বিষয়বস্তুতে চলুন

পরমেশ্বরন থাঙ্কাপ্পান নায়ার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পরমেশ্বরন থাঙ্কাপ্পান নায়ার
জন্ম
পরমেশ্বরন থাঙ্কাপ্পান নায়ার

(১৯৩৩-০৪-৩০)৩০ এপ্রিল ১৯৩৩[১]
কালাডি, কোচিন রাজ্য, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে - কেরল)
মৃত্যু১৮ জুন ২০২৪(2024-06-18) (বয়স ৯১)
শিক্ষাকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশালেখক, ইতিহাসবিদ ও গবেষক
দাম্পত্য সঙ্গীসীতা দেবী[২] (বি.১৯৬৬)

পরমেশ্বরন থাঙ্কাপ্পান নায়ার সংক্ষেপে - পি টি নায়ার (৩০ এপ্রিল ১৯৩৩ - ১৮ জুন ২০২৪) ছিলেন কলকাতা শহরের একজন ভারতীয় মালয়ালি লেখক, গবেষক, ইতিহাসবিদ। কলকাতার "বেয়ারফুট হিস্টোরিয়ান"[৩] বা পদাতিক গবেষক হিসাবে পরিচিত পি টি নায়ার অ্যা হিস্ট্রি অফ ক্যালকাটা স্ট্রিটস সহ কলকাতার ইতিহাসের বিস্তৃত ইতিহাস ইংরাজী ভাষায় রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। [৪][৫] এই পর্যায়ের তার শেষ গ্রন্থ গান্ধী ইন ক্যালকাটা প্রকাশিত হয় ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে।[৬]

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

পি টি নায়ার ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ৩০ এপ্রিল ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন কোচিন রাজ্যের কালাডি' শহরের নিকটবর্তী মঞ্জপরা গ্রামে চাঙ্গানাত্তুভেটিল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা পাশের পর বাইশ বছরের নায়ার কেরলের আলুয়া হতে মাদ্রাজ মেল ধরে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতা আসেন জীবিকার সন্ধানে[৬][৭] তার গ্রামের একজনের পরামর্শে, যার পরিচিত এক ব্যক্তি কলকাতার জি পি ও-তে কাজ করেন। সেই ব্যক্তির সাহায্যে প্রথমে আশ্রয় পান দেশপ্রিয় পার্কে। কাজ করতে থাকেন টাইপিস্টের। ট্রামে বা পায়ে হেঁটে কাজে যেতেন। কলকাতার পথে নিত্যদিনের যাওয়া-আসা তাকে কলকাতা মহানগরীর ঔপনিবেশিক অতীত, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য,ধনী ও নিম্নবিত্তের সুন্দর সহাবস্থান তাঁকে মুগ্ধ করেছিল। রাস্তার দুপাশের অনেক অতীত ইতিহাসের সাক্ষী পুরনো বাড়িগুলো তাকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করতো।

কিছুদিন পরে তিনি আনথ্রোপলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ায় ১২৫ টাকা মাইনের টাইপিস্টের চাকরি পান। কিন্তু তাকে শিলং-এ বদলি হতে হয়। কাজের মধ্যেই তিনি আনথ্রোপলজিকাল সার্ভের লাইব্রেরিতে পড়াশুনা শুরু করেন। রাতে সেন্ট অ্যান্থনিতে পড়াশোনা করেন। এক বৎসর পর পুনরায় কলকাতায় ফিরে আসেন।

১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ হতে তার ঠিকানা হয় কলকাতার ভবানীপুরের হরিশ মুখার্জি রোড সংলগ্ন কাঁসারীপাড়ায়।[৮] ইতিমধ্যে তিনি পড়াশোনা করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে কলা বিভাগে ও আইনে স্নাতক হন। বাসায় নিজ হাতে রান্না, বাড়িতে আর বাসা হতে ১০ মিনিটের হাঁটা পথে জাতীয় গ্রন্থাগারসহ বিভিন্ন গ্রন্থাগারে গিয়ে পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকতেন।

কর্মজীবন এবং গবেষণা[সম্পাদনা]

একজন বহিরাগত ব্যক্তি হিসাবে, পি টি নায়ারের মনে হয়েছিল যে, মহানগর কলকাতার বিষয়বস্তুর অনেকটাই যেন অনাবিষ্কৃত রয়েছে, ভারতের নামজাদা প্রাতিষ্ঠানিক এবং জাতীয়তাবাদী ইতিহাসবিদেরও যেন দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে।[৯] তাই বিশ শতকের বিখ্যাত লেখক গবেষক শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায়কে এক সাক্ষাৎকারে নায়ার বলেছেন-

