আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়
জন্ম
আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়

(১৯৩৮-০৫-০৫)৫ মে ১৯৩৮
মৃত্যু৮ অক্টোবর ২০২০(2020-10-08) (বয়স ৮২)
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্বভারত
মাতৃশিক্ষায়তনযাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলকাতা
পরিচিতির কারণসমুদ্রবিজ্ঞানী
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রভূতত্ত্ববিদ্যা
প্রতিষ্ঠানসমূহযাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়

ড.আনন্দদেব মুখোপাধ্যায় (ইংরেজি: Dr Ananda Deb Mukhopadhyay) (৫ মে, ১৯৩৮ - ৮ অক্টোবর, ২০২০) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি সমুদ্রবিজ্ঞানী এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। [১] বামপন্থী মতাদর্শে অনুপ্রাণিত অধ্যাপক রাজ্যে সাক্ষরতা অভিযানে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন।[২] তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের 'সেন্টার ফর ওশানোগ্রাফি'-র প্রতিষ্ঠাতা -সদস্যও ছিলেন। [৩]

সংক্ষিপ্ত জীবনী[সম্পাদনা]

আনন্দদেব মুখোপাধ্যায় কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এক বছর পর ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে জিওলজিতে (ভূতত্ত্ববিদ্যা) অনার্স নিয়ে স্নাতকে ভর্তি হন। ছাত্রাবস্থায় তিনি বিজ্ঞান বিভাগের বামপন্থী ছাত্র ইউনিয়নে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ভূতত্ত্ববিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে এখানেই অধ্যাপক এস এস দেবের অধীনে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রিও লাভ করেন। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে কর্মজীবনও শুরু করেন এই বিশ্ববিদ্যালয়েই। দুবৎসরের ছুটি নিয়ে তিনি নরওয়ে যান। সেখানে তাঁর আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা যাদবপুরের অগ্রগতির সহায়ক হয়েছিল। অধ্যাপনাকালে সমুদ্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার জন্য ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তঃ বিভাগীয় স্কুল অব ওশানোগ্রাফিক স্টাডিজ এবং ভারতে প্রথম সমুদ্র ও পরিবেশ বিজ্ঞানে এম.ফিল কোর্স চালু করেন এবং তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য ছিলেন। দীর্ঘ বাইশ বৎসর অধ্যাপনার পর ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন এবং অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজ করেন। ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে অবসরের পর তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইমেরিটাস অধ্যাপক হন।[৪] আমৃত্যু ন্যাশানাল কাউন্সিল অফ এডুকেশন'-এর সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকে শিক্ষার্থীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় "স্যার" ছিলেন। তিনি জাতীয় মূল্যায়ন ও প্রত্যয়ন পরিষদ তথা এনএএসি বা ন্যাকের চেয়ারম্যানও ছিলেন।[৫]

বাংলায় স্বাক্ষরতা অভিযানে তিনি ছিলেন একজন অগ্রণী ব্যক্তিত্ব। একাধিক সময়ে স্বাক্ষরতা প্রসারের উদ্দেশে সরকারি প্রকল্পে মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে বাম আমলে তিনি দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে রাজ্য সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটির অন্যতম সদস্য হিসাবে সমুদ্রের পরিবেশ সহ 'দিঘার সমুদ্রতট, দিঘা শহর এবং সমুদ্র ও শহরের মধ্যবর্তী প্রাচীর বাঁচাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার’ সুপারিশ করেছিলেন। অবসরের পর তিনি শিক্ষাচর্চা নিয়ে থাকতেন। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর হাত ধরে গঠিত হয় 'সেভ এডুকেশন ফোরাম' পরবর্তীতে এটি 'রাইট টু এডুকেশন ফোরাম' নামে পরিচিত হয়। [৬] তিনি বিদ্যাসাগর ফাউন্ডেশনের সভাপতি হিসাবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশতবার্ষিক জন্মবার্ষিকী উদযাপন কমিটিরও সভাপতি হয়েছিলেন।[৭]

জীবনাবসান[সম্পাদনা]

অধ্যাপক আনন্দদেব মুখোপাধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন। তাঁর স্ত্রী আগেই প্রয়াত হয়েছিলেন। ২০২০ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর নিয়ে দক্ষিণ কলকাতার এক নার্সিং হোমে ভর্তি হন। পরে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। দশদিনেরও বেশি চিকিৎসার পর ৮ই অক্টোবর সকালে ৮২ বৎসর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। [৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Eminent Academician Ananda Deb Mukhopadhyay dies"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-২৮ 
  2. "করোনাযুদ্ধে হার, চলে গেলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ-সমুদ্রবিজ্ঞানী আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-২৮ 
  3. "করোনায় ফের বড়সড় ক্ষতি বাংলার! চলে গেলেন আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-২৮ 
  4. "Emeritus professor at JU passes away"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-২৮ 
  5. https://www.bhaskar.com/news/MP-GWA-naac-team-inspection-in-jiwaji-university-in-gwalior-4863120-PHO.html%7C[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] সংগ্রহের-তারিখ =২০২১-১০-২৮}}
  6. "প্রয়াত বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়, শোকের ছায়া শিক্ষা মহলে"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-২৮ 
  7. "সমুদ্রবিজ্ঞানী আনন্দদেব প্রয়াত"। ২০২১-১০-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-২৮