বিষয়বস্তুতে চলুন

কার্তিক বিজয়রাঘবন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কার্তিক বিজয়রাঘবন
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
কার্তিক বিজয়রাঘবন
জন্ম (1988-04-18) ১৮ এপ্রিল ১৯৮৮ (বয়স ৩৬)
আম্বুর, তামিলনাড়ু, ভারত
ব্যাটিংয়ের ধরনডান-হাতি
ভূমিকাউইকেট-রক্ষক-ব্যাটার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টি২০আই অভিষেক
(ক্যাপ ১০)
২৬শে জুন ২০১৯ বনাম স্কটল্যান্ড
শেষ টি২০আই৩রা জুলাই ২০২২ বনাম নামিবিয়া
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
২০১৭–?টিভি পফ্লুগফেল্ডেন (লুডউইগসবার্গ)
?–বর্তমানফ্রাঙ্কফুর্ট
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টি-টোয়েন্টিআই
ম্যাচ সংখ্যা ৩২
রানের সংখ্যা ৯৩
ব্যাটিং গড় ৯.৩০
১০০/৫০ ০/০
সর্বোচ্চ রান ৩৬*
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৫/৫
উৎস: Cricinfo, ১৮ই নভেম্বর ২০২২

কার্তিক বিজয়রাঘবন (জন্ম ১৮ই এপ্রিল ১৯৮৮) হলেন একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ক্রিকেটার যিনি জার্মানির মহিলা জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে উইকেট-রক্ষক-ব্যাটার হিসেবে খেলেন।

প্রাথমিক জীবন

[সম্পাদনা]

বিজয়রাঘবন ভারতের তামিলনাড়ুর আম্বুরে জন্মগ্রহণ করেন।[] শৈশবে, তিনি কর্ণাটকের পূর্ব ব্যাঙ্গালোরের (বেঙ্গালুরু) ইন্দিরানগরে থাকতেন এবং এর রাস্তায় গলি ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করতেন, কিন্তু আনুষ্ঠানিক অর্থে খেলাটি খেলতেন না। পরিবর্তে, তাঁর বাবা-মা তাঁকে বাস্কেটবল খেলতে উৎসাহিত করেছিলেন, কারণ ক্রিকেট সম্পর্কে তাঁদের ধারণা ছিল যে এটি পুরুষদের খেলা। প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থাতেও তাঁর উচ্চতা মাত্র ৫ ফুট ২ ইঞ্চি হওয়া সত্ত্বেও, বিজয়রাঘবন চতুর্থ শ্রেণী থেকে ১৪ বছর একজন পয়েন্ট গার্ড (বাস্কেটবল খেলায় একটি বিশেষ অবস্থান) হিসাবে কাটিয়েছেন।[][][]

একজন বাস্কেটবল খেলোয়াড় হিসেবে, বিজয়রাঘবন আরভিসিই বাস্কেটবল দলের অধিনায়ক হন, স্কোয়াডকে জয়ের দিকে নিয়ে যান এবং ভিটিইউ বিশ্ববিদ্যালয় ট্রফিতে ভূষিত হন। তিনি গ্রীষ্মে ক্রিকেট খেলতেন, এবং রাস্তায় ছেলেদের সাথে খেলা একমাত্র মেয়ে ছিলেন। যদিও তিনি কখনও পেশাদারভাবে ক্রিকেট খেলার চিন্তা করেননি, তিনি কর্পোরেট ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এর একটিতে তিনি সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ট্রফি জিতেছিলেন।[]

২০১৪ সালে, তিনি বিজয়রাঘবনকে বিয়ে করেছিলেন, যাঁর সাথে তাঁর একটি বৈবাহিক সাইটে পরিচয় হয়েছিল। তাঁদের দুজনেরই খেলাধুলার প্রতি ভালবাসা ছিল; তিনি একজন ক্রিকেটার এবং টেনিস খেলোয়াড় ছিলেন।[] পরের বছর, তাঁরা জার্মানিতে চলে যান, যেখানে তাঁরা স্টুটগার্টে থাকতে আরম্ভ করেন। কিছুদিন পরে তাঁর স্বামী, যিনি জার্মানির একটি ক্লাবের হয়ে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলা শুরু করেছিলেন, তাঁকে সেখানে ক্রিকেট খেলার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন।[][][]

ঘরোয়া ক্রিকেট জীবন

[সম্পাদনা]