কলকাতায় অনেক নামজাদা ইতিহাসবিদ থাকলেও কলকাতার ইতিহাস লেখা হয়নি। এটা ভেবেই কলকাতার ইতিহাসে হাত দিই।

[৪]

তাই ১৯৭০-এর দশকের শেষ থেকে সব কাজ ছেড়েই শখ হিসাবে গবেষণা ও লেখার কাজে লিপ্ত হন। তিনি কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে পরবর্তী পাঁচ দশক অতিবাহিত করেন কলকাতায় ব্রিটিশদের সামাজিক জীবন, কলকাতা হাইকোর্টের ইতিহাস, শহরের সরাইখানা এবং হোটেল এবং শহরের দক্ষিণ ভারতীয়দের নানা বিষয়ে বিশদ লিপিবদ্ধ করতে। [৫] রচনা করেছেন ৬২ টির মতো গ্রন্থ। নায়ারের সংগ্রহে ছিল ছয় হাজার দুর্লভ বইয়ের বিশাল সম্ভার, যা তিনি পাঁচ দশকের গবেষণা কাজের জন্য নিজের উপার্জিত অর্থে কিনেছিলেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরি তার সংগ্রহ কেনার জন্য ব্ল্যাঙ্ক চেক প্রদান করতে চেয়েছিল। কিন্তু ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রায় তিন হাজার বই মেয়র প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়ের আমলে দশ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কলকাতা পুর-কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দেন। [১০] এবং পরে ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা ছাড়ার আগে তার সংগ্রহের আরো শ'আটেক বই কলকাতার টাউন হল গ্রন্থাগারে দান করেন। [১১][১২]

পুরস্কার[সম্পাদনা]

উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ[সম্পাদনা]

  • ফার্স্ট সার্কুলেটিং এবং কলেজ লাইব্রেরিজ অফ ক্যালকাটা (২০১২)
  • কলকাতা আছে কলকাতাতেই (২০০৯) (বাংলায়)
  • ওরিজিন অফ দ্য কলকাতা পুলিশ (২০০৭)
  • বিএস কেশবন:ফার্স্ট ন্যাশনাল লাইব্রেরিয়ান অফ ইন্ডিয়া (২০০৫)
  • সাউথ ইন্ডিয়ান্স ইন কলকাতা: হিস্ট্রি অফ কান্নাডিগাস, কোঙ্কানিস, মালয়ালীজ, তামিলিয়ান্স, তেলেগুস, সাউথ ইন্ডিয়ান ডিসেস অ্যান্ড টিপ্পু সুলতান্স হেয়ার্স ইন ক্যালকাটা (২০০৪)
  • জন আলেকজান্ডার চ্যাপম্যান: সিলেকশন ফ্রম দ্য ওয়ার্কস অফ এ লাভার অফ ইন্ডিয়া (২০০৪)
  • ইকোস ফ্রম বেলভেডিয়ার: হোম অফ ন্যাশনাল লাইব্রেরি, কলকাতা (২০০৪)
  • হিকি অ্যান্ড হিজ গেজেট (২০০১)
  • দ্য ম্যানগো ইন ইন্ডিয়ান লাইফ অ্যান্ড কালচার (১৯৯৫)
  • ক্যালকাটা টারসেন্টেনারি বিবিলোগ্রাফি ভলিউম ১ ও ২ (১৯৯৩)
  • ব্রিটিশ বিগিনিংস ইন বেঙ্গল ১৬০০ -১৬৬০ (১৯৯১)
  • জেমস প্রিন্সেপ: লাইফ অ্যান্ড ওয়ার্ক - ভলিউম ১(১৯৯১)
  • জব চার্নক: দ্য ফাউন্ডার অফ ক্যালকাটা: অ্যা অ্যান্থোলজি(১৯৯০)
  • ক্যালকাটা বেভি: এ কালেকশন অফ রেয়ার পোয়েমস (১৯৮৯)
  • ক্যালকাটা মিউনিসিপ্যাল ​​কর্পোরেশন অ্যাট এ গ্লান্স (১৯৮৯)
  • ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সঙগস্ অ্যান্ড সিমবলস্ (১৯৮৭)
  • এ হিস্ট্রি অফ ক্যালকাটাজ স্টিটস্ (১৯৮৭)
  • এ হিস্ট্রি অফ দ্য ক্যালকাটা প্রেস, দ্য বিগিনিংস (১৯৮৭)রেইনিজ এ হিস্টোরিক্যাল অ্যান্ড টোপোগ্রাফিক্যাল স্কেচ অফ ক্যালকাটা (এইচ জেমস রেইনিজ-র সম্পাদনা) (১৯৮৬)
  • ক্যালকাটা ইন সেভেন্টিন্থ সেঞ্চুরি (১৯৮৬)
  • ক্যালকাটা: ওরিজিন অফ দ্য নেম (১৯৮৫)
  • ব্রুটন্স ভিজিট টু লর্ড জগন্নাথ 350 ইয়ার্স এগো (উইলিয়াম ব্রুটনের সম্পাদনা) (১৯৮৫)
  • ট্রাইভস্ অফ অরুণাচল প্রদেশ (১৯৮৫)
  • ক্যালকাটা ইন দ্য এইটিনন্থ সেঞ্চুরি (১৯৮৪)
  • ব্রিটিশ সোস্যাল লাইফ ইন অ্যানসিয়েন্ট ক্যালকাটা:১৭৫০ - ১৮৫০ (১৯৮৩)
  • ম্যারেজ অ্যান্ড ডাউরি ইন ইন্ডিয়া (১৯৭৮) [১৪]
  • দ্য পিকক: দ্য ন্যাশনাল বার্ড অফ ইন্ডিয়া (১৯৭৭) [১৫]

