শিক্ষণীয় ঘটনাবলী সংযোজনের চাপ বাড়তে থাকে। বন্ধুদের অনুরোধ সত্ত্বে তিনি হাদিস সংক্রান্ত লেখালেখিকে বেশি গুরুত্ব দেন। তাই এ দিকে সময় দেওয়ার অবসর হয়নি। কিন্তু ১৯৭০ সালে চোখের সমস্যার কারণে তিনি চিকিৎসার উদ্দেশ্যে আলিগড় হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালে তাকে আঠারো দিন থাকতে হয়। হাসপাতালের অবসর সময়গুলোকে কাজে লাগানোর জন্য তিনি তার অতীত জীবনের ঘটনাবলী, আকাবিরদের সাহচর্যের মুহূর্তগুলো স্মৃতিচারণ করে গেছেন আর একজন লেখক তা লিপিবদ্ধ করেছেন। এভাবে আঠারো দিনে এ কিতাবের পাণ্ডুলিপি তৈরি হয়।[][]

বিষয়বস্তু

[সম্পাদনা]

গ্রন্থটির আলোচ্য বিষয়:

  • নিয়তের বিশুদ্ধতা
  • জন্মকাল , ছাত্রজীবন , মাজাহির উলুমের শিক্ষকতা ও রচনাবলি
  • আমার কিছু খারাপ অভ্যাস
  • বিয়ে-শাদী
  • আল্লাহর নেআমত ও অনুগ্রহের বর্ণনা
  • হজ্জের বিবরণ
  • ভারত ভাগ
  • আকাবিরগণের পাঠদান পদ্ধতি
  • ছাত্রদের তারবিয়াত ও তার গুরুত্ব
  • ইলম অর্জনে আকাবিরদের একাগ্রতা
  • মাশায়েখদের কাছে প্রাত্যহিক কাজের গুরুত্ব
  • কুরআন হাদিসের উপর আকাবিরগণের আস্থা
  • আকাবিরগণ নিজেদের প্রাপ্ত বেতন-ভাতাকে অধিক মনে করতেন
  • পরিবেশের প্রভাব
  • আকাবিরদের মেহনত ও মুজাহাদা
  • আকাবিরদের অভাব অনটন
  • আকাবিরগণের তাকওয়া ও খোদাভীতি
  • নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও বিত্তবান লোকদের সাথে সম্পর্ক
  • আকাবিরদের বিনয়
  • আকাবিরগণের মেধা ও ধীশক্তি
  • আকাবিরগণের কারামত
  • সমালোচনার জবাবে আকাবিরগণের প্রতিক্রিয়া
  • আকাবিরগণের পারস্পরিক মতবিরোধ
  • তাসাওউফের বর্ণনা
  • হেজায সফর : ১৩৯৩ হিজরি
  • হিন্দুস্তান সফর : ১৩৯৪ হিজরি
  • সাহারানপুরের ইজতিমা : ১৩৯৪ হিজরি
  • রমযান ১৩৯৪ হিজরি
  • হিন্দুস্তান সফর : ১৩৯৫ হিজরি
  • ১৩৯৫ হিজরির রমযান মাসের রুটিন
  • হিন্দুস্তান থেকে হেজাযে ফেরা
  • হিন্দুস্তান সফর : ১৩৯৬ হিজরি
  • হিন্দুস্তান থেকে হেজায গমন : ১৩৯৬ হিজরি
  • হিন্দুস্তান সফর
  • হিন্দুস্তান থেকে হেজাযে ফেরা

গ্রহণযোগ্যতা

[সম্পাদনা]

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ডেভিস-এর অধ্যাপক এবং আমেরিকান হিস্টোরিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বারবারা ডি. মেটকাফ আপ বীতি গ্রন্থের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, এই আত্মজীবনীতে একজন অনুশাসনপরায়ণ, নীতিবান, বিনয়ী এবং ইসলামী শিক্ষার প্রসারে সম্পূর্ণরূপে নিবেদিত ব্যক্তিত্বের চিত্র উন্মোচিত হয়েছে; যিনি পরিবার, বন্ধু ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।[]

পাকিস্তানের গ্র্যান্ড মুফতি শফি উসমানি গ্রন্থটিকে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সংস্কারমূলক চেতনার বিকাশে একটি মূল্যবান সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করেছেন।[]

অক্সফোর্ড সেন্টার ফর ইসলামিক স্টাডিজ-এর সভাপতি আবুল হাসান আলী হাসানী নদভী এটিকে সাম্প্রতিক ইতিহাসের এক প্রাণবন্ত উপস্থাপনা ও প্রত্যক্ষ বিবরণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা আলেম, মাদ্রাসা শিক্ষক এবং নতুন গবেষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি ও আলোকপ্রদ দিকনির্দেশনা প্রদান করে।[]