২০১৭ সালের অক্টোবরে, বিজয়রাঘবন ব্যাডেন-ওয়ার্টেমবার্গের লুডউইগসবার্গে টিভি পফ্লুগফেল্ডেন স্পোর্টস ক্লাবের মাঠে মহিলা ক্রিকেট দলে খেলা শুরু করেন। প্রাথমিকভাবে, টেনিস বলের পরিবর্তে শক্ত বলের সাথে খেলতে এবং প্রতিরক্ষামূলক প্যাডিং পরতে তাঁর অসুবিধা হচ্ছিল, সেগুলি ভারী ছিল। উপরন্তু, আন্তরিকভাবে এটি খেলার শারীরিক পরিশ্রমের ফলে তাঁর বাহু ও পায়ে একাধিক স্থানে রক্ত জমাট বাঁধে। কিন্তু তিনি অধ্যবসায়ের সঙ্গে খেলে যান।[][][]

২০১৮ সালে জাতীয় ঘরোয়া প্রতিযোগিতার আগে, বিজয়রাঘবনকে দলের অধিনায়ক হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে, তিনি একটি জাতীয় প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগদান করেন এবং তাঁকে জাতীয় দলে নেওয়া হয়। তারপরে তিনি আঞ্চলিক সাউদার্ন স্টর্মার্স দলের জন্য নির্বাচিত হন, যেটি পরবর্তীতে অন্য একটি আঞ্চলিক দল, নর্দার্ন থান্ডারবার্ডসের বিরুদ্ধে ৬-ম্যাচের সুপার সিরিজ খেলে।[][]

২০২১ সাল পর্যন্ত, বিজয়রাঘবন ফ্রাঙ্কফুর্ট ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে ঘরোয়া পর্যায়ে খেলছিলেন।[]

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবন

[সম্পাদনা]

২০১৮ সালের মে মাসে, জার্মানির হয়ে খেলার যোগ্য হওয়ার পরপরই, বিজয়রাঘবন নেদারল্যান্ডসের একটি উপ-জাতীয় দলের বিপক্ষে, একজন বিশেষজ্ঞ ব্যাটার হিসাবে জাতীয় দলে তাঁর অভিষেক করেন।[][][] এর পরপরই, তিনি মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব এবং বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে একটি টুর্নামেন্টে জার্মান নারী উন্নয়ন দলের হয়ে খেলেন এবং টুর্নামেন্টের সেরা মহিলা খেলোয়াড় হিসেবে মনোনীত হন। ২০১৮ সালের আগস্টে, তিনি জাতীয় দলের সাথে ইংল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ড সফর করেন। তাঁরা সফরের সময় স্কটল্যান্ড অনূর্দ্ধ-২১, নর্থম্বারল্যান্ড এবং ডারহামের বিপক্ষে ম্যাচ খেলেন।[][]

২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে, এবং ইউরোপের ২০১৯ আইসিসি মহিলা বাছাইপর্বের খেলার আগে, জাতীয় দলের কোচ "শুধু [উইকেট]-রক্ষণ গ্লাভস [তাঁর] দিকে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন।" তিনি বলেছিলেন যে বিজয়রাঘবনের দুর্দান্ত প্রতিবর্ত ক্রিয়া ছিল। বিজয়রাঘবন উইকেট রক্ষা করতে পারবেন তা প্রমাণ করতে তিনি দুই বা তিন মাস সময় দিয়েছিলেন। বিজয়রাঘবন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর প্রিয় খেলোয়াড়, সারাহ টেলর এবং শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় পুরুষ উইকেটরক্ষকদের অনেক ভিডিও দেখেছিলেন। তিনি তাঁর স্বামীকে তাঁর দি২০২১বল নিক্ষেপ করতেও (অনুশীলনের জন্য) বলতেন।[][]

২০১৯ সালের ২৬শে জুন, বিজয়রাঘবন মহিলা টি-টোয়েন্টিতে এবং আন্তর্জাতিক উইকেট-রক্ষক হিসেবে অভিষেক করেন। খেলা হয়েছিল স্পেনের মুরসিয়ার লা মাঙ্গা ক্লাব গ্রাউন্ডে, স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে। এটি ছিল ২০১৯ আইসিসি মহিলাদের বাছাইপর্বে ইউরোপের প্রথম ম্যাচ, এবং জার্মানিরও প্রথম আন্তর্জাতিক মহিলা টি-টোয়েন্টি।[][] পরবর্তীকালে, তিনি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাস্কাটের আল আমিরাতের আল আমিরাত ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ওমানের বিপক্ষে এবং ২০২০ সালের আগস্টে ভিয়েনার কাছে জিবার্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেন।[]

