বিষয়বস্তুতে চলুন

সুদবিহীন ব্যাংকিং

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সুদবিহীন ব্যাংকিং
বাংলা অনুবাদের প্রচ্ছদ
লেখকতাকি উসমানি
মূল শিরোনামউর্দু: غیر سودی بینکاری‎‎
অনুবাদকমূসা বিন ইজহার
দেশপাকিস্তান
ভাষাউর্দু
বিষয়ইসলামি ব্যাংকিং ও অর্থসংস্থান
প্রকাশিত২০০৯
মিডিয়া ধরনশক্তমলাট
পৃষ্ঠাসংখ্যা৩৮৯
৩৩২/.০৯১৭/৬৭১
ওয়েবসাইটmuftitaqiusmani.com

সুদবিহীন ব্যাংকিং (উর্দু: غیر سودی بینکاری‎‎) পাকিস্তানি ইসলামি অর্থনীতিবিদ তাকি উসমানির রচিত একটি উর্দু বই। এটি সুদবিহীন ব্যাংকিংয়ে প্রচলিত পদ্ধতির সাথে সম্পর্কিত আইনি সমস্যাসমূহ বিশ্লেষণ করে। এটি লেখকের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ রচনার মধ্যে অন্যতম, যা ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয়। এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৮৯। তিনি এই কিতাবে সুদবিহীন ব্যাংকিংয়ের বিরোধীতাকারীদের সমালোচনার জবাবের সাথে সাথে বর্তমান সময়কে সামনে রেখে অর্থ ও বাণিজ্য বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফিকহি মাসায়েলের উপর আলোকপাত করেছেন।[][][]

প্রেক্ষাপট

[সম্পাদনা]

