মণিমেখলা
মণিমেখলা (পালি: Maṇīmekhalā) হিন্দু-বৌদ্ধ পুরাণে একজন দেবী। তাঁকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পৌরাণিক কাহিনীর অংশ হিসাবে ভারত মহাসাগর এবং দক্ষিণ চীন সাগরের মতো সমুদ্রের অভিভাবক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। জাহাজডুবির হাত থেকে ধর্মাচারী প্রাণীদের রক্ষা করার জন্য কাতুমহারাজিকা তাঁকে স্থাপন করেছিলেন।[১] মহানিপাত জাতক (মহাজনক জাতক ) সহ বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ গল্পে তাঁর উপস্থিতি দেখা গেছে, যেখানে তিনি একটি জাহাজডুবির হাত থেকে যুবরাজ মহাজনককে উদ্ধার করেন।[২]
ব্যুৎপত্তি
[সম্পাদনা]পালি ভাষায়, মণিমেখলা বলতে রত্নখচিত কোমরবন্ধ বা বেল্ট বোঝায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, তিনি মণি মায়খলা (বার্মিজ ভাষায় မဏိမေခလာ), মনি মেখলা (খমের មណីមេខលា) বা নিয়াং মেখলা (খমের នាងមេខលា); মণি মেকখালা (থাই ভাষায় มณีเมขลา) ইত্যাদি বিভিন্ন আদিবাসী নাম দ্বারা পরিচিত।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মূল ভূখণ্ডে
[সম্পাদনা]প্রথম সহস্রাব্দ খ্রিস্টাব্দের শিলালিপি খোদাই আকারে, মায়ানমারের জোথোকে (বিলিনের কাছে) মণিমেখলার প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।[৩]
মণিমেখলাকে মেনল্যাণ্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে ওয়াট চিত্রকলায় দেখা যায়, যেখানে মহাজনকের দৃশ্য চিত্রিত করা আছে [২] থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ায়, তাঁকে বজ্র এবং সমুদ্রের দেবী হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
মণিমেখলা ও রামসুর
[সম্পাদনা]কম্বোডিয়া এবং থাইল্যান্ডের ধ্রুপদী সাহিত্যে মণিমেখলা এবং রামাসুরের কাহিনী বহুবার উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে রামাসুর (সাধারণত পরশুরাম হিসেবে ধরা হয়) এবং অর্জুনের সাথে মণিমেখলাকে চিত্রিত করা হয়েছে। কিংবদন্তি অনুসারে, রামাসুর যখন মণিমেখলাকে আকাশের মধ্য দিয়ে তাড়া করেন, তখন মণিমেখলার স্ফটিক বলের ঝলকানি এবং রামাসুরের কুঠারের শব্দ থেকে বজ্রপাত এবং বজ্রধ্বনির ঘটনা ঘটে ।[৪][৫]
শ্রীলঙ্কায়
[সম্পাদনা]শ্রীলঙ্কায়, মণিমেখলাকে সমুদ্র দেবী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তামিল মহাকাব্য, মণিমেকলাইতে, তিনি নায়িকাকে ঘুম পাড়িয়ে তাকে মানীপল্লভম দ্বীপে নিয়ে যান (নয়নাথিভু)। দেবতা দেবলের পৌরাণিক চক্রে, যখন তিনি শ্রীলঙ্কার কাছে পৌঁছোন এবং তাঁর জাহাজ ডুবতে বসে, তখন মণিমেখলাই, দেবতা শক্রের নির্দেশে তাঁকে বাঁচানোর জন্য একটি পাথরের নৌকা তৈরি করেছিলেন।
নৃত্য
[সম্পাদনা]থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার ধ্রুপদী নৃত্যের ঐতিহ্যে, পবিত্র নাটকীয় নৃত্যগুলি মণিমেখলা এবং রামাসুরের গল্পকে চিত্রিত করে।
কম্বোডিয়া
[সম্পাদনা]রবম মণি মেখলা (খ্মের: របាំមុនីមេខលា, রোবাম মেখলা-রিমেসর নামেও পরিচিত) একটি খমের শাস্ত্রীয় নৃত্য যেখানে মণি মেখলা এবং রেমসোরের গল্পকে ফুটিয়ে তোলা হয়। এটি বুওং সুওং নৃত্য সঙ্গতের অংশ, যা খেমার শাস্ত্রীয় নৃত্যের মধ্যে সবচেয়ে পবিত্র। পৃথিবীতে বৃষ্টি নিয়ে আসার আনুষ্ঠানিক উদ্দেশ্যে এটি পরিবেশিত হয়।[৬]
থাইল্যান্ড
[সম্পাদনা]থাইল্যান্ডে, মেকখালা-রামাসুন নৃত্যটি লক্ষন নাই বা খোন নৃত্যের প্রধান পরিবেশনার আগে একটি বোক রং ('পূর্বরঙ্গ নৃত্য') ভূমিকা হিসাবে পরিবেশিত হয়েছিল।[৭]
আধুনিক ব্যবহারে
[সম্পাদনা]- জনপ্রিয় বার্মিজ পপ গায়িকা মায়খালা তাঁর মঞ্চের নামটি গ্রহণ করেছেন মণিমেখলা থেকে।
- ২০০২, ২০০৮, ২০১৫ এবং ২০২০ সালে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের নামগুলি থাইল্যান্ড দিয়েছিল, মণিমেখলার নাম থেকে। এছাড়াও, ১৯৮০ সাল থেকে থাইল্যান্ডের টেলিভিশন শিল্পকে দেওয়া একটি পুরস্কারকে বলা হয় মেকখালা পুরস্কার।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- মনিমেকলাই, ভারতের একটি তামিল মহাকাব্য, শীর্ষক চরিত্র সম্পর্কে, যিনি একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী হন
- জাতকের গল্প, খুদ্দকা নিকায়া থেকে
- মহানীপাতা জাতক
- রোবম মণি মেখলা
- মাজু, চীনা সমুদ্রের দেবী
- নিয়াই রোরো কিডুল, ইন্দোনেশিয়ায় জাভানীয় এবং সুন্দানীয় দ্বারা পূজিত দক্ষিণ সাগরের রানী
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ G.P. Malalasekera. Dictionary of Pali Proper Names: Pali-English. Asian Educational Services, 2003
- ↑ ক খ Anne Elizabeth Monius. Imagining a place for Buddhism: literary culture and religious community in Tamil-speaking South India. Oxford University Press US, 2001, pages 111-112
- ↑ MOORE, ELIZABETH; WIN, SAN (২০০৭)। "The Gold Coast: Suvannabhumi? Lower Myanmar Walled Sites of the First Millennium A.D.": 202–232। আইএসএসএন 0066-8435। জেস্টোর 42928710।
- ↑ Candelario, Rosemary (২০১৪-০৪-১৪)। "Moni Mekhala and Ream Eyso Edited by Prumsodun Ok (review)" (ইংরেজি ভাষায়): 324–326। আইএসএসএন 1527-2109। ডিওআই:10.1353/atj.2014.0027।
- ↑ "Cambodian Folktales | Southeast Asia Program"। seap.einaudi.cornell.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-২২।
- ↑ Cravath, Paul. Asian Theatre Journal, Vol. 3, No. 2 (Autumn, 1986), pp. 179-203 (The Ritual Origins of the Classical Dance Drama of Cambodia) University of Hawai'i Press
- ↑ "เรียนรู้เรื่องรำไทย ระบำชุด เมขลารามสูร"। natasinsamphan.com (থাই ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০২০।