পরের সিরিজের শেষ ম্যাচে বিজয়রাঘবন সর্বোচ্চ ৩৬* রান করেন এবং দুটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন। এই সহযোগিতার প্রথমটিতে, তিনি এবং তাঁর কর্ণাটকে জন্মগ্রহণকারী অধিনায়ক, অনুরাধা ডডবল্লাপুর (যিনি ৩১ করেছিলেন) ছিলেন। তাঁরা দ্বিতীয় উইকেটে ২৬ রান করেছিলেন। পরে, তিনি ভেরেনা স্টলের (যিনি ২৩* রান করেছিলেন) সাথে মিলে চতুর্থ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৫৭ রান করেন। জার্মানি ১২৯/৩ নিয়ে ইনিংস শেষ করে এবং শেষ পর্যন্ত ৭৯ রানে ম্যাচ জিতে সিরিজ হোয়াইটওয়াশ (অর্থাৎ বিপক্ষ দল একটিও ম্যাচ জেতেনি) সম্পূর্ণ করে।[১০][১১][১২]

২০২১ সালের জুলাই মাসে, বিজয়রাঘবন ক্রেফেল্ডের বায়ার উরডিঞ্জেন ক্রিকেট মাঠে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে আরেকটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজের পাঁচটি ম্যাচ খেলেছিলেন।[] পরের মাসে, তিনি ২০২১ আইসিসি মহিলা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইউরোপ বাছাইপর্বে জার্মানির চারটি ম্যাচ খেলেন।[১৩] সেই ম্যাচগুলোর শেষ ম্যাচে, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে, তিনি ১৭/৭-এ ব্যাট করতে এসেছিলেন এবং ২৯ বল খেলে অপরাজিত ছিলেন। এই ম্যাচে তিনিই জার্মানির যেকোনো ব্যাটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বল খেলেছিলেন।[১৪] তিনি পরে গ্লোবাল ইন্ডিয়ানকে বলেছিলেন যে ইনিংসটি তাঁর আত্মবিশ্বাসের স্তরকে উঁচু করে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক ম্যাচে বেশি ব্যাট করার সুযোগ পান না বলে তিনি অনেক রান করতে পারেননি।[]

ব্যক্তিগত জীবন

[সম্পাদনা]

জার্মান দলে, বিজয়রাঘবনের বেঙ্গালুরুর দুইজন সতীর্থ রয়েছেন, নাম ডোডাবল্লাপুর এবং শরণ্যা সদারঙ্গানি। তাঁদের তিনজনই আন্তর্জাতিক ম্যাচে ব্যাটিং করার সময় ভারতীয় আঞ্চলিক ভাষা কন্নড় ভাষায় কথা বলা উপভোগ করেন।[] মাঠের বাইরে, বিজয়রাঘবন স্টুটগার্টের একজন স্বাস্থ্য বীমাকারীর অ্যাপ ডেভেলপার হিসেবে কাজ করেন।[][]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Karthika Vijayaraghavan"ESPNcricinfoESPN Inc.। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০২১ 
  2. "How Bengaluru gully cricketers starred in German national team"The Times of India। TNN। ৫ অক্টোবর ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০২১ 
  3. Harvey, Rob (২৩ আগস্ট ২০২০)। "Interview: Karthika Vijayaraghavan"Talkinaboutwomenscricket.com। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০২১ 
  4. Yerasala, Ikyatha (১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২)। "Gully Girl: How B'luru lass Karthika became Germany's wicket-keeper"Global Indian। ১ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০২২ 
  5. Vijayaraghavan, Karthika (২০১৯)। "Nationalspielerin Karthika erzählt wie sie in die deutsche Nationalmannschaft aufgenommen wurde"TV Pflugfelden (জার্মান ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০২১ 
  6. Staff writer (২০ জুন ২০১৮)। "Cricket: Super Series der Damen in Lemco"TV Lemgo von 1863 (জার্মান ভাষায়)। ২০ জুলাই ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০২১ 
  7. "DCB nominiert 16 Spielerinnen für die T20 Serie gegen Frankreich"German Cricket Board (German ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০২১ 
  8. Perry, Jake (৪ আগস্ট ২০১৮)। "Cavender stars as Scotland claim back-to-back wins over Germany"Cricket Scotland। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০২১ 
  9. "Scotland register massive win over debutant Germany"Women's CricZone। ১১ জুলাই ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০১৯ 
  10. Paul, Kaushiik (১৫ আগস্ট ২০২০)। "Anne Bierwisch stars with the ball as Germany whitewash Austria 5-0"Women's CricZone। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০২১ 
  11. Vivek MV; DHNS (১৯ আগস্ট ২০২০)। "This Bengaluru doctor leads German cricket team"Deccan Herald। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০২১ 
  12. scorecard
  13. "ICC Women's T20 World Cup Europe Region Qualifier, 2021 Cricket Team Records & Stats | ESPNcricinfo.com"ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০২১ 
  14. "Full Scorecard of GER Women vs Scot Women 8th Match 2021 - Score Report | ESPNcricinfo.com"ESPNcricinfo (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০২২ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]