বীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়
বীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় | |
---|---|
জন্ম | ১৯০২ |
মৃত্যু | ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ | (বয়স ৭৫–৭৬)
পেশা | অধ্যাপনা, শিক্ষাবিদ |
পুরস্কার | পদ্মভূষণ (১৯৭০) |
ড.বীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় (১৯০২ – ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮) ছিলেন অর্থনীতির একজন বিশিষ্ট অধ্যাপক, দিল্লি স্কুল অফ ইকোনমিক্স এর অন্যতম রূপায়ণকারী ডিরেক্টর, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। অর্থনৈতিক ইতিহাসের চিন্তাধারা বিষয়ে সুপণ্ডিত এবং মহাত্মা গান্ধীর অর্থনৈতিক মতবাদের একজন প্রধান সমর্থক ছিলেন তিনি। [১] ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার সাহিত্য ও শিক্ষায় উল্লেখযোগ্য কাজের জন্য দেশের সর্বোচ্চ তৃতীয় পুরস্কার পদ্মভূষণ প্রদান করে।
জন্ম ও শিক্ষা জীবন
[সম্পাদনা]বীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে এবং তার বাল্যকালের পড়াশোনা শুরু হয় মীরাটে তার চিকিৎসক পিতার কর্মস্থলে। কিন্তু পিতার আকস্মিক মৃত্যুতে তারা কলকাতায় চলে আসেন। তার পরবর্তী বিদ্যালয়ের পাঠ হিন্দু স্কুলে।[২] ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণীর অনার্স বি.এ পাশ করেন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ওই বিষয়েই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তৎকালীন বাংলার শ্রেষ্ঠ ও সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে লালিত হয়ে বীরেন্দ্রনাথ কলকাতার 'অতি আধুনিক' সাহিত্য বৃত্তে যুক্ত ছিলেন, তার সঙ্গীতের প্রতি গভীর অনুরাগ ছিল। সমকালীন বৈপ্লবিক আন্দোলন, রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের সেবার ধর্ম ইত্যাদির উদ্দীপন প্রভাবের মাঝে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্র হিসাবে নিজেকে স্বতন্ত্র অবস্থানে রাখেন। অর্থনীতিবিদ হয়ে তার আগ্রহ ছিল অর্থনৈতিক চিন্তাধারায় সমৃদ্ধির জন্য কিছু অবদান রাখার।[২]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]বীরেন্দ্রনাথ ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে একজন জুনিয়র লেকচারার হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। বিরল প্রতিভাগুণে নতুন প্রতিষ্ঠানে প্রথম উপাচার্য ফিলিপ জোসেফ হার্টগের সহযোগিতায় নব উদ্দ্যমে ছাত্রদের জন্য সঙ্গীত, নাটক, বিতর্ক সহ নানা নিয়মিত পাঠবহির্ভূক্ত বিষয়ের মধ্য দিয়ে ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যেকার সম্পর্ক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চমৎকার পরিবেশ গড়ে ফেলেন। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানকালে তিনি কৃষি অর্থনীতির উপর রচনা করেন - "ট্রেডস্ অফ এগ্রিকালচার অ্যান্ড পপুলেশন ইন দ্য গ্যাঞ্জেস্ ভ্যালি" শীর্ষক গ্রন্থ, যার প্রাথমিক রিপোর্টে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে লাভ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েরপ্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি।[২] এরপর ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে বীরেন্দ্রনাথ দিল্লির হিন্দু কলেজে যোগ দেন এবং ওই বছরেই তিনি উল্লিখিত গবেষণা পত্রের জন্য লাভ করেন পি.এইচডি ডিগ্রি। হিন্দু কলেজে অধ্যাপনাকালে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে তিনি তার ছাত্র অর্থনীতিবিদ পৃথ্বীনাথ ধর এবং প্রাক্তন সহকর্মী অধ্যাপক ভি কে আর ভি রাও এর সঙ্গে তার বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজে 'লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স'-এর ধাঁচে প্রতিষ্ঠান গড়ার প্রাথমিক কথাবার্তা শুরু করেন। শেষে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয় দিল্লি স্কুল অফ ইকোনমিক্স[৩] যে তিনজন পূর্ণ সময়ের অধ্যাপক ছিলেন তারা হলেন বীরেন্দ্রনাথসহ অধ্যাপক ভি কে আর ভি রাও ও অধ্যাপক কে এন রাজ। উল্লেখ্য এই যে এরা তিনজনই ভারতের প্রথম পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া তৈরিতে সাহায্য করেন। অধ্যাপক বীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে দিল্লি স্কুল অফ ইকোনমিক্স-এর ডিরেক্টর হন। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন ও ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন।
অধ্যাপক বীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় 'সমীক্ষা ট্রাস্ট' নামক বেসরকারি সংস্থার বোর্ড সদস্য ছিলেন। এই সংস্থা হতে শচীন চৌধুরী ও তার সহায়তায় ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয়- অর্থনৈতিক সাপ্তাহিক পত্রিকা দ্য ইকোনমিক উইকলি। [৪] ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ হতে নামটি পরিবর্তিত হয় - দ্য ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি।
সম্মাননা
[সম্পাদনা]১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অধ্যাপক বীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য কাজের জন্য ভারত সরকার তাকে পদ্মভূষণে ভূষিত করে।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]অধ্যাপক বীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের ৯ সেপ্টেম্বর মুম্বাইয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেন।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ৪৯৬, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- ↑ ক খ গ "Birendranath Ganguli, 1902-1978"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৩।
- ↑ "DU at 100: Schools of excellence made a varsity shine brighter"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৩।
- ↑ "B N Ganguli"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৩।