আকবরাবাদি মসজিদ
আকবরাবাদি মসজিদ | |
---|---|
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | ইসলাম |
জেলা | পুরান দিল্লি |
যাজকীয় বা সাংগঠনিক অবস্থা | মসজিদ |
অবস্থান | |
অবস্থান | দিল্লি |
দেশ | ভারত |
এলাকা | দিল্লি |
স্থানাঙ্ক | ২৮°৩৯′০০″ উত্তর ৭৭°১৪′১৬″ পূর্ব / ২৮.৬৪৯৯° উত্তর ৭৭.২৩৭৯° পূর্ব |
স্থাপত্য | |
ধরন | মসজিদ |
স্থাপত্য শৈলী | ইন্দো-ইসলামি |
সম্পূর্ণ হয় | ১৬৫০ |
আকবরাবাদী মসজিদ ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত একটি মসজিদ ছিল। এটি ১৬৫০ সালে শাহজাহানের অন্যতম স্ত্রী আকবরবাদি মহল তৈরি করেছিলেন। পুরানো দিল্লির বেশ কয়েকটি মুঘল যুগের মসজিদগুলির মধ্যে একটি, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের সময় দিল্লি পুনরদখলের পরে, ব্রিটিশরা এটি ধ্বংস করে ফেলে। পুরানো দিল্লির বর্তমান নেতাজি সুভাষ পার্ক এলাকায় এটি অবস্থিত ছিল বলে অনুমান করা হয়।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]আকবরাবাদি মসজিদটি শাহজাহানের স্ত্রী আকবরাবাদি বেগম নির্মাণ করেছিলেন। ১৬৫০ সালে নির্মাণ সম্পন্ন হয়, এটি সম্পূর্ণ হতে দুই বছর সময় লাগে। বলা হয়ে থাকে যে, আকবরবাদি বেগম বর্তমান আকবরাবাদি মসজিদের জায়গায় কুরআনের আরবি থেকে স্থানীয় উর্দুতে অনুবাদ করেন। তার নিজের কাজের সম্মানে তিনি সেই জায়গায় মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এর অস্তিত্বের সময়, এটি শাহজাহানাবাদে রাজকীয় মুঘল মহিলাদের দ্বারা নির্মিত অনেক মসজিদের মধ্যে একটি ছিল, যেমন ফতেপুরি মসজিদ, জিনাত-উল মসজিদ ইত্যাদি।
১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের পর ব্রিটিশদের ক্রোধের মুখে পড়ার আগ পর্যন্ত মসজিদটি তার নির্মাণের দুই শতাব্দী পরেও মজবুত অবস্থায় ছিল। ১৮৫৭ সালের অভ্যুত্থান ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সিদ্ধান্তমূলক ঘটনাগুলির মধ্যে একটি। দিল্লী - মুঘলদের রাজধানী ( দিল্লির ইতিহাস দেখুন) ছিল বিদ্রোহের কেন্দ্রবিন্দু, যা দিল্লির চারপাশে অবস্থানরত সেনা ইউনিটগুলিতে শুরু হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে সফল হলেও, নেতৃত্ব ও সমন্বয়ের অভাব, ব্রিটিশদের জন্য স্থানীয় ভারতীয়দের গুপ্তচরবৃত্তি, ইত্যাদি সহ অনেক কারণে পরবর্তীকালে বিদ্রোহ স্থমিত পয়ে পড়ে। (বিস্তারিত জানতে, সিপাহি বিদ্রোহ ১৮৫৭ দেখুন)। ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশ কর্তৃক পুনরদখল করা স্থানগুলোর মধ্যে
দিল্লী ছিসর্বশেষ স্থান।েষ
ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভিন্নমত যাতে আরও ছড়িয়ে না যায় এবং এটিকে পুনরুত্থিত হতে বাধা দিতে, ব্রিটিশরা পুরানো দিল্লিতে শত শত স্থাপনা ধ্বংস করে। মুঘল রাজধানী ব্রিটিশ প্রতিক্রিয়ার ক্রোধ বহন করে। সিপাহীদের দ্বারা বিদ্রোহের ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহৃত যে কোনও কাঠামো ধ্বংস করা হয়েছিল (আরো বিস্তারিত জানার জন্য, দিল্লি অবরোধ দেখুন)।[১]
আকবরাবাদি মসজিদ ছিল বিদ্রোহের একটি ঘাঁটি যা ব্রিটিশ বাহিনী ধ্বংস করেছিল। এর অস্তিত্ব তখন থেকে কিংবদন্তি এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে। মসজিদটি ঠিক কোথায় দাঁড়িয়েছিল তা জানা যায়নি, যদিও পুরানো দিল্লির নেতাজি সুভাষ পার্কের স্থানীয় মুসলিম বাসিন্দারা একটি নির্দিষ্ট স্থানকে সম্ভাব্য স্থল বলে মনে করেন যেখানে মসজিদটি একসময় অবস্থান করত।
ভাঙা মসজিদের ধ্বংসাবশেষ বিক্রির জন্য রাখা হয়েছিল এবং কোনোভাবে সৈয়দ আহমদ খান একজন মহৎ ক্রেতা খুঁজে পান, যিনি ধ্বংসাবশেষ কিনেছিলেন এবং স্যার সৈয়দ মসজিদ, আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণে ব্যবহার করেছিলেন।
সম্ভাব্য আবিস্কার
[সম্পাদনা]৬ই জুলাই ২০১২ সালে, নেতাজি সুভাষ পার্ক এলাকায় একটি মেট্রো স্টেশন নির্মাণের জন্য মাটি খনন করার সময়, দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশনের আধিকারিকরা মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকা মধ্যযুগীয় কিছু নির্মাণের অবশিষ্টাংশ দেখতে পান।[২] নির্মাণশৈলী ও সেই স্থান থেকে খনন করা মৃৎপাত্রের মতো অন্যান্য জিনিসপত্রের এএসআই দ্বারা তদন্তের পর, এটি নিশ্চিত করা হয়েছে যে ধ্বংসাবশেষগুলি মুঘল আমলের।[৩] তবে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে ধ্বংসাবশেষগুলি আকবরাবাদী মসজিদের অংশ কি না। এএসআই বলেছেন যে ধ্বংসাবশেষের সঠিক পরিচয় প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের তদন্ত চলছে। ডিএমআরসি খনন কাজ স্থগিত করেছে। এটি দিল্লি মেট্রোর ফেজ-৩ পরিকল্পনার অংশ ছিল এবং সুরক্ষিত ঐতিহ্যবাহী এলাকায় ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ নির্মাণের নিয়ম মেনে চলার জন্য রুটে সামান্য পরিবর্তন করা হতে পারে।[৪]
