আদর্শ অভিকর্ষ বল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মাধ্যাকর্ষণজনিত আদর্শ ত্বরণ (বা মুক্ত পতনের আদর্শ ত্বরণ) সংক্ষেপে আদর্শ অভিকর্ষ বল (ইংরাজী: standard gravity, সাধারণত ɡ0 বা ɡn দ্বারা চিহ্নিত) হ'ল পৃথিবী পৃষ্ঠের কাছাকাছি শূন্যস্থান-এ অবস্থিত কোনও বস্তুতে নূন্যতম মহাকর্ষীয় ত্বরণ। এর আদর্শ সংজ্ঞায়িত মান ৯.৮০৬৬৫ মি/সে (প্রায় ৩২.১৭৪০৫ ফুট/সে)। এই মান তৃতীয় সিজিপিএম দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় (১৯০১, সিআর ৭০) এবং কোনও বস্তুর প্রমাণ ওজন হল ঐ বস্তুর ভর এবং নূন্যতম ত্বরণ-এর গুনফল।[১][২] পৃথিবীর পৃষ্ঠের কাছাকাছি কোনও বস্তুর ত্বরণে মাধ্যাকর্ষণ এবং পৃথিবীর ঘূর্ণনের ফলে সৃষ্ট কেন্দ্রবিমুখী বল (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অবহেলা করার মতো যথেষ্টই কম) - উভয়েরই সম্মিলিত প্রভাব কাজ করে। মোট (আপাত মাধ্যাকর্ষণ) নিরক্ষীয় অংশের চেয়ে মেরু তে প্রায় ০.৫% বেশি হয়।[৩][৪]

যদিও ɡ চিহ্নটি কখনও কখনও প্রমাণ মাধ্যাকর্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয় তবুও ɡ (অনুসর্গ ছাড়াই) স্থানীয় ত্বরণের জন্যও ব্যবহৃত হয়। স্থানীয় ত্বরণ মাধ্যাকর্ষণ ও কেন্দ্রবিমুখী বলের কারণে সৃষ্টি হয় এবং তা পৃথিবীতে কারও অবস্থানের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয় (দেখুন পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ)। প্রতীকটির সাথে মহাকর্ষীয় ধ্রুবক G অথবা গ্রাম এর প্রতীক g নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়। যে কোনও ধরনের ত্বরণ এর একক হিসবেও ɡ ব্যবহৃত হয় (জি-ফোর্স দেখুন)।

উপরে সংজ্ঞায়িত ɡ0 হ'ল ৪৫° জিওডেটিক অক্ষাংশ এ সমুদ্রপৃষ্ঠে মুক্তভাবে পতনশীল কোনও বস্তুর পৃথিবীতে ত্বরণের নূন্যতম মধ্যম মান। যদিও পৃথিবীতে মুক্তভাবে পতনশীল কোনও কিছুর প্রকৃত ত্বরণ বস্তুটির অবস্থান অনুসারে পাল্টে যায় তবুও উপরে বর্ণিত মানটি সর্বদা পরিমাপনবিদ্যায় ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে দুটি বলের একক নিউটন এবং কিলোগ্রাম-বল এর মধ্যে রূপান্তর ফ্যাক্টর হিসাবে এটি কাজ করে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

প্রথমের দিকে আন্তর্জাতিক ওজন ও মাপকাঠি সম্পর্কিত কমিটি (সিআইপিএম) জলের স্ফুটনাঙ্ক ব্যবহার করে একটি প্রমাণ তাপমান যন্ত্র এর স্কেল নির্ধারণ করে।  স্ফুটনাঙ্ক বায়ুমণ্ডলীয় চাপ এর সাথে সাথে পরিবর্তিত হয় বলে  সিআইপিএমকে একটি প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ সংজ্ঞায়িত করতে হয়। তাঁরা তা সংজ্ঞায়িত করার জন্য পারদ স্তম্ভের  ওজনের ভিত্তিতে ৭৬০ মিমি স্থির করেন। কিন্তু সেই ওজন স্থানীয় মহাকর্ষের উপর নির্ভর করে বলে এখন তার জন্যও একটি প্রমাণ মাধ্যাকর্ষণ মানের প্রয়োজন পড়ে। ১৮৮৭ সালের সিআইপিএম সভা নীচের সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করে:

