সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ড

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

তনু হত্যাকাণ্ড বলতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী সোহাগী জাহান তনুর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে বুঝানো হয়।[১][২]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯ বছর বয়সী তনু কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।[৩] তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডে চাকরিরত ছিলেন।[৪] ২০১৬ সালের ২০শে মার্চ তনুর মৃতদেহ কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে পাওয়া যায়।[৫] প্রাইভেট টিউটরের কাছে এক বাসায় পড়তে গিয়ে তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন।[৬]

তদন্ত[সম্পাদনা]

কুমিল্লা শহরের কোতোয়ালী মডেল থানায় অজ্ঞাত আসামীর বিরূদ্ধের তনুর বাবা ইয়ার হোসেন একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ মামলাটি গোয়েন্দাদের কাছে হস্তান্তর করে।[৭] ২০১৬ সালের পহেলা এপ্রিল মামলাটি সিআইডির কাছে হস্তান্তরিত করা হয়। ৪ই এপ্রিলে প্রকাশিত ময়নাতদন্তে বলা হয়, তনুকে ধর্ষণ কিংবা হত্যার কোন আলামত পাওয়া যায় নি।[৮] উক্ত ময়নাতদন্তে বিতর্কের সৃষ্টি করলে, বাংলাদেশের উচ্চ আদালত পুনরায় ময়নাতদন্তের রায় দেন।[৩] প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে তনুর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়।[৯] কুমিল্লার মির্জাপুরে তনুর লাশ দাফন করা হয়।[১০]

আদালতের রায়ে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে করা হলে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়।[১১] ২০১৬ সালের মে মাসে সিআইডির তত্ত্বাবধানে তনুর পরিহিত অন্তর্বাসে প্রাপ্ত বীর্যের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। সিআইডি’র নিজস্ব গবেষণাগারে তিনজন পুরুষের বীর্যের অস্তিত্ব তনুর অন্তর্বাসে পাওয়া যায়।[১২] ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর তনু হত্যা মামলা পিবিআই এ হস্তান্তর করে সিআইডি। পিবিআই তদন্তের দুই বছর পার হলেও কোনো আসামীকে চিহ্নিত করতে পারেনি পিবিআই এর তদন্তদল।[১৩]

প্রতিবাদ[সম্পাদনা]

"তনু হত্যাকাণ্ড" সমগ্র বাংলাদেশে আলোড়ন তুলে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে প্রচণ্ড আলোচনা হয়।[১৪][১৫] সমগ্র বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ক্যাম্পাসে বিচারের দাবীতে আন্দোলন করে এবং ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের একটি দল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ মিছিল করে।[১৬][১৭][১৮] শাহবাগ চত্বরের একটি প্রতিবাদ সমাবেশে গণজাগরন মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার দাবী করেন ব্লগার নাজিমুদ্দীন সামাদকে হত্যা করে তনু হত্যাকাণ্ড থেকে সাধারণ মানুষের মনোযোগ সরিয়ে দেয়ার চক্রান্ত করা হচ্ছে।[১৯][২০]

বিচার[সম্পাদনা]

তনু হত্যা সংগঠনের ছয় বছর পরেও এই মামলার তদন্ত চলছে। তিনজন পুরুষের বীর্যের ডিএনএ পাওয়া গেলেও তা অনুযায়ী কোন আসামীকে শনাক্ত করা সম্ভব না হওয়ায় এখন অব্দি কোন আসামী গ্রেফতার হয়নি।[২১][২২][২৩] হত্যাকাণ্ডের ছয় বছর পার হলেও কোনো আসামী সনাক্ত না হওয়ায় হতাশ তনুর বাবা-মা। গণমাধ্যমের কাছে তিনি হতাশা প্রকাশ করেন।