তাকী উসমানি গ্রন্থটির তাৎপর্য উল্লেখ করে বলেন, “এই গ্রন্থটি প্রতিটি মুসলমানের জন্য, বিশেষ করে আলেমদের জন্য অমূল্য, কারণ এর ভাষা সরল ও অকপট।”[]

আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডিন সাঈদ আহমদ আকবরাবাদী এই গ্রন্থকে সব শ্রেণির মানুষের জন্য এক অনন্য সঙ্গী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।[]

ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল বারী নাদভী দুঃখ প্রকাশ করেন যে, তিনি পূর্বে যাকারিয়া কান্ধলভীর চরিত্র ও আত্মনিবেদন সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না; তবে আপ বীতি পাঠের মাধ্যমে তিনি কৃতজ্ঞতা অনুভব করেন এবং তাঁর আদর্শে সমর্থন প্রদান করতে আন্তরিকভাবে অনুপ্রাণিত হন।[১০]

দারুল মুসান্নিফীন শিবলী একাডেমির পরিচালক মইনুদ্দীন আহমদ নাদভী গ্রন্থটির পাঠকদের হৃদয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টিজনক পথে পরিচালনার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন।[]

অনুবাদ

[সম্পাদনা]

বাংলা

[সম্পাদনা]

ঢাকার জামিয়া শরীয়াহ মালিবাগ-এর শিক্ষক মুহাম্মদ আছিউর রহমান গ্রন্থটি বাংলায় অনুবাদ করেন। ২০০৯ সালে থানভি লাইব্রেরি থেকে এটি দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়।[১১] এই অনুবাদের আরেকটি সংস্করণ আল-কাউসার পাবলিকেশন থেকে মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান-এর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়।[১২]

ইংরেজি

[সম্পাদনা]

এই গ্রন্থের একটি ইংরেজি অনুবাদ ২০১৪ সালে ইদারা ইমপেক্স থেকে প্রকাশিত হয়।[১৩]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. চৌগলেই, আব্দুল কাদের (২০১১)। (বায়োগ্রাফিক্যাল লিটারেচার ইন ইন্দো-ফার্সিয়ান ট্রেডিশন)ইসলামিক রিসার্জেন্স : সৈয়দ আবুল হাসান আলী নদভী এন্ড হিজ কনটেম্পোরারিস [ইসলামি পুনরুত্থান: সৈয়দ আবুল আসান আলী আলী নদবী এবং তাঁর সমসাময়িকগণ]। নয়া দিল্লি, ভারত: ডি.কে. প্রিন্টওয়ার্ল্ড। পৃষ্ঠা ১১৭। আইএসবিএন 978-81-246-0573-8এএসআইএন 8124605734এলসিসিএন 2010317718ওসিএলসি 697779362 
  2. উসমানি, মুহাম্মদ তাকি (২০০৫)। তাবসেরে। করাচি, পাকিস্তান: মাকতাবা মাআরিফুল কুরআন। পৃষ্ঠা ১৬। 
  3. কান্ধলভি, মুহাম্মদ জাকারিয়া (২০১৪)। আপবীতি। অছিউর রহমান, মুহাম্মদ কর্তৃক অনূদিত। বাংলাদেশ: থানভী লাইব্রেরি। পৃষ্ঠা ৭–১৫। 
  4. মালিক, আব্দুল (২০০১)। Moulana Muhammad Zakariyya Hayatuhu Wa AMaluhu [মাওলানা মুহাম্মদ যাকারিয়ার জীবন ও কর্ম] (গবেষণাপত্র) (আরবি ভাষায়)। ভারত: মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ১৮৪–১৮৭। hdl:10603/293977 
  5. Metcalf, Barbara D. (২০০৯)। Zakariyya, Maulānā Muḥammad। The Oxford Encyclopedia of the Islamic World (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-530513-5 
  6. Chaudhary 1992, পৃ. 209।
  7. Nadwi 2000, পৃ. 97।
  8. Usmani, Taqi (২০০৫)। Tabsre (উর্দু ভাষায়)। Pakistan: Maktaba Ma'ariful Quran। পৃষ্ঠা 18। 
  9. Maliq 2001, পৃ. 178।
  10. Maliq, Abdul (২০০১)। Moulana Muhammad Zakariyya Hayatuhu Wa A Maluhu (গবেষণাপত্র) (আরবি ভাষায়)। India: Department of Arabic, University of Madras। পৃষ্ঠা 178। hdl:10603/293977। ২১ জুন ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০২৩ 
  11. "আপ বীতি ১–২"Rokomari.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২৬ জুলাই ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-১৪ 
  12. Rahman, Muhammad Habibur। "আপ বীতি ১–২"Rokomari.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-১৪ 
  13. "Aap Beti - Autobiography of Maulana Muhammad Zakariyya Kandhlawi"Abebooks (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-১৪ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]