মহাকর্ষজ প্রমাণ ত্বরণ হবে আন্তর্জাতিক ব্যুরোতে (প্যাভিলন দ্য ব্রিতেউই এর পাশাপাশি) রক্ষিত ১.০০০৩৩২২ দ্বারা বিভক্ত মহাকর্ষজ ত্বরণের সমান। সমুদ্রপৃষ্ঠে ৪৫° অক্ষাংশ রূপান্তর করতে এই তাত্ত্বিক সহগের প্রয়োজন হয়। [৫]

এখন আন্তর্জাতিক ব্যুরো তে প্রমাণ বা আদর্শ অভিকর্ষ বলের জন্য একটি সংখ্যাসূচক মান পাওয়া দরকার। এই দায়িত্বটি ফরাসি সেনাবাহিনীর ভৌগোলিক পরিষেবার গিলবার্ট আতিয়েন ডেফর্জেসকে দেওয়া হয়েছিল। ১৮৮৮ সালের মার্চ এবং এপ্রিল মাসে নেওয়া পরিমাপের উপর ভিত্তি করে তিনি যে মান খুঁজে পান তা হ'ল ৯.৮০৯৯১(৫) মি⋅সে−২

এই ফলাফলটি প্রমাণ বা আদর্শ অভিকর্ষ বলের মান নির্ধারণের ভিত্তি গঠন করে যা আজও ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৯০১ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় ওজন ও পরিমাপের বিষয়ে সাধারণ সম্মেলন এর একটি গৃহীত প্রস্তাবে ঘোষিত হয়:

পৃথিবীর আদর্শ অভিকর্ষ বলের জন্য আন্তর্জাতিক ওজন ও পরিমাপ পরিষেবা গৃহীত মানটি ৯৮০.৬৬৫ সেমি/সে যা কিছু কিছু দেশের নিয়ামক সংস্থা ইতিমধ্যেই গ্রহণ করে নিয়েছে। [৬]

১৮৮৭ সিআইপিএম ঘোষণাপত্রে ɡ এর জন্য গৃহীত সংখ্যাসূচক মানটি সিজিএস পদ্ধতিতে ডিফর্জেসের ফলাফলে প্রাপ্ত মান - ৯৮০.৯৯১ সেমি⋅সে−২ দ্বারা ভাগ করে তারপর একাধিক সংখ্যার পরিবর্তে ফলাফলের অনিশ্চয়তা নিশ্চত করতে প্রচলিত - ১.০০০৩৩২২ দ্বারা পাওয়া যায়।

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Taylor, Barry N.; Thompson, Ambler, সম্পাদকগণ (মার্চ ২০০৮)। The international system of units (SI) (pdf) (প্রতিবেদন)। National Institute of Standards and Technology। পৃষ্ঠা 52। NIST special publication 330, 2008 edition। 
  2. The International System of Units (SI) (পিডিএফ) (8th সংস্করণ)। Bureau international des poids et mesures। ২০০৬। পৃষ্ঠা 142–143। আইএসবিএন 92-822-2213-6 
  3. Boynton, Richard (২০০১)। "Precise Measurement of Mass" (পিডিএফ)Sawe Paper No. 3147। Arlington, Texas: S.A.W.E., Inc.। ২০০৭-০২-২৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০১-২১ 
  4. "Curious About Astronomy?", Cornell University, retrieved June 2007
  5. Terry Quinn (২০১১)। From Artefacts to Atoms: The BIPM and the Search for Ultimate Measurement StandardsOxford University Press। পৃষ্ঠা 127। আইএসবিএন 978-0-19-530786-3 
  6. "Resolution of the 3rd CGPM (1901)"BIPM। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৯, ২০১৫