তনুর মা আনোয়ারা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জিন্দা লাশ হয়ে বেঁচে আছি,  প্রায় সময়ই অসুস্থ থাকি- এরই মধ্যে কয়েকবার হাসপাতালেও গেছি। প্রতি মুহূর্তে মনে হয় এই বুঝি মরে গেলাম। আমার বয়স হয়েছে, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে মৃত্যুর আগে তনুর খুনিদের বিচারটা দেখে যেতে পারবো না। নামাজে প্রতিদিন দোয়া করি- মেয়েকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার যেন আল্লাহ করেন। আমরা গরিব মানুষ, তাই বিচার পাওয়ার আশা এখন ছেড়েই দিয়েছি।”[১৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Women train in self-defence in Dhaka for protection against sexual assaults"bdnews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  2. "'Pressure on Tonu's family to confess'" [‘স্বীকার করতে তনুর পরিবারকে চাপ দেয়া হচ্ছে’]। প্রথম আলো (ইংরেজি ভাষায়)। ১ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  3. "CID say Tonu was raped before murder" [সিআইডি বলছে, তনুকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছিল]। bdnews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  4. "CID interrogates 5 over Tonu murder" [তনু হত্যা নিয়ে ৫ জনকে সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদ]। প্রথম আলো (ইংরেজি ভাষায়)। ১ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  5. "তনু হত্যাকাণ্ড: যা ঘটেছে ক্যান্টনমেন্টেই ঘটেছে!"বাংলা ট্রিবিউন। ২৭ মার্চ ২০১৬। ৩০ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১৭ 
  6. "4 more quizzed over Tonu murder" [তনু হত্যা নিয়ে আরো ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ]। প্রথম আলো (ইংরেজি ভাষায়)। ১ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  7. "No headway in Tonu murder probe in 10 months" [১০ মাসেও তনু হত্যা তদন্তের কোন অগ্রগতি নেই]। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০ জানুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  8. "Seven months into Tonu murder: Family losing hope of getting justice" [তনু হত্যার সাত মাস: ন্যায়বিচার পাবার আশা হারাচ্ছে পরিবার]। Dhaka Tribune (ইংরেজি ভাষায়)। ২৪ অক্টোবর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  9. "Tonu's parents want to meet PM over her murder case"bdnews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  10. "অশ্রুসিক্ত নয়নে পুনরায় তনুর লাশ দাফন"দৈনিক যুগান্তর। ৩০ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  11. "Tonu's 2nd autopsy finds evidence of 'sexual assault'"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ১২ জুন ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  12. রহমান, মো. লুত্ফুর (১১ জুন ২০১৬)। "তনু হত্যায় সন্দেহভাজনদের ডিএনএ নমুনা চায় সিআইডি"দৈনিক ইত্তেফাক 
  13. টুয়েন্টিফোর ডটকম, বিডিনিউজ (মার্চ ২০, ২০২৩)। "তনু হত্যার সাত বছর: বিচারের আশা 'ছেড়েই' দিয়েছে পরিবার"বিডিনিউজ। ২০ মার্চ ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ২০, ২০২৩ 
  14. "Don't forget Tonu" [তনুকে ভুল না]। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২৫ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  15. "Army helping in probe into Tonu murder" [তনু হত্যার তদন্তে সেনাবাহিনী সাহায্য করছে]। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২৬ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  16. "তনু হত্যাকাণ্ড ধামাচাপার চেষ্টা অস্বীকার করছে পুলিশ"বিবিসি বাংলা। ২৫ মার্চ ২০১৬। 
  17. "Tonu killing: March to PMO stopped, strike called"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ৩১ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  18. "তনু হত্যাসহ গুম-খুন-ধর্ষণের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের অবরোধ"দৈনিক প্রথম আলো। ২৫ এপ্রিল ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১৭ 
  19. "Nazim killed to divert attention from Tonu murder: Imran" [তনু হত্যা থেকে নজর সরিয়ে দিতে নাজিমকে হত্যা করা হয়েছে: ইমরান]। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ৭ এপ্রিল ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  20. "তনু হত্যার ঘটনা আড়া​ল করতে নাজিমকে হত্যা : ইমরান"দৈনিক প্রথম আলো। ৭ এপ্রিল ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১৭  zero width space character in |শিরোনাম= at position 21 (সাহায্য)
  21. "তনু হত্যার ১ বছর পরও ধরাছোঁয়ার বাইরে ঘাতকরা"দৈনিক ইত্তেফাক। ২০ মার্চ ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০১৭ 
  22. "তনু হত্যাকাণ্ড: দুই বছরেও কোনও আসামি ধরা পড়েনি | banglatribune.com"Bangla Tribune। ২০১৮-০৫-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-২২ 
  23. "তনু হত্যা মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-১৫