আবিষ্কারটি স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, যারা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে যে ধ্বংসাবশেষগুলি আকবরাবাদী মসজিদের অন্তর্গত। অবৈধ ইটভাটা নির্মাণের পর - যা ASI খননের অখণ্ডতাকে বিপন্ন করে - মুসলিম বাসিন্দারা ধ্বংসাবশেষের জায়গায় নামাজ পড়া শুরু করে।[৫] আবিষ্কারের পরপরই, স্থানীয় বিধায়ক শোয়েব ইকবাল একই জায়গায় মসজিদের পুনর্নির্মাণের তত্ত্বাবধান শুরু করেন কিন্তু দিল্লি সরকারের নির্দেশে এটি বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কুরআনের কপি এবং কিছু প্রার্থনার ম্যাট সরানোর চেষ্টা করলে এটি পাথর নিক্ষেপ এবং ছোটখাটো অগ্নিসংযোগের দিকে পরিচালিত করে।[৬][৭][৮]
স্থানীয় নাগরিক সংস্থা উত্তর দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন প্রাথমিকভাবে সাইটে নামাজ পড়া ছাড়া যে কোনও কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করেছিল।[৯] যাইহোক, ২০ জুলাই ২০১২ তারিখে দিল্লি হাইকোর্ট সাইটে কোনও নির্মাণ এবং ধর্মীয় কার্যকলাপের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, কারণ এটি এখনও নিশ্চিত করা যায়নি যে সাইটটি কোনও প্রাচীন মসজিদের ছিল কিনা এবং এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে কোনও ধর্মীয় কার্যকলাপ পরিচালিত হয়নি।[১০] এটি উত্তর দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনকে তদন্ত শুরু করার জন্য এএসআইকে জমি হস্তান্তর করার নির্দেশ দিয়েছে।[১১] ২৫ জুলাই ২০১২ তারিখে স্থানটি ASI- এর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল কিন্তু প্রত্নতত্ত্ব সংস্থা বলেছিল যে বর্ষাকালের পরেই এটি স্থানটি খনন শুরু করবে। কাজের সময় এএসআইকে ভারী পুলিশ কভার দেওয়া হবে।[১২] ASI- এর অনুরোধের প্রেক্ষিতে, দিল্লি হাইকোর্ট ৩০ জুলাই ২০১২ তারিখে উত্তর দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনকে বেআইনি নির্মাণ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয় এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ভারী পুলিশিং করতে বলে।[১৩] ১১ অক্টোবর ২০১২-এ, বর্ষার কারণে অনেক বিলম্বের পরে, উত্তর দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন সাইটে ধ্বংস অভিযান শুরু করার জন্য আধাসামরিক কভার চেয়েছিল।[১৪]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Why was Old Delhi Railway Station built in the heart of Shahjahanabad? Trisha Gupta[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] [permanent dead link]
- ↑ Akbarabadi Masjid found?
- ↑ Relics belong to Mughal era
- ↑ "Metro plans for alternative location"। ৩১ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১২।
- ↑ People offer namaaz at possible Mosque site
- ↑ Hader, Faidan (৫ সেপ্টেম্বর ২০১২)। "Riots proving new headache for city cops"। Hindustan Times। New Delhi। ৩১ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ Bhatnagar, Gaurav Vivek; Kumar, Ashok (২২ জুলাই ২০১২)। "High drama at Akbarabadi mosque site"। The Hindu। New Delhi। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ "Two held for violence at Akbarabadi mosque site"। The Hindu। New Delhi। ২৩ জুলাই ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ Construction at relics site banned
- ↑ All activity banned at site
- ↑ Hand over land to ASI: Delhi High Court
- ↑ Work on site only after monsoons: ASI
- ↑ Demolish structure over Mughal-era ruins: Delhi HC
- ↑ "Now, corporation seeks paramilitary cover"। The Times of India। ১২ অক্টোবর ২০১২। ২৯ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।