শেষ জীবন[সম্পাদনা]

পি টি নায়ারের স্ত্রী সীতা দেবী কেরলের স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন, তাই স্ত্রী পুত্র কন্যা সকলেই কেরলে থাকতেন। তিনি কলকাতায় একাই ছিলেন। পরিবারের সদস্যদের উদ্বেগের কারণে আর শিকড়ের টানে কলকাতা প্রেমিক ইতিহাসকার ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ২২ নভেম্বর পাকাপাকিভাবে কলকাতা ছেড়ে চলে যান কেরালার এর্নাকুলাম জেলার তার নিজের শহর চেন্দমঙ্গলামে[১১] সেখানেই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুন মঙ্গলবার দুপুর বারোটায় প্রয়াত হন। [৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Recording angel of the city - P.T. Nair completes 50 years in calcutta"www.telegraphindia.com 
  2. "PT Nair, Kolkata's famed chronicler" 
  3. "The 'barefoot historian' of Calcutta from Kerala"The Indian Express (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-১২-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-০৯ 
  4. "প্রয়াত কলকাতা প্রেমিক, গবেষক নায়ার"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-১৯ 
  5. "This Calcutta's storyteller ..."The Times of India। ২০১৩-০২-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-০৩ 
  6. Das, Soumitra (২২ সেপ্টেম্বর ২০০৫)। "Recording angel of the city - P.T. Nair completes 50 years in calcutta"The Telegraph। Calcutta, India: telegraphindia.com, 22 September 2005। ১১ মে ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-০৪ 
  7. SNS (২০১৮-১১-২৬)। "Adieu P Thankappan Nair! The Kolkata chronicler calls it a day"The Statesman (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-১৮ 
  8. "কেরলের মানুষ, তবুও এ শহরই ছিল হৃদস্পন্দন, চলে গেলেন কলকাতা-গবেষক থনকপ্পন নায়ার"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-২০ 
  9. দত্তগুপ্ত, সুমি (২০২১-১০-২৬)। "৮২, সি কাঁসারী পাড়া রোড : পাদপ্রদীপের আলোয় এক কলকাতা প্রেমিকের ঠিকানা"Nagorik.net (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-১৮ 
  10. "কলকাতা চর্চাই ছিল তাঁর সাধনা"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-২৩ 
  11. "What makes Kolkata a great city in the words of its prolific chronicler"Hindustan Times (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-১১-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-০৯ 
  12. "নায়ারের ৭০০ বই কবে নেবে পুরসভা?"। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০২৪ 
  13. "Calcutta in the 19th Century: Company's Days,, P. Thankappan Nair, Firma KLM Private Ltd."www.bagchee.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-০৯ 
  14. "Marriage and dowry in India / P. T. Nair - Catalogue | National Library of Australia"catalogue.nla.gov.au (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-১৯ 
  15. "P Thankappan Nair - AbeBooks"www.abebooks.com