গ্রন্থটি রচনার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে তাকি উসমানি বলেন, "বিদ্যমান অর্থব্যবস্থায় সুদ এমন এক অভিশাপ; যা পুরো দুনিয়াকে গ্রাস করে নিয়েছে। কুরআন-সুন্না'য় এর হারাম হবার বিষয়টি যত বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে যে পরিমান সতর্কবাণী উচ্চারন করা হয়েছে, সম্ভবত অন্য কোন পাপ কার্যের বেলায় তা করা হয়নি। এ সম্পর্কিত কুরআন-সুন্নাহ'র উদ্ধৃতিগুলো আমার পিতা রহ. তাঁর রচিত “মাসআলায়ে সূদ" নামক কিতাবে সুষ্পষ্টভাবে আলোচনা করেছেন। তাঁরই নির্দেশে “তিজারতী সূদ" নামে এ কিতাবের দ্বিতীয়াংশ আমি আঠারো বছর বয়সে লিখেছি, যেখানে সেসব লোকদের বিরোধীতা করা হয়েছে যারা ব্যাংকের প্রচলিত সুদকে জায়েয বলার চেষ্টা করেন। এ সম্পর্কিত আরো বেশ কয়েকটি কিতাব ও প্রবন্ধ লেখার সুযোগ আমার হয়েছে যার মধ্যে সর্বশেষ রচনা হচ্ছে সেটাই যা আমি সুপ্রিম কোর্টের শরীয়ত এপিলেট বেঞ্চের একজন সদস্য হিসেবে একটি রায়ে লিপিবন্ধ করেছি। পরবর্তীতে তা সুদের উপর ঐতিহাসিক রায় নামে প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের আকাবিরদের মধ্যে হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শফী রহ., হযরত মাওলানা যফর আহমদ উসমানী রহ., হযরত মাওলানা ইউসুফ বিন্নুরী রহ., হযরত মাওলানা মুফতী রশীদ আহমদ রহ., হযরত মাওলানা মুফতী আবদুশ শুকুর তিরমিযী রহ., হযরত মাওলানা শামসুল হক আফগানী রহ., হযরত মাওলানা মুফতী ওয়ালি হাসান রহ. প্রমুখ বুর্জোদের ব্যাপারে এই অধমের মনে আছে, তাঁরা এই চিন্তায় নিমগ্ন থাকতেন যে, কীভাবে বর্তমান ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে সুদ থেকে পবিত্র করে এমন একটি বিকল্প ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যায় যার মাধ্যমে এই হারাম লেনদেন থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে। এসব বুযুর্গদের মধ্যে অনেকেই এ বিষয়টির উপর লেখালেখি করেছেন, অনেকে এর জন্য বাস্তব প্রচেষ্টাও চালিয়েছিলেন। আব্বাজান রহ. এর ব্যাপারে আমার মনে আছে, আমার ছোট বেলায় তিনি এ বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তানের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ও পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী মুহাম্মদ আলীর সাথে বেশ কয়েকটি দীর্ঘ বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। সেসময় তিনি সুদবিহীন ব্যাংকিংয়ের একটি ফর্মুলাও তৈরী করেন। পরর্তীতে রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের সময় শেখ আহমদ এরশাদ সাহেব শরয়ী মূলনীতির উপর ভিত্তি করে করাচীতে একটি কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেসময় তিনি আমার হযরত আব্বাজান রহ. ও হযরত বিন্নুরী রহ. এর সাথে ঘন ঘন দেখা করতেন। মোট কথা! 'সুদী ব্যাংকের কোন বিকল্প ব্যবস্থা পেশ করা হোক'-এ আকাঙ্ক্ষা এবং প্রচেষ্টা আমাদের বুযুর্গদের কাছ থেকে সবসময় পরিলক্ষিত হয়েছে। কিন্তু এর বিস্তারিত বাস্তব রূপরেখা আমাদের দেশে সর্বপ্রথম তখনই দৃশ্যমান হয় যখন রাষ্ট্রপতি জিয়াউল হকের সময়ে ইসলামি আদর্শ পরিষদ নতুনভাবে গঠিত হয়। সেসময় হযরত আল্লামা সৈয়্যদ ইউসুফ বিন্নুরী রহ. ও এর সদস্য মনোনীত হয়েছিলেন। হযরতের সাথে আমি অধমেরও খেদমতের সুযোগ হয়েছিল। এর একেবারে প্রারম্ভিক বৈঠকগুলোতে কাউন্সিলের যে কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করা হয় তাতে সুদবিহীন ব্যাংক ব্যবস্থার বিস্তারিত প্রস্তাবনা তৈরীও অন্তর্ভূক্ত ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই হযরত বিন্নুরী রহ. ইন্তেকাল করেন। পরে তাঁর জায়গায় হযরত মাওলানা শামসুল হক আফগানী রহ. কে সদস্য মনোনীত করা হয়। পরিশেষে কাউন্সিল একটি রিপোর্ট তৈরী করে যেখানে হযরত আফগানী রহ. ছাড়াও হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যাহুদ্দীন রহ. এবং আমার দস্তখত ছিল। এরপর ১৪১২ হিজরী সনে সুদবিহীন ব্যাংকিংয়ের গৃহিত পদ্ধতিসমূহের উপর গবেষণা করার জন্য করাচীতে 'মজলিসে তাহক্বীকে মাসায়িলে হাজেরা'র বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে হযরত মাওলানা মুফতী রশীদ আহমদ রহ., হযরত মুফতী আব্দুশ শুকুর তিরমিযী রহ., হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ ওয়াজীহ রহ., হযরত মাওলান মুফতী সাহবান মাহমুদ বহ.. হযরত মাওলান মুফতী মুহাম্মদ রফী উসমানী দা. বা., হযরত মুফতী আবদুল ওয়াহেদ দা. বা. খায়রুল মাদারিস মুলতান থেকে হযরত মুফতী মুহাম্মদ আনোয়ার দা. বা. অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং আমি অধমও উপস্থিত ছিলাম। এই মজলিসের কার্যবিবরণী আহসানুল ফাতাওয়ার ৭ম খন্ডের ১১১ নং পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে। যেসব প্রস্তাব এই মজলিসে গৃহিত হয়েছিল তার ভিত্তিতেই পরবর্তীতে আমি সুদবিহীন ব্যাংকিং বিষয়ে বেশ কয়েকটি কিতাব ও প্রবন্ধ উর্দু, আরবী ও ইংরেজী ভাষায় লিখেছি। যেখানে সুদবিহীন ব্যাংক ব্যবস্থাকে বাস্তবে কার্যকর করার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এতে উলামায়ে কেরামের প্রতি আবেদন করা হয় যে, বিষয়বস্তুটি নতুন হবার কারণে তাঁরা যেন গবেষণা করে তাঁদের মতামত পেশ করেন। উদ্দেশ্য ছিল, যদি কোন প্রশ্ন কিংবা প্রস্তাব এসে যায় তাহলে যেন পর্যালোচনা ও বোঝাপড়ার পরিবেশে গবেষণা করা যায়। অনেকেই চিঠি ইত্যাদীর মাধ্যমে পর্যালোচনার পরিবেশে বিভিন্ন প্রস্তাব ও প্রশ্ন পাঠিয়েছেন। তাদের সাথে চিঠি পত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ চলে। এর একটি বড় ফাইল আমার কাছে সংরক্ষিত আছে। পত্র মারফৎ এসব যোগাযোগের আলোকে অনেক জায়গায় আমি আমার রচনাগুলোতে পরিবর্তন এনেছি। যেখানে সুদবিহীন প্রাইভেট ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেখানে তা কার্যকর করার চেষ্টা করেছি। আর অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তরও প্রদান করেছি। তবে কেউ কেউ আমাকে এমন কিছু লেখা দেখিয়েছেন যেখানে আমার কিতাব “ইসলাম আওর জাদীদ মায়ীশাত ওয়া তিজারাত" এর কিছু কথার বিরোধীতা করা হয়েছে। সে রচনাগুলোতে আমি পর্যালোচনা ও বোঝাপড়ার বিষয়টি অনুপস্থিত পেয়েছি। তাই ঐ লেখাগুলো ছাপানোর পরও আমার কাছে কোন কপি প্রেরণ করা হয়নি; বরং প্রকাশিত হবার দীর্ঘ সময় পর আমাকে কেউ একজন তা দেখিয়েছে। এসব লেখার উপর পর্যালোচনা অবশ্যই করা হয়েছে, তবে তর্ক বিতর্ক এবং বিরোধীতার পরিবেশ সৃষ্টি করা উদ্দেশ্য ছিল না বলেই এগুলোর জবাব দেয়ার চিন্তা পরিহার করা হয়েছে। বেশ কয়েক বছর পর গত বছর হঠাৎ করে সুদবিহীন ব্যাংকিং এর প্রচলিত পদ্ধতির উপর কিছু সমালোচনামূলক লেখা প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে একই বিষয়ে আমার বিভিন্ন লেখা ও বক্তব্যের পর্যালোচনা করা হয়েছে। তারা সম্মিলিতভাবে এই অবস্থান নিয়েছেন যে, এসব পদ্ধতি শরয়ী দৃষ্টিতে নাজায়েয এবং যেসব সুদবিহীন ব্যাংক এ পদ্ধতিগুলো গ্রহণ করেছে তাদের সাথে লেনদেন হারাম; বরং কোন কোন লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, এগুলো সূদী ব্যাংকের চেয়েও বেশী হারাম। প্রথম প্রথম এসব সমালোচনার জবাবে কিছু লেখার ব্যাপারে আমি যথেষ্ঠ দ্বিধান্বিত ছিলাম। যার একটি কারণ ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তর্ক বিতর্ক এবং বিরোধীতা-সমালোচনা ইত্যাদীর সাথে নিজেকে কখনো মানিয়ে নিতে পারিনি। বিশেষত তা যখন ঐসব আলেমদের সাথে হয় যাদের ব্যাপারে কখনোই আমার এরকম ধারণা ছিল না যে, তারা সমঝোতা ও বোঝাপড়ার পথ পরিহার করে ছাপার অক্ষরে মতপার্থক্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটাবেন। তাদের উত্থাপিত প্রশ্নসমূহের মধ্যে অনেকগুলোরই আলোচনা ইতোপূর্বে আমি আমার কিতাবসমূহে করেছি। কোথাও দৃঢ়তার সাথে আর কোথাও বিবেচনা যোগ্য বলে সেগুলোর মৌলিক উত্তরও প্রদান করেছি। তাই শুরুতে আমার ধারণা ছিল, উলামায়ে কেরাম যখন এসব সমালোচনাকে আমার লেখার সাথে মিলাবেন তখনই তারা বুঝতে পারবেন কোনটি শুদ্ধ আর কোনটি অশুদ্ধ। কিন্তু অনেক উলামায়ে কেরাম আমাকে অনুরোধ করলেন, এসব সমালোচনার ব্যাপারে অবশ্যই কিছু লেখা উচিৎ। কেননা আজকাল সব আলেমরা এতটাই ব্যস্ত যে, উভয় লেখাকে সামনে নিয়ে বিচার করার সুযোগও হয়ত প্রত্যেকের মিলবে না। দ্বিতীয়তঃ ব্যাংকিংয়ের বিষয়টি এমন যে, এর প্রতিটি অংশ সকলের সামনে দৃশ্যমান থাকে না। তৃতীয়তঃ এসব সমালোচনায় এমন কিছু অবাস্তব কথা আছে যা অনুমান করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয় যারা কার্যক্ষেত্রে এর সম্মুখীন হননি। এতদসত্ত্বেও এসব সমালোচনা যদি কোন প্রতিষ্ঠান অথবা প্রতিষ্ঠানসমূহের বিরুদ্ধে হত তবুও এর জবাব দেয়ার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু এগুলোর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য লেখায় সুদবিহীন ব্যাংক ব্যবস্থার অস্তিত্বকে হয় অস্বীকার করা হয়েছে নয়তো বাস্তবে রূপ দেয়াকে অসম্ভব বলা হয়েছে। এমনও বলা হয়েছে যে, এসব ব্যাংক শুধু 'শিরকাহ' ও 'মুদারাবাহ'র ভিত্তিতেও যদি পরিচালিত হয় তবুও তা নাজায়েয থেকে যাবে। যার আবশ্যিক অর্থ দাড়ায়, বর্তমান ব্যবসা বাণিজ্যকে ফুল থেকে পবিত্র করার সব প্রচেষ্টাই নাজায়েয এবং অনর্থক। আর ব্যবসা বাণিজ্য করতে গিয়ে যেসব লোকের ব্যাংকের সাথে সম্পৃক্ত হতে হয় তাদের সুদ থেকে বাঁচার কোন পথ নেই। পুরো ইসলামী দুনিয়ায় আজ সরকারগুলোর কাছে ব্যাংককে সুদমুক্ত করার যে গণদাবী উত্থাপিত হচ্ছে সে দাবি থেকে মুসলামনদের সরে আসা উচিৎ। সুদের হারাম হওয়ার বিষয়ে একটি মেনে নিতে হয় যে, এই যুগে কুরআন-সুন্নাহ'র এ বিষয়টির উপর আমল করা সম্ভব নয়: আবার কোন কোন জায়গায় অবশ্য এই শর্ত যুক্ত করা হয়েছে যে, যতদিন পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকবে ততদিন কোন ব্যাংক ইসলামী হতে পারে না। কিন্তু পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিনাশ কীভাবে হবে তারও উল্লেখ করা হয়নি। ব্যাংকগুলোকে সুদমুক্ত করা ছাড়া পুঁজিবাদী ব্যবস্থার নির্মূল কীভাবে সম্ভব? বিষয়গুলো যেহেতু অত্যন্ত জটিল এবং এই অবস্থানকে প্রমাণিত করতে অনেক শরয়ী আহকামও জড়িত হয়ে পড়েছে। উপরন্তু আমার সম্পর্কে এমন সব কথা বলা হয়েছে যা বাস্তবতাবিবর্জিত। তাই ইস্তেখারা ও পরামর্শের পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি যে, কমপক্ষে বিষয়গুলো কিছুটা বিস্তারিতভাবে পরিস্কার করে দেয়া উচিৎ। আর ইতোপূর্বে আমি সংক্ষিপ্ত যেসব বিষয় লিখেছিলাম তার ফিকহী প্রমাণাদী আরও বিস্তারিতভাবে আসা এবং নতুনভাবে উত্থাপিত প্রশ্নসমুহের পর্যালোচনা হওয়া দরকার সুতরাং আমার উদ্দেশ্য তর্কে লিপ্ত হওয়া নয়; বরং সংশ্লিষ্ট কিছু ফিকহি মাসায়িল পর্যালোচনা করা। আমার জানামতে এখন পর্যন্ত এরকম চারটি লেখা প্রকাশিত যেগুলো এখন আমার সামনে। এগুলোর মধ্যে কিছু সামগ্রিকভাবে কিছু ইলমী বিষয় উত্থাপিত হয়েছে। কিছু এমন যাতে ব্যক্তিগত আক্রমণ প্রাধান্য পেয়েছে। আর কিছু এমন যাতে সাহিত্য ও পান্ডিত্যপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে যোগ্যতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। ভাষার কারুকার্য ব্যবহার করে এবং প্রশংসাচ্ছলে সমালোচনার উত্তম প্রদর্শনী করা হয়েছে। এধরনের পান্ডিত্যপূর্ণ বাক্যব্যয়ে আমারও যথেষ্ঠ দখল আছে। কিন্তু অত্যন্ত সচেতনতার সাথে এর ব্যবহার ফিকহী মাসায়িল ও আলোচনা থেকে অনেক দূরে সরিয়ে রাখি। দৃশ্যত যুবক লেখকদের সামনে যেহেতু যথেষ্ঠ বয়স পড়ে আছে, তাই তারা যদি ফিকহী মাসায়িলের আলোচনাতেও মনোরঞ্জনকারী এই পন্থা অবলম্বন করেন তবে সেটা তাদের তাজা ইলম এবং তপ্ত খূনের চাহিদা হতে পারে। বিশেষতঃ এসব যুবক আলেমদের মনে একজন বৃদ্ধ জ্ঞানপিপাসু তালিবে ইলমের ব্যাপারে যদি এমন বদ্ধমূল ধারণা সৃষ্টি হয় যে, অর্ধ শতাব্দীরও অধিক কাল ধরে ফিক্হ পড়ার পরও সে ফিকহের প্রাথমিক বিষয়গুলো সম্পর্কেও অবগত নয় এবং তাকে ফিকহ ও উসুলে ফিকহের ঐসব বিষয় পড়ানো উচিৎ যা চতুর্থ-পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রদের পড়ানো হয় তাহলে তার উপর ক্রোধান্বিত হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এই ক্রোধ সত্ত্বেও বার্ধক্যের খাতিরে যদি তারা তার জন্য বিভিন্ন উপাধি ও শিষ্টাচারের আবরণে ইশারা ইংগিতে প্রতিক্রিয়া ও ঠাট্টা মস্করা করেই ক্ষান্ত হন তবে সেটা তাদের দয়া। কিন্তু আমার মত বৃদ্ধ তালিবে ইলম যার বয়স দৃশ্যত খুব অল্পই বাকী আছে তার পক্ষে এসব কাটা ছেড়ার অংশীদার না হয়ে এবং পান্ডিত্যপূর্ণ সাহিত্য উপভোগ করে সালাম ও দোয়া করতে করতে চলে যাওয়া উচিৎ। অতএব শেষ যে দু'প্রকার লেখায় ব্যাক্তিগত আক্রমণ ও সমালোচনা প্রাধান্য পেয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে আমি কিছু উপস্থাপন করতে অপারগ। দলিল প্রমাণ ইত্যাদীর দুর্বলতাকে ঢাকার জন্যও অনেক সময় এ ধরনের সাহিত্য ও আবেগপূর্ণ ভাষা এবং একই কথাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্নভাবে বলার প্রয়োজন পড়ে। আলহামদুলিল্লাহ এখানে এগুলোর কোন প্রয়োজন নেই। তাই এ বিষয়ে আমার সমস্ত আলোচনা ইলমী পরিমন্ডলে সীমাবদ্ধ থাকবে।"[]

বিষয়বস্তু

[সম্পাদনা]

গ্রন্থটির আলোচ্য বিষয়:

  • সুদী ব্যাংকের বিকল্প
    • সুদী ব্যাংকের বিকল্প কি সম্ভব? সুদবিহীন ব্যাংকিংয়ের ব্যাপারে আমার অবস্থান
    • ১৯৮১ ইং-এর “সুদবিহীন কাউন্টার” এবং বর্তমান সুদবিহীন ব্যাংকিং
    • বেসরকারী পর্যায়ে সুদবিহীন ব্যাংকিংয়ের প্রচেষ্টা
    • বিন্নুরী টাউনের দারুল ইফতা'র একটি ফতোয়া
    • প্রচেষ্টার বিভিন্ন ধাপ
    • সুদবিহীন ব্যাংকসমুহের ব্যাপারে আমার অবস্থান
    • যথাযথ যাচাই ছাড়া উত্থাপিত আপত্তিসমূহ
    • আমার দিকে ভুল ইঙ্গিত
  • সুদবিহীন ব্যাংক
    • সুদবিহীন ব্যাংক এবং কৌশল
    • বাকীতে বিক্রয়ে মূল্য বড়িয়ে দেয়া : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
    • সাল্লামের সময়ে
    • সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈনদের উদ্ধৃতি
    • ইমাম আবু হানিফা রহ. ও ইমাম মুহাম্মদ রহ. এর ব্যাখ্যা
    • হযরত ইমাম মালেক রহ. এর ব্যাখ্যা
    • "ফালাহু আও কিসহুমা" হাদিসের ব্যাখ্যা
    • সুদের সন্দেহ
    • উপমহাদেশের উলামাদের ফতোয়া
    • পূর্বসূরীদের মধ্যে মুরাবাহা মুয়াজ্জালা'র উপর আমল
  • ওয়াদা
    • ওয়াদা'র (অঙ্গীকার/প্রতিশ্রুতির) শরয়ী অবস্থান
    • উপসংহার
  • হীলা
    • হীলা বা কৌশলের শরয়ী অবস্থান কৌশলের প্রথম প্রকার
    • কৌশলের দ্বিতীয় প্রকার
    • কৌশলের তৃতীয় প্রকার
    • সুদ সম্পর্কিত কৌশল বাইয়ে ঈনা
    • মাওলানা সহুল উসমানী রহ. এর উত্তর
  • মুরাবাহা
    • মুরাবাহা'র বাস্তব কর্মপদ্ধতি
    • ওকালত বা প্রতিনিধিত্বের মাসআলা
    • মুরাবাহা কি "তাআতি" ইজাব-কবুল বিহীন আদান প্রদানের মাধ্যমে হয়?
    • মুরাবাহা'র সময়, বিনিয়োগ ও মূল্য নির্ধারণ
    • পণ্যদ্রব্য ব্যাংকের জামানতে আসা
    • আমানতের নিয়ন্ত্রণ ও জামানতের নিয়ন্ত্রণ
    • নিয়ন্ত্রণ নবায়ণ সম্পর্কে আলোচনা
    • নিয়ন্ত্রণের প্রকারভেদ
    • নিয়ন্ত্রণ ও হস্তান্তরের প্রকৃতি
    • উপসংহার
    • মুরাবাহা ও সুদী ঋণের মধ্যে পার্থক্য
  • ইজারা
    • এক লেনদেনের মধ্যে অন্য লেনদেনের শরয়ী অবস্থান
    • বাই' বিল ওয়াফা'
    • ইজারায় মেরামতের শর্ত
    • মজুরী অজানা হওয়া
    • সিকিউরিটি ডিপোজিটের শর্ত
    • শিরকাতে মুতানাক্কাসা
    • ইলতেযাম বিত তাসাদ্দুক (সদকাকে আবশ্যকীয় করা)
  • মুদারাবা
    • মুদারাবা'র ব্যয়
    • দৈনিক উৎপানের ভিত্তিতে মুনাফা বন্টন
    • মূলধন জ্ঞাত হওয়া
    • আইনগত ব্যক্তি ও সীমিত দায়িত্ব সম্পর্কিত মাসআলা
    • আইনগত ব্যক্তির শরয়ী অবস্থান
    • সীমিত দায়িত্ব
    • মুদারাবার উপর সীমিত দায়িত্বের প্রভাব
    • কোম্পানীর শেয়ার ক্রয়
    • বিক্ষিপ্ত কিছু কথা
    • স্টেট ব্যাংক ও সুদবিহীন ব্যাংকিং
    • পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সংরক্ষণ
    • সুদবিহীন ব্যাংকিং এবং অমুসলিম
    • সর্বশেষ নিবেদন

অনুবাদ

[সম্পাদনা]

২০১২ সালে মুসা বিন ইজহার এই গ্রন্থটির বঙ্গানুবাদ করেন, যা মাকতাবাতুল ইসলাম থেকে প্রকাশিত হয়।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]

উদ্ধৃতি

[সম্পাদনা]
  1. Sharīf bin Fāz̤il, Muḥammad (২০১০)। Muftī Muḥamad Taqī ʻUs̲mānī ṣāḥib kī taṣnīf G̲h̲air Sūdī Bainkārī kā Islāmī jāʼizah। Isṭākisṭ; Karācī: Iqbāl Buk Sainṭar; Islāmī Kutab K̲h̲ānah। ওসিএলসি 595767232 
  2. জিল হুমা, ডক্টর (৩০ জুন ২০১৯)। "مفتی محمد تقی عثمانی کی معروف تصنیفات و تالیفات کا تعارفی جائزہ:" [মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানির বিখ্যাত লেখাগুলির একটি পরিচিতিমূলক পর্যালোচনা]। রাহাতুল কুলুব (উর্দু ভাষায়): ২১০। আইএসএসএন 2521-2869ডিওআই:10.51411/rahat.3.1.2019.66 
  3. আহমদ মুমতাজ, মুফতি। غیر سودی بینکاری ایک منصفانہ علمی جائزہ। পাকিস্তান: জামিয়া খুলাফায়ে রাশেদীন। ২৫ নভেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০২২ 
  4. ভূমিকা থেকে সংগৃহীত

গ্রন্থপঞ